ভূমিকম্প নিয়ে সতর্কতা জরুরি
গত শনিবার সকালে আবার কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি এলাকা। এ দিনের ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ মাসে দেশে ছোট ও মাঝারি মাত্রার প্রায় ২১টি ভূমিকম্প হয়েছে।
এর ১২টি ভূমিকম্পের মধ্যে ৫ মাত্রার ওপরে মাত্রা ছিল ৩টির। শনিবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। ভূমিকম্পের কারণে কিছু কিছু স্থানে বড় বড় ভবনে ও ঘরের ছাদে ফাটল ধরেছে, কোথাও মেঝের টাইলসে ফাটল ধরেছে এবং কোথাও ভবন থেকে নিচে নামতে গিয়ে শতাধিক পোশাকশ্রমিকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো এলাকায় ভূকম্পনের জন্য ফল্টলাইনের বড় ভূমিকা থাকে। ভূতত্ত্বের বিশাল খণ্ডকে টেকটনিক প্লেট বলে। আর দুটি টেকটনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট বা চ্যুতি বলা হয়। ফল্টলাইনে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।
বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়। এ এলাকায় আছে দুটি টেকটনিক প্লেট। একটা ভারতীয় ও অন্যটি মিয়ানমার টেকটনিক প্লেট। এই প্লেট দুটি পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে। সেই দুটি প্লেটে সংঘর্ষের কারণেই এত ভূমিকম্প হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে আমরা দেখছি, এখানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এটা বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্ব লক্ষণ।
আমাদের দেশে এভাবে ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়াটা বড় বিপদের আশঙ্কা তৈরি করছে। সাধারণত দেড় শ বছরের মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা এখন এই সাইকেলের মধ্যে আছি। দেড় শ বছর মানে কিন্তু এটা নয়, ঠিক এ সময়ের মধ্যেই ভূমিকম্প হবে। এটা ১৪০ বছরে আবার ১৬০ বছরেও হতে পারে।
ভূমিকম্প আগাম বার্তা দিয়ে আসে না। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের কিছু করণীয় না থাকলেও, আগাম কিছু সতর্কতা ও দায়িত্ব পালনের ব্যাপার তো আছে। যেমন ভূমিকম্পসহনশীল ভবন নির্মাণ করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ইমারত নীতিমালা ও ভূমির ধরন না মেনে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানা হয় না। যেসব ভবন লাল মাটি বা শক্ত মাটির ওপর নির্মিত, সেই সব ভবনের ঝুঁকি কম। অন্যদিকে যেসব ভবন বালু ও নরম মাটিতে করা হয়েছে, সেসব ভবনের ঝুঁকি অনেক বেশি। নির্মম হলেও সত্য ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক ভবন জলাভূমি ভরাট করে বালু ও নরম মাটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সামান্য ভূমিকম্প হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা আছে। তা ছাড়া ঢাকা শহর ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
বড় ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ঢাকার ভবনগুলো নতুনভাবে পরীক্ষা করে ডিফল্ট ভবনগুলো ভেঙে ফেলার জন্য রাজউককেই দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে সতর্ক করার জন্য আগাম পদক্ষেপ নিতে হবে।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments