ইতালির ভেনিস শহর, পৃথিবীর ৩য় সুন্দর শহর
"প্রশান্ত" অথবা শাসক" হিসাবে পরিচিত ছিল জলকন্যা খ্যাত ভেনিস। ইতালির ভেনিস শহর হলো যেন এক রূপকথার শহর।পৃথিবীর অন্যতম সুন্দরতম শহরের এই ভেনিস শহর।
ভূমধ্যসাগরের বুকে গড়ে উঠা এই সুন্দরতম ভাসমান শহরের আয়তন ৪১৪.৫৭ বর্গ কিলোমিটার। বিস্ময়ের অলিগলির জলপথ ভেনিসকে নিয়ে গেছে সৌন্দর্যের এক অনন্য মাত্রায়। ১১৮ টি দ্বীপের এই শহরে রয়েছে ১৭৭ টি খাল। প্রতিটি দ্বীপ একে অপরের সাথে সেতু দিয়ে সংযুক্ত। প্রতিটি দ্বীপের সংযুক্তির জন্য রয়েছে ৪০৯ টি সেতু। এমন অনেক দ্বীপ রয়েছে যেখানে পায়ে হেটে যাওয়ার কোন পথ নেই। যা ভেনিসকে ইউরোপের সবচেয়ে অনন্য শহরগুলোর মধ্যে একটিতে রূপান্তরিত করেছে।পানির মধ্যে গেঁথে থাকা সব বাড়ি ঘর। এখানের বিল্ডিংগুলো হল এক একটি শিল্পের নমুনা।
যখন এর খালগুলোতে বিল্ডিংগুলোর ছায়া প্রতিফলিত হয়, তখন এটিকে আরও সুন্দর দেখতে লাগে। এমন রূপে সজ্জিত এই শহরকে ‘ভাসমান শহর’ ও বলা হয়। ইউরোপের একমাত্র মোটর গাড়িহীন ও একবিংশ শতাব্দীতেও গাড়ির ধোঁয়াহীন শহর এই ভেনিস। নান্দনিক কারুকার্যে খচিত জলযানই এই ভাসমান শহরের একমাত্র যানবাহন।
সিটি অব লাভ এন্ড লাইটস খ্যাত ভেনিস নগরীর ইতিহাস সম্পর্কে কথিত আছে,প্রায় ১৫০০ বছর আগে আত্তিলা নামক এক দস্যু বাস করতো অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলে। তার দস্যুবৃত্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপকূলবর্তী জনগণ এই অসংখ্য দ্বীপে ঘেরা জলাভূমিতে এসে ঘরবাড়ি তৈরি করে। যাতে আত্তিলা ঘোড়ায় ছড়ে এই এলাকায় প্রবেশ করে দস্যুবৃত্তি করতে না পারে। সেই দ্বীপপূর্ণ জলাভূমি থেকেই ভেনিসের যাত্রা শুরু।
পানির শহর, মুখোশের শহর, ব্রিজের শহর, কিংবা খালের শহর ভেনিসের রয়েছে হরেক রকম নাম। ইউরোপের সবচেয়ে রোমান্টিক শহরও বলা হয়ে থাকে এই ভেনিসকে। ঐতিহাসিক এই নগরীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরাও। ভেনিসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের লক্ষে পৃথিবীর একেক প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থী দের জন্য রয়েছে ভেনিসের ঐতিহ্যবাহী নানান স্থাপনা, জাদুঘর, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট- এসব স্থাপনায় মন ছুঁয়ে যায় আগত দর্শনার্থী দের। ভেনিসের কিছু স্থাপনা এবং দর্শণীয় স্থান ও বস্তু গুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু হলো-
দ্যা ফিনিক্স: পৃথিবী বিখ্যাত অপেরা হচ্ছে ইতালির অপেরা। ইতালির সব থেকে বিখ্যাত অপেরা হাউজ গুলোর মধ্যে একটি এই ভেনিসে অবস্থিত। ট্র্যাট্টো লা ফেনিস প্রাসাদ টি দ্যা ফিনিক্স নামে পরিচিত।
ফ্যাবরিক্স গিলিয়ানা: পিয়াজ্জা সান মার্কোর পাশেই ফ্যাবরিক্স গিলিয়ানা। ফ্যাবরিক্স গিলিয়ানায় ভেনিসের সকল ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প কারুকার্যের সবকিছু পাওয়া যায়। হাতের তৈরি শো পীস, ক্যালিগ্রাফি পাওয়া যায়।
সেন্ট মার্কোর ক্যাথেড্রাল: ভেনিসের বিখ্যাত স্থাপত্যের মধ্যে একটি সেন্ট মার্কোয় অবস্থিত ক্যাথেড্রাল। নেপোলিয়ন ক্যাথেড্রালের সামনের বিশাল চত্বরকে ইউরোপের সবচেয়ে সুদৃশ্য ড্রয়িংরুম বলেছিলেন। ক্যাথেড্রালের সিংহ দরজায় শোভা পাচ্ছে হাজার বছর আগে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুল থেকে লুট করে আনা চারটি অতুলনীয় শৈল্পিক সৌন্দর্যের ধাতব ঘোড়ার ভাস্কর্য। ক্যাথেড্রালের চার দিকের দেয়াল নানান সুসজ্জিত কারুকার্যে খচিত চিত্রকর্ম, অক্ষরে লিপিবদ্ধ নানান কাহিনী।
লিডো দ্বীপ: লিডো দ্বীপ কে বলা হয় ভেনিসের সোনালি দ্বীপ। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো চলচ্চিত্র উৎসব ‘ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ এর আয়োজক এই সোনালি দ্বীপ। এ দ্বীপের সমুদ্র সৈকতে গোধূলি লগ্নের সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে পর্যটকরা উপস্থিত হয়।
আরো রয়েছে, সেন্ট মার্কোর বিখ্যাত ভৌজ প্যালেস, গ্র্যান্ড ক্যানেলের উপর রিয়ালটো ব্রিজ।
এই ধরণের অসামান্য সুন্দর দৃশ্যাবলী প্রথম দর্শনেই যে কারোর মনে বিস্ময় তৈরী করতে পারে।
ভেনিসের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলো ইতালীয় নাট্যকার কার্লো গোলদোনি। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৭০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬ ফেব্রুয়ারি ১৭৯৩ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি রিপাবলিক অব ভেনিসের একজন সদস্য। ইতালির জনপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্য তার লেখা অন্যতম। আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তি হলো মার্কো পোলো। জন্ম১৫ই সেপ্টেম্বর, ১২৫৪ মৃত্যু ৮ই জানুয়ারি, ১৩২৪। তিনক একজন ভেনিসিয় পর্যটক এবং বণিক। পশ্চিমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সিল্ক রোড পাড়ি দিয়ে চীন দেশে এসে পৌঁছানো লোকজনের মধ্যে অন্যতম। তার বই “লিভ্রে দেস মারভেলেস দ্যু মন্ডে” (অর্থঃ বিস্বয়কর পৃথিবীর বর্ণনা) সমগ্র ইউরোপের কাছে এশিয়া এবং চায়নার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
No comments