পালাবি কোথায়ঃ যে সিনেমা নারী জাগরণে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে
শহীদুল
ইসলাম খোকন পরিচালিত পালাবি কোথায় সিনেমাটি ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়। সিনেমাটিতে অভিনয় করেন শাবানা, সুবর্ণা মুস্তফা, চম্পা, হুমায়ূন ফরিদী সহ আরো অনেকেই।
একটি
গার্মেন্ট সেখানে অসংখ্য নারী কর্মীর মাঝে মাত্র একজন পুরুষ চাকরি করে। সে গার্মেন্টসের ম্যানেজার।
সে একজন নারী লোভী পুরুষ। নারীরা তার অত্যাচার সহ্য করে দু’পয়সা বাড়তি
বেতনের আশায়। গার্মেন্টসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে মাঝ বয়সী একজন নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। একজন শিক্ষিত ,প্রতিবাদী নারী তিনি। সকল কর্মীদের সাথে তার সুসম্পর্ক, তারা একসাথে কাজের ফাকে আড্ডা দেয় এবং কর্মীরা তাদের বসের নির্যাতনের কথা তাঁকে জানালে তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠতে শুরু করেন। নূরী গার্মেন্টসের একজন ঝাড়ুদার। সে মেথর পট্টিতে
থাকে। তার স্বামীর সাথে কেউ বাজে ব্যবহার করলে সে তার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ করে। এমনকি অফিসেও সে বসকে কোনো
বাজে কাজের সুযোগ পর্যন্ত দেয়না। তবে বস নার্গিস নামের
একজন কর্মীকে গোয়েন্দা হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে রাখে। যে কিনা শিরিন,
কম্পিউটার অপারেটর মিলি চৌধুরি এবং নূরীকে সবসময় ফাসিয়ে দেবার সুযোগ খুজতো। একদিন শিরিন, মিলি এবং নূরী মিলে পরিকল্পনা করে তারা ম্যানেজারকে উচিৎ শিক্ষা দিতে চায়ে চিনির বদলে ইঁদুরের বিষ মিশিয়ে উচিৎ শিক্ষা দিবে। এর ফলে ম্যানেজার
অসুস্থ হয়ে যায় এবং তারা প্রায় ফেঁসেই যায় কিন্তু সুস্থ হবার পর ম্যানেজার যখন
ফিরে আসে তখন জানতে পারে অফিসে এমডি এসেছেন এবং এমডি ম্যানেজারের সমস্ত কুকীর্তি আগে থেকেই গোয়েন্দাগিরি করে জেনে নিয়েছেন। তিনি ম্যানেজারকে বরখাস্ত করেন। এমন অবস্থায় ম্যানেজার আর কোথাও পালানোর
পথ খুজে পায়না। ওদিকে তার স্ত্রী তাঁকে আর বাড়িয়ে জায়গা
দিতে চায়না। ২ ঘন্টা ৩২
মিনিটের এই সিনেমাটি সম্পূর্ণ
হাস্যরসাত্মক হিউমারে পরিপূর্ণ। এই সিনেমাটি বাংলাদেশের
জনপ্রিয় ড্রামা-কমেডি সিনেমাগুলোর একটি। সিনেমায় ম্যানেজার চরিত্রে অভিনয় করা হুমায়ূন ফরিদী এবং শিরিন চরিত্রে অভিনয় করা সুবর্ণা মুস্তফার কর্মকান্ড পর্দায় দেখে হাসির উদ্রেগ ছড়িয়েছে। চমৎকার সিচুয়েশনাল কমেডির এই সিনেমাটি বাংলাদেশের
ইতিহাসে সবচেয়ে কম বাজেটে ব্যবসা
সফল সিনেমাগুলোর একটি। এই সিনেমায় কোনো
বিশেষ নায়ক ছিলোনা। প্রতিটা অভিনয়শিল্পীদের চরিত্র গঠনে পরিচালক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সেই সাথে নারীদের ব্যক্তিত্ববোধ জাগরণে এই সিনেমা বড়
ভূমিকা পালন করেছে। যেমন শিরিন এখানে ইয়ং লেডি হবার পরেও সে সমাজকে তোয়াক্কা
না করে নিজের পায়ে দাড়ানোর জন্য যোগ্যতা অনুসারে ভালো চাকুরি পেয়েছে, বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র বাছাইয়ে নিজের সিদ্ধান্তকে স্ট্যাবলিশ করেছে। একজন কম্পিউটার অপারেটর হবার পাশাপাশি কিভাবে একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী এবং মা হতে হয়
তা মিলি চৌধুরীর চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। নূরী একজন মেথরের স্ত্রী হবার পরেও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে।
No comments