Adsterra

বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিক্যান সিটি

 

বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ ভ্যাটিক্যান সিটি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, ইতালির রাজধানী রোম শহরের ভিতরে অবস্থিত স্বাধীন রাষ্ট্র ও ছিটমহল, Hot News, Top News

ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ। এটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। ইতালির রাজধানী রোমের মাঝখানে অবস্থিত দেশটি।

ইতালির রাজধানী রোম শহরের ভিতরে অবস্থিত স্বাধীন রাষ্ট্র ও ছিটমহল।

উত্তর-পশ্চিম রোমের ভ্যাটিকান পাহাড়ের উপর একটি ত্রিভুজাকৃতির এলাকায়, তীবের নদীর ঠিক পশ্চিমে, ভ্যাটিকান শহর অবস্থিত। দক্ষিণ-পশ্চিমের পিয়াৎসা সান পিয়েত্রো বা সেন্ট পিটার চত্বর বাদে বাকি সবদিকে ভ্যাটিকান শহর মধ্যযুগ ও রেনেসাঁর সময়ে নির্মিত প্রাচীর দিয়ে রোম শহর থেকে বিচ্ছিন্ন।

ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্র, যা সাধারণত ভ্যাটিকান নামেই অধিক পরিচিত, ১৯২৯ সালে ল্যাটেরান সন্ধির মাধ্যমে ইতালি থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, যা হলি সি এর একটি পূর্ণ মালিকানাধীন, সার্বভৌম বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক অঞ্চল। সম্পূর্ণভাবে রোমের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র, যার আয়তন ১২১ একর।

ভ্যাটিকান সিটি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই ধর্মযাজক, পুরোহিত ও সন্ন্যাসী। পোপ (বাংলায় ধর্মযাজক বা পাদ্রি) এখানকার রাষ্ট্রনেতা এবং তারা রাষ্ট্র শাসন করে। ভ্যাটিকানসিটি সারাবিশ্বের রোমান ক্যাথলিকদের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি রোমান ক্যাথলিক গির্জার বিশ্ব সদর দফতর হিসেবে কাজ করে। ভ্যাটিকানসিটির নিজস্ব সংবিধান, সীলমোহর, পতাকা, রয়েছে। ভ্যাটিকানসিটি মুদ্রা হিসেবে ইউরো ব্যবহার করে কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়

ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব মুদ্রা এবং স্ট্যাম্প রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে ১লা জানুয়ারী ১৯৯৯ সাল থেকে ভ্যাটিকান ইউরোকে তার মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করে আসছে (কাউন্সিল সিদ্ধান্ত ১৯৯৯-১৯৯৮)। ১লা জানুয়ারী ২০০২ সালে ইউরো কয়েন এবং নোট চালু করা হয়েছিল ভ্যাটিকান ইউরো ব্যাঙ্কনোট ইস্যু করে না। ইউরো-ডিনোমিনেটেড কয়েন ইস্যু করা কঠোরভাবে চুক্তি দ্বারা সীমাবদ্ধ, যদিও একটি স্বাভাবিক বছরে চেয়ে যে বছর পোপ পদে পরিবর্তন হয় সে বছর কিছুটা বেশি অনুমোদিত হয়।বিরলতার কারণে, ভ্যাটিকানের ইউরো কয়েনের সংগ্রহকারীদের কাছে অনেক চাহিদা রয়েছে।ইউরো গ্রহণের আগ পর্যন্ত, ভ্যাটিকান মুদ্রায় এবং ডাকটিকিটে নিজস্ব ভ্যাটিকান লিরা মুদ্রা ব্যাবহৃত হত, যা ইতালীয় লিরার সমান ছিল।ভ্যাটিকানের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী আছে। নাম পটেনশিয়াল সুইস আর্মি

ভ্যাটিকান সিটি নামটি প্রথম ল্যাটেরান সন্ধিতে ব্যাবহৃত হয় যা ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ সালে স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির মাধ্যমে আধুনিক ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নামকরন হয় ভ্যাটিকান পর্বতের নামানুসারে। "ভ্যাটিকান" শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে এট্রুস্টান বসতির নামানুসারে, রোমানদের কাছে এগার ভ্যাটিকানাস বা ভ্যাটিকান অঞ্চল নামে পরিচিত এলাকায় ভ্যাটিকা বা ভ্যাটিকাম নামের এই মানব বসতির অবস্থান ছিলো। দাপ্তরিক ভাবে ইতালিয়ান ভাষায় শহরটির নাম সিত্তা ডেল ভাটিকানো বা স্তাতো দেল্লা সিত্তা দেল ভাটিকানো যার সরলার্থ "ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্র"। যদিও হোলি সি (যা ভ্যাটিকান থেকে পৃথক) দাপ্তরিক কাজে যাজকীয় লাতিন ব্যাবহার করে, ভ্যাটিকান নগরের দাপ্তরিক ভাষা ইতালীয়। নগরটির লাতিন নাম "স্ট্যাটাস সিভিয়াটিস ভাটিকানো", এই নামটিই হোলি সি, চার্চ এবং পোপ ব্যাবহার করে থাকেন।

শাহরিয়ার সোহাগ এর  নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প

ভ্যাটিকান সিটির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তনের আগে থেকেই এই রাজ্যের স্থানটুকুকে পবিত্র বলে গণ্য করা হতো এবং রোমের এই অংশটুতুতে এর আগে কখনই বসতি গড়ে উঠেনি বা কেউ এখানে বসতি স্থাপন করতে চায়নি। রোমান সাম্রাজ্যের সময় এই স্থানে ফ্রিজিয়ান দেবী সিবেল এবং তার স্বামী আটিসের উপাসনা করা হতো। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর কোনো এক সময়ে আগ্রিপিনা দ্য এল্‌ডার (খ্রিস্টপূর্ব ১৪ - ৩৩ খ্রিস্টাব্দ) এই অঞ্চলের একটি পাহাড় কেটে বিশাল উদ্যান তৈরি করেন। পরবর্তীতে সম্রাট ক্যালিগুলা এখানে একটি সারকাস তৈরির উদ্যোগ নেন যদিও তিনি তা সম্পূর্ণ তৈরি করে যেতে পারেননি। তার পরবর্তী সম্রাট নিরো এই সার্কাস সম্পন্ন করেন। এই সার্কাসটিকে তাই "নিরোর সার্কাস" (সার্কাস অফ নিরো) নামে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে সেই ভ্যাটিকানের একমাত্র দৃশ্যমান ভগ্নাবশেষ হচ্ছে ভ্যাটিকান ওবেলিস্ক। এই ওবেলিস্কটি সম্রাট ক্যালিগুলা হেলিওপলিস থেকে ভ্যাটিকানে নিয়ে এসেছিলেন তার সার্কাসের স্পিনা সাজানোর জন্য। ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমে বৃহৎ অগ্নিকাণ্ডে শহীদ খ্রিস্টানদের সমাধিস্থল হিসেবে এই স্থানটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রাচীন প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে বলা হয় এই সার্কাসের প্রান্তরেই সেন্ট পিটারকে মাথা নিচে ও পা উপরে দিয়ে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। সার্কাসের বিপরীত দিকে ছিল একটি সমাধিসৌধ, যা ভিয়া করনেলিয়া দ্বারা সার্কাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল। এই ভ্যাটিকানেই বহুত্ববাদী ধর্মগুলোর উপাসনালয়, শেষকৃত্যের সৌধ এবং অন্যান্য সৌধ ও মিনার নির্মিত হয়েছিল। এই সবকিছু নির্মিত হয়েছিল ৪র্থ খ্রিস্টাব্দের আগে। ৪র্থ খ্রিস্টাব্দের প্রথমভাগে সম্রাট কন্‌স্টান্টাটাইন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং তিনিই ভ্যাটিকানের কেন্দ্রভূমিতে সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা নির্মাণ করেন। তখন ভ্যাটিকানের প্যাগান স্থাপনাসমূহ ধ্বংস করে ফেলা হয়। এই ব্যাসিলিকাটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পোপদের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে ব্যাসিলিকার মূল স্থাপনা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষত রেনেসাঁর সময় এর খননকাজ দ্রুত এগোতে থাকে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে পোপ দ্বাদশ পিউস-এর নির্দেশে সম্পূর্ণ স্থাপনাটি ভূমি থেকে উত্তোলিত করা হয়।

ভ্যাটিকান সিটিতে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত কিছু শিল্পের সংগ্রহ। যথাক্রমে ব্রামান্তে, মাইকেলেঞ্জেলো, গিয়াকোমো দেলা পোর্তা, মাডের্নো এবং বার্নিনির অধীনে নির্মিত সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা রেনেসাঁ যুগের অন্যতম বিখ্যাত স্থাপত্য। সিস্টিন চ্যাপেল এর ফ্রেস্কোর জন্য বিখ্যাত, এর ফ্রেস্কতে পুরুগিনো, গিরল্যান্ডিও, বাত্তেচেল্লির মত বিখ্যাত শিল্পীগণ কাজ করেছেন এবং এর সিলিং-এ থাকা বিখ্যাত চিত্রকর্ম দ্যা লাস্ট জাজমেন্ট মাইকেলেঞ্জেলোর চিত্রকর্ম। ভ্যাটিকানের ইন্টেরিয়র নকশায় কাজ করেছেন এমন বিখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন রাফায়েল এবং ফ্রা আংগেলিকো।মিশেলেঞ্জেলো এবং লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো বিখ্যাত শিল্পীর আবির্ভাবও এখান থেকে।

ভ্যাটিকান লাইব্রেরি এবং ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের সংগ্রহের অসামান্য ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো সমগ্র ভ্যাটিকান সিটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট) ঘোষণা করে। এটা একমাত্র দেশ যেখানে সমগ্র দেশটিকেও এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।অধিকন্তু, এটিই একমাত্র স্থান যা ইউনেস্কোর সাথে সাথে ১৯৫৪ সালের প্রপার্টি অনুসারে "বিশেষ সুরক্ষার অধীনে সাংস্কৃতিক সম্পত্তির আন্তর্জাতিক নিবন্ধন"-এ নিবন্ধিত হয়েছে যেখানে সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনায় একে সুরক্ষা দেওয়ার অঙ্গিকার করা হয়েছে।

ভাটিকান সিটিতে সেন্ট পিটারস বাসিলিকা

জন হল ইতালির সবচেয়ে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিভ্রমণমূলক স্থান। এটি সেই স্থান যেখানে ৬৪ খ্রীষ্টাব্দে মূখ্য প্রেরিত ভাববাদিতুল্য পিতা সেন্ট পিটার ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন এবং তাঁকে সমাহিত করা হয়। যেহেতু সেন্ট পিটার সর্বপ্রথম পোপ হিসাবে বিবেচিত ছিলেন, তাই পোপ বাদী ব্যাক্তিরা এখানে একটি গির্জা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রকৃতপক্ষে, গির্জাটি গাইয়ুসের স্মারকএবং সেন্ট পিটারের সমাহিত নির্মাণ কেন্দ্রস্থল তৈরির জন্য এটির স্থাপণ করা হয়। মনুম্যান্ট বা স্মৃতিস্তম্ভটি হল কয়েক বছর ধরে অর্জিত শৈল্পিক শ্রেষ্ঠত্বের একটি সূক্ষ্ম নিদর্শন। গির্জাটি ইতালির সবচেয়ে বিখ্যাত শেফস-ডিউভ্রে বা শিল্পীর আবাসস্থল, যার মধ্যে রয়েছেন মাইকেল এঞ্জেলোর পিয়েটা, তাঁর আকর্ষণীয় গম্বুজ ও বারনিনির শামিয়ানা (ক্যানপি) বেদীর উপর স্থাপিত রয়েছে। গির্জাটিতে একসঙ্গে প্রায় 20,000 জনসাধারণের জমায়েতের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। ভাবগম্ভীর ভবনটির মধ্যস্থভাগ 45.50 মিটার উচ্চ। গির্জার অভ্যন্তরটি সুন্দর মোজাইক কারুকার্য এবং চিত্রকলার সঙ্গে খচিত। 136 মিটার উঁচু গম্বুজ থেকে, দর্শকরা চত্বরটির চিত্র অনুপম দৃ্শ্য উপভোগ করতে পারেন। কার্লো মাডের্নো অট্টালিকার সম্মুখভাগের প্রসারণ এবং যীশু খ্রীষ্ট, ব্যাপ্টিস্ট জন এবং ঈশ্বরের বাণী প্রচারকদের প্রকান্ড মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে মাইকেল এঞ্জেলোর মূল ডিজাইনের কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। উৎসাহের ব্যাপার হল, সূক্ষ্মাগ্র ক্ষুদ্র স্তম্ভশ্রেণীর উপর তিনি সেন্ট পিটার্সের মূর্তিটি স্থাপণ করেন নি। গির্জাটির অভ্যন্তরে কৌশলগতভাবে রক্ষাকর্তা সন্তের মূর্তিটি স্থাপণ করেছিলেন। পোপেদের কবরস্থানের নিম্নদেশে আচ্ছাদিত প্রাসাদটি, ভাটিকান গুহা নামেও অভিহিত।

  চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.