Adsterra

ধলেশ্বরী নদীর তীরে এক নগরের খোজে

ধলেশ্বরী নদীর তীরে এক নগরের খোজে, সাভার, ঢাকা,ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice;

ধলেশ্বরী নদীর তীরে এক নগরের খোজে, সাভার, ঢাকা।

নগর সভ্যতার উত্থান পতনের যত খেলায় মত্ত এই পৃথিবী।বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে বিরুলিয়া আকরান সড়কে এসে দাড়ালাম এবার গন্তব্য আকরান বাজার।থম দেওয়া একটা পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে কেমন জানি বিষন্ন সবকিছু।আকরান বাজারে অটো এসে থামলো ভাড়া নিলো দশ টাকা,এবার আকরান বাজার থেকে পরবর্তী গন্তব্য সাভার,অন্য একটি অটোতে উঠে পরলাম কিছুদূর যাওয়ার পর এক মোটর সাইকেলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্যে অটো আল্লাহর রহমত অটো ড্রাইভারের ভূমিকায় বড় ধরনের দূর্ঘটনার হাত থেকে বেচেঁ গেলাম।

ধলেশ্বরী নদীর তীরে এক নগরের খোজে, সাভার, ঢাকা,ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice;



সাভার স্ট্যান্ডে এসে অটো দাড়ালো ত্রিশ টাকা ভাড়া দিয়ে অটো থেকে নেমে পরলাম বরাবরের মত এবারও আমার সফরসঙ্গী গুগল ম্যাপ। ফুটওভার পার হইলাম এরপর আরেকটা অটোতে উঠে পরলাম গন্তব্য ছিলো আড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে কিন্তু অটো ড্রাইভার আমাকে নামিয়ে দিলো বাজার নামক জায়গায়।আমি যেখানে নামলাম সেখানেই ঐতিহাসিক এক বাড়ি অবস্থিত যেটি সাভারের ঐতিহাসিক এক ব্যক্তির বাড়ি জমিদার রাখাল চন্দ্র সাহার বাড়ি।
এই বাড়িটি আমার দেখার লিস্টে ছিলো না,অটো ড্রাইভারকে বলেছিলাম আড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে যাবো সে আমাকে এখানে নামিয়ে দিলো।এবার আমি সেই বাড়িতে প্রবেশ করলাম,বাড়ির সামনেই দুজন মানুষকে পেলাম তাদের থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়িটি দেখা শুরু করলাম।অনুমতি নেওয়ার কারণ হলো এটি কোন এক রাজনৈতিক নেতার বর্তমান বাসভবন। এবার আসি রাখাল চন্দ্র সাহা সম্পর্কে -
রাখালচন্দ্র সাহা (মৃত) একজন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক। তিনি সর্বপ্রথম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নিকটে অবস্থিত সাভারে শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেন। সাভারের দানবীর নামে পরিচিত এই গুণী ব্যক্তি মাতার নামে ছেলেদের থাকার বোর্ডিং, পিতার নামে সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত), কাকার নামে মহেশচন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয় এবং সাভার পাবলিক লাইব্রেরী (১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত) সহ আরো অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।

ধলেশ্বরী নদীর তীরে এক নগরের খোজে, সাভার, ঢাকা,ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice;


তার মৃত্যুর পর স্ত্রী প্রিয়বালা সাহা পোষ্যপুত্র গ্রহণ করেন। উক্ত পোষ্যপুত্র ঋষিকেশ সাহা পিতা রাখাল বাবুর নামে রাখালচন্দ্র স্মৃতি ভবন ও জনসাধারণের জন্য একটি খেলার মাঠ করেন। প্রিয়বালা সাহা ১৯৮০ সালে তার বসতবাড়ি অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাসস্থানের জন্য দান করেন। বর্তমান সাভার কলেজ তার দানকৃত জমির উপর অবস্থিত।
এই হলো রাখালচন্দ্র সাহার সংক্ষিপ্ত পরিচয়,এর বেশি কিছু তার সম্পর্কে জানতে পারিনি।জমিদার বাড়িটি দ্বিতল,সামনের দিকটা অনেকটা রোমান স্টাইলে করা।বর্তমানে পুরো বাড়িটাই সুন্দর ভাবে টিকে আছে।ভিতরে কি অবস্থা সেটা জানা পসিবল হয়নি।কারণ ভিতরে প্রবেশ সংরক্ষিত। মাঝেমধ্যে ভাবি ইতিহাস কত নির্মম ,কতটা ভয়াবহ।
রাখান চন্দ্র সাহার বাড়ি থেকে বের হয়ে গুগল ম্যাপ ধরে হেটে হেটে চলে এলাম আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির পুকুর পাড়ের কাছে,পুকুরের দু পাড়ে দুটি মন্দির।আড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে ঢুকার প্রথমেই চোখে পড়বে কালীমন্দির এটি হাতের ডান পাশে।জমিদার বাড়িতে এবার ঢুকার পালা ঢুকতেই চোখে পড়বে সিংহদ্বার।সেই সিংহ দ্বারের পাশ দিয়ে অনেক গুলো মূর্তি যেগুলো ভেনাসের মূর্তি হিসেবেই পরিচিত।এবার বাড়ির ভিতরে প্রবেশের পালা-মূল যে সিংহদ্বার সেটার বেহাল দশা সেখানে দুটো রুম আছে যেখানে মানুষজন বসবাস করেন একসময় হয়তো এখানে প্রহরীরা থাকতো।বিভিন্ন লোহার কারুকার্যে সেই রুমের সামনের অংশ সেজেছে।বিশাল এক উঠান সেই উঠানের এক পাশে পাশাপাশি দুটি প্রাসাদ। প্রথম ভবনটির নাম রাই শশী নিবাস যেটি বাংলা ১৩০৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিলো। এবং এই ভবনটির কারুকার্য নজরকাড়া,এই ভবনের পাশেই দ্বিতল আরেকটি ভবন যেটি রাই নিকেতন হিসেবে পরিচিত বাংলা ১৩৪৪ সালে সেটি নির্মাণ করা হয়েছিলো।
আমি বাড়ির ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তারা আসলে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি,অনেকটা বিরক্ত তারা।দারুণ সব কারুকার্য এখনো ফুটে আছে দুটো ভবনেই।রেলের পাত ব্যবহার করা হয়েছে ছাদের বর্গা হিসেবে।কি দারুণ সব আর্ট এখনো প্রকাশ পাচ্ছে বাড়ি দুটিতে।

ধলেশ্বরী নদীর তীরে এক নগরের খোজে, সাভার, ঢাকা,ঢাকা ভয়েজ,  dhaka voice;


একসময়ের ইতিহাস ঐতিহ্যে ঠাসা জমিদার বাড়ি আজ কোলাহলে মত্ত কিন্তু সেই জমিদারি আর নেই নেই সেই হাকডাক,এই জমিদার বাড়িতে অনেক গুলো হিন্দু পরিবার বসবাস করে তারা কি আসলেই আড়াপাড়া জমিদার বাড়ির বংশধর নাকি প্রজারা তা জানা যায়নি এমনকি এ নিয়ে তারা কোন বক্তব্য দিতেও ইচ্ছুক না উলটো বিরক্ত।
এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগে এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়।এই জমিদার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পালা,বের হওয়ার সময় কালী মন্দিরে গেলাম সেখানে নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়।আশপাশে অনেক হিন্দু পরিবার বসবাস করে।
আড়াপাড়া জমিদার বাড়ি দেখা শেষে সেখান থেকে বের হলাম এবার অন্য একটি অটোতে উঠে আবার চলে এলাম সাভার বাস স্ট্যান্ডে এবার ফুটওভার ব্রিজ পাড় হয়ে অটো নিলাম রাজফুলবাড়ীয়ার উদ্দেশ্যে। বাসে দশটাকা ভাড়া কিন্তু আমি একটু রিলাক্সে জন্য রিক্সা নিয়ে নিলাম।রিক্সা একদম রাজফুলবাড়ীয়া ঐতিহাসিক নগরে এসে থামলো। এই রাজফুলবাড়ীয়া ডিপজলের বাড়ি আছে ,ডিপজল নিজেও সেখানের একটি ঐতিহাসিক বাড়ি দখল করে সেটি ভেঙ্গে নতুন অট্রালিকা তৈরি করেছেন সেখানে। রাজফুলবাড়ীয়াতে কয়েকটি মন্দির এবং কয়েকটি পুরাতন বাড়ি টিকে আছে। বাড়ি গুলো যে যার মত করে দখল করে নিয়েছে আর মন্দির গুলো মধ্যে একটিতে পূজা অর্চনা হয় বাকি গুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই রাজফুলবাড়ীয়ার ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি।
রাজফুলবাড়ীয়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরী নদী মূলত এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিলো রাজফুলবাড়ীয়া নগর এটা আমার ধারণা। এখানে এক সময় পানাম নগরের মত রাস্টার দু পাশে অনেক বাড়িঘর ছিলো কিন্তু সময়ের স্রোতে আজ তা বিলীন হয়ে গেছে ধ্বংস হয়ে গেছে ধ্বংস করা হয়েছে।
এবার রাজফুলবাড়ীয়াকে বিদায় দিয়ে হেটে মেইন রাস্তার কাছে আসলাম সেখানে একটি হোটেলে দুপুর বেলার হালকা নাস্তা সেড়ে নিলাম।
ইতিহাস বড়ই নির্মম , যুগের সাথে সাথে ইতিহাসেরও ইতিহাস তৈরি হয়।



লিখেছেন ঃ বোহেমিয়ান ফয়সাল

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com


No comments

Powered by Blogger.