Adsterra

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিতে

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিতে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, today top news, today trending news, hot news, update news, somoy news


হুটহাট সিদ্ধান্ত হলো, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বন্ধুরা মিলে রাঙামাটি যাব। যেমন কথা তেমন কাজ। রাতে বাসে উঠে সকালে গিয়ে নামলাম।

এবারের ভ্রমণ ছিল অনেকটা উদ্দেশ্যহীন। রাঙামাটি যাওয়ার পর কী দেখব, কোথায় কোথায় যাব, তার কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না।


তাতে বন্ধুদের মানসিক চাপ তেমন না থাকলেও আমার ছিল। তাই মনে মনে নানিয়ারচরে যাওয়ার পরিকল্পনাটা করেই রাখতে হয়েছিল।

বাসস্ট্যান্ড থেকে নাশতা সেরে ট্রলারে চেপে বসলাম। গন্তব্য বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিস্থল। কাপ্তাই লেকের নীলাভ পানিতে ট্রলার চলছে ভেসে। বন্ধুদের হাস্যরসের ফাঁকফোকরে লেক ঘিরে থাকা পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছি।


ছোট্ট ডিঙিতে করে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখছি। ঘণ্টা দুই পরে দেখা মেলে জাতির সূর্যসন্তান পাকিস্তানি হানাদারদের মর্টার শেলের আঘাতে নিহত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিস্থলের স্মৃতির মিনার। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আত্মত্যাগের কথা মনে হলেই শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। শরীরের ভেতর আনমনেই রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। মনে হয়, আমিই যেন আব্দুর রউফ! ট্রলার ভেড়ে সমাধিস্থলের ঘাটে।


চেঙ্গী নদীর খালবেষ্টিত কাপ্তাই লেকের বুকে বুড়িঘাট ইউনিয়নে অবস্থিত ছোট্ট একটি টিলার মতো জায়গায় ফরিদপুরের দামাল ছেলে আব্দুর রউফ চিরনিদ্রায় শায়িত। যুদ্ধের সময় তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলে কর্মরত ছিলেন ল্যান্স নায়েক পদে। স্বাধীনতাযুদ্ধের এই বীর সেনানীর সমাধি আজ ইতিহাসের উজ্জ্বল সাক্ষী।


পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণ থেকে সঙ্গী ১৫০ জনকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একাই সাতটি স্পিডবোট ও দুটি জাহাজে করে আসা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে লড়তে লড়তে তাদের পিছু হটাতে বাধ্য করেন। ততক্ষণে শত্রুরা মুন্সী আব্দুর রউফের অবস্থান নেওয়া বাংকার চিহ্নিত করে মর্টার শেল ছুড়তে থাকে। তারই একটি গোলার আঘাতে তিনি শহীদ হন। তারিখটা ছিল ২০ এপ্রিল ১৯৭১।


শহীদ মুন্সী আব্দুর রউফকে এই বুড়িঘাটের জমিতে দাফন করা হয়। তখন জায়গাটা যেমন দুর্গম, তেমনি ঝোপঝাড় জঙ্গলে ঘেরা ছিল। যে কারণে স্বাধীনতার অনেক বছর পর ১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল কবরটির সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর ২০০৬ সালের ২৫ মার্চ তাঁর সমাধিস্থলে রাইফেলের ভাস্কর্যসদৃশ স্মৃতির মিনার নির্মাণ করা হয়। তাঁর সমাধির পাশের দেয়ালে লেখা আছে সেদিনের সেই বীরত্বগাথা। দিন দিন সমাধিস্থলটি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকে যান শ্রদ্ধা জানাতে। কেউবা নিছক ভ্রমণের উদ্দশে।


যাবেন যেভাবে

ঢাকা-রাঙামাটি রুটের যেকোনো বাসে যেতে হবে রাঙামাটি। সেখান থেকে রিজার্ভ বাজার নৌঘাট। সেখান থেকে রিজার্ভ ট্রলার বা স্পিডবোটে ঘুরে আসতে পারবেন বুড়িঘাট থেকে। এ ছাড়া রিজার্ভ না করে যাত্রীবাহী ট্রলারেও যেতে পারবেন সেখানে।


No comments

Powered by Blogger.