Adsterra

ম্যারাডোনা, মেসির দেশ আর্জেন্টিনা।


ম্যারাডোনা, মেসির দেশ আর্জেন্টিনা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, আর্জেন্টিনার জাতীয় খাবার আসাদো, ম্যারাডোনাকে দেড় লাখ অনুসারী ঈশ্বর মনে করে, Hot News

এবারের
ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মানুষের আর্জেন্টিনা নিয়ে যে উচ্ছ্বাস উন্মাদনার গোটা বিশ্বে নজর কেড়েছে এমনকি নিজেদের সেলিব্রেশনে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছে আর্জেন্টিনার সাধারণ মানুষ।

বাংলাদেশ থেকে ১৭ হাজার কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ আমেরিকার একটি স্বাধীন দেশ আর্জেন্টিনা। এটি বাংলাদেশ থেকে ১৯ গুন বড়।তবে এর জনসংখ্যা বাংলাদেশে জনসংখ্যা চার ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ সাড়ে কোটি। আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় এবং বিশেষ অষ্টম দেশ আর্জেন্টিনা।আর্জেন্টিনার আয়তন ২৭,৮০,৪০০ কিমি দেশটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আন্দেস পর্বতমালা দেশটির পশ্চিম সীমানা নির্ধারণ করেছে, যার অপর পার্শ্বে চিলি অবস্থিত। দেশটি উত্তরে বলিভিয়া প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর। এবং দক্ষিণে ড্রেক প্রণালী। সব মিলিয়ে দেশটির স্থলসীমান্তের দৈর্ঘ্য ,৩৭৬ কিমি

আর্জেন্টিনার ইতিহাস নিয়ে যদি বলা হয় তাহলে প্রথমে বলতে হবে আদি।বা প্রস্তর যুগে মানুষের পদচিহ্ন এই অঞ্চলটিতে পাওয়া গিয়েছিল। আর আধুনিক ইতিহাসে আর্জেন্টিনার উপস্থিতি ১৬ শতকের শুরুতে। স্পেনের উপনিবেশ ছিল এই অঞ্চল। এর শাসন কালে স্পেনীয়ারদের বিরুদ্ধে ১৮১০ সালে প্রথমবার বিপ্লবের ফুল ফোঁটায় আর্জেন্টটাইনার। ১৮১৬ সালে নিজেদের স্বাধীনতা হিসেবে ঘোষণা করে এর আর্জেন্টিনা। এরপর দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শেষে ১৮৬১ তে গঠিত হয় ফেডারেশন।

যার রাজধানী করা হয় বুয়েনোস আইরেস কে। তবে পরাধীনতার পার্ট কিন্তু তখনও শেষ হয়নি। বিংশ শতকের আগ পর্যন্ত মোটামুটি বিপ্লব আর বিক্ষোভেই কেটেছে আর্জেন্টাইনদের সময়। সময় দেশটিতে শাসন চালিয়েছে অন্তত ১৪ টি সেনা সরকার।

আর্জেন্টিনায় ভূ-প্রকৃতি জলবায়ু বিচিত্র। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিস্তার। এর মধ্যেই আছে রুক্ষ আন্দেস পর্বতমালা তাঁর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আকোনকাগুয়া। তবে বেশির ভাগ লোক দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত বিশাল উর্বর প্রেইরি সমভূমির পাম্পাস শহরে বসবাস করেন। পাম্পাসেই দেশটির অধিকাংশ কৃষিসম্পদ উৎপন্ন হয় এবং এখানেই দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত কাউবয় গাউচোদের আবাসস্থল।

আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত একটি বড় দেশ। বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশে এটি এবং ব্রাজিলের পরে দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটি আন্দিজ পর্বতমালা এবং পশ্চিমে চিলি দ্বারা বেষ্টিত। আন্দিজের পূর্ব দিকে আর্জেন্টিনার অভ্যন্তর সমতল এবং উর্বর তৃণভূমি, যাকে পাম্পাস বলা হয়। দেশের পূর্ব সীমান্ত হলো আটলান্টিক মহাসাগর। এর উত্তর-পশ্চিমে বলিভিয়া এবং উত্তরে প্যারাগুয়ে অবস্থিত। আন্দিজের উচ্চ পর্বত শৃঙ্গ আন্দিজ কর্ডিলেরা চিলির সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে হাজার ১৯৫ মাইল বা হাজার ১৪১. কিলোমিটার সীমানা তৈরি করেছে।

আর্জেন্টিনা দেশটি ৪টি অঞ্চলে বিভক্ত- আন্দিজ, উত্তর, পাম্পাস এবং প্যাটাগোনিয়া। পাম্পাসগুলো মূলত উর্বর কৃষি অঞ্চল।

আর্জেন্টিনায় তুলনামূলকভাবে স্থানীয় বা আদিবাসী মানুষের সংখ্যা কম। এর জনসংখ্যার বড় একটি অংশ ইউরোপ থেকে এসেছে। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রায় ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। যাদের বেশিরভাগই ইতালি, স্পেন এবং জার্মানি থেকে এসেছেন।

আর্জেন্টিনার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বুয়েনস আয়ার্সের আশেপাশের অঞ্চলে বাস করে। ইউরোপীয় প্রভাবের কারণে বুয়েনস আয়ার্সকে 'দক্ষিণ আমেরিকার প্যারিস' বলা হয়।

আর্জেন্টিনা একটি ফেডারেল প্রজাতন্ত্র। দেশটিতে বহু বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর কয়েকজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।

জাতীয় কংগ্রেস সিনেটে ৭২টি আসন এবং ২৫৭টি আসন নিয়ে চেম্বার অব ডেপুটিজ গঠিত। সুপ্রিম কোর্টে জন বিচারপতি থাকলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেই সংখ্যা কমে জনে দাঁড়াবে। বিচারকদের বাছাই করেন প্রেসিডেন্ট। তবে, সিনেটকে অবশ্যই সেই নিয়োগের অনুমোদন দিতে হয়।

ভেড়া পালন, তেল, খনি, কৃষি, এবং পর্যটন দেশটির আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।

আর্জেন্টিনায় কথিত স্পেনীয় ভাষার কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। আর্জেন্টিনার স্পেনীয় ভাষায় প্রচুর পরিমাণে স্থানীয় আদিবাসী ভাষার শব্দ প্রবেশ করেছে। এই আদিবাসী ভাষাগুলির মধ্যে আছে উত্তর-পশ্চিমের কেচুয়া ভাষা, উত্তর-পূর্বের গুয়ারানি ভাষা, এবং দক্ষিণের মাপুদুংগুন ভাষা।

আর্জেন্টিনা, প্রকৃতির আপন মহিমায় পটে আঁকা ছবি দেশেই তো জন্মাবে চিরবিপ্লবী। যেখানে আলো নাচনে জেগে উঠে দালানকোঠা, ক্যাফের আড্ডা জুড়ে ফুটবলের শৈল্পিক অবগাহন আর কৈশোর পেরোনো কিশোরীর মুচকি হাসিতে মাতে বিশ্ব।

আঠারো শতকে পৃথিবীর মানচিত্রে যখন দেশটিএ পদচিহ্ন তখন কেই বা জানতো, দেশটির ফুটবল নিয়ে মাতাবে সারা বিশ্ব। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপে নাম লেখানো পর নিয়ে মোট বার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা, যথাক্রমে- ১৯৭৮, ১৯৮৬ সর্বশেষ ২০২২ বিশ্বকাপে জয়।

দিয়েগো ম্যারাডোনা , হাভিয়ের জানেত্তি, হাভিয়ের মাশ্চেরানো, গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা এবং লিওনেল মেসি, ডি মারিয়া মতো নান্দনিক ফুটবল শিল্পীরা আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের নক্ষত্র।

দীর্ঘ স্পেনিস অর্ধ শতকের বেশি সামরিক শাসনের যাতাকলে অতিষ্ঠ মানুষ জেগে উঠেছিল বিপ্লবী চেতনায়। রুক্ষ অনুর্বর জমির বুকে তাই জন্মেছিলেন বিপ্লবী এর্নেস্তো চে গুয়েভারা। একাধারে চিকিৎসক, সমাজতত্ত্ববিদ, কবি, গেরিলা ইত্যাদিতে ভূমিকা রেখেছিলেন মাওসোলিয়াম কিউবান। চে গুয়েভারা হারিয়ে গেলে বেঁচে আছে তার অমর বাণী " এর্নেস্তো গেবারা দে লা সের্না"

আন্দিজের কোল ঘেসে গড়ে ওঠা এই দেশটিতে তাল দিয়েছে আটলান্টিকের হিমেল হাওয়া। তাইতো ভুবন ভুলানো ট্যাঙ্গো নাচের ইতি কথাতো দেশটির মাটিতে। আলো আর বাতাসের মিতালিতে যে নাচে জন্ম, সেই নাচই তো বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক নিত্যকৌশল।

২০০৯ সালে যা অন্তর্ভুক্ত হয় ইউনেস্কোর কালচার হেরিটেজে।

মাংস দিয়ে তৈরি খাবারের জুরি এনে আর্জেন্টিনার। আর্জেন্টিনার জাতীয় খাবার আসাদো। বিভিন্ন প্রাণীর মাংস বারবিকিউ করে খাদ্য তৈরি করা হয়। ঘরোয়া আয়োজন কিংবা সামাজিক উৎসবগুলোতে আসাদো একটি জনপ্রিয় খাবার।

ইমপানাদা দেখতে অনেকটা আমাদের পুলি পিঠার মতোই। মাংসপুলি বা সবজিপুলির সাথে এটার বেশ মিল রয়েছে। মাংস, সবজি, পনির এক সাথে কিমা করে রুটি দিয়ে পেঁচিয়ে তেলে ভাজা হয়।

পশুর উরুর মাংস, আলুর পেস্ট, চিজ- তৈরি মিলানিসা খাদ্যটি খুবি জনপ্রিয় আর্জেন্টিনায়। ধারণা করা হয় ইতালির অভিবাসীরা সর্বপ্রথম দক্ষিণ আমেরিকায় এই খাবারের প্রচলন করে।

দীর্ঘদিন স্পেনের শাসনে থাকায় পোশাক স্থাপত্যতে রয়েছে স্পেন আর ইতালি প্রাসাদের ছাপ। বিশ্বের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড ফিল্মের জন্ম আর্জেন্টিনায়।

ইউরোপীয় লাইফ স্টাইলের আধিপত্য এর কারণে প্রায়ই গল্প কিংবা উপন্যাসে ছোট ইউরোপ নামে সম্বোধন করা হয় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেসকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে তাদের দূতাবাস খোলার ঘোষণা দিয়েছে আর্জেন্টিনা। এই সুযোগটি ছড়িয়ে আপনার নিতে চান, যদি পর্যটনের জন্য আর্জেন্টিনা যেতে চান সেখানে কিন্তু অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। পাহাড়, পর্বত,সমুদ্র, মরুভূমি কি নেই আর্জেন্টিনায়! চলুন এক নজরে দেখে আসি

ইগাজু জলপ্রপাত' দেখতে সারা বিশ্ব থেকে আর্জেন্টিনায় আসেন পর্যটকরা। এই জলপ্রপাতটি ২৭৫ টি আলাদা জলপ্রপাত ঝর্ণার মিলনে তৈরি হয়েছে। এই স্থানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি হল এই অর্ধ-বৃত্তাকার জলপ্রপাতটি, যেটিকে শয়তানের গলা বলেও অভিহিত করা হয়। এর উচ্চতা ৮০ মিটার এবং প্রস্থ মিটার। এই সুন্দর জলপ্রপাতটি দেখতে বছরে প্রায় মিলিয়ন পর্যটক আর্জেন্টিনাতে আসেন।

পেরাইটো মরেনো হিমবাহ আর্জেন্টিনার অন্যতম আকর্ষণ। এই হিমবাহ তৈরি হওয়ার কারণে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পাশ্ববর্তী একটি পার্ক নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ছে, তারপরও এই হিমবাহের সৌন্দর্য পর্যটকদের বেশি মুগ্ধ করে। এখানে একটি বরফের নদী রয়েছে। এই হিমবাহটি আর্জেন্টিনার দক্ষিণাঞ্চল প্যাটাগোনিয়াতে অবস্থিত। এটি মূলত ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩০ কিলোমিটার প্রস্থ একটি বরফখন্ড যেটি বিশ্বের তৃতীয় বড় নিরাপদ পানির উৎস।

আর্জেন্টিনার স্বল্প পরিচিত একটি পর্যটন কেন্দ্র হল এল চাল্টেন এখানে যাওয়ার জন্য কোনো এয়ারপোর্ট নেই, শুধু একটি বাস এখানকার অনুন্নত রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। যেটি শহর থেকে সাড়ে ঘন্টায় পৌঁছিয়ে দেয়। তারপরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই এল চাল্টেন অনেক পর্যটকের কাছেই বেশ পছন্দের একটি স্থান। এল চাল্টেন মূলত ১৯৮৫ সালে চিলির সাথে বর্ডার এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। এরপর আস্তে আস্তে এটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়।

আর্জেন্টিয়ায় অ্যালকোহল প্রস্তুতের জন্য পরিচিত মেংডোজা প্রদেশ প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন চাষাবাদে এই প্রদেশ প্রচুর পানি সরবরাহ করে থাকে। মেংডোজা প্রদেশে অনেকগুলো উঁচু উঁচু টাওয়ার রয়েছে। এছাড়া প্রদেশটির পেছন দিকে আন্দিস পর্বতমালা এমনভাবে ছড়িয়ে রয়েছে যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। এখানেও অনেক পর্যটকরা আসেন তাঁদের মনবাসনা পূরণ করতে।

অ্যালকোহলের জন্য যেতে পারেন মেংডোজা প্রদেশে তেমনি বরফের জন্য যেতে পারেন এই বারিলোচিতে। এর পাশেই প্যাটাগোনিয়াও আর্জেন্টিনার একটি বিখ্যাত প্রদেশ যেটি সুইস জার্মান সুতোর জন্য প্রসিদ্ধ। আপনি যদি বরফের মাঝে স্কি করতে চান তাহলে যেতে পারেন আর্জেন্টিনার এই বারিলোচিতে। তবে বারিলোচিতে শুধু স্কিই নয় এখানে খেতে পারবেন মন ভুলানো সুইস চকোলেট, ভেলায় করে ঘুরতে পারবেন, ক্যাম্প বানিয়ে রাত যাপন করতে পারবেন, পাল তোলা নৌকাতে ঘুরতে পারবেন এবং লেকে মাছ ধরার মত মজাদার কাজও করতে পারবেন।

কিউব্রাডা দে হামাহুয়াকা আর্জেন্টিনার একটি সুপরিচিত পর্যটন এলাকা। এটি আর্জেন্টিনার উত্তর-পশ্চিমে জুজুই প্রদেশে অবস্থিত। কিউব্রাডা আসলে একটি গিরিখাত যেটি ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্রতল থেকে ২০০০ মিটার উপরে অবস্থিত। এটি আর্জেন্টিনার সাথে বলিভিয়ার সীমানা রেখা থেকে বেশ দূরে উত্তর অংশে অবস্থিত। শিলার গঠন এবং বহুবর্ণবিশিষ্ট পাহাড়ের চাকচিক্যে এটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে।

আর্জেন্টিনার আরেকটি সুন্দরতম পর্যটন এলাকা হল পুয়ের্তো মার্ডেইন। এখানে দেখার সুন্দর স্থান হল গুল্ফো নিউভোর দক্ষিণ রাইট হোয়েল, ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পান্টা টম্বো প্রাকৃতিক সুরক্ষিত এলাকার ম্যাজিলানিক পেঙ্গুইন উপনিবেশ, উপদ্বীপের সামনে পাখি এবং সামুদ্রিক প্রজাতির বিভিন্ন বন্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল। পুয়ের্তো মার্ডেইন মূলত ওয়েলশ ঔপনিবেশদের আবাসস্থল। এখানে দেখার মত একটি জায়গা হল ওয়েলশ টাউনের পাশে অবস্থিত গাইমেন যেটিতে ওয়েলশ ঔপনিবেশিকদের স্থাপত্য, ঐতিহ্য এবং ভাষা সংস্কৃতির পরিচয় লক্ষণীয়।

১৫ হাজা্র জনসংখ্যা বিশিষ্ট একটি পরিচিত শহর হল এল বলসন এটি বারিলোচি থেকে ঘন্টা দূরত্বে অবস্থিত। এটি বরফাচ্ছন্ন পর্বতে আবিষ্ট একটি সুন্দর শহর যেখানেও মাছ ধরা, ভেলায় করে ঘোরা, স্কাইকিং করা যায়। এখানেও অনেক মাদক উৎপন্ন করা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর এই আর্জেন্টিনার একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

অর্থনীতির কথা বলতে গেলে বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশ আর্জেন্টিনা। বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ এটি। তবে একসময় কিন্তু ধনী দেশের কাতারে ছিল এই আর্জেন্টিনা। সপ্তম ধনী দেশ ছিল আর্জেন্টিনা। তবে মুদ্রাস্ফীতি, বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সবকিছু মিলিয়ে তাদের দেশে অর্থনীতিতে ধস নেমে আসে। বর্তমানে দেশটিতে দারিদ্রতার হার ৩৫% রয়েছে বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে বেশ বিপর্যস্ত আজকের আর্জেন্টিনা। বর্তমানে আর্জেন্টিনায় বেকারত্বের পরিমাণ অনেক বেশি। কমে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। কৃষি খাত দেশটির প্রধান উৎপাদন খাত হলেও পানীয়, মোটরযান কিংবা ইলেকট্রনিক সামগ্রীর উৎপাদনে পিছিয়ে নেই আর্জেন্টিনা। ২০২০ সালেও হাজার ৪৮৮ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি করেছে এই দেশটি। এর মধ্যে রয়েছে সয়াবিন জাতীয় দ্রব্য, খনিজ তেল, ভুট্টা, গম, মটরযান আর প্রাকৃতিক গ্যাস

যদি আমরা পড়াশোনার কথা চিন্তা করি তাহলে কিন্তু পড়াশোনার দিকে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের তালিকায় ঢুকতে পারে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে পড়াশোনা থেকে শুরু করে, পাশ করা কিংবা শিক্ষার্থীদের যাবতীয় খরচ সবকিছু খরচই অনেক কম। টিউশন ফি, খাবার আর বসবাসের খরচ সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে থেকে আর্জেন্টিনাত এক মাসে গুণতে হয় ১০০০ ডলার। এছাড়াও রয়েছে অনেক স্কলারশিপ। তবে খরচের তুলনায় মান কিন্তু কোন অংশে কম নয়। দেশটিতে রয়েছে ভালো ্যাংকিং এর বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।

আর্জেন্টিনায় স্থানীয় বহিরাগত অর্থাৎ যারা বিদেশ থাকে আসে তাদের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করতে আলাদা আইনই রয়েছে চাকরির ক্ষেত্রে। এখানে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পেলে যে কেউ চাকরিতে যোগদান করতে পারে। আর যারা স্টুডেন্ট হিসেবে দেশটিতে রয়েছেন, তারা পার্ট টাইম কাজের সুযোগ পান। তবে টানা অর্থনৈতিক চাপের কারণে আর্জেন্টিনায় বেতন বেশ কম। কাজ করতে হয় সপ্তাহে ৪৫ ঘন্টা। বাংলাদেশের মতই প্রতিদিন ঘন্টা করে অফিস করতে হয়। তবে শনিবার রয়েছে পাঁচ ঘন্টা হাফ অফিসের সুযোগ। তবে চাকরির চেয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য আর্জেন্টিনা বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। দেশটিতে আলাদা সুপ্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বছরে ১৯ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত তহবিল দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে আর্জেন্টিনায়।

আর্জেন্টিনার ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতির সবই তো জানা হলো; আর্জেন্টিনা নিয়ে কিছু মজার তথ্য রয়েছে।চলুন জেনে আসি আর্জেন্টিনা নিয়ে মজাদার পাঁচটি তথ্য:-

ম্যারাডোনাকে ফুটবলের ঈশ্বর বলা হলেও আর্জেন্টিনার কিছু মানুষ এটিকে রীতিমতো এটিকে ধর্মের রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে। দেশটিতে ইগলেসিয়া ম্যারাডোনিয়া নামে একটি ধর্ম রয়েছে। যার প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৯৮ সালে। এই ধর্ম আর্জেন্টিনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বহুদূর ছড়িয়ে গিয়েছে। বিশ্বের ৫৫ টি দেশে এই ধর্মের প্রায় দেড় লাখ অনুসারী রয়েছে। যারা ধর্মে অনুসারী তারা মনে করে, ম্যারাডোনায় তাদের ঈশ্বর। জার্সি নাম্বারের সাথে মিল রেখে তারা দশটি মূলনীতি রেখেছে। যার মধ্যে একটি- এই ধর্মের যারা অনুসারী তারা তাদের সন্তানদের নামের শেষে কিংবা মাঝে দিয়েগো শব্দটি থাকতে হবে।

ফুটবল আর আর্জেন্টিনা যখন প্রায় সমর্থক শব্দে পরিণত হয়েছে, তখন বেশ অবাক করা তথ্য হচ্ছে আর্জেন্টিনার জাতীয় খেলা কিন্তু ফুটবল নয়। আর্জেন্টিনা জাতীয় খেলা হচ্ছে এলপাতো। পোলো বাস্কেটবল এর সমন্বয়ে এই খেলাটি ১৯৫৩ সাল থেকে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রীয় খেলা। ২০১০ সালে এলপাতোকে সরিয়ে ফুটবলকে জাতীয় খেলা হিসেবে ঘোষণা দিতে দেশটির পার্লামেন্টের দাবি উঠে। তবে তা খারিজ হয়ে যায়। কারণ ফুটবল দেশটির শতভাগ জনপ্রিয় খেলা হলেও এলপাতো শতভাগ আর্জেন্টাইন খেলা।

আর্জেন্টিনাই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেটি দশ দিনের ব্যবধানে ক্ষমতায় বসিয়েছে জন রাষ্ট্রপ্রধানকে। আর্জেন্টিনা ২০০১ সালে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এর জেরে পদত্যাগ করেন দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফারনানদো লারোয়া।

পরে অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রামুন কুয়েরতা। তবে দুই দিনের মাথায় তাকে সরিয়ে ক্ষমতায় নেন এডলফু হ্রদরিগেজ। তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানতে নারাজ হন বিক্ষোভকারীরা। পরে পতন হয় তার ও। পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন করে দায়িত্ব নেন দেশটির স্পিকার এডুয়ার্ডো ক্যামালো। তিন দিনের মাথায় পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট করা হয় এডোওয়ার্ডো ডুহালডেকে।

লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনায় লিওনেল মেসির এতই খ্যাতি যে সবাই মেসির নামে নিজেদের সন্তান নাম রাখা শুরু করে। প্রায় লাখ খানেক শিশুর নাম হয়ে যায় মেসির নামে। এতে বড় ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে তাই বাদ হয়ে রীতিমতো সরকারি ডিগ্রী জারি করা হয়। যেখানে বলা হয় যে মেসির নামে সন্তানদের নাম রাখতে পারবে না কোনো আর্জেন্টাইন।

আজকে যে এন্টারটিকা মহাদেশের বেশ কিছু অংশ বেশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে আর্জেন্টিনা। আর এই দাবিকে বাস্তবে রূপ দিতে অভিনব এক পরিকল্পনা নেট দেশটি সরকার। ১৯৭৭ সালের মাসের অন্তঃসত্তা এক নারীকে পাঠানো হয় প্রতিকূল এই মহাদেশটিতে। তাকে অনুরোধ করা হয় বরফে ঘেরা এই অঞ্চলটিতে সন্তান জন্ম দিতে। যাতে করে জন্মসূত্রে অঞ্চলের কিছু অংশ দাবি করতে পারে সন্তান। ১৯৭৮ সালে জানুয়ারিতে এক সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তার নাম রাখা হয় এমিলিও মারকোজ। ইতিহাসবিদদের মতে মহাদেশটিতে জন্মানো প্রথম ব্যক্তি হলো এমিলিও।

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.