মেইড ইন বাংলাদেশ || বাংলাদেশের জনপ্রিয় পলেটিক্যাল স্যাটায়ার সিনেমা
মোস্তফা
সারোয়ার ফারুকী পরিচালিত বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘জিম্মি’ উপন্যাস অবলম্বনে ২০০৬ সালে মুক্তি পায় বাংলাদেশের বিখ্যাত পলেটিক্যাল স্যাটায়ার সিনেমা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ।’ এই
সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান।
রতনপুর
গ্রামের একজন বেকার যুবক চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসে। ঢাকায় চাকরি বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেও চাকরি না করে সে
যখন হতাশ হয়ে গ্রামে ফেরত যেতে চাইছিলো তখনই ঢাকায় এক রেলস্টেশনে পরিচিত
হওয়া এক বড় ভাই
তাঁকে তার এক বড় ধরনের
কাজের সুযোগ দেয়। তিনি জানান কাজটি করতে পারলে শুধু তারই নয় দেশের অসংখ্য
বেকার যুব সমাজের জীবন ঘুরে যেতে পারে। তাই সেই যুবক সিদ্ধান্ত নেয় রতনপুর ফিরে যাবার এবং সেখানে গিয়ে সে জেলাপ্রশাসকের অফিসে
গিয়ে প্রথমে জেলাপ্রশাসক ও তার পিএস
কে জিম্মি করে এবং একে একে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বড় বড় হর্তাকর্তাকে
বাড়ি থেকে ডাকিয়ে এনে জিম্মি করে। প্রায় ২২ ঘন্টা ধরে
চলা অভিযানে জিম্মি করা ব্যক্তিদের কাছে সে ৯ টি
প্রস্তাব স্থাপন করে এবং সেই প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করে বিল পাশ করার পদক্ষেপ নিতে বলে। সিনেমাটিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যুবকটি গণতন্ত্রের নামে সরকারি দলের লোকেরা যে স্বৈরাচারী শাসন
চালাচ্ছে তার বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিলো। গুরুত্বপূর্ণ এই দাবিদাওয়াগুলোর মধ্যে
মার্ক্সবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার বিপরীতে গিয়ে কিভাবে জনগণের কল্যাণে দেশের হয়ে সবাই একত্রে কাজ করতে পারে সেই বিষয়ে জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ে তারা রাতভর আলোচনা চালায়। যদিও শেষমেষ জিম্মিকারী নিজেই ধরা দেয় এবং সন্ত্রাসবাদ কর্মকান্ডের দায়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এই সিনেমাটিকে তৎকালীন
সময়ের জঙ্গিবাদ, অরাজকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিনেমাটি করবার জন্য মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীকে অনেক কাঠ-খোড় পোহাতে হয়। জাহিদ হাসান একজন শিল্পী হিসেবে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে এই সিনেমায় অভিনয়
করেন। এই সিনেমার সংলাপ
এবং চিত্রনাট্য ছিলো দূর্দান্ত। যুবক সরকারি ব্যক্তিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে বেশ কয়েকবার গালাগালি করেছে। যা প্রথমে সেন্সর
বোর্ড ভায়োলেন্স হিসেবে দেখিয়ে কাট করতে চেয়েছিলো। কিন্তু পরিচালক এবং লেখক তারপরেও সেন্সর বোর্ডের পরামর্শকে উপেক্ষা করে আপত্তিকর সংলাপগুলো রেখেছিলো। এই সিনেমায় পাঞ্চ
লাইনগুলো দারুণ, হাসতে হাসতে সত্য কথাগুলো আপনি নিজেই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। যেমন সিনেমায় পলার মায়ের সাথে যুবকের একটি সংলাপ ছিলো এমন যে, এই রাষ্ট্র শুধুমাত্র
অপরাধী এবং অসুস্থদের দায়ভার নেয় কিন্তু তারা বেকারদের জন্য কোনো রকম দায়-দায়িত্ব নেয় না। সেজন্য যুবকের ৯ টি দাবি
দাওয়ার মধ্যে একটি ছিলো রাষ্ট্রের প্রত্যেক জনগণ প্রতিদিন ১ টাকা রাষ্ট্রীয়
কোষাগারে জমা দিবে যা দিয়ে বেকারদের
তহবিল গঠন হবে এবং রাষ্ট্রে জনগণের টাকা দিয়েই কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। ফলে যোগ্যতা অনুসারে প্রতিটা নাগরিকই কাজের সুযোগ পাবে। সিনেমাটি বেশ কিছু ড্রাই হিউমার রয়েছে তবে সিনেমার স্টোরিটেলিং এবং সিনেমাটোগ্রাফি অনেকটাই ইরানী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের থেকে অনুপ্রাণিত। সিনেমায় যারা অভিনয় করেছেন তারা প্রত্যেকেই ভালো করেছেন বিশেষ করে নওশাদ চরিত্রে অভিনয় করা শহিদুজ্জামান সেলিমের এখন পর্যন্ত সেরা অভিনয় বলে মনে করেন অনেকেই। স্টোরিটেলিংটা অনেকটাই ফিকশনাল আঙ্গিকে করা। গল্প বেশ প্রেডিকটেবল এবং লিনিয়ার কিন্তু খুবই স্বল্প বাজেটে নির্মাণ তা বোঝাই যায়
যেহেতু মাত্র ১ টি প্লটেই
গল্পটা শেষ হয়েছে। একদম সাদা-মাটা কালার গ্রেডিং। প্লট হোল তেমন নেই বললেই চলে। অর্থাৎ পরিচালক খুবই পরিষ্কার ছিলেন তিনি দর্শককে কি বার্তা দিতে
চাইছেন। আপনি যদি সত্য কথাগুলো শুনতে চান এবং প্রাণ খুলে হাসতে চান তবে ১ ঘন্টা ৪৭
মিনিটের এই সিনেমাটি দেখতে
পারেন।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments