দিল চা তা হ্যায়
২০০১ সালে ফারহান আখতার পরিচালিত দিল চা তা হ্যায় সিনেমাটি মুক্তি পায়। সিনেমায় অভিনয় করেছেন আমির খান, অক্ষয় খান্না,
সাইফ আলি খান, প্রীতি জিন্তা।
আকাশ, সমীর এবং সিদ্ধার্থ ৩ জন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আকাশ তার বাবার ব্যবসা সামলানোর জন্য অস্ট্রেলিয়া যাবার পথে প্লেনে তার সাথে শালিনী নামের এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। আকাশ শালিনীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় কিন্তু শালিনীর বিয়ে ঠিক হয়ে রোহিত নামের একজনের সাথে। আকাশ বিষয়টি মেনে না নিতে পেরে বিয়ের দিন শালিনীর জামাই রোহিতকে মারধর করে এবং বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আকাশ এসব কাজে ওস্তাদ। এর আগেও আকাশ তার বন্ধু সমীরের প্রেমিকা প্রিয়ার সাথে তার সম্পর্ক ভেঙ্গে দেয়। আকাশ একদমই ভালোবাসায় বিশ্বাস করেনা। সমীর তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে হারিয়ে বেশ বিষণ্ণ হয়ে পরে। ওপরদিকে সিদ্ধার্থের এসব দিকে একদমই নজর নেই। সে সারাদিন ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যাই হোক, একদিন তিন বন্ধু মিলে ঠিক করে তারা গোয়া ভ্রমণে যাবে। সেখানে গিয়ে সমীরের সাথে পূজা নামের একজনের সাথে পরিচয় হয় এবং কথা প্রসঙ্গে জানতে পারে এই পূজার সাথেই সমীরের বাবা-মা বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। অন্যদিকে সিদ্ধার্থর সাথে জ্যাসওয়াল নামের একজন মাঝবয়সী মহিলার প্রণয় ঘটে। বিষয়টি আকাশ এবং সমীর জানতে পারলে তারা সিদ্ধার্থের সাথে দুষ্টুমি করে যা সিদ্ধার্থ মেনে নিতে না পেরে বন্ধুত্ব নষ্ট করে। একসময় জ্যাসওয়াল হাসপাতালে অসুস্থ হয় তখন আবার সিদ্ধার্থের সাথে আকাশ এবং সমীরের বন্ধুত্ব ফিরে আসে। এই সিনেমা থেকে বুঝা যায় বন্ধুরা সবসময় পাশে ছিলো, আছে এবং থাকবে। এই সিনেমা ২০০১ সালে বলিউডে নতুন দিনের সূচনা করে। নতুন আঙ্গিকে গল্প বলা, আমির খানের নতুন স্টাইলের থুঁতনির নিচে দাড়ি একটা আইকনিক স্টাইল তৈরি করেছিলো। এই সিনেমায় আমির খানের চরিত্র যুব সমাজের কাছে ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছিলো। এই সিনেমাটি যথেষ্ট ব্যবসা সফল হলেও এই সিনেমা নিয়ে তেমন আশা ছিলোনা। এমন কি পরিচালক নিজেও নিশ্চিত ছিলেন না যে এই সিনেমা আদৌও তিনি বানাতে পারবেন। তখন ফারহান আখতার মাত্র ২ টি সিনেমাতে সহকারী পরিচালকের কাজ করেছেন। এটাই তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা ছিলো। এই সিনেমা নির্মাণের আগে ফারহান আখতারের বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। ফারহান আখতার তখন নিজেকে ঘর বন্দি করে রাখতেন এবং প্রচুর সিনেমা, বই পড়তেন। এই সিনেমা নিয়ে আলাপ করতে ফারহান আখতার প্রথম করণ জোহারের অফিসে যান এবং করণকে গল্প শুনাতেই করণ বলে উঠেন,’ তুমি জীবনে কয়টি বই পড়েছো? তুমি যদি পরিচালক হতে চাও, তোমাকে প্রচুর পড়তে হবে। তোমার অনেকগুলো দেখার চোখ এবং বোঝার মতো মন থাকতে হবে।’
ফারহান আখতার এই কথা শুনে এক বছরে গুণে গুণে ২০০ টি বই পড়েন। এরপর তিনি এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমির খানের খোজ করেন কিন্তু তখন আমির খানের শিডিউল পাওয়া ছিলো বেশ কঠিন ব্যাপার। ৬ মাস চেষ্টার পর আমির খানের সাথে তার বসার সুযোগ হয়। শুরুতে আমির খানের ম্যানেজার ঘন্টার পর ঘন্টা ফারহান আখতারকে নতুন পরিচালক হওয়ায় বসিয়ে রাখতেন। তবে একদিন যখন কথা প্রসঙ্গে আমির খান জানতে পারলেন ফারহান আখতার জাভেদ আখতার এবং শাবানা আজমির সন্তান তখন তিনি লজ্জিত হলেন এবং সাথে সাথেই এই গল্পে কাজ করতে রাজি হলেন। এই সিনেমার অনেক সংলাপ আমির খান নিজে ইম্প্রোভাইজ করেছেন। আমির খান কতটা টিম ওয়ার্ককে প্রাধান্য দিয়েছেন তার একটা ছোট্ট উদাহারণ হলো, ফারহান আখতার যখন শুটিং এর শিডিউল করতে পারছিলেন না। আমির খান নিজে সহকারী পরিচালকের মতো স্লটের শিডিউল করে দিয়েছিলেন। এই সিনেমার একজন প্রোডাকশন বয় অসুস্থ হয়ে পরে আমির খান তখন তাকে সুস্থ করার জন্য নিজ খরচে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। আমির খান বলেছিলেন, ‘দ্যা শো মাস্ট গো অন। প্রোডাকশন বয় না থাকলেও আমি এবং সেটের অন্যান্যরা মিলে চা-পানি আনার কাজ করবো। কারন আমরা প্রত্যেকেই এখানে পারফর্মার। একটা সফল টিমওয়ার্কের ফল এই সিনেমা। মুক্তির এত বছর পরেও এই সিনেমার বেশ কিছু গান এখনো মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। মন ভালো করতে চাইলে এই সিনেমাটি দেখতে পারেন।
No comments