Adsterra

ভারত চীন সেনা সংঘর্ষ - গালওয়ান উপত্যকা বিরোধ

ভারত চীন সেনা সংঘর্ষ - গালওয়ান উপত্যকা বিরোধ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, ভারত ও চীনের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে

ভারত ও চীনের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং এ দুই দেশের সেনাবাহিনী নানা সময়ের সীমান্তে মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু আকসাই চীনের কাছে গালওয়ান উপত্যকায় গত কয়েকদিনে ভারত ও চীনের সৈন্যদের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সম্ভবত গত ৪৫ বছরে দেশ দুটির মধ্যে প্রথম সীমান্ত সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনা।
যার কেন্দ্রে রয়েছে লাদাখ অঞ্চল ও উঁচু অপেক্ষাকৃত কম জনবসতিহীন এলাকার সীমান্ত নিয়ে এই দেশ দুটির মধ্যেকার কয়েক দশকের বিরোধ।

সোমবারের সংঘর্ষের কারণ লাদাখ এ ভারত তৈরি করে কি রাস্তা, যেটি দুই দেশের মধ্যকার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অবস্থিত। ভারতের এই পদক্ষেপ কে চীন হুমকি হিসেবে দেখছে। ক্ষিপ্ত চীন প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিরোধ পূর্ণ অঞ্চলে সেনা মোতায়ন করে এবং নিজেরা অবকাঠামো তৈরি করে। এর ফলে দুই দেশের সৈন্যদের অবস্থান আরো কাছাকাছি হয়ে যায়। সংঘর্ষের ঝুঁকি বেড়ে যাত। গত কয়েক বছর ধরে ঐ অঞ্চলে বিশেষ জনবহুল দেশ চীন ও ভারত নিজেদের সামরিক শক্তি জোরদার করছিল। ভারত অভিযোগ করছে যে গালওয়ান উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণ রেখা মেনে চলার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে যে ঐক্যমত্য রয়েছে চীন তা ভঙ্গ করেছে। অন্যদিকে চীনের অভিযোগ, ভারতের সেনারা সোমবার ২ দফায় সীমান্ত লংঘন করে উসকানি দিয়েছে এবং তাদের সৈন্যদের আক্রমণ করছে। দুই পক্ষই পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। তবে পরিণতি হলে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। যে অঞ্চলটি নিয়ে চীন ও ভারতের বিবাদ তার অবস্থান ভারত শাসিত লাদাখ সীম্যন্তে প্রত্যন্ত, রুক্ষ,পাহাড়ি অপেক্ষাকৃত কম জনমানবহীন এলাকা। এরকম এলাকা নিয়ে কেন লড়ছে এই দুটি দেশ?

ভারত ও চীন দুই দেশই এই সীমান্ত অঞ্চলকে কৌশলগতভাবে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করে। লাদাখে দুই দেশের মধ্যকার নিয়ন্ত্রণ রেখার বরাবর ভারত কয়েকশো কিলোমিটার দীর্ঘ যে রাস্তা টি তৈরি করেছে সেটি অনেক উঁচুতে অবস্থিত একটি বিমান ঘাঁটির সাথে সংযোগ তৈরি করবে। চীন ও পশ্চিম তিব্বতের সাথে জিংজিগাং প্রদেশে সংযোগ তৈরির জন্য রাস্তা ও অবকাঠামো বানিয়েছে। অন্য দিকে চীন ও ভারতের মধ্যে সেখানে যে নিয়ন্ত্রণ রেখা রয়েছে, সুক্ষ্মভাবে তার সীমানা নির্ধারণ করা জটিল। কারণ অঞ্চলটিতে রয়েছে নদী, লেক ও বরফে আচ্ছাদিত পাহাড়। যে কারণে দুই পক্ষের সৈন্যদের মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কোন পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় না দেয়ায় বিবাদমান পরিস্থিতি প্রায়শই দেখা দেয়।

ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার আগে যে সীমানা নির্দেশ করে দিয়ে গেছে, চীন সেটি কখনোই স্বীকৃতি দেননি। ভারতের অনেক অংশ তারা দাবি করে। ১৯৬২ সালে চীন ভারত যুদ্ধের কেন্দ্র ছিল আকসাই চীন, গালওয়ান উপত্যকা ও ভারতের বর্তমান অরুণাচল। ঐ সালের ২০ অক্টোবর চীনের সেনাবাহিনী ভারতের উপর দুটি হামলা চালিয়েছিল। আকসাই চীন ও অরুণাচলে দুই দেশে বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে ভারত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে শত্রুতা তাই অনেক পুরনো। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন অংশে একে অপরের সীমানার ভেতরে এলাকা দখলের অভিযোগ করে আসছে ভারত ও চীন। তার মধ্যে একটি হলো লাদাখের যে অংশে সংঘর্ষ হয়েছে সেই আকসাই চীনন এলাকা। ভারত এখনো আকসাই চীনকে নিজের বলে দাবি করে। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচলকে চীন তাদের এলাকা বলে দাবি করে। চীন কখনোই অরুণাচলকে ভারতের অংশ বলে মেনে নেয়নি। অরুণাচলকে চীন আলাদা নাম দিয়েছে। এদিকে ২০১৭ সালে ভুটানের এটা কিছু অংশ নিজের দাবি করে একটি সড়ক প্রসারিত করতে চেয়েছিল চীন। সে সময় ভারত চীনাদের প্রতিরোধ করতে সৈন্য পাঠিয়েছিল এবং দুই মাসের বেশি সময় ধরে সেই সংকট চলেছিল সীমায় নিয়ে বিতর্ক এই পুরো অঞ্চল নিয়ে রাজনীতির একটি অংশ। মে মাসের মাঝামাঝি সময় ভারত নিজেদের বলে দাবি করছে এমন বিতর্কিত ভূখন্ড কালাপানি ও লিপুলেটকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করছেন নেপাল। আর তার দিন দশেক আগে চীনের তিব্বত সীমান্তের লিপুলেটের সাথে সংযুক্তকারী ৮০ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা উদ্বোধন করেছে ভারত। সেই নিয়ে ভারতের সাথে ভারতের বিবাদ। ভারতের সেনাপ্রধান সে সময় বলেছেন তৃতীয় একটি দেশ নেপাল কে উসকে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞের ধারণা তিনি চীন সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছিলেন।

অন্যদিকে চীনের একটি মিত্র রাষ্ট্র হচ্ছে ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান। বিষয়টি ভারতের পছন্দ নয়। আর চীনের শত্রু রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতের মিত্র রাষ্টে পরিণত হয়েছে। সেটি চীনের পছন্দ নয়। সব মিলিয়ে জটিল এক সাংঘর্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ভারতে চীনের মধ্যে। দুই পক্ষের কেউই যদি ছাড় দিতে রাজি না হয় তাহলে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীল এক পরিণতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

follow our Facebook page DHAKA Voice

follow our Twitter account Dhaka Voice 

No comments

Powered by Blogger.