Adsterra

বিশ্বের ৩য় ক্ষুদ্রতম দেশ নাউরু

বিশ্বের ৩য় ক্ষুদ্রতম দেশ নাউরু, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, নাউরু দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র, Top News

নাউরু দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র। এর নিকটতম দ্বীপ হল ৩০০ মাইল পূর্বে অবস্থিত কিরিবাতির বানাবা দ্বীপ। এটি টুভালুর উত্তর-পশ্চিমে
, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের ১,৩০০ কিমি উত্তর-পূর্বে, পাপুয়া নিউ গিনির পূর্ব-উত্তর-পূর্বে, ফেডারেটেড স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে অবস্থিত।বিষুবরেখা থেকে দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশটির অবস্থান।

নাউরু ২১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি পৃথিবীর তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। এর পাশাপাশি এটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্বাধীন প্রজাতন্ত্র, এবং একমাত্র দেশ যার কোন রাজধানী নাই।

"নাউরু" নওরোয়ান শব্দ অ্যানাইওরো থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, যার মানে "আমি সৈকততে যাই।"

নিরক্ষরেখার ২৬ মাইল দক্ষিণে ডিম্বাকৃতির ছোট দ্বীপ। এর আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ১০ ভাগের ১ ভাগ। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘে সদস্য পদ রয়েছে নাউরুর। এই সদস্যপদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুবিধাও গ্রহণ করছে দেশটি। উঁচনিচু এবড়ো-খেবড়ো। চার দিকে বালুময় সমুদ্র সৈকত। নাউরুর জলবায়ু উষ্ণ ও অতিমাত্রায় আর্দ্র। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ওঠানামা করে। এর ধরন একেক বছর একেক রকম। দিনের বেলায় তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। রাতে তা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি হয়। সমুদ্রের পানির উচ্চতা ওঠানামার কারণে দ্বীপবাসীর জীবন ও স্থাপনা সব সময় শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে মাইক্রোনেশিয়ান আর পলিনেশিয়ানরা নাউরুতে বসবাস করা শুরু করে। তারা ১২টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। যার চিহ্ন নাউরুর পতাকায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নাউরুর পতাকা ১২টি তারকাখচিত। তবে বর্তমানে নাউরুর পতাকায় একটি তারার ছবি রয়েছে। নাউরুর ইতিহাস থেকে যতদূর জানা যায় সর্বপ্রথম ১৭৯৮ সালে দেশটিতে পা রাখেন এক ব্রিটিশ ক্যাপটেন। তিনি ছিলেন একজন তিমি শিকারিও। তার নাম জন ফেয়ার্ন১৯৩০ এর দশকে ইউরোপীয়রা নাউরুতে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র অথচ ইউরোপের বাঘা বাঘা দেশগুলো এটি নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। ১৯০০ সালে নাউরুতে আবিষ্কৃত হয় ফসফেটের খনি। এরপরই জার্মানরা নাউরুতে উপনিবেশ স্থাপন করে। জার্মানদের আধিপত্যের কারণে নাউরুর স্থানীয় অধিবাসীরা লাভের অংশ পেত না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত জার্মানরা এককভাবে এর দ্বারা লাভবান হয়েছিল। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ ফসফেট কমিশন নাউরুর খনি থেকে প্রাপ্ত ফসফেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধেরও অনেক পরে ১৯৭০ সালে নাউরুর স্থানীয় অধিবাসীদের দখলে আসলে ফসফেট সম্পদ। কিন্তু জার্মান ও ব্রিটিশরা তত দিনে সব চুষে খেয়ে নিয়েছিল। যা ছিল তা দিয়েই নাউরুর অধিবাসীরা তাদের জীবনমান কিছুটা উন্নত করেন। তবে তারা ছিল খুবই ভোগবিলাসী। ব্রিটিশরা নিজেদের স্বার্থেই নাউরুর লোকদের ভোগবিলাসী করে গড়ে তোলে। ব্রিটিশদের চতুরতার কারণে নাউরুর স্থানীয় লোকেরা অর্জিত অর্থ নিজেরা ভোগবিলাস করেই শেষ করে ফেলতো। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে তারা কোনো অর্থ ব্যয় করে নি। একসময় ফসফেট রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায় তখন নাউরুর অর্থনীতি আবার ভেঙে পড়ে। সেই সাথে অপরিকল্পিতভাবে ফসফেট উত্তোলণের কারণে দেখা দেয় পরিবেশ বিপর্যয়। দুই-ই মিলিয়ে নাউরুতে দেখা দেয় অস্থিরতা। এই অস্থিরতাই দেশটির উন্নয়নের প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই বিশ্বযুদ্ধেই নাউরুর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়।

১ম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দেশটির দখল নেয় যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ২য় বিশ্বযুদ্ধে এসে জাপান এককভাবে দেশটির দখল নেয়। জাপান নাউরুকে বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯ শতকে জার্মানরা এই দেশটিতে উপনিবেশ স্থাপন করে। নাউরুর একদিকে রয়েছে চীন এবং অন্যদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু দ্বীপ। আশেপাশের অন্য দেশ বলতে রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড। এই দেশগুলোর দূরত্ব নাউরুথেকে অনেকখানি। তবে তাদের সরাসরি প্রভাব রয়েছে এই ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। নাউরুর বাজেট নির্ধারণ করা হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে এবং নাউরুতে অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রার প্রচলন রয়েছে। এথেকেই বোঝা যায় বর্তমানে নাউরুতে অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। নিজেদের কোনো সামরিক বাহিনীও নেই। নিরাপত্তার বিষয়গুলো অস্ট্রেলিয়াই দেখে। ৮ বর্গমাইল এই দ্বীপটিতে ১৩ হাজার মানুষের বসবাস। এদের প্রধান ধর্ম খ্রিষ্ট হলেও এরা দুটি জাতিতে বিভক্ত। একটি হলো মাইক্রোনেশিয়াও অপরটি পলিনেশিয়াজনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ নাউরুয়ান। ২৬ শতাংশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্যান্য দ্বীপের। চাইনিজ ও ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত রয়েছে যথাক্রমে ৮ শতাংশ করে। ইংরেজি ভাষার প্রচালন রয়েছে ব্যাপকভাবে। সরকারি ভাষা নাউরুয়ান। নাউরুর মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে মোটাসোটা। ৯০ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত মোটা। দেশটিতে ডায়াবেটিসের হারও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। মানুষের জীবনাচরণে এখন সম্পূর্ণ পশ্চিমাদের অনুকরণ পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষাদীক্ষায় অনুন্নত রয়ে গেছে। ফসফেট খনির দেশ নাউরুএখন পুরোপুরি বিদেশী সাহায্য নির্ভর একটি দেশ। যার বেশিরভাগই যোগান দেয় অস্ট্রেলিয়া। এর বিনিময়ে তারা নাউরুকে ব্যবহার করে ডাম্পিং জোন হিসেবে। এক চুক্তির মাধ্যমে নাউরু অস্ট্রেলিয়া গমনেচ্ছু অনুন্নত বিশ্বের সব নাগরিককে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে। সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলো থেকে অসংখ্য মানুষ অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া এসব মানুষকে সীমান্ত থেকে ধরে নাউরুতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

নাউরুতে স্থানীয়ভাবে তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এগুলো হলো - ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, নাউরু ফার্স্ট ও সেন্টার পার্টি। রাজধানী কিংবা রাজনীতি না থাকলেও দেশটির নিজস্ব একটি শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব একটি সংসদ। এই সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৮টি। প্রতি তিন বছর পর পর এই সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাভুটির মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের মধ্যে একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। রাজনৈতিক দল না থাকায় যে ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা, তা হয় না। এর প্রধান কারণ গোষ্ঠী আর আত্মীয়তা রাজনৈতিক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। ১৪টি বিভাগে ভাগ করে শাসনকাজ পরিচালনা করা হয়। বিচার আর প্রশাসনিক ইউনিটগুলো মূলত বিভাগীয় কেন্দ্রগুলোতে বিন্যস্ত করে দেয়া হয়েছে। দেশটিতে নেই কোনো আনুষ্ঠানিক রাজনৈতক দল। এখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে দেশে ১৭টি সরকারের পতন হয়।

নাউরুতে ৩১ জানুয়ারীতে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।

নাউরু একটি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে একটি প্রজাতন্ত্র। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্র প্রধান এবং সরকারের প্রধান উভয়। 19-সদস্যের একটি একক সংসদ প্রতি তিন বছর নির্বাচিত হয়। সংসদ তার সদস্যদের থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে, এবং সভাপতি পাঁচ থেকে ছয় সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা নিয়োগ করে।

নাউরু ফসফেট খনিজে সমৃদ্ধ। ফসফেট 1907 সাল থেকে নাউরুতে খনন করা হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে এটি ছিল নাউরু এর প্রধাব সম্পদ এবং একমাত্র রপ্তানি।ন, যা দ্বীপের অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এবং এর গুণমান ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ। ফসফেট শিল্প এবং সরকারী পরিষেবাগুলি একসাথে দ্বীপের প্রায় সমস্ত বেতনভোগী কর্মসংস্থান প্রদান করে। তবে বর্তমানে খনিজ ফসফেট প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, আর এই খনিজ আহরণ করতে গিয়ে পরিবেশগত বিপর্যয়ের সূচনা হয়েছে

অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল নউরুর অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল এবং ভারোত্তোলনকে দেশটির রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দ্বীপটিতে আটটি দলের এক অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলের লীগও অনুষ্ঠিত হয়। নাউরুর অন্য জনপ্রিয় খেলাসমূহ হল ভলিবল, নেটবল, টেনিস এবং মাছ মরা। নাউরু কমনওয়েলথ গেমস-এ অংশ নিয়েছে, সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক-এ ভারোত্তোলন এবং জুডোতে অংশগ্রহণ করেছে।নাউরুর রাষ্ট্রীয় বাস্কেটবল দলে ১৯৬৯ সালে পেসিফিক গেমসে অংশ নিয়েছিল এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং ফিজিকে পরাজিত করেছিল।

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

 

No comments

Powered by Blogger.