৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা : বাংলাদেশ বিষয়াবলি
৪৬তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এই ধাপে ৩ হাজার ১৪০ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো নম্বর পেতে গুরুত্বপূর্ণ ও দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দিয়েছেন ৪০তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারের (সাধারণ) মো. মোস্তফা জামান।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি বিষয় হলো বাংলাদেশ বিষয়াবলি। এখানে মোট ৩০ নম্বর বরাদ্দ। ভালো প্রস্তুতি থাকলে ২২-২৫ নম্বর তোলা যায়।
বিগত বিসিএসের প্রশ্ন বিশ্লেষণ
বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার আগে বিগত বছরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়তে হবে। ৩৫-৪৫তম বিসিএসের বাংলাদেশ বিষয়াবলির প্রশ্নগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিগত প্রশ্ন দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন, কী ধরনের প্রশ্ন হয় এবং কোন কোন অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। অনেক সময় বিগত বছরের অনেক প্রশ্ন পরবর্তী বিসিএসে রিপিট হয়। একই সঙ্গে ব্যাখ্যাসহ বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে অনেক নতুন বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।
বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি
বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো এটি। এই অধ্যায়ের জন্য ৬ নম্বর বরাদ্দ থাকলেও বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, এখান থেকে ১০-১২টি প্রশ্ন আসছে। এই অধ্যায়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রাচীনকাল থেকে সমসাময়িক কাল, ১৯৪৭ সালের আগের ব্রিটিশ ভারতের অবস্থা, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর। এই অধ্যায়ে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে সংঘটিত বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে হবে। উল্লেখ্য, বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ থেকে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে এবং ভাইভাতে এখান থেকে অনেক প্রশ্ন আসে।
বাংলাদেশের কৃষি
বিভিন্ন ফসলের জাত, কৃষিতে নতুন উদ্ভাবন, কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জিআই পণ্য, কৃষি উৎপাদন প্রভৃতি এই অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। এখান থেকে প্রতিটি বিসিএসে অন্তত ৩ নম্বর থাকে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা
বাংলাদেশের জনসংখ্যা থেকে খুব বেশি পড়ার প্রয়োজন নেই। এখান থেকে আদমশুমারি (জনশুমারি) এবং বিভিন্ন উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থান, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন হয়ে থাকে। এগুলো গুরুত্ব দিলেই হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি
এটি বিশাল একটি অধ্যায়। বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অর্থনীতি এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হলো বাংলাদেশের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতীয় বাজেট, এডিপি, মেগা প্রকল্প, রাজস্ব খাত, আয়-ব্যয়ের খাত, জিডিপির পরিমাণ, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় প্রভৃতি। এখান থেকে ৩ থেকে ৫টি প্রশ্ন হয়ে থাকে প্রতি বিসিএসে। ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা’ (সর্বশেষ সংস্করণ) বইটি এ ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি, পোশাক খাত, জাহাজভাঙা শিল্প, আইসিটি খাত, পর্যটন খাত, বৈদেশিক ঋণ, এফডিআই প্রভৃতি এই অধ্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি, সবচেয়ে বেশি আমদানি, সবচেয়ে বেশি রপ্তানির মতো বিষয়গুলোও পড়তে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা
এই অধ্যায় থেকে খুব বেশি প্রশ্ন হয় না, যদিও সিলেবাস অনুযায়ী ৩ নম্বর বরাদ্দ আছে। এখান থেকে মূলত সুশীল সমাজ ও চাপ সৃষ্টিকারী দল নিয়ে প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ ছাড়া কখনো কখনো রাজনৈতিক দল, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন হয়।
বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা
বাংলাদেশ সরকার তিনটি অঙ্গ নিয়ে গঠিত। অঙ্গ তিনটি হলো আইন বিভাগ, শাসন বা নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। এই তিনটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের গঠনরীতি, দায়িত্ব ও কার্যাবলি, পরিচালনা পদ্ধতি, আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এই অধ্যায় থেকে প্রতিটি বিসিএসে একাধিক প্রশ্ন হয়ে থাকে। সুতরাং এটি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধান
বিসিএস প্রিলিমিনারি ছাড়াও লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভাতে বাংলাদেশ সংবিধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ব্যক্তিজীবনে এবং সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন সংবিধান জানা খুবই জরুরি। সংবিধান থেকে কিছু বিষয় খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে এবং বিস্তারিত পড়তে হবে। সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস, সংবিধানের প্রস্তাবনা, অধ্যায়, তফসিল, সংবিধান সংশোধনী, গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ ভালো করে চর্চা করতে হবে।
■ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ নিচে দেওয়া হলো, যেগুলো পরীক্ষায় বেশি বেশি আসে—অনুচ্ছেদ ১-১২, ১৫, ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৫, অনুচ্ছেদ ২৭-৪১, ৪৪, ৪৫, ৪৭, অনুচ্ছেদ ৪৮-৫১, অনুচ্ছেদ ৫৪-৫৬, ৬৪, ৭০, ৭২, ৭৫, ৭৭, ৮১, ৮৭, ৯৫, ১০২, ১১৭, ১৩৭, ১৪১, ১৪৫, ১৫২।
■ যেসব সংশোধনী বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হলো—প্রথম, দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম, দ্বাদশ, পঞ্চদশ, ষোড়শ। এ ছাড়া পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল থেকে পরীক্ষায় বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন
বাংলাদেশের খেলাধুলা, চলচ্চিত্র, বিভিন্ন পুরস্কার এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এই অধ্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে মূলত সমসাময়িক বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের নদ-নদী, ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরণ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন হয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়। দেশের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন অর্জন, দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অবকাঠামো উদ্বোধন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন কেউ আসীন হলে, সরকার কোনো বিশেষ মাইলফলক স্পর্শ করলে সেগুলো পরীক্ষায় আসাটাই স্বাভাবিক।
কী বই পড়বেন
■ উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি
■ বাংলাদেশ সংবিধান: আরিফ খান
■ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা
■ যেকোনো সিরিজের বই
■ দৈনিক পত্রিকা
■ কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
■ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ (কনফিডেন্স রিসার্চ ওয়ার্ক লিমিটেড)। এটি লিখিত ও ভাইভাতে কাজে দেবে।
সর্বশেষ, পড়াশোনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করতে হবে। শুরুতে অনেক বড় সিলেবাস মনে হতে পারে। শুরু করে দিন, দেখবেন সিলেবাস ছোট হয়ে আসছে। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
follow our Twitter account Dhaka Voice
No comments