ফির হেরা ফেরিঃ যেভাবে বলিউডের ক্লাসিক স্ল্যাপ স্টিক কমেডিতে পরিণত হয়েছে
হেরা
ফেরির প্রথম পর্ব যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছিলো ফির হেরা ফেরি ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছিলো।
এই পর্বের শুরুতেই দেখানো হয় প্রথম পর্বে ৪০ লাখ টাকা পাওয়া রাজু, শ্যাম এবং বাবুরাও
এক বিলাস বহুল বাড়িতে বেশ আমোদ-প্রমোদেই দিন পার করছে।
রাজু হঠাত Laxmi Chit Fund এর খোজ পায়। সেখানে আনুরাধা যে কিনা নিজেকে সেই ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে দাবি করে এবং সে রাজুকে প্রস্তাব দেয় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিনিময়ে ২১ দিনে সেই অর্থ দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। রাজু তখন শ্যাম এবং বাবুরাওকে বুঝিয়ে ৩০ লাখ টাকা জোগাড় করে এবং ৫০ লাখ টাকায় তাদের বাড়ি বিক্রি করে কিন্তু এক কোটি টাকা জোগাড় করতে তার যখন আরও ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। তখন সে মাস্তান পাপ্পু ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয় এবং তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ঠিক ২১ দিন পর যখন পাপ্পু ভাই রাজুর খোজ করে তখন জানতে পারে সে বাড়িটা এক পার্সি বন্দুক ব্যবসায়ীক কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। পাপ্পু ভাই তেওয়ারি সিং এর দলের গুন্ডা। তেওয়ারি সিং ২০ লাখ টাকা পাপ্পু ভাইকে ধার দিয়েছিলো, টাকা না পেয়ে সে পাপ্পু এবং তার বোনকে আপহরণ করে। ঘটনাটি জানতে পেরে রাজু ৩ দিনের মধ্যে ৪০ লাখ টাকা দেবার আশ্বাস দেয় তেওয়ারি সিংকে। এরমধ্যে একদিন রাজ্য প্রতিবেশী মুন্নাভাইয়ের ঘরে আড়িপেতে জানতে পারে তারা ৪ কোটি টাকার মাদক চুরি করতে যাচ্ছে। এদিকে পার্সি বন্দুক ব্যবসায়ীর বাড়ী থেকে তেওয়ারি সিং ৫ লাখ টাকার অস্ত্র পাপ্পু ভাইকে চুরি করতে বলে। কিন্তু জোকার সেজে রাজু,শ্যাম এবং বাবুরাও মুন্নাভাইয়ের বাসা থেকে সেই ৩টি বন্দুক এবং মাদক চুরি করে এবং তা কাছারি সিং এর কাছে বিক্রি করতে যায়। এরপর হঠাত করে আনুরাধার খোজ পাওয়া, জাল টাকা পাওয়া সহ নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে ফির হেরা ফেরি সিনেমাটি এগিয়ে যেতে থাকে। ফির হেরা ফেরি সিনেমাটির প্রথম পর্ব নির্মাণ করেছিলেন মালায়লাম সিনেমার পরিচালক প্রিয়দর্শন। তিনি এই সিনেমাটির সিক্যুয়াল আর নির্মাণ করতে চাননি কিন্তু প্রথম পর্বে তার নির্মিত সিচুয়েশনাল কমেডিগুলো প্রযোজকের একদমই পছন্দ হয়নি। তিনি সিনেমাটির সিক্যুয়াল নির্মাণ করতে চাইলেন এবং ওভার দ্যা টপ, স্ল্যাপ স্টিক কমেডি নির্মাণের জন্য প্রথম পর্বের চিত্রনাট্যকার নিরাজ ভোরার সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাকেই সিনেমাটি নির্মাণ করতে বলেন। মাত্র ১৮ কোটি টাকার এই সিনেমাটি ভারত থেকে এক বছরে ৭০ কোটি টাকা আয় করে এবং ৫২৫ টি সিনেমা হলে সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়। ফির হেরা ফেরি সিনেমাটি ইংরেজি সিনেমা Lock stock and two smoking barrels সিনেমাটি থেকে অনুপ্রাণিত। ফির হেরা ফেরি সিনেমা মুক্তির আগে হেরা ফেরি সিনেমার পরিচালক প্রিয়দর্শন প্রোডিসারকে সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয়কুমার এবং পরেশরাওয়ালকে নিয়ে ‘রাফতার’ নামের একটি একশন সিনেমা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু স্ক্রিপ্ট রাইটার নিরাজ ভোরা যখন এমন ড্রাই হিউমারের স্ক্রিপ্ট প্রযোজক ফিরোজ নাদিয়াতওয়ালাকে পড়ে শুনান তখন তিনি এই সিনেমাটিই বানাতে রাজি হয়ে যান এবং সঞ্জয় দত্তের পরিবর্তে সুনীল শেঠিকে কাস্ট করে ফলে সুনীল শেঠির চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারেও এই সিনেমা একটি মাইলফলক হয়ে উঠে। এই সিনেমার বিশেষ সৌন্দর্য হলো ড্রাই হিউমারে পরিপূর্ণ সংলাপগুলো। যেখানে হেরা ফেরিতে অধিকাংশ শটই স্ট্যাটিস এবং সাদা কালারের ছিলো সেখানে ফির হেরাফেরির শট ছিলো ডায়নামিক এবং কালারফুল কালার গ্রেডিংএ ভরপুর। ফির হেরা ফেরির দূর্বল দিক হলো এর স্ক্রিনপ্লে। দূর্দান্ত সংলাপ থাকলেও দূর্বল স্ক্রিনপ্লের অভাবে বেশ কিছু দৃশ্য এবং চরিত্রকেই খাপছাড়া লেগেছে। বিশেষ করে আনুরাধা( বিপাশা বসুর চরিত্র), মুন্নাভাই(জনি লিভার) এবং কাচরা সিং( মনোজ যোশীর) চরিত্র ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলা হয়নি। মুন্নাভাইয়ের চরিত্র কমেডিতে ভরপুর থাকলেও তার চরিত্রের বিস্তারিত আরও হতেই পারতো। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্ল্যাপস্টিক কমেডি জনরার এই সিনেমা বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম ক্লাসিক এবং ব্যবসাসফল সিনেমা।
লিখেছেন ঃ সাদ ধ্রুব
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments