মাছচাষি এমপি আয়েন ৫ বছরেই কিনেছেন ৭৫ বিঘা জমি
মাছ চাষ করেই রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন গত পাঁচ বছরে এলাকায় ৭৫ বিঘা জমি কিনেছেন। তিনি ২০১৪ সালে প্রথমবার ও ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। এবার মনোনয়ন পাননি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
নির্বাচনের জন্য দাখিল করা হলফনামায় দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ও ২০১৮ সালে তার নামে চার লাখ টাকা দামের দুই বিঘা জমি ছিল। এখন তাঁর নামে জমির পরিমাণ ৭৭ বিঘা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরেই তিনি ৭৫ বিঘা জমি কিনেছেন। আয়েন এই জমির মূল্য দেখিয়েছেন ৩ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ৩২৬ টাকা।
এ ছাড়া এবার তিনি ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকায় রাজধানীর পূর্বাচলে তিন কাঠার একটি প্লটও নিয়েছেন। ২০১৩ সালে স্ত্রীর নামে কোনো ফ্ল্যাট ছিল না। ২০১৮ সালে ৩০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট হয়। এবার স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়েছে প্রায় ৮৬ লাখ টাকার। অথচ ২০১৩ সালে স্ত্রীর হাতে নগদ ছিল মাত্র ১ লাখ টাকা। ব্যাংকে কিছুই ছিল না। এখন শিক্ষক স্ত্রীর হাতেই নগদ আছে ১৮ লাখ ২৯ হাজার ৯১৯ টাকা। সঞ্চয়পত্র আছে ১০ লাখ টাকার।
আয়েন তার আয়ের খাত হিসেবে সংসদ সদস্য সম্মানী ছাড়াও দেখিয়েছেন মাছ চাষ। তিনি ৭৭ একর জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন বলে হলফনামায় আছে। এ খাত থেকে তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১১ লাখ। হাতে এখন নগদ আছে ৩ লাখ।
পাঁচ বছরে ৭৫ বিঘা জমি কেনা প্রসঙ্গে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেছেন, ২০১৮ সালেও জমি ছিল। পৈতৃক সম্পত্তি পরে ভাগ হয়েছে। কিছু জমি কিনেছেনও। অবৈধ কোনো সম্পদ নেই। সব সম্পদের আয়কর রিটার্ন দেখানো আছে।
রাজশাহী-৩ আসনে এবার আয়েন ছাড়াও আরও ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন—আসাদুজ্জামান আসাদ (আওয়ামী লীগ), সোলাইমান হোসেন (জাতীয় পার্টি), বজলুর রহমান (বিএনএফ), আবদুস সালাম খান (জাতীয় পার্টি), মতিউর রহমান মন্টু (বিএনএম) ও সইবুর রহমান (এনপিপি)।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আসাদুজ্জামানের হলফনামায় দেখা গেছে, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তার নামে কোনো মামলা নেই। ঠিকাদারি করে তিনি বছরে সাড়ে ৭ লাখ ও অন্যান্য খাত থেকে ১৮ লাখ টাকা আয় করেন। তার হাতে এখন ৫০ হাজার টাকা আছে। তিনটি ব্যাংকে আছে ৩ হাজার ২০৬ টাকা ২৫ পয়সা। স্ত্রীর হাতেও নগদ কোনো টাকা নেই। তবে ব্যাংকে আছে ৩১ হাজার ৭৯০ টাকা। আর মেয়ের আছে ৯৩ হাজার আর ছেলের নামে আছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
আসাদের একটি গাড়ি আছে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা দামের। নিজ নামে দুটি বাড়ি, একটি প্লট ও একটি মৎস্য খামার আছে ৩০ লাখ টাকার।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলাইমান হোসেন স্বশিক্ষিত। তার নামে কোনো মামলা নেই। তিনি কৃষি খাত থেকে বছরে ৩০ হাজার আর ব্যবসা থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করেন। নগদ টাকা আছে ৫ লাখ, ব্যাংকে আছে ৫০ হাজার। সোলাইমানের স্ত্রীর আছে ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার। তিনি দেড় বিঘা কৃষিজমির মালিক।
বিএনএফের প্রার্থী বজলুর রহমান স্বশিক্ষিত। তার নামে কোনো মামলা নেই। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকা। হাতে নগদ টাকা আছে ২ লাখ। ব্যাংকে কিছু নেই। একটি মোটরসাইকেল ও আড়াই লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে বাসায়। তিনি এক একর জমির মালিক।
জাতীয় পার্টির আবদুস সালাম খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তার নামে অতীতে একটি মামলা ছিল, খালাস পেয়েছেন। কৃষি খাত থেকে তিনি দেড় লাখ ও ব্যবসা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আয় করেন বছরে। তার কাছে নগদ ৫ লাখ ও ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা আছে। স্ত্রীর হাতে ২ লাখ ও ব্যাংকে ২০ হাজার টাকা আছে। আর আছে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার।
বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে আসা মতিউর রহমান মন্টুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ। তার নামে একটি মামলা বিচারাধীন। তার বার্ষিক আছে ৪ লাখ টাকা। হাতে কিংবা ব্যাংকে কোনো টাকা নেই। স্ত্রীর কাছেও কোনো টাকা নেই। মতিউরের ২০ হাজার টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল, ২০ হাজার টাকার স্বর্ণ। আর ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৭ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ২ বিঘা জমি। ব্যাংকে ঋণ আছে ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৮ টাকা।
এ আসনের এনপিপি প্রার্থী সইবুর রহমান পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তার নামে কোনো মামলা নেই। কৃষি ও ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেন ২ লাখ টাকা। হাতে নগদ আছে ১০ হাজার, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা। ২ বিঘা জমি ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নেই তার।
No comments