জেলেপল্লী থেকে উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর
নেই কোন প্রাকৃতিক সম্পদ কিংবা বিশাল ভূমি, তবুও
শুধুমাত্র শ্রম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দিয়ে যে দেশটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ
হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, সেটি হলো সিঙ্গাপুর। অথচ, একটি সময় তারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। আধা শতাব্দী আগেও তারা ছিল চরম দারিদ্রতায় মোড়ানো একটি দেশ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র হচ্ছে সিঙ্গাপুর। এটাকে একটি দেশ
না বলে একটি নগরী বললে ভাল হয়। সিঙ্গাপুর এই শব্দটি এসেছে মূলত সংস্কৃত শব্দ
সিঙ্গাপুরা বা সিংপুরা থেকে। যার মানে হল একটি সিংহের এলাকা। কথিত আছে একজন রাজা এই এলাকায় নেমে একটি সিংহ
দেখতে পান এবং সেখান থেকে এর নাম হয়ে যায় সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশ থেকে মাত্র তিন হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরে
আনুষ্ঠানিক নাম সিঙ্গাপুর প্রজাতন্ত্র। আয়তন মাত্র ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার। যেটা
আমাদের দেশের একটি জেলার সমান। দেশটি চারপাশে সমুদ্র বেষ্টিত। দেশটি দুইটি প্রণালী
দ্বারা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বিভক্ত হয়েছে। এখানে অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। তবে মাত্র কয়েক দশক পর সে জেলেরা কাজ ও
মেধা দিয়ে নিয়ে গেছে আধুনিকতার চরম শিখরে। অর্জন করেছে এশিয়ার সবচেয়ে
বসবাসযোগ্য এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে। এছাড়া
গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য নিয়ে খ্যাতি তো রয়েছেই।
সিঙ্গাপুরে মিশ্র ধর্মের লোক বসবাস করে। তাই তাদের ধর্মীয় অনুসঙ্গে জাতিগত কোনো নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। সমস্ত চীনাদের
প্রায় দুই থেকে তৃতীয়াংশ কনফেসিয়াসুন ও বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করে। এছাড়া কেউ মালয়, হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম চর্চা করে। তবে ইদানিং খ্রিস্টান ধর্ম অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক
সিঙ্গাপুরে এমন লোক ও রয়েছে যারা কোন ধর্মতেই বিশ্বাস করেন না।
সিঙ্গাপুরের ইতিহাস অন্যান্য দেশের ইতিহাসের তুলনায় অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। এটি
শুরুতে বেশ কয়েকটি দেশের অধীনে ছিল। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের অধীনে ছিল। জাপান পরাজিত হলে এটি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে
চলে যায়। ব্রিটেনের কলোনি থেকে বের হওয়ার পর সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই
খারাপ ছিল, মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য দেশের
প্রধানমন্ত্রীর লিকইয়ান গণভোটের আয়োজন করে প্রচারণা শুরু করে। বিপুল ভোটে জনগণ
রায় দেন মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য। ১৯৬৩ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর
মালয়েশিয়ার সাথে যুক্ত হয়।
মালেশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
আসলে সিঙ্গাপুরকে তারা নিজ দেশ হিসেবে চিন্তা করতে পারছিল না। সাথে সিঙ্গাপুরের মানুষের ও তারা আপন ভাবতে পারেনি। তাই
সিঙ্গাপুর যখন মালেশিয়ার সাথে যুক্ত হয় আদতে সেই সময়টিতে সিঙ্গাপুরের কোন উন্নতি হয়নি।
দারিদ্রতা, জাতিগত বৈষম্য, ধর্মীয়
দাঙ্গা মিলিয়ে একটি বিচ্ছিরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায় সিঙ্গাপুর। মালয়েশিয়ার
প্রথম প্রধানমন্ত্রী টেংকু আব্দুর রহমান প্রায় জোর করে ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরকে
নিজেদের দেশ থেকে আলাদা করে দেয়. নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের জন্য নয় ৯ আগস্ট আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান ইউ
সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর লি দেশটি কিছু বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
করলেন। জোর দিলেন শিক্ষা এবং বিদেশী বিনিয়োগ ও অবকাঠামো নির্মাণে। একই সাথে
ট্যুরিজম নিয়েও করলেন নতুন পরিকল্পনা। এবং তখনকার তার প্ল্যান চেয়ে খুবই কার্যকর
ছিল তার প্রমাণ মিলে এখনকার আধুনিক সিঙ্গাপুর দেখলে।
সিঙ্গাপুরে নিজস্ব কোন সংস্কৃতির নেই বলেই চলে। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া
এবং মালয়িও দ্বীপপুঞ্জ থেকে ধার করা সংস্কৃতি তাদের
পূর্বপুরুষেরা এতদিন চর্চা করে আসছিল। তবে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে সেই সংস্কৃতি
কিছুটা নতুন আকার ধারণ করেছে। এখানকার সংস্কৃতি পশ্চিমা ধরনের হলেও সিঙ্গাপুরে
ধর্মীয় গোঁড়ামি ও রয়েছে।
মারলিন বা সিংহ মৎস হচ্ছে সিঙ্গাপুরিদের গর্বের প্রতীক। তাদের বীরত্বের ইতিহাস। কথিত আছে বহু বছর আগে সিঙ্গাপুর যখন তামাসিক বার
সমুদ্র নগরী নামে পরিচিত ছিল তখন প্রচন্ড ১ সামুদ্রিক ঝড় উঠে দ্বীপে। সেখানকার
আদিবাসীরা নিজেদের সপে দেয় ঈশ্বরের হাতে। ঠিক তখনই সমুদ্র থেকে সিংহ মৎস আকৃতির
একজন উঠে এসে, ঝড়ের সাথে লড়াই করে বাঁচিয়ে দেয় আদিবাসীদের।
পোষাক ও তাদের সংস্কৃতি এক অবিচ্ছেদ অংশ। বাজু কুরুং হলো মালয়ি মহিলাদের
ঐতিহ্যবাহী পোশাক এবং সিঙ্গাপুরের জাতীয় পোশাক। বাজু কুরুং এই পোশাকটির উপরের অংশ ব্লাউজ এবং নিচের অংশে রয়েছে লম্বা স্কার্ট
বা ঘাগড়া। আরেকটি ট্রেডিশনাল পোশাক হলো, চেওসং।
সিল্কের তৈরি এই আরামদায়ক পোশাকটি খুবই জনপ্রিয়।
পুরুষদের ট্রেডিশনাল পোশাকের নাম বাজু মেলাও। লম্বা পাজামার সাথে ঢিলেঢালা জামার
মতো।
ঐতিহ্যবাহী মালয় নৃত্যের সাথে পপ গান ও সিঙ্গাপুরীদের কালচারের অন্তর্ভুক্ত।
২০০০ বছর আগে চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের শাস্ত্রীয় সংগীত নাইন সিঙ্গাপুরে এখনো
চর্চা করা হয়। শহরে বিভিন্ন ক্যাফেটে তরুণ অভিনয় শিল্পীদের এই সংগীতের কনসার্ট
হয়।
অনেকেই বলে সিঙ্গাপুরের আলাদা কোন খাবার নেই। ভিন্ন জাতি গোষ্ঠী দেশে অনেকে মালয়ীও, দক্ষিণ
ভারতীয় খাবারকে সিঙ্গাপুরের খাবার হিসেবে ভেবে ভুল করে। কারণ এই তিন জাতির
প্রাধান্য এখানেই। তবে নিওনিওং আচার এটা সাধারণত ভেজিটেবল আচার যেখানে বেশ ভালো টক
ও ঝাল মিশ্রণ থাকে। আরেকটি ট্রেডিশনাল খাবারের নাম বুকমাসা লেমাক। যা বাঁশের ভিতর
সেদ্ধ করে রান্না করা হয়। মুরগির মাংসকে নারিকেল দিয়ে মসলা মিশিয়ে বাঁশের ভেতর
দেয়া হয়। এছাড়া ডেজার্ট এর পোলোড হিতাম কোকোনাট আইসক্রিম।
সিঙ্গাপুরে স্ট্রিট ফুড খুবই জনপ্রিয়। স্ট্রিট ফুড এর জন্য বিখ্যাত
সিঙ্গাপুরে একসময় প্রায় ছয় হাজার দোকান ছিল। রাস্তার পাশে সেই দোকানগুলোতে
মজাদার লোভনীয় স্বাদের খাবার বিক্রি করা হতো। যদিও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে
সিঙ্গাপুরের এই ঐতিহ্য ।
সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় দল হচ্ছে পিপলস অ্যাকশন পার্টি। ১৯৫৪ সালে একটি ছাত্র
সংগঠন থেকে স্বাধীনতা পন্থী এই দলটির সূচনা হয়। দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেন লি কুয়ান ইউ। যিনি ছিলেন সিঙ্গাপুরের প্রথম
প্রধানমন্ত্রী। তিনি টানা ৩ দশক ধরে সরকার প্রধান ছিলেন।
এক প্রজন্মের সিঙ্গাপুরকে তৃতীয় প্রজন্ম থেকে প্রথম বিশ্বে তুলে আনার জন্য তাকে জাতীয় স্থপতি বলা হয়। লিক কঠোর ভাবে ল শুশৃঙ্খল ভাবে একদলীয় শাসন ধরে রেখেছিলেন। স্থিতিশীল এক ধরনের শাসন দেশের
অর্থনীতির প্রবৃত্তিকে মসৃণ ভাবে এগিয়ে নিতে পেরেছিল। সিঙ্গাপুরের রাজনীতি একটি
শান্তিপূর্ণ সংসদীয় প্রজতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হল সংকারের প্রধান। একটি রাজনৈতিক দলের
প্রভাব বেশি। নির্বাহী ক্ষমতাও সরকারের হাতে ন্যস্ত।। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান
হলেও তার ক্ষমতা কম
প্রায় এক দলীয় শাসনব্যবস্থা চালানো হয়েছে সিঙ্গাপুরে। তবে যারা দেশটির শাসন
করে তাদের সততার কারণে সিঙ্গাপুর পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিমুক্ত দেশ।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই উন্নত। চিকিৎসার মান ও খুব উন্নত হওয়ায়
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকার প্রধান ও ক্ষমতাবানরা প্রায় সেখানে চিকিৎসা নিতে যান। উন্নত চিকিৎসার মান উন্নত দেশের মত হলেও খরচ
তুলনামূলক কম।বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসা নেয়ার জন্য মাউন্ট এনিসাবেদ
হাসপাতালে যায়। দীর্ঘ মেয়াদী ট্রিটমেন্ট দিলে বাংলাদেশি কোনো বাসাত সাবলেট হিসেবেও ভাড়া নেয়া যায়। এ জাতীয় তথ্য অনলাইন সার্চ করলেও পাওয়া
যাবে।
এশিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুর। প্রতিবছর মিলিয়নের বেশি মানুষ সিঙ্গাপুরে যায় ভ্রমণ করতে। দেশটির ঔপনিবেশিক ভবন গুলোর নির্মাণশৈলী এবং উপসাগরের তীরে যে বাগান গুলো রয়েছে তা শহরের
সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ।
তবে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে সৌন্দর্য দেখা যায় রাতের বেলা। যখন অনেক উঁচু
কৃত্রিম গাছগুলো আলোয় ঝলমল করে উঠে।
এশিয়ার সবুজতম শহর বলা হয় সিঙ্গাপুরকে। আধুনিক স্থাপত্য শৈলী ও অপরূপ
সৌন্দর্যে ভরপুর দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া মহাদেশের দেশটি। এতোটুকু একটু শহর অথচ তার
সবকিছু ঘুরে ফিরে দেখতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগবেই। তবে আপনি যদি খুব সময়
সিঙ্গাপুর দেখতে চান, তাহলে চড়ে বসবেন সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার চরকিতে।
কারণ ফ্লায়ারে চড়লে নিমিষেই দেখে নিতে পারবেন পুরো সিঙ্গাপুর। পর্যটকদের জন্য
সিঙ্গাপুর ভীষণ জনপ্রিয় কারণ কারণ শহটির বেশিরভাগ এলাকায় হেঁটেই দেখা যায়। এর আকর্ষণীয় গন্তব্য হলো মেরিনা বে বা মেরিনা উপসাগর। মার্লিনের মূর্তির মারলাউন পার্কে দেখতে পারবেন। তাছাড়া সিঙ্গাপুরের পদ্ম ফুলের আকৃতিতে
আর্ট সাইন্স জাদুঘর। এর লোভনীয় বস্তুটি হলো এর অসাধারণ
সুইমিংপুল। রাতের বেলা মেরিনা বে এর চারপাশে দেখবেন চোখ জুড়ানো লেজার ।সিঙ্গাপুরে
দক্ষিণে রয়েছে সাধারণ জায়গা সেনথোছা। গ্যালারি, মিউজমেন্ট পার্ক, রিসোর্ট, ওয়াটার পার্ক, কি নেই সেখানে! ছোট দেশটিতে এক জায়গায় পেয়ে যাবেন বিনোদনের সব
অনুসঙ্গ।এছাড়া ইউনিভার্সেল স্টুডিও ক্লাব হাউস তো আছেই। ইনডোর স্কাই ড্রাইভিং এর
মজা ও নিতে পারবেন সানতোসায়।
আপনি যদি পুরোপুরি অন্যরকম কিছু চেষ্টা করতে চান তবে এটি আপনার জন্য দারুণ
একটি জায়গা। তবে মনে করে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে যাওয়ার আগেই আইফ্লাই এর বুকিং করতে
ভুলবেন না।
এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় জুরং পার্ক এর দেখা মিলবে সিঙ্গাপুরের বিশাল এলাকা জুড়ে পার্কটি রয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি পাখির বসবাস। এছাড়া ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর অনুমোদিত বোটানিক গার্ডেন। অসাধারণ সুন্দর গোছানো গার্ডেন টি । এই বোটানি গার্ডেন এর মধ্যে রয়েছেন ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেন অফ সিঙ্গাপুর।
কোথাও ঘুরতে যাবেন আর শপিং করবেন না তাকে হয়? শপিং এর জন্য
যেতে পারেন চায়না টাউনে। চায়না টাউন এই আরটি স্টেশন থেকে বের হলে চায়না টাউন।
এইটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যায় যে কিছু না কিছু কেনার মত অবশ্যই পাবেন।
সেরা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বের অন্যতম র্যাঙ্ক এ অন্যতম স্থান দখল করে আছে সিঙ্গাপুর। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে সিঙ্গাপুরের
শিক্ষার্থীরা গবেষণা এবং অন্যান্য কাজে ইউরোপ আমেরিকার শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশ চৌকস। তাদের রয়েছে সবচেয়ে প্রশংসিত স্কুল পদ্ধতি। রয়েছে প্রভাবশালী পি আই এস এর
পরীক্ষা। যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। সিঙ্গাপুরে
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনেক সুযোগ রয়েছে। ব্যাচেলার, মাস্টার্স ও ডক্টর ডিগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য আপনি আবেদন
করতে পারেবেন। দেশটির বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুটি সেমিস্টার অফার করে থাকে।
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়। তাই দেশটির শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চশিক্ষা করতে চাইলে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে
মালয় ও ম্যান্ডারিন, তামিল ইত্যাদি ভাষায় শিক্ষা দান করা হয়।
পর্যটনীয় দেশ হওয়ায় সিঙ্গাপুরের ভিসা পাওয়ার খুবই সহজ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জমা দিয়েই খুব সহজেই ভিসা পেয়ে যাবেন।
চাকরির জন্য অনেকে সিঙ্গাপুরে যেতে চান। তবে কোন ধরনের কাজে চাহিদা বেশি তা না
জেনে গেলে আপনি বিপদে পড়বেন। অভিজ্ঞতা এবং
প্রশিক্ষণ থাকলে চাইলেঅ পেয়ে যেতে পারেন আপনার পছন্দের চাকরি। গার্ডেনিং, কনস্ট্রাকশন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজ গুলো চাহিদা
সবসময় সিঙ্গাপুরে বেশি। তবে অবশ্যই দেশটিতে যাওয়ার আগে কাজের অবস্থা, ধরন ও চাহিদা সম্পর্কে জেনে যাবেন।
এছাড়া সিঙ্গাপুরে অনেক খন্ডকালীন কাজের সুযোগ রয়েছে। সেখানে পড়তে যাওয়া
শিক্ষার্থীরা ক্রুজ কর্তৃক অনুমতি নিয়ে কাজ করতে পারবেন। গ্রাজুয়েট এবং
পোস্টগ্রাজুয়েটরা চাইলে অনলাইনে আবেদন করে সিঙ্গাপুরে চাকরি নিয়ে যেতে পারেন
সিঙ্গাপুরে।
শ্রম এবং সম্পদ ব্যবহাদের স্বাধীনতা সূচক ৮৩.৯। দেশটির বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্মুক্ত এবং প্রতিযোগিতামূলক। এছাড়া দেশটিতে
আমদানির উপর কোনো শুল্ক।আরোপ করা হয় না। সিঙ্গাপুরে
উঠে আসার পেছনে রয়েছে দক্ষ শ্রমিকের প্রাপ্যতা, উন্নত
প্রযুক্তি, এবং অনূকুল অভিবাসনা ।
১৯৯০ সালে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে সিঙ্গাপুর। প্রধানমন্ত্রী লিক ওয়ান ইউ এর আধুনিক ও সময়ের পরিকল্পনার জন্য
নতুন এক সিঙ্গাপুর কে দেখেন বিশ্ব। তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে উঠে আসে প্রথম বিশ্বের
তালিকায় সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান কারণ হচ্ছে এখানে
অনেক জাহাজের রিপেয়ার ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। এছাড়ার ইলেকট্রনিক, ক্যামিক্যাল ও তেল পরিশোধনের অনেকগুলো কোম্পানি রয়েছে।
সিঙ্গাপুর সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ ভোট না দিলে তার জন্য জরিমানা করা হয়
দেশটিতে। নির্বাচনের আগের দিন সবার বাসায় পরিচয় পত্র
যুক্ত করে ডাকযোগে ব্যাবলেট পেপার পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাসা থেকে সিল মেরে দিয়ে
জমা দেয়া হয়।
সিঙ্গাপুরে নিজস্ব কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা নেই। তার বিদ্যুৎ আমদানি করে মালয়েশিয়া থেকে। তবুও দেশটিতে কোনো লোড শেডিং হয় না।
এছাড়া পানি ও খাদ্য আমদানি করে সিঙ্গাপুর।
অনেকে জরিমানা শহর হিসেবে সিঙ্গাপুরকে ডেকে থাকেন। কারণ পদে পদে জরিমানা করা
হয় এই দেশে। আপনি যদি নিয়ম না মেনে, যেখানে সেখানে
ময়লা এমনকি থুতুও ফেলেন তাও আপনাকে জরিমানা করতে হবে। এমনকি জেল ও হতে পারে।
এছাড়া ভাগ্য খারাপ থাকলে ময়লা ঝাড়ু দেয়ার দায়িত্ব পেয়ে যেতে পারেন সেখানে।
সিঙ্গাপুরে যেহেতু ট্যুরিজম থেকে মোটা টাকা আয় হয়, এজন্য দেশটিতে পতিতাবৃত্তি বৈধ। সিঙ্গাপুরে
অর্থের বিনিময়ে যৌন মিলনের এই পেশা বেআইনি নয়। যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক
বিধি নিষেধ আছে। পাবলিক প্লেসে পতিতাদের দর কষাকষি একদম নিষিদ্ধ।এজন্য
পতিতাবৃত্তির উপর নির্ভরতাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ধরুন আপনার বন্ধু কিংবা প্রিয়জন, তার জন্মদিনে
আপনি তাকে উপহার। দেওয়ার জন্য নিয়ে গেলেন একটি গাছ। ভাবুন তো তার প্রতিক্রিয়াটি
ঠিক কেমন হবে!
সিঙ্গাপুরবাসীদের জন্য এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ জন্মদিন কিংবা বিবাহ
বার্ষিকীতে গাছ উপহার দেয়া এটা তাদের
পুরনো রীতি।
No comments