পুতিনের প্রেমিকার উপর নিষেধাজ্ঞা
ব্যক্তিগত জীবন যতটা সম্ভব আড়ালেই রাখতে পছন্দ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৫ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেছিলেন, তিনি তার পরিবার নিয়ে কখনোই কারো সঙ্গে আলোচনা করতে পছন্দ করেন না। ওই
সম্মেলনে তার মেয়েদের পরিচয় সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে অত্যন্ত কৌশলে এড়িয়ে যান
তিনি। তবে এতদিন পুতিন সহ স্ত্রী- সন্তান নিয়ে তেমন একটা আলোচনা না হলেও
ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক অভিযানের জেরে পুতিন সহ তার স্বজনদের উপর পশ্চিমারা
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় উঠে আসছে নানা
তথ্য। পুরিনের পরিবার, প্রেম, সন্তান এসব
রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। জল্পনা-কল্পনার ও যেন শেষ নেই। রুশ প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন এর ব্যক্তিগত জীবন, স্ত্রী-
সন্তান, প্রেমিকা এবং ঘনিষ্ঠজনদের উপর পশ্চিমা দেশগুলোর
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এবারের প্রতিবেদন ।
১৯৮৩ সালে লুদমিলা ওচেরেতনায়া বিয়ে করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সেসব পুতিন ছিলেন তৎকালীন কেজিবির অফিসার। অন্যদিকে পুতিনের স্ত্রী লুদমিলা ছিলেন
বিমানবালা। ১৯৮৫ সালে থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পূর্ব জার্মানিতে ছিলেন এই দম্পতি।
তবে ২০১৩ সালে তিন দশকের বিবাহিত জীবনে ইতি টানের পুতিন- লুদমিলা। বিবাহ বিচ্ছেদ
নিয়ে টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেছিলেন, এটা তাদের যৌথ
সিদ্ধান্ত। তারা একে অপরের সঙ্গে খুবই দেখা করেন। তাদের দুইজনেরই নিজস্ব একটা জীবন
রয়েছে।
৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে পুতিন- লুদমিলার রয়েছে দুই মেয়ে। ক্যাটেরিনা তিখোনোভা ও মারিয়া ভরোন্তসোভা। বড় মেয়ে মারিয়া ভরোন্তসোভার জন্ম
১৯৮৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিন গ্রামে। তিনি রাশিয়ার সেন্ট
পিটার্সবার্গ ইউনিভার্সিটিতে জীববিজ্ঞানের পড়াশোনায় করেছেন।পরে মস্কোটস
ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন মেডিসিন বিভাগে। মারিয়া এখন শিক্ষকতার পেশায় রয়েছেন।
তিনি বিশেষজ্ঞ শিশুদের শারীরিক বিকাশের ওপর একটি বই লিখেছেন। মারিয়ার আরেকটি
পরিচয় তিনি ব্যবসায়ী। বিবিসি তথ্য মতে, রাশিয়ার একটি
বড় মেডিকেল সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনাকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সহমালিক তিনি।
ব্যক্তি জীবনে মারিয়া বিবাহিত। ডাচ ব্যাবসায়ী জরিট
পার্সেন্টকে বিয়ে করেন তিনি। মারিয়ার স্বামী এক সময়
রাশিয়ার রাজতন্ত্র জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাস প্রমে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন সংবাদ
মাধ্যমের তথ্য মতে, মারিয়া ও জরিট এখন আলাদা বসবাস করছেন।
অন্যদিকে ছোট মেয়ে ক্যাটেরিনা তিখোনোভা একজন নৃত্য
শিল্পী। ক্যাটরিনার জন্ম ১৯৮৬ সালে তৎকালীন পূর্ব
জার্মানিতে। ২০১৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক আয়োজনে নৃত্যশিল্পী হিসেবে সুনাম কুড়ান
ক্যাটরিনা। পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলে সঙ্গে তার বিয়ে হয় ক্যাটরিনার। তবে
২০১৮ সালের স্বামীর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য
নিষেধাজ্ঞা দিলে ঐ বছরই আলাদা হয়ে যান তারা।
গুঞ্জন রয়েছে মারিয়া ভরোন্তসোভা ও ক্যাটেরিনা তিখোনোভা ছাড়াও পুতিনের আরো এক
সন্তান রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পুতিনের লুইজা রুজোভা নামের এক মেয়ে রয়েছে। রূশ ধনকুবের সেভেয়লানার সঙ্গে
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল পুতিনের। আর লুইজা তাদের সন্তান। সেভেতলানা ছিলেন
পুতিনের সাবেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তবে বর্তমানে তিনি রাশিয়ার একটি শিষ্য ব্যাংকের সহ প্রতিষ্ঠাতা। তবে বর্তমানে সেভেতলানা সেন্ট পিটার্সবার্গে
প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে সংরক্ষিত
এলাকায় রয়েছেন।
২০২০ সালে রাশিয়ার ওয়েবসাইট চ্যানেল ও এক অনুসন্ধানের
সম্মুখে চলে আসে তার নাম। অনুসন্ধানে প্রতিবেদনে রাশিয়ায় তার আর্থিক সম্পত্তির
পাশাপাশি পুতিনের সঙ্গে তার যোগসূত্রের বিষয়টি উঠে আসে। ঐ অনুসন্ধানের জেরেই
লুইজা পুতিনের মেয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
২০২১ সালে আইসিআইজে প্রকাশিত পেনডরা পেপার্সেও নাম উঠে আসে সেভেতলানার।
পুতিন শুধু বাবাই নয় দাদা, হিসেবেও রয়েছে তার আরেকটি পরিচয়। সংবাদ
সংস্থা তাসের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে পুতিন তার দ্বিতীয়
নাতির জন্মের খবর দেয়। নাতি নাতনির বিষয়ে তার বক্তব্য, তিনি চান না তারা রাজকীয়ভাবে বেড়ে উঠুক। বরং তারা সাধারণভাবে বেড়ে উঠুক
সেটাই চান পুতিন। তবে পুতিনের ঠিক কতজন নাতি-নাতনি
রয়েছে এবং তার কোন মেয়ের সন্তান তার সঠিকভাবে নিশ্চিত নয়।
বিবাহ বিচ্ছেদের পর পুতিনের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুঞ্জন।
পুতিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বলে বারবার গুঞ্জন উঠে। পুতিনের প্রেমিকার
তালিকায় সবার নাম আগে যে নাম আসে তা হলো জিমন্যাস্ট এলিনা কাভায়েভার। বলা হয়
অলম্পিকের সাবেক এই জিমন্যাস্ট এর সঙ্গে
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় লুদমিলার সঙ্গে ৩ দশকের সম্পর্কের ইতি টানেন পুতিন । যদিও এ খবর উঠিয়ে দেয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ায় বেশ প্রভাবশালী নারীর নাম জিমন্যাস্ট এলিনা কাভায়েভার। জিমন্যাস্টিকস
হিসেবে পরিচিত হলেও এলিনা পুতিনের দল 'ইউনাইটেড
রাশিয়া পার্টির" সদস্য ছিলেন একসময়। রাশিয়ার ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপে
চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করার সময় এলিনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের গুঞ্জন উঠে বেশ কয়েকবার। এমনকি এলিনার ঘরে পুতিনের কয়েকজন সন্তান
রয়েছে বলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দাবি করা
হয়েছে। সুইচ ভিত্তিক এক সংবাদে দাবি করা হয়, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে দুটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় এলিনা। অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা এক
ধরনের একেবারে সত্য নয় বলে সাফ জানিয়েছিলেন পুতিনের এক মুখপাত্র।
ইউক্রেন-রাশিয়া সামরিক অভিযানের জেরে মস্কোর উপর একের পর এক নামতে থাকে
ইউরোপীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা। তেল, আর্থিক
প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন কোম্পানি ও রুশ কর্মকর্তাদের
পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা থেকে বাদ যায় না তার মেয়েরাও। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা সহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন পুতিনের দুই
মেয়ে মারিয়া ও ক্যাটরিনার উপরও এ দেশগুলোতে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মেয়েদের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা
তালিকা থেকে বাদ পড়েন নি পুতিনের কথিত প্রেমিকা এলিনা কাভায়েভার।
বার্তা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোর পক্ষ
থেকে ইউক্রেন ইস্যুতে মিথ্যাচার ও ঘনিষ্ঠ হওয়ার
কারণে এলিনাকে নিষেধাজ্ঞাযর তালিকা ফেলতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ১৩ মে
যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হয় এলিনার নাম। সাবেক এই জিমন্যাস্ট
এর উপর দেশটিতে প্রবেশ নিষেধের পাশাপাশি তার
সম্পদ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। ইউক্রেনের বুচা শহরে রুশ বাহিনী নৃশংস চরিত্র সামনে আসার পর মরোক্কের বিরুদ্ধে নতুন করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আলোচনায় ঘুরে ফিরে চলে আসে
পুতিনের দুই মেয়ে মারিয়া ও ক্যাটরিনার নাম। পুতিনকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে তার
মেয়েদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান- তাদের বিশ্বাস পুতিনের অনেক সম্পদ তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে লুকানো
রয়েছে। এবং এ কারণে তাদের মেয়েদের টার্গেট করা হয়। এছাড়াও পুতিনকে সব দিক
দিয়ে কোণঠাসা করতে ছাড় দেয়া হচ্ছে না তার পরিবারের সদস্য ও তার ঘনিষ্ঠজনদের। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব লিস্ট্রাস জানান - পুতিনের প্রতি কঠোর হতে তার কাছের মানুষদেরও ফেলা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার
তালিকায়।"
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
follow our Twitter account Dhaka Voice
No comments