আসলে কতটা নিরাপদ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র?
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। অনেকের মতে এটি বাংলাদেশের সব থেকে বড়
প্রকল্প। কারণ এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে, এটিই কিন্তু হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সব থেকে ব্যয়বহুল প্রকল্প। যেখানে এই বিদ্যুৎ
কেন্দ্রটি নির্মাণের বাজেট ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ১৪ হাজার কোটি টাকা। সেখানে এখানে
পদ্মা সেতুর বাজেট ছিল মাত্র ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে বুঝতেই পারছেন এটি কত
বড় একটি প্রকল্প।
এখন যে প্রকল্প যত বড়, তার ঝুঁকিটাও কিন্তু তত বেশি হয়ে বলে আমরা জানি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে প্রথম এবং প্রধান আশঙ্কা হলো পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এমনিতে পারমাণবিক প্রযুক্তি শতভাগ নিরাপদ প্রযুক্তি নয়। তার উপর বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ, একই সাথে পারমাণবিক প্রযুক্তিতে নিজস্ব সক্ষমতাহীন একটি দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা কি আসলেই জনগণের উপর ঝুঁকি চাপিয়ে দেয়া হয়!
যেমন :- সীতাকুন্ড, চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা
গুলো বাংলাদেশে কিন্তু এখন দৈনন্দিন বিষয় উঠেছে। ফলে সবার মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, যদি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিস্ফোরিত হয় ; তাহলে এটি কতটুকু ভয়াবহ হতে পারে! আর যদি এমনটাই
হয় তাহলে ভাবুন তো একবার, এর রেডিয়েশন কত হবে! আর সীতাকুন্ডের হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড বিস্ফোরণে যে প্রাণহানি ঘটেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরিনিয়ামের কারণে তার সংখ্যা দাঁড়াবে কয়েক গুণ
বেশি। এবং এর তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বয়ে বেড়াবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যেমন- ইউক্রেনে চেরনোবিলের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিস্ফোরণ। রাশিয়া, বেলারুশে এবং ইউক্রেনের তেজস্ক্রিয়তার
বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে জীবন হারায় অনেক পশু পাখি
সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ। এখনো সেই এলাকাগুলো বসবাসের অযোগ্য। বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম আর
ক্যান্সারে মৃত্যু এখনো সেখানে নিয়মিত ঘটনা। শুধু তাই নয়, কয়েক লাখ হেক্টর জমি আজও ফলনের অনুপযোগী। মনে প্রশ্নগুলো জাগতে পারে যে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কতটুকু? আর যদি এমন হয়, তাহলে সেটা কতটুকু ভয়াবহ হবে। এবং এই
ব্যয়বহুল প্রকল্পটি থেকে আমরা কতটুকু সুবিধাই বা পেতে পারি। শুধু তাই নয়, এই ব্যয়বহুল প্রকল্পের যে ঋণ; এই ঋণের বোঝা আমাদের জন্য কতটা বিপর্যয় বয়ে
আনতে পারে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো আজকে প্রতিবেদনে।
শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনাটি শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। ২৯২ একর
জায়গা নিয়ে নির্মাণ হচ্ছে এই বিশাল প্রকল্পটি। যার মধ্যে প্রকল্পের জন্য ১৬০ একর
এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি বরাদ্দ করা হয়। যদিও ১৯৬৮ সালের মধ্যে এই
প্রকল্পের কিছু আংশিক কাজ শুরু করা হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই পরিকল্পনা ১৯৬৩ সালে শুরু হলেও নানা জটিলতার পরে ২০০৯ সালে
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের একটি সূচনা পায়। এবং এই সময়েই বাংলাদেশ এবং রাশিয়া
প্রকল্পটি নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। যার ফলে ২০১৭ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ শুরু করা হয় এবং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত
নির্ধারণ করা হয়।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী অবস্থা
প্রতিরোধে লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেই স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে পাওয়ার ইউনিট হিসেবে
কাজ করবে VVR ১২০০ মডেলের দুইটি রিয়্যাক্টর। এই
কেন্দ্রটিতে থাকছে বিদ্যুৎ শক্তিবিহীন দীর্ঘকালীন পুলিং রিয়েক্টর এবং তাপ ক্ষয়কারী
ব্যবস্থা। এটি অটোমেটিক ভাবে শীতালায়নের কাজ করবে। এছাড়াও পারমাণবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্রে নির্বাচিত পারমাণবিক চুল্লিতে ৫ স্তরের একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও
রয়েছে। যেমন- ফুয়েল প্যালেট, ফুয়েল ফ্লাডিং, রিয়েক্টর প্রেশার ভ্যাসল। প্রথম এবং দ্বিতীয় কন্টেইনমেন্ট বিল্ডিং। এছাড়াও VVR 1200 রিয়েক্টরের শুধুমাত্র পাওয়ার ইউনিট কাজ করবে। যে
কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শুধু পাওয়ার ইউনিট বন্ধ হয়ে যাবে। এতেই রেডিয়েশন
বিকিরণ হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
২৪০০ মেগা ওয়ার্ড ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইউনিটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্রে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার। এবং মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশই রুশ ফ্যাডারেশন ঋণ হিসেবে দিবে এবং বাকি ১০ শতাংশ
অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে এক বিশাল অবদান
রাখবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। কারণ গ্যাস, তেল, কয়লা বা নবায়নযোগ্য সোর্স থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার
প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশ সাশ্রয়ী।
বাংলাদেশের থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট এর গড় উৎপাদন ক্ষমতার হার যেখানে শতকরা
৫০ শতাংশ; সেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন
ক্ষমতা হবে ৯০ শতাংশ ।
PDPF এর একটি তথ্য সূত্রে, বর্তমানে বাংলাদেশে পাবলিক এবং প্রাইভেট সেক্টরে প্রতি কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে খরচ হয় গড়ে ৬ টাকা ৬১ পয়সা। এছাড়াও ডিজেলে ২৮ টাকা ১৭ পয়সা। এবং
ফারমেস ওয়েলে ১৩ টাকার ৭৭ পয়সা। এবং কয়লার ব্যবহারের প্রতি কিলো ওয়াটে খরচ হয় ৮
টাকা ২৫ পয়সার মতো।
অন্যদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি
হিসেবে ইউরেনিয়াম ২৩৫ ব্যবহার করা হবে। যার কারণে প্রথম দুই দশক পর্যন্ত বিদ্যুৎ
উৎপাদনের খরচ প্রতি ইউনিটে ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা করে হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
ইউরো নিউক্লিয়ারের তথ্যসূত্রে, যেখানে প্রতি
কেজি কয়লা থেকে ৮ ও জ্বালানি তেল থেকে ১২ কিলো ওয়াট উৎপাদন করা যায়। সেখানে
ইউরেনিয়াম ২৩৫ থেকে প্রায় 24000 মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
এছাড়াও ইউরেনিয়াম একটি রেডিও এক্টিভ মেটাল। তাই ওপেন কিংবা স্পট মার্কেটের সরাসরি এর কেনাবেচা করা হয় না। এতে করে
ইউরেনিয়াম এর কেনাবেচার একটা রেগুলেটর থাকে। ফলে যে কোনো দেশ চাইলেই প্রয়োজনের
বেশি ইউরেনিয়াম কিনতে পারবে না। যার কারণে ইউরেনিয়াম এর দাম
ও স্থির থাকে। তাছাড়াও ২০২৪
সালের মাঝে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বন্ধ করে
দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরকারি খরচের পরিমাণ বহুল
কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়। অন্যদিকে, পারমাণবিক
বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ভবিষ্যতে সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ
এর মূল্য সাধ্যের রাখা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা যায়।
এছাড়াও ২০২৩ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ট্রান্সপারেশন সেক্টরের পাশাপাশি আরো অনেক সেক্টরেই বিদ্যুৎ এর চাহিদা কিন্তু আরো বাড়বে। যেহেতু বিদ্যুৎ এর চাহিদা বাড়বে তাই সরকার যদি সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দাম কম
রাখতে পারে, তাহলে মেট্রোরেল কিংবা অন্যান্য ইলেকট্রিক
অপারেশনের খরচ কম রাখা সম্ভব হবে। যার সুবিধা সরাসরি দেশের জনগণ ভোগ করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র
সহ বিভিন্ন দেশে এক ইউনিটে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আর্থিকভাবে তেমনটা
লাভবান হতে পারেননি। কিন্তু দুই ইউনিটের বা ১১০০ মেগা ওয়ার্ডের অধিক ক্ষমতা
সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রত্যাশিত মূল্য এবং কাঙ্খিত মাত্রায়
বিদ্যুৎ সরবারহ পাওয়া যায়। তাই ২ ইউনিটের
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র লাভজনক হবে বলে ধারণা করা যায়।
ইউনিট প্রতি ৫ টাকা হিসেবে প্রতি ঘন্টায় আয় হতে
পারে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এতে করে দৈনিক আয় হবে ২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এবং বাৎসরিক
আয়ে দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। বা ১২৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এর
বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক বছরের খরচ ৩৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে ধারণা করা
হচ্ছে । উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ধরা হলে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯০% বিদ্যুৎ উৎপাদন ১ বছরে আয় হবে ৭৭০ মিলিয়ন ডলার। সুতারাং ভুক্তগী ছাড়াও ঋণ পরিশোধ করেও লাভজনক হতে
পারে প্রকল্পটি।
এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গ্রেস ক্রিয়েটরের কারণে রাশিয়ার দেয়া ঋণ পরিশোধ করতে
হবে, ২০২৭ সালের মার্চ মাস থেকে ৪ শতাংশ সুদ হারে
প্রতি বছর ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার প্রতিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ২০২৪ সালের মধ্যেই
প্রকল্পের দুইটি ইউনিটের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা রয়েছে। এতে করে ২৪০০
মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে
প্রাথমিক ব্যয় করা হয়েছে, ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার ও বেশি। আর
প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু
হওয়ার পর থেকে এই প্রকল্পের স্থায়িত্ব হবে প্রায় ১০০ বছর ।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এটি জটিল প্রক্রিয়া। যার জন্য
প্রয়োজন অনেক প্রস্তুতি। পারমাণবিক
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অর্থায়ন, উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি নির্বাচনকারি নির্বাচন প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আর এই সব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আজ দৃশ্যমান। হতে পারে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেকাংশে পরিবর্তন করবে
বাংলাদেশের চিত্র।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ ; একই সাথে পারমাণবিক প্রযুক্তিতে নিজস্ব সক্ষমতাহীন একটি দেশ। সেখানে শুধুমাত্র আমদানি করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা
কি আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে কিনা?
এখন যেকোনো বৃহৎ প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পে ঝুঁকি কম বেশি থাকতেই পারে। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিশেষ আলোচনায়
আসার কারণ হলো পারমাণবিক দুর্ঘটনা। অন্য যে কোনো
দুর্ঘটনার থেকেও বেশি ক্ষতি করে। ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
বিশ্বে অতীতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বড় আকারে
দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস হয়েছে। যেমন- ১৯৮৬ সালের ২৬ শে এপ্রিল। ইউক্রেনের চেরনোবিলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিস্ফোরণ ঘটে। ৩৪ বছর পরিয়ে গেলেও চেরনোবিল এখনো বসবাসের অযোগ্য। বিকালঙ্গ শিশুর জন্ম আর
ক্যান্সারের মৃত্যু এখনো সেখানে নিয়মিত ঘটনা। রাশিয়া, বেলারুশ আর ইউক্রেনে তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে কয়েক লাখ
হেক্টর জমি এখনো উৎপাদন অনুপযোগী।
তারপরও বিশ্বের বহু দেশ দুর্ঘটনার বিরোধী প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্র চালু রেখেছে। ঝুঁকি প্রতিরোধে কার্যকারিতা নির্ভর করে কতটা উন্নত
প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলো এবং একই সাথে প্রযুক্তি ব্যবহারের জনবলের কারিগরি
দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কত ভাল তার উপর।
বিষয়টি এমন নয় যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে
কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। সব
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই নির্মাণ এবং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিপক্ষ
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেন কোন ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য নানা ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করে থাকে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও এমন বহু ধরনের
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানির
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অনেকের ধারণা এইসব বর্জ্য বাংলাদেশের
কোন এক অংশে মাটিতে পুতে ফেলা হবে। কিন্তু অনেক ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে কাজটা করা হবে
খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বাংলাদেশের জন্য কঠিন এই কাজটির দায়িত্ব নিয়েছে রাশিয়া। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহৃত
ইউরেনিয়াম এর বর্জ্য রাশিয়া তাদের নিজেদের তদারকিতে
রাশিয়া ফেরত নেবে। তবু এতে করে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার যে কোনো সম্ভাবনা নেই তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
এখন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আমাদের পরিবেশের উপর কিরূপ প্রভাব ফেলবে তা
এখনো সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যে খুব বেশি পরিবেশ
বান্ধব হবে, সেটাও কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না।
এছাড়াও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। এই যে এত বড়
একটি প্রকল্প এটির রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে! আর কিভাবেই বা
এটির অপারেট করা হবে!
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর দক্ষ জনশ্রুতি তৈরি করার লক্ষ্যে
রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আর এই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্য সারা বাংলাদেশ থেকে বাছাই করে তিন বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রাম এবং পাঁচ বছর মেয়াদি স্পেশালিস্ট প্রোগ্রামে রাশিয়াতে
ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে তারা তাদের পড়াশোনা শেষ করে
দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তাদের অর্জিত জ্ঞান এবং মেধা কাজে লাগাতে পারে। তবে রাশিয়া, আমেরিকা ও ভারতের কিছু বিশেষজ্ঞ দীর্ঘদিন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের
তদারকির কাজে নিযুক্ত থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব কারিগরিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব এক্ষেত্রে একটি দুর্বলতা বটে। যেকোনো দুর্ঘটনা জনিত বা বিপদ কালীন পরিস্থিতিতে পুরোপুরি বিদেশীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে। যা আসলেই একটি
চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে ধারণা করা যায়।
এছাড়াও যেহেতু রাশিয়া দেয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। ৪
শতাংশ সুধ হারে প্রতিবছর ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতির বাজারে জনসাধারণের জন্য এই ঋণের বোঝা হতেও পারে একটি অভিশাপ।
এখন ধরুন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিস্ফোরিত হয় তাহলে তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এই রেডিয়েশন
কত হবে? সীতাকুন্ডের হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইডের বিস্ফোরণে প্রাণহানি ঘটেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউরোনিয়ামের কারণে তার সংখ্যা দাঁড়াবে কয়েক গুণ বেশি। এবং এর তেজস্ক্রিয়তার
প্রভাব বয়ে বেড়াবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
বাংলাদেশের আয়তন ছোট হওয়ার কারণে আমরা ধারণা করতে পারি এই রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা দেশ জুড়ে। যেটা হবে একটি ভয়াবহ অবস্থা। তবে যেহেতু এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনার পরবর্তী অবস্থা প্রতিরোধের লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত ভাবে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সব রকমের ব্যবস্থা রেখেই স্থাপনা করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে এক বিশাল অবদান রাখবে। এবং আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহ পাব বলে আশা করতে পারি। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments