Adsterra

মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির জীবনী


মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির জীবনী, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক, আধ্যাত্মিক কবি, পিতার নাম হোসাইন বলখী, উপাধি সুলতান বাহাউদ্দীন ওলাদ

বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক, আধ্যাত্মিক কবি মাওলানা রুমির নাম মুহাম্মদ, উপাধি জালালউদ্দিন। তার পিতার নামও মুহাম্মদ, উপাধি সুলতান বাহাউদ্দীন ওলাদ। পিতামহের নাম হোসাইন বলখী। হোসাইন বলখী উত্তর ইরানের বলখ নগরের অধিবাসী ছিলেন। রুমীর বংশগত সম্পর্ক নক্ষত্র সদৃশ বিখ্যাত এবং বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পর্কযুক্ত। রুমি পিতার পূর্ব পুরুষদের নবম ধাপে হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা) সহিত মিলিত হন এবং মাতার দিকে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর সাথে মিলিত হন। 


মাওলানা রুমীর পিতামহ হোসাইন ইবনে আহমেদ অতি উচ্চ পর্যায়ের সুফী এবং বুজুর্গ লোক ছিলেন। তৎকালীন সুলতান এবং বাদশাহগন তাকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। খোরাসান হতে ইরাক পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের মহাপ্রতাপশালী বাদশাহ মুহাম্মদ শাহ খাওয়ারেযমী স্বীয় কন্যা মালাকায়ে জাহানকে তার সহিত বিবাহ দেন। মাওলানা রুমীর বুজুর্গ পিতা সুলতান বাহাউদ্দিন ওলাদও তৎকালের উচ্চশ্রেণীর ওলি, বিজ্ঞ আলেম, আধ্যাত্মিক সুফি এবং বিশিষ্টজন। মাওলানা রুমি হলেন বাদশাহ মুহাম্মদ শাহ খাওরেযমীর দৌহিত্র। 


**মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির জন্ম এবং জন্মস্থান মাওলানা রুমী খোরাসানের অন্তর্গত বলখ শহরে ৬০৪ হিজরীর ৬ই ববিউল আউয়াল তারিখে জন্মগ্রহন করেন। তার পূর্বপুরুষদের বসবাস বলখেই ছিল। তার পিতা সুলতান বাহাউদ্দীন ওলাদ যৌবন বয়সেই খ্যাতনামা আলেম, পারদর্শী মুফতী ছিলেন। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে তথা সর্ববিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। সমগ্র খোরাসানের জটিল ও কঠিন ফতওয়ার সমস্যাবলীর সমাধান তিনি করতেন। রুমির পিতার উপাধি ছিল সুলতানুল উলামা। 


কোনো এক শুভ রাত্রিতে বলখ শহরের প্রায় তিনশত (৩০০) জন সুখ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞ আলেম ও মুফতীগণ একযোগে স্ব স্ব স্থানে অবস্থিত অবস্থায় স্বপ্নে দেখলেন দো-জাহানের সরদার রাসূলে মকবুল (স) একটি সবুজ বর্ণের তাবুর অভ্যন্তরে উপবিষ্ট আছেন। তাঁর পার্শ্বে সুলতান বাহাউদ্দীন ওলাদ উপবিষ্ট রয়েছেন। নবীজীর বিশেষ অনুকম্পা ও মেহেরবানীর স্নেহাশীষে ধন্য হয়েছেন। এমন কি, হুযুরের মোবারক মুখনিঃসৃত বানী ছিল – আমি বাহাউদ্দীনকে ‘সুলতানুল উলামা’ উপাধিতে ভূষিত করে দিলাম। 


পরদিন সমস্ত আলেম, মুফতীগণ সুলতানুল উলামাকে এই শুভ স্বপ্ন ব্যক্ত করার জন্য এবং অভিনন্দন জানানোর জন্য তাঁর খেদমতে হাজির হলেন। তিনি বললেন, বেশ! আল্লাহর রাসূল (স) এর জবান মুবারকে শোনার পর তো আপনাদের বিশ্বাস হয়েছে যে, আমি ‘সুলতানুল উলামা’। সুলতানুল উলামা অর্থ আলেমকূলের সম্রাট। বাহাউদ্দীন ওলাদের এলমী মজলিসের নিয়ম-পদ্ধতি শাহী ধরনের ছিল। ভোর থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত সাধারণ দারস, পাঠদান, এবং যোহরের পর বিশিষ্ট সহচরদের সমক্ষে এলম এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূক্ষতত্ত্ব ও গূঢ়রহস্য বর্ণনা করতেন। 


তাঁর মুখমন্ডলে ভয় ও ভীতির চিহ্ন প্রকট থাকতো সর্বদা। মনে হতো যে, আখেরাতের ফেকেরে তিনি সর্বদা চিন্তান্বিত। **মাওলানা রুমির পিতার দেশত্যাগ সুলতানুল উলামা বাহাউদ্দিন ওলাদের নপ্রতিপত্তি দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকল, ওয়াজ-নছীহতের প্রতিক্রিয়া সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। মুরীদ ও ভক্তদের সংখ্যা অগনিত হারে বৃদ্ধি পেল। সুলতানুল উলামা বাহাউদ্দীন ওলাদ স্বীয় ওয়াজের মধ্যে ইউনানী বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকদের নিন্দাবাদ করতেন, কিছু কিছু লোক আসমানী কিতাব উপেক্ষা করেন বৈজ্ঞানিকদের নিরর্থক উক্তিসমূহকে নিজেদের মত ও পথ হিসাবে গ্রহণ করে ছিলেন। 


এই ধরনের লোক কিরূপে মুক্তি ও নাজাতের আশা করতে পারে? জনসমক্ষে এই নিন্দাবাদের কারণে বাহ্যিক এলমের পণ্ডিতদের অন্তরে আঘাত লেগেছিল। তারা সুলতানুল উলামার প্রতি বিরূপ ভাব পোষণ করতে লাগলেন। কিন্তু যেহেতু তৎকালীন বলখের বাদশাহ মোহাম্মদ খাওয়ারেযম শাহ ছিলেন সুলতানুল উলামা বাহাউদ্দীন ওলাদের আত্মীয় এ ভক্ত; সুতরাং রাজদরবারে সুলতানুল উলামার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ করার সুযোগ তারা পেত না। একদিন বাদশা সুলতানুল উলামার সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে তাঁর খেদমতে হাজির হয়ে দেখলেন, বিরাট জনতার ভীড়। 


বাহ্য এলেমের একজন দার্শনিক আলেম বাদশাহের মোসাহেব হিসাৰে সঙ্গে ছিলেন । বাদশাহ তাঁকে বললেন, জনতার এত বড় ভীড় আলেম, ফাযেল, আমীর সরদারের সমন্বয়ে বিরাট জনসমাবেশ! আলেম সাহেব সুযোগ বুঝে তীর ছুড়লেন। তিনি বললেনঃ জি হুযুর! এর কোন ব্যবস্থা না করলে অদূর ভবিষ্যতে রাজকীয় ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে। বাদশাহ খাওয়ারেযমের অন্তরে আলেম সাহেবের এই উক্তিটি রেখাপাত করল। বাদশাহ জিজ্ঞাসা করলেন, তাহা হলে কি করা উচিত? 


আলেম সাহেব পরামর্শ দিলেন যে, ধনভাণ্ডার এবং দূর্গসমূহের চাবিগুচ্ছ সুলতানুল উলামা সাহেবের নিকট পাঠিয়ে দিয়ে বলুন, লোকজনতো সকলেই আপনার, আমার কাছেতো শুধু চাবিগুলি; সুতরাং এগুলিও আপনিই নেন। প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করা হল। সুলতানুল উলামা(র) এই পয়গাম শ্রবণ করে বিনীতভাবে বললেনঃ ইসলামের বাদশাহকে আমার সালাম জানিয়ে বলবেন, এই অস্থায়ী রাজত্বের ধনভাণ্ডার, লোক-লস্কর বাদশাহদের উপযোগী, আমরা ফকির-দরবেশ। এদের সাথে আমাদের কি সংস্রব? আমি অতি সন্তুষ্টচিত্তে দেশত্যাগ করছি। আগামী শুক্রবার ওয়ায করার পর দেশান্তরিত হব। বাদশাহ পরম সুখে ও সন্তুষ্ট চিত্তে এখানে সাঙ্গপাঙ্গ ও দোস্ত-আহবাবসহ পরমানন্দে রাজত্ব করুক। এই সংবাদ মত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল। 


বলখ শহরে হুলস্থুল পড়ে গেল। এতে বাদশাহ অত্যন্ত শংকিত হয়ে পড়লেন। বাদশাহ সুলতানুল উলাম (র) সমীপে দূত প্রেরণ করলেন । রাত্রে বাদশাহ স্বয়ং তার খেদমতে হাজির হয়ে তাকে দেশান্তরের সংকল্প পরিত্যাগ করার জন্য সকাতরে নিবেদন করলেন; কিন্তু মাওলানা বাহাউদ্দিন ওলাদ(র) সংকল্পে দৃঢ়পদ রইলেন এবং বাদশাহর আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেন। অন্য উপায় না পেয়ে বাদশাহ করজোড় অনুরোধ করলেন, আমার প্রতি দয়াপরশ হয়ে অন্ততঃ এতটুকু করবেন যে, জনসাধারণের অগোচরে আপনি এ কাজ করবেন, অন্যথায় দেশে ভীষণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। মাওলানা বাহাউদ্দিন ওলাদ (র) এই প্রস্তাব মঞ্জুর করলেন। 


মাওলানা শুক্রবার ওয়াজ করলেন, ওয়া্জের মধ্যে খাওয়ারেযম শাহের প্রতি সাবধানবাণী উচ্চারণ করে গেলেন যে, আমার যাওয়ার পর মঙ্গোলিয়ার রাজা এই বলখ শহর ভস্মীভূত করার জন্য আসছে। ওয়াজের পর বিশিষ্ট মুরীদগণের মধ্য হতে ৩০০ (তিন শত) জন মুরীদকে সঙ্গে নিয়ে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লেন। সুলতানুল উলামার দেশত্যাগ করার কিয়ৎকাল পরে মঙ্গোলিয়ার অগণিত তাতারী সৈন্য বলখ। আক্রমণ করল । এই সংঘর্ষে বলখের দশ লক্ষ লোক প্রাণ হারাল। সমগ্র দেশ ছারখার হয়ে গেল। এদিকে মাওলানা হিজরতের পথে যেখানেই পৌছতেন, তথাকার আমীর-উমারা ও রঈস লোকগণ তাঁর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আগমন করতেন এবং অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করতেন। 


এইরূপে ৬১০ হিজরী সনে তিনি নিশাপুরে উপনীত হলেন। **সুলতানুল উলামা (র)-এর নিশাপুর গমন নিশাপুরে হযরত খাজা ফরীদুদ্দীন আত্তার (র) সুলতানুল উলামার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। তখন মাওলানা জালালউদ্দিন রূমীর বয়স ছিল মাত্র ছয় বৎসর। কিন্তু শৈশবেই তার ললাটে সৌভাগ্য ও বুযুর্গীর লক্ষণ প্রতিভাত হয়েছিল। খাজা ফরীদুদ্দীন আত্তার শেখ বাহারউদ্দীন ওলাদকে বললেন, এই সুযোগ্য রত্নটির প্রতি অবহেলা করবেন না। তিনি স্বরচিত কিতাব “গওহারনামা মাওলানা রূমীকে দান করে বললেনঃ অদূর ভবিষ্যতে এই কিশোর দগ্ধীভূত অন্তরবিশিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে অগ্নি প্রজ্বলিত করে দিবে। সুলতানুল উলামা মাওলানা বাহাউদ্দীন ওলাদের মুরীদগণের মধ্যে সাইয়্যেদ বুরহানুদ্দীন তিরমিযী তত্ত্বজ্ঞানী এবং উচ্চ শ্রেণীর আলেম ছিলেন। 


মাওলানা রূমীর পিতা তার শিক্ষা-দীক্ষা ও তরবিয়তের ভার উক্ত সাইয়্যেদ বুরহানুদ্দীনের উপর অর্পণ করেছিলেন। মাওলানা অধিকাংশ বিষয়ের শিক্ষালাভ সাইয়্যেদ সাহেবের নিকট হতে করেছিলেন; আর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন স্বীয় বুযুর্গ পিতার নিকট হতে। **মক্কা মদীনায় সুলতানুল উলামা মাওলানা রূমীর পিতা সুলতানুল উলামা (র) নিশাপুর হতে বাগদাদে এসে পৌছলেন। কয়েক বছর তথায় অবস্থানের পর হেজায অভিমুখে রওয়ানা হন এবং মক্কা শরীফে উপস্থিত হয়ে হজ্জব্রত পালন করেন। অতঃপর মদীনা শরীফে গিয়ে রওযা পাক জিয়ারত করেন; তদন্তর সিরিয়া হয়ে যানজানে আসেন এবং যানজান হতে কয়েকটি শহর ভ্রমণপূর্বক অবশেষে মালাতিয়া উপস্থিত হন। 


তথায় আকশহর অঞ্চলে তিনি চার বৎসর অবস্থান করেন এবং দ্বীন শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত থাকেন। অবশেষে কাউনিয়ার অন্তর্গত লারিন্দা এলাকায় গমন করেন। **বিবাহ বন্ধনে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির জীবনী এ বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। হিজরী ৬২৩ সনে মাওলানা রুমী (র) সমরকন্দ নিবাসী মাওলানা মরফুদ্দিন সাহেবের কন্যা জাওহার খাতুনের সাথে শুভ পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৯ বৎসর। 


ঐ বৎসরই মাওলানা প্রথম সন্তান বাহাউদ্দীন সুলতান ওলাদ জন্মগ্রহণ করেন। এই বিবির গর্ভে মাওলানা রূমীর আরও দুইটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। মাওলানার তিন জন সন্তানের নামঃ • বাহাউদ্দীন মােহাম্মদ সুলতান ওলাদ • আলাউদ্দীন মোহাম্মদ • মুযাফফরুদ্দীন। মাওলানা রুমীর এই পত্নীর ইন্তেকালের পর দ্বিতীয় বিবাহ কেরা খাতুন কাউনাবীর সাথে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিবির গর্ভে একমাত্র কন্যা মালাকা খাতুন জন্মগ্রহণ করেন। "

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com


No comments

Powered by Blogger.