Adsterra

ক্লেয়ার হোলিং ওয়ার্থ || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান


ক্লেয়ার হোলিং ওয়ার্থ || মুক্তিযুদ্ধে বিদেশির অবদান, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ এক ব্যতিক্রমী নারী সাংবাদিক ছিলেন, Hot News

যুদ্ধসংবাদ
-দাতাদের পৌরুষমন্ডিত সমাজে ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ এক ব্যতিক্রমী নারী সাংবাদিক ছিলেনমুক্তিযুদ্ধের প্রতিবেদন শুরু থেকেই তিনি করে আসছিলেনএরপর যখন সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পাকিস্তানি সামরিক সরকার, তখন কেবল সীমান্ত এলাকা থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে ক্ষান্ত ছিলেন না ক্লেয়ার, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দেশের গভীর মুক্ত এলাকায়ও প্রবেশ করেছিলেন এবং পাঠিয়েছিলেন অসাধারণ সব প্রতিবেদনসেই সময় তাঁকে ভালোভাবে চিনে নিয়েছিল ঢাকাবাসী

   একাত্তরের যুদ্ধ দিনে বাংলাদেশের বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থতিনি ডেইলি টেলিগ্রাফের সাংবাদিক; বন্ধু ও স্বজনরা বলেন, ওয়ার হর্সরণাঙ্গনে এই অশ্ব যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের ভেতর ও বাহিরে থেকে বাংলাদেশের তথ্য পৃথিবীকে জানিয়েছেনস্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্ট করেছেন

   বাংলাদেশের জন্মের সময় ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেই ছিল বিদেশি সাংবাদিকদের ঠিকানাএকাত্তরের ২৭ মার্চ এই হোটেলে জমায়াত করে ৩৫ জন বিদেশি সাংবাদিককে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়

    একাত্তরের আগস্টে যখন ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বোমাবর্ষণ করা হয়, হোলিংওয়ার্থ তখন হোটেলেতিনি নেমে এসে অন্যান্য বদেশিকে অনুরোধ করলেন, ‘শিগগিরই হোটেল ছাড়ুন, দ্বিতীয় বোমা বিস্ফোরিত হবে এখনই১৯৪৭ সালে কিং ডেভিড হোটেলে বোমাবর্ষণের কথা আমার মনে আছেপ্যালেস্টাইনে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি অথরিটি আওতাধীন এলাকায় কিং ডেভিড হোটেলে প্যালেস্টাইনি ইহুদি সংগঠন জাগানাহর দ্বিতীয় বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে ৯১ জনের মৃত্যু ঘটে, ৪৬ জন আহত হনক্লেয়ার তারই সাক্ষীপ্রথম বোমাটি বিস্ফোরণের সময় ক্লেয়ার কিং ডেভিড হোটেলেই ছিলেনঢাকায় দ্বিতীয় বোমাটি আর নিক্ষিপ্ত হয়নিতবে ধোঁয়া ও ধুলো(ঢাকার) আকাশ ছেয়ে ফেলেছিলঝনঝন করে কাচ ভেঙ্গে পড়ে, আগুন লেগে যায় অনেক স্থানেহোটেলের অতিথিদের আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিল ঘণ্টাধ্বনিজরুরি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এসে স্টাফ কোয়ার্টারে আটকে পড়া আহতদের তীব্র চিৎকার শুনতে পান তিনি

    ক্লেয়ার হোলিংয়ার্থের জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৯১ইংল্যান্ডের লেস্টারের দক্ষিণ নাইটন নামের আধা-শহরেতাঁর বয়স যখন তিন বছর, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ক্লেয়ার চলে যান বাবার জুতা এবং বুটের ফ্যাক্টরিতেযুদ্ধ যে ইতিহাস এবং জীবনের অংশ, শৈশব থেকেই তিনি তা উপলব্ধি করেছেনতাদের খামারবাড়ির মাথার উপর জার্মান বোমারু বিমান উড়ে গেছে এবং লাফবরোতে বোমা ফেলেছেপরদিন সকালে টাট্টুঘোড়া চালিয়ে বোমার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে চলে যেতেনক্লেয়ারের যখন ২৪ বছর বয়স, তখন ভ্যান্ডেলু রবিনসন নামক এক সহকর্মীকে বিয়ে করেনবনিবনা হয়নিদ্রুতই বরিনসকে ফেলে পোল্যান্ড চলে যান এবং ২৭ বছর বয়সে হয়ে উঠেন দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফের মতো পত্রিকার রণাঙ্গন সংবাদদাতা

    ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থের চারটি বহুল সমাদৃত গ্রন্থঃ পোল্যান্ডস থ্রি উইকস ওয়ার(১৯৪০), দেয়ার ইজ এ জার্মান রাইট বিহাইন্ড মি (১৯৪৫), দ্যা আরাবস অ্যান্ড দ্যা ওয়েস্ট(১৯৫০), মাও অ্যান্ড দ্যা মেন অ্যাগেইনস্ট হিম (১৯৮৪), তাঁর স্মরণীয় স্মৃতিকথা ‘’ফ্রন্ট লাইনপ্রকাশিত হয়েছে ১৯৯০ সালেরণাঙ্গন সংবাদদাতাদের যথার্থ গুরু ক্লেয়ার পূর্ব ইউরোপ, আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের রণক্ষেত্রগুলোর আগে পৌঁছে যেতেনজীবনের ঝুঁকি নিয়ে রণাঙ্গনে সংবাদ পাঠিয়েছেনস্বামী ও সংসারের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন কাজ ও রণক্ষেত্রকেসারাক্ষণই তিনি কাজ করতেনদিনে প্রতিবেদন পাঠাতেন, রাতেন বই লিখতেনতিনি বলতেন অন্য সাংবাদিকদের অধিকাংশের গার্লফ্রেন্ড ছিল, আমার বলতে গেলে কোনো ব্যক্তিগত জীবনই ছিল নাযুদ্ধই হয়ে ওঠে তাঁর ভালোবাসাসারা জীবন পৃথিবীর বুকে সাহসিকতা ও সত্য পিপাসুর উদাহরণ হয়ে বেঁচে ছিলেনতিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে ভয়ংকর সংবাদ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরম্ভ- ঘোষণা করা প্রথম সাংবাদিকসাংবাদিক জীবনের সক্রিয় ৭০ টি বছর তাঁর কেটেছে রণাঙ্গনে ও সংকটপূর্ণ স্থানেবিশ্বযুদ্ধকালের ছুটে গেছেন পূর্ব ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, রক্তাক্ত প্যালেস্টাইন, সাম্যবাদী চীন, আলজেরিয়া, এডেন, ভিয়েতনামযুদ্ধের হুঙ্কারে যখন সকলে নিরাপদে ছুটছে তখনই ক্লেয়ার ছুটে যান উলটো দিকে, যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহে 

     কিংবা ইউরোপীয় কর্মীরা কাজ করছেনভারতে পৌছানো পর্যন্ত এদের কয়জন মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাঁর হিসাব পাওয়া মুশকিলতবে কোনো কোনো ডাক্তারের মতে, কমপক্ষে পাঁচ ভাগের এক ভাগযে দলটি আমি দেখেছি, তাদের অপুষ্টির আগাম নমুনা দেখা গেছেএই বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর জরুরি প্রয়োজন কাপড়-চোপড়, ঔষধপথ্যের, কিন্তু ভারতে পৌছার আগে কেমন করে এসবের ব্যবস্থা করা যায়, তা ধারণা করা সম্ভব নয়

    যে মিশন এখনো পূর্ব পাকিস্তানে কাজ করছে তাদের কাছে সাহায্য-সামগ্রী পাঠিয়ে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে পাকিস্তানিকে ত্রাণকর্মীদের খাদ্য বিতরণ ও ত্রান তৎপরতা চালানোর অনুমতির জন্য চাপ দিয়েই কেবল সে মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে যেতে পারেএ মুহূর্তে পাকিস্তান সরকার কয়েকজন পর্যবেক্ষককে থাকার অনুমতি দিয়েছে, যাতে তাঁরা দেখতে পান ত্রানের খাবার সঠিক মুখেই পৌঁছেছেখাদ্য একটি রাজনৈতিক অস্ত্র এবং খাদ্য যতটা দুর্লভ হতে থাকবে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তৈরি শান্তি কমিটিরভালো মানুষসদস্যরা তাদের রাজনৈতিক সমর্থকদের খাওয়াতে শুরু করবেখারাপ মানুষযারা একতাবদ্ধ পাকিস্তানের জন্য বিক্ষোভ করেনি, তাদের নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ব্যাপারে সহানুভূতি রয়েছে, যেসব জায়গায় সেনাবাহিনী কার্যকারী বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, তাঁর বাইরে সর্বত্রই তাদের খারাপ আচরণই প্রাপ্য হবে

     নিকটবর্তী বাজারে প্রচুর চাল থাকার পরেও শত সহস্র মানুষ নিজ বাড়িতেই ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগতে শুরু কুরেছেআর্থিক জীবন ভেঙ্গে পড়ায় তাদের ক্রয়ক্ষমতাও নেইপাট উতপাদকারীরা তাদের উৎপন্ন পাট বাজারে বেচতে পারেননি 

 চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.