Adsterra

চীনের পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখা গোপন প্রজেক্ট


চীনের পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখা গোপন প্রজেক্ট, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, কন্সট্রাকশন অব দ্যা মাউন্টেইন, Today Trending News, Today Viral News

কন্সট্রাকশন বা নির্মাণ শিল্প বর্তমান পৃথিবীর
বাড়তে থাকা শিল্পের মধ্যে একটি। আর এই শিল্পের বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ হল চীন। নান্দনিক সৌন্দর্যের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে হুবহু ফ্রান্সের প্যারিস শহর কিংবা পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে অসাধারণ নির্মাণ শিল্প চীনা শিল্পের দ্বারাই সম্ভব।

আজকে চীনের তৈরি আশ্চর্য ও অদ্ভূত সুন্দর নির্মাণ সম্পর্কে জানব।

কন্সট্রাকশন অব দ্যা মাউন্টেইন : এই নির্মাণ কাজটি শুরু হয়ে চীনের মাউন জিয়ানটাং ইনহেচি সিটিতে। ৬৭৬ উঁচু এই নির্মাণটির ব্যয় প্রায় ১৪ শত কোটি টাকা। এই নির্মাণটিকে সম্পন্ন করতে প্রায় ৬০ টির ও বেশি পাহাড় কেটে সমতল করা হয়েছে। মূলত এই সমতল ভূমির উপরে এখন একটি এয়ারপোর্ট তৈরি করা হবে। যা পরবর্তী পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ একটি এয়ারপোর্ট হতে চলেছে। প্রথমে এই পাহাড়গুলোকে ব্লাস্ট করে খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কারণ পাহাড় গুলো দীর্ঘ সময় ধরে বরফের ঢাকা থাকায় বেশ শক্ত এবং কঠিন প্রকৃতির হয়ে গিয়েছে। যেহেতু চীনের এই অঞ্চলে এয়ারপোর্ট বানানোর মতো কোনো উপযুক্ত স্থান পাওয়া কঠিন তাই এর চেয়ে ভালো উপায় আর কিছু ছিল না। এয়ারপোর্টটি হবে প্রায় ৪৫ মিটার চওড়া ও ২০০০ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে সম্পন্ন

হিল প্রটেক্টর : চীনের উলং নদীর তীরে পাহাড় ঘেঁষে কাজ চলছে অসম্ভব সুন্দর এই প্রজেক্টের। পাহাড় থেকে পাথর খসে পড়া রোধ করতে হাতে নেয়া হয় এই প্রজেক্টটি। প্রজেক্টই অবশ্য বেশ ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য কাজ। কিন্তু প্রজেক্টটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পাহাড়ের নীচ দিয়েই একটি রেল লাইন চলে গিয়েছে। আর এই উঁচু পাহাড়ের গা থেকে দুর্ঘটনা বসত কোনো পাহাড় খুলে ট্রেনের উপর পড়ে যাতে কোনো মালামালের ক্ষতি না হয় তাই পুরো পাহাড়ের গায়ে বিশেষ ধরণের জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কাজটি করা যেমন কঠিন, তেমনি শ্রমিকদের এত উচ্চতায় কাজ করতে প্রচুর পরিমাণ ধৈর্যের ও প্রয়োজন। বিশ্বে প্রথম এটি এমন কোনো প্রজেক্ট । দীর্ঘ দুই বছরের পরিশ্রমের শেষে ২০২১ সালে প্রজেক্টটি কাজ শেষ হয়। আর এখন এটি বিশ্বের রোমাঞ্চকর মানুষ ও ফটোগ্রাফারের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

বেইজিং ডাকসিং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট : হুবেই প্রদেশের বেইজিং এবং ল্যাংফং সীমান্তে অবস্থিত বেইজিং ডাকচীন হলো রাজধানী দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মূল এর সিক্স স্পোক শেপের কারণে এর ডাক নাম দেয়া হয়েছে স্টার ফিস। এই বিমানবন্দরের টার্মিনাল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর টার্মিনাল। যা প্রায় ৯৭ টি ফুটবল মাঠের সমান দীর্ঘ । এটি একই সাথে ২ মিলিয়ন যাত্রী একসাথে ধারণ করতে সক্ষম হবে। আর এই ধারন ক্ষমতায় পৌঁছাবে এটাই হয়ে উঠবে বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এই এয়ারপোর্টে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো এখানে চেকিং করার জন্য যাত্রীদেরকে দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। কিংবা ফ্লাইটে উঠতে অভ্যন্তরীণ কারো সাথে কথা ও বলতে হবে না। কারণ বিমানবন্দরে টার্মিনাল এর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীদেরকে সাহায্য করার জন্য রোবটিক্স সার্ভিস ও মোতায়ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিমানবন্দরটিতে একটি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে। যা সাধারণ বৃষ্টির পানি দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়। আর এই বৃষ্টির পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে ছয়টি পুল ও অভ্যন্তরীণ চ্যানেলে। যা মূলত নান্দনিক সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে। বিমানবন্দরটি ২০২০ সালে ও প্রায় ১৬ মিলিয়ন যাত্রীদেরকে সেবা দিয়েছে। আর এর সংখ্যা বর্তমানে বেড়েই চলেছে। এতে সরকারের খরচ রয়েছে ১১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।কিন্তু তাহলে পুরনো বিমানবন্দরগুলো এখন কি অবস্থায় আছে? বেইজিং রাজধানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখনো চলমান আছে। মূলত যাত্রী ভাগ ভাগাভাগি করে পুরনো বিমানবন্দর গুলোকে স্বস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন এই এয়ারপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।

আলাদিন সিটি : বিশ্বে প্রায় সকল দেশের মধ্যে উচু বিল্ডিং এর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দুবাই। আর তাই ইতিমধ্যে দুবাই এর বিল্ডিং গুলোকে দেখে আর আসল মনে হয় না। তবে বিষয়টা এতটাও আশ্চর্যজনক নয়। কারণ দিন দিন তাদের এই নান্দনিক শিল্পের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো আলাদিন সিটি। এটি হলো ১১ শতকের জনপ্রিয় রূপকথা আলাদিন কিংবা সিনবাদ নাবিকের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে প্রকল্পটির প্রাথমিক রূপ হিসেবে তিনটি সোনার টাওয়ার দেখা যায়। যা ছিল মূলত আলাদিনের জিনির ল্যাম্পের অনুরূপ। পুরো প্রকল্পটির জন্য প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ৩৪ তলা বিশিষ্ট এই ৩টি টাওয়ার প্রায় এক লক্ষ ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে নির্মিত হবে। এখানে একসাথে ৯০০ টি পার্কিং এর স্পেস সাথে ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্লগ থাকবে।

চান্দু চ্যাং ইন চায়না : ভেনিস, লন্ডন, হোয়াইট হাউস এবং আরো অনেক কিছু অনুকরণ করে চীন জুড়ে এমন অনেক কপি কাট শহর এবং বিশাল বিশাল অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। চান্দু চ্যাং বা আকাশ শহর হলো এই কপি কাট শহর গুলোর মধ্যে একটি। এটি মূলত প্যারিসের আদৌলতে তৈরি করা হয়েছে। যা কিনা ১০৮ মিটার লম্বা আইফেল টাওয়ারের প্রতিরূপ। চীন মূলত প্যারিসের বিভিন্ন রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট এবং টাওয়ারের আশেপাশের ডিজাইন ও অনুকরণ করেছে। ২০০৭ সালে এক লাখ মানুষের বাসস্থান হিসেবে যাত্রা শুরু করা হলেও ২০১৩ সালে সেখানে বসবাসরত জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২ হাজার। এর মূল কারণ হলো শহরটি হংকং থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। আর ধীরে ধীরে এটি প্রাত ভুতুরে শহরে পরিণত হয়ে গেছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর জনসংখ্যা কিছুটা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। ২০২১ সালে চান্দু চ্যাং একটি মেট্রোরেল ও চালু করেছে। যা এই বিচ্ছিন্নতা ইস্যুকে সহজেই সমাধান করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে চীন এইসব কপি কাট প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের চীনা আর্কিটেকচারের প্রতি জোর দিতে চাচ্ছে।

দ্যা নিউ সুয়েজ ক্যানাল : ১৮৬৯ সালে মঊল সুয়েজ খালটি নির্মাণ করা হয়েছিল ইউরোপ, ভারত ও পশ্চিম মহাসাগরের মাঝে সামুদ্রিক পথ সৃষ্টি করার জন্য। এটা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত স্লিপিং লেনগুলোর মধ্যে অন্যতম যা ১৯৩ কিলোমিটারের ও বেশি বিস্তৃত। সুয়েজ খালের গুরুত্ব কতটা তা স্পষ্ট হয় মাত্র ছয় দিনের জ্যামের ফলে বিশ্বের ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়েছিল। যদিও এর বিশাল তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ খাল মাত্র একটি শিপিং লেনের জন্যই অনুমোদিত। আর এখানে প্রতিদিন ৪৯ টি পণ্যবাহী জাহাজের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। তাই ২০১৪ সালের মিশরে সুয়েজ খালের সমান্তরালে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি দ্বিতীয় শিপিং ল্যান্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। আর সুয়েজ খাল ও পুরনো জলপথের একটি বিশাল অংশকে গভীর ও প্রশস্ত করছে। সেই সাথে এটা জাহাজ চলাচলের জন্য অপেক্ষমান সময় ও কমাতে সাহায্য করছে। এই খালটি ২০২৩ সালের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রাজস্ব আয় করবে বলে অনুমান করা হয়েছে। যা ২০১৪ সালে মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল। এবং এটা বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প গুলোর মধ্যে একটি।

• কানসাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট : জাপানের কানসাই অঞ্চলে ভ্রমণ করলে যে জিনিসটা আমাদের সবচেয়ে বেশি মুগ্ধকর তা হলো, কৃত্রিম দ্বীপে নির্মিত পৃথিবীর প্রথম কোনো বিমানবন্দর। কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এশিয়ার ব্যস্ততম বিমান বন্দর গুলোর মধ্যে একটি। কারণ যখন এই বিমান বন্দরটি অনুমোদন করা হয়েছিল, তখন এটি নির্মাণের জন্য কোনো জায়গা ছিল না। তাই এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল, একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হবে যা একটি বিশ্বমানের বিমানবন্দর ধারণ করতে পারবে। তিনটি পর্বতকে চূর্ণ করে এবং হাজার হাজার ভারি স্যান্টপাইপ দিয়ে সমুদ্রের উপর ৩০ মিটার মাটির স্তর স্থাপন করা হয়েছিলযার ফলাফল ৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং আড়াই কিলোমিটার চওড়া একটি কৃত্রিম দ্বীপ। এর নির্মাণ কাজ ১৯৯০ সালে যা শেষ হলেও এর চার বছর পরে ১৯৯৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানবন্দরটি খোলা হয়েছিল। আর এই বিমানবন্দরটির অভিনব অবস্থান এবং প্রকৌশলী উদ্ভাবন কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে এতটা জনপ্রিয় করেছে। ২০১৯ সালেও ১৮ মিলিয়নের বেশি যাত্রী কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন যা কিনা টোকিও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরে জাপানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে এটা এখনও বেইজিংয়ের রাজধানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কিছুটা পিছিয়ে। আর সেটা মাথায় রেখেই এর সম্প্রসারণ চলছে। এর ফলে বিমানবন্দরটি ২০২৫ সালের মধ্যে বছরে ৪০ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জায়গা দিতে সক্ষম হবে।

 চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

 

No comments

Powered by Blogger.