ভারত - চীন, সামরিক শক্তিতে কে কার চেয়ে এগিয়ে?
গত বছর ৯ ডিসেম্বর, ভারতের অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ
রেখায় ভারতীয় ও চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষের জেরে ২ দেশের
মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমনকি চীন ভারতের অরুণাচল প্রদেশে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করছেন
নয়াদিল্লি। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত বাধলে কে কার থেকে চেয়ে এগিয়ে থাকবে?
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স ২০২২ এর তথ্য মতে, সামরিক শক্তির দিক থেকে দুটি দেশের শক্তিশালী অবস্থান। ১৪২ টি দেশের মধ্যে
চীনের অবস্থান তৃতীয়। ভারতের
অবস্থান চতুর্থ। ১৯৬২ সালে যুদ্ধের পর বিগত দশক গুলোতে এশিয়ার এই দুই দেশই বিপুল
যুদ্ধাস্ত্রের সম্ভার গড়ে তুলেছে। এখনো অস্ত্রভাণ্ডার
সুসজ্জিত করতে প্রতিনিয়তই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং- নয়াদিল্লি। দেশ দুটি সামরিক শক্তিতে নিজেদের কথাটা সমৃদ্ধ করেছে? কার সামরিক
শক্তি কতটা বেশি? যুদ্ধ লাগলে কে কোন দেশের সমর্থন পাবে? আজকে দৃশ্যপটে জানবো এসব প্রশ্নের উত্তর।
চীন ও ভারত দুটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ। বেইজিং ১৯৬৪ সালে ও ভারত ১৯৭৪
সালে পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে ওঠে। ২০২২ সালের বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের বিভিন্ন ব পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৬০। অন্যদিকে, চীনের প্রায় ৩৫০ টি
পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। ২০৩৫ সাল নাগাদ এর
সংখ্যা দেড় হাজারে পৌছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়োটার্স মার্কিন সংবাদ মাধ্যম
সিএনএন এ তথ্য উঠে চলে এসেছে।
২০৩০ সাল নাগাদ বেইজিং এ পারমানবিকের কষ্টের সংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজারে। আর
২০৩৫ এ দেড় হাজার।
ভারতের সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা ১৪ লাখ ৫০ হাজার। চীনের সক্রিয় সদস্যের
সংখ্যা ২০ লাখ। ভারতের রিজায় সৈন্য সংখ্যা ১১ লাখ
৫০ হাজার। চীনে ৫ লাখ ১০ হাজার। ভারতের প্যারামিটারি ফোর্স ২৫ লাখ ২৭ হাজার, চীনের ৬২৪০০। ভারতের মোট বিমান রয়েছে ২১৮২ টি, চীনে ৩২৮৫টি।
ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৬৪ টি। চীনে রয়েছে ১ হাজার ২০০। ভারতের হেলিকপ্টার আছে
৮০৫টি চীনের ৯১২টি। আক্রমণ চালাতে সক্ষম এমন হেলিকপ্টার ভারতে আছে তিনটি। চীনের
রয়েছে ২৮১ টি। নয়াদিল্লির প্রশিক্ষক সংখ্যা ৩৫৩ জন। বেইজিং এর ৩৯৯ জন। ভারতের
ট্যাং রয়েছে ৪৬১৪ টি। চীনের ৫২৫০টি
রয়েছে। সাজোয়া যান ভারতের আছে ১২ হাজার। চীনের রয়েছে ৩৫ হাজার। মোবাইল রকেট প্রজেক্ট ভারতের ১৩৩৮ টি, বেইজিং এর
৩১৬০ টি। এয়ারক্রাফট নয়াদিল্লির ১টি, বেজিং এর ২টি।
ভারতের সাবমেরিন ১৭ টি, চীনের ৭৯ টি। ড্রেস্ট্রয়েড
আছে ভারতের ১০টি । চীনের ৪১ টি। ভারতে রয়েছে ১৩ টি ফ্রিগেট আছে ৪৯ টি।
ভারত- চীন দুই দেশের অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। তবে যে জায়গা নিয়ে দুই দেশের
মধ্যে সংঘর্ষ সেই তাওয়ান অঞ্চলটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ হাজার ফুট উচ্চতায়
অবস্থিত ছোট্ট পাহাড়ি শহর। গ্রীসংকর
পার্বত্য এলাকায় ভারত ও চীন তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র কতটা ব্যবহার করতে পারে তা
নিয়ে রয়েছে বিশ্লেষকদের শঙ্কা । বিমান বহর ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারলেও সেনা বাহিনী তাদের গোলন্দাজ, সাজোয়া বা ট্যাংক খুব বেশি ব্যবহার করতে পারবে না মনে হয় বিশ্লেষকদের মতে। বিশ্লেষকদের মতে, যে দেশে যত সৈন্যই থাকুক না কেন, নানা কারণে সব সৈন্য কোন দেশেরই মোতায়েন করতে পারে না। যেখানে যুদ্ধ হবে
সেখানকার ভূপ্রকৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত জরুরী বলে মনে
করেন তারা। এছাড়াও যে জায়গা নিয়ে বিরোধ সেটা কোন দেশের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেটার জন্য তারা কতটা বল প্রয়োগ করতে প্রস্তুত সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে ভারত। এমনকি জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল, ইউরোপের মত
মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে ও। সামরিক সহযোগিতা দিক থেকে এসব দেশের সঙ্গে ভারতের ভালো
সম্পর্ক। অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এসব কারণে হয়তো রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিকভাবে ভারতকে সমর্থন দেবে দেশগুলোর। এছাড়া জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে
নয়াদিল্লির। অন্যদিকে চীনের আন্তর্জাতিক মিত্রের সংখ্যা খুবই কম। রাশিয়া চীনের
বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ
থাকলেও সম্প্রতি মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ
করে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলো দুই পক্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে ভারত। যুদ্ধ শুরুর পর দ্রুত ইউক্রেনে
মানবিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে নয়াদিল্লি। আবার যুদ্ধের নয় মাস পেরোলেও এখনো
রাশিয়ার অভিযানে নিন্দা জানাইনি ভারত। এছাড়া ১৯৬২ সালে চীন- ভারত যুদ্ধের সময়
রাশিয়া চীনের বদলে ভারতকে সমর্থন করেছিলেন। এদিকে পাকিস্তান ও
রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সামরিক সম্পর্ক থাকলেও যুদ্ধ
ক্ষেত্রে দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা নেই বেইজিং এর। যদিও
সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের আধিপত্য বাড়াতে শুরু করেছে। তবে
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-চীন যুদ্ধ বাঁধলে প্রতিটি দেশে নিজ নিজ
স্বার্থকে আগে প্রাধান্য দিবে। দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যেতে পারে।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments