Adsterra

আনুরাগ ক্যাশপঃ শূণ্য থেকে শীর্ষে

 

আনুরাগ ক্যাশপঃ শূণ্য থেকে শীর্ষে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, ১৯৭২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের গোরখপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, Today Trending News, Hot News

বলিউডের অতিপরিচিত পরিচালক আনুরাগ ক্যাশপ যিনি দেভ ডি, গ্যাংস অব ওয়াসেপুর, ব্ল্যাক ফ্রাইডেসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন।

১৯৭২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের গোরখপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শ্রী প্রকাশ সিং উত্তর প্রদেশের পাওয়ার কর্পোরেশনের একজন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বাবার স্বপ্ন ছিলো ছেলেকে তিনি ডাক্তারি পড়াবেন। কিন্তু তার মন পড়ে থাকতো পর্দার রঙ্গিন জগতে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে তিনি অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র,ঋষিকাপুর, অনিল কাপুরের সিনেমা দেখতেন। সিনেমার প্রতি প্যাশন থাকায় তিনি প্রথমে দিল্লিতে আসেন। শুরুতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে ভর্তি হবার জন্য দুবার চেষ্টা করেন কিন্তু তাতে ব্যর্থ হন। এরপর হংসরাজ কলেজ থেকে প্রাণীবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থা থেকেই তিনি পথ নাট্য গ্রুপ ‘ জানা নিত্য মঞ্চে’ যোগ দেন এবং বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করতে থাকেন। ১৯৯৩ সালে স্নাতক শেষ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন মুম্বাই চলে যাবেন সেজন্য মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে মুম্বাই আসেন। কিন্তু মুম্বাই পৌঁছে তার টাকা শেষ হয়ে যায়। মাসের পর মাস ড্রেনের ধারে বেঞ্চিতে রাত পার করতেন একদিন এক যুবক তার সাথে পরিচিত হন যে কিনা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের হোস্টেলে থাকতো। সে তাঁকে থাকার আশ্রয় দেন এবং মুম্বাইতে পৃথ্বী থিয়েটারের খোজ দেন। সেখানে সে কাজের ব্যবস্থা করে নেয় কিন্তু তার প্রথম নাটকের পরিচালক মারা গেলে তার প্রথম নাটক অসমাপ্ত থেকে যায়। তিনি তখন বুঝতে পারলেন এবং পরিচালক ছাড়া সিনেমা তৈরি অসমম্ভব। এরপর থেকেই তার পরিচালক হবার পোকা মাথায় ঢুকে যায়। ১৯৯৫ সালে যখন তার সাথে শিভম নায়ারের পরিচয় হয় তখন শিভন নায়ার তাঁকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ সিনেমাটি দেখান। এই সিনেমা দেখার পর তার লেখালেখির প্রতি ব্যাপক আগ্রহ জন্মায়। ক্যাশপ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘১৯৯৫ থেকে ২০০৭ সাল এই ১২ টা বছর আমি শুধু লেখালেখিই করে গেছি। লেখালেখির বিনিময়ে কখনোই পারিশ্রমিক আশা করতাম না। আমি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে আশ্বত্ব করতাম এই ভেবে যে একদিন আমার লেখা স্ক্রিপ্টেও সিনেমা তৈরি হবে।’ মাত্র ৮০০ টাকার বিনিময়ে ১৯৯৫ সালে ‘অটো নারায়ন’ সিরিজের দ্বিতীয় পর্বের স্ক্রিপ্ট লেখেন। পারিশ্রমিকের জন্য তিনি প্রায় ৪ ঘন্টা অফিসে বসেছিলেন এরপর সেই সিরিজের প্রযোজক এসে বলেছিলেন, ‘এরকম পাতার মতো গজানো লেখকের অভাব নেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি এই সিরিজ নিয়ে আর সামনে এগুতে চাচ্ছিনা। তুমি তোমার রাস্তা মাপো।’ এরপর ১৯৯৮ সালে পরিচালক রাম গোপাল ভার্মা গ্যাংস্টারদের নিয়ে একটি সিনেমা বানাতে চান। তিনি মানোজ বাজপায়ীর সাথে আলাপ করেন একজন ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার খুজে দিতে। মানোজ বাজপায়ী তার ‘অটো নারায়ন’ কাজটি দেখেছিলেন। এরপর ভার্মার অফিসে একসাথে বসে তারা সিরিজটি দেখে এবং ক্যাশপের প্রশংসা করেন। কিন্তু সিনেমার স্ক্রিপ্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর ভার্মা আউট অফ দ্যা বক্স আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছিলেন। তিনি সিনেমাটিতে পুরোপুরি কমার্শিয়ালি এক্সপোর্ট করতে চেয়েছিলেন। রাম গোপাল ভার্মা স্ক্রিপ্টের সিনোপসিস লিখে দিতে ক্যাশপকে মাত্র ৭ দিন সময় দিলেন। ক্যাশপ ৭ দিন পর সিনোপসিস লিখে নিয়ে আসলেন। এমন সেটা ভার্মা প্রোডিউসারের সামনে পড়ে পড়ে শুনালেন। পুরো সিনোপসিস শুনার পর রাম গোপাল ভার্মা স্ক্রিপ্ট টি ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, ‘ না জেনে না বুঝে কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে আগাছাদের কাজে আসাই উচিৎ না। এই সিনেমা হলে দেখালে তুমি বাদে আর কেউ মনে হয়না বসে বসে দেখবে।’ কিন্তু প্রোডিউসার তখন বললেন,’’Let’s see. তুমি তো তাও চেষ্টা করেছো। আমরা চেষ্টা করলে এই স্ক্রিপ্টটাকেও কমার্শিয়াল স্টাইলে নিয়ে আসতে পারি। আমরা যদি সিনেমাটি করি তোমাকে ডাকা হবে এবং অবশ্যই তোমাকে ভালো পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।’ পরবর্তীতে রামগোপাল ভার্মা আনুরাগ ক্যাশপের স্ক্রিপ্ট নিয়েই তৈরি করেন ‘সত্য’ সিনেমা যেই সিনেমাটি ১৯৯৯ সালে ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়। এরপর তিনি ‘কউন’ নামের একটি সাইকোলজিক্যাল সাসপেন্স থ্রিলার সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখেন। সেই সময় এমন বিষয়ের উপর স্ক্রিপ্ট করা যেনো অনেক স্ক্রিপ্ট রাইটারেরই চিন্তার বাহিরে ছিলো। নায়ারণের সাথে কাজ করার সময় ১৯৭৬ সালে পুনেতে ঘটে যাওয়া এক মার্ডার কেইসের ফাইল তার কাছে আসে। গল্পটি ছিলো একটি ব্যান্ড দলের ৫ জন বন্ধুকে নিয়ে যারা কোনো একটি কারণে সন্ত্রাসী হয়ে উঠে। এই ঘটনাটিই তার ‘পাঞ্চ’ সিনেমার প্লট তৈরিতে উৎসাহ যোগায়। বেশ কিছু খোলামেলা দৃশ্য, অপরাধের পর বিকৃত উদযাপন, মাদকগ্রহণ এসবের কারণে সেন্সর বোর্ড এই সিনেমাটি আটকে দেয়। যদিও প্রযোজক এবং তার চেষ্টায় ২০০১ সালে সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দেয়। রিজেকশন মেনে নিতে নিতে তার এমন অবস্থা হয় যে তিনি আগে থেকেই অনুমান করে নিতেন যে তার গল্প কোনো প্রযোজকই পছন্দ করবেনা। কিন্তু তিনি সিনেমা বানাবেনই এই সিদ্ধান্তে তিনি অটল ছিলেন। জীবনের একসময় হতাশ থাকা কিছু না করতে পারা এই মানুষটি একদিন অভয় দেওলকে নিয়ে বানিয়ে ফেললেন ‘দেভ ডি’। দেবদাসকে যেভাবে তিনি মোডিফাই করেছেন আরেকটি নতুন ভার্সন ক্রিয়েট করেছেন তা দেখে সঞ্জয় লীলা বানসালি বলেছিলেন, ‘শরত বাবু যদি এই জামানায় বেঁচে থাকতেন নিশ্চয়ই এমন দেবদাসকেই কল্পনা করতেন।’ তার পরিচালিত ‘ গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’ সিনেমার ২ টি পার্টটি বলিউডে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এই সিনেমার বাজেট খুবই কম ছিলো মাত্র ১৮ কোটি টাকায় সিনেমার দুটি পার্ট তিনি শেষ করেছিলেন এবং তার মধ্যে ১৫ কোটি টাকাই তাঁকে তার অভিনেতাদের দিতে হয়েছে। কিছু জায়গায় সেট বানানোর খরচ বাঁচাতে, হোটেল খরচ কমাতে তিনি তার কৈশরের ভাড়া বাড়িতে শুটিং করেছিলেন। তার সিনেমায় সহ-পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন আমাদের দীপংকর দপন। এত কম খরচেও এই সিনেমাটির দুটো পার্টই বক্স অফিস থেকে ৫১ কোটি টাকা আয় করেছিলো। তার এই সিনেমাটি ২০১২ সালে ‘কান চলচ্চিত্র উৎসবে’ ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে সম্পূর্ণ প্রদর্শিত হয় এবং এটিই একমাত্র বলিউডের সিনেমা যা এত বড় সিনেমার উৎসবে দেখানো হয়েছে। অভিনেতা হিসেবেও বেশ সুনাম রয়েছে আনুরাগ ক্যাশপের বিশেষ করে তার অভিনীত তামিল চলচ্চিত্র ‘ইমাক্কা নোডিকেলে’ তার ভয়ংকর চরিত্র সিনেমা প্রেমীদের মনে অনেকদিন গেঁথে থাকবে।     

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.