Notting Hill: যে সিনেমা বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় আপনাকে শান্তির পরশ দিবে
Notting Hill সিনেমাটার
প্লট খুব সাধারন কিন্তু প্রেজেন্টেশন যেনো অসাধারন! গল্পটা খুব পরিচিত কিন্তু চিত্রনাট্যের গাঁথুনি মনমুগ্ধকর! আপনি যদি বাস্তব জীবনের পারস্পেক্টিভ থেকে দেখেন তবে আপনার কাছে বিষয়টা surreal হতে পারে কিন্তু যদি একটা সিনেমার পারস্পেক্টিভ থেকে দেখেন তবে nice না মনে হবার
কোনো কারণ নাই। আচ্ছা ধরেন, আপনার কোনো সেলিব্রিটি say for example
আপনি দিপিকার সাথে সামনাসামনি সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন। সে আপনার ক্রাশ।
আপনি তাকে হাগ করতে চাইবেন অথবা একবারের জন্যে হলেও তার হাতটা স্পর্শ করতে চাইবেন! তারপর সে যদি তার
ব্যস্ততম শিডিউলের মাঝে বিরতি নিয়ে নিজ থেকে যদি ডিনার করতে চায় আপনার সাথে এবং সে তার জামাই
রানভীর সিং এর সামনে যদি
তাকে সুন্দরভাবে ম্যানেজ করে কাজটা করে এবং আপনাকে সত্যিই বিশ্বাস করতে শুরু করে তাহলে সেখানে ভালোবাসা তৈরি না হয়ে কি
পারে!
ঐতিহ্যবাহী
উৎসবের এলাকা Notting Hill এ উইলিয়াম ট্যাকারের
বইয়ের দোকান আছে। তার বুক শপে মূলত Travel Book পাওয়া যায়। এনা স্কট একজন বিখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী। শুটিঙের প্রয়োজনে তাকে নানা দেশে যেতে এবং নানা কালচার জানতে সে ভ্রমনের উপর
বই পড়ে। বই কিনার আগ্রহ
থেকেই সে উইলিয়াম ট্যাকারের
বইয়ের দোকানে হাজির হয়। বই কিনে কাজে
ফিরার পথে তার ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয় যার ফলে
তার জরুরি ভিত্তিতে কাপড় পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে এবং তাকে উইলিয়াম নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যথেষ্ট আপ্যায়ন করে আর তিনি আতিথিয়তায়
মুগ্ধ হন। এরপর তাদের মধ্যে একধরনের ভালোলাগা এবং সেখান থেকে ভালোবাসার সূচনা হয়। তবে ঘটনাটা এত ফ্ল্যাট হলে
তো হতোই! মাঝে নানা ঘটনা ঘটে এমনকি এ আসে সে
যায় এবং প্রেসেও নানা বিব্রতকর ঘটনা ঘটে।যাই হোক এসব সাবপ্লটের বিষয়গুলা নিয়ে যদি বলেই ফেলি তাহলে তো সিনেমাটার চিত্রনাট্যের
অনুবাদ আমার বিনা পারিশ্রমিকে করে দেওয়া হবে যা আমি কখনোই
করবোনা। আচ্ছা আমি তো চিত্রনাট্যের গাঁথুনি
নিয়ে বলতে চাচ্ছিলাম। সেটাই আগে বলি।
এত
সুন্দর স্ক্রিপ্ট, স্ক্রিনপ্লে খুব কমই দেখা যায়। কতটা মেটাফোরিক এবং স্ট্রং হিউমারে লেখা হয়েছে তা কয়েকটা দৃশ্যের
সংলাপের ব্যখ্যা করতে চাই। সিনেমার শুরুর দিকে একজন ক্রেতা আসে বই কিনতে। বইয়ের
দাম বেশি হওয়ায় সে বইটা চুরি
করে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু সে চোখের সামনে
এনা স্কটকে দেখে আটোগ্রাফ নেবার লোভ সামলাতে পারেনা। এনা সেখানে অটোগ্রাফে লিখেন, "প্রিয় রুফ শিল্পকে অসম্মান করায় তোমার জেলে থাকা উচিৎ।"
আরও
কিছু জায়গা আছে যেমন আমরা সেলিব্রেটিদের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হই কিন্তু আমরা
জানিনা যে তাদের জোরপূর্বক
সৌন্দর্য বাড়ানোয় মানসিকভাবে তাদের কতটা হিনমন্যতায় থাকতে হয়!
একটা
সংলাপ এমন ছিলো, " আমি গত ১ দশক
ধরে ক্ষুধার্ত কারন আমি সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ডায়েট করছি। আমার একজন সেলিব্রিটি বয়ফ্রেন্ড ছিলো যে আমাকে মারতো
কারন তার কামনীয় রমনীর মতো দেখতে ছিলাম না। আমাকে সেজন্য সার্জারি করতে হয় এবং আমার
উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে। কাজেই আমি পরিচিত হওয়া স্বত্ত্বেও আমার পছন্দের চরিত্র পেতাম না। অনেকেই আমার রূপের কারনে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছে।"
আরেকটা
সংলাপ ছিলো যখন উইলিয়াম এবং এনা বিছানায় অন্তরঙ্গ মূহুর্ত শেষ করে তখন উইলিয়ামস বলে,
"আমি
অনেক সৌভাগ্যবান যে তোমাকে নগ্ন
অবস্থায় আমার সাথে পেয়েছি। এটা অনেকেরই স্বপ্ন থাকে।"
তখন
প্রতিউত্তরে এনা বলে, " তুমি না সারা পৃথিবী
আমাকে নগ্ন দেখে। কখনো সেটে, কখনো স্ক্রিনে কিংবা কখনো বা ম্যাগাজিনে। তোমরা
তো শুধুমাত্র বুকের স্তনের নরম শেইপের জন্য নারীদের উপর আকর্ষিত হও। তোমাদেরও তো স্তন আছে
তখন তো এমন ফিল
হয়না! আচ্ছা একটা জিনিস ভেবে দেখেছো তোমার জন্ম যার দুধ খেয়ে তাকে তুমি এই অবস্থায় দেখলে
তোমার তো তখন এমন
মনে হয়না! আসলে আমাদের পারস্পেক্টিভে সমস্যা। এই সমস্যা তোমার
না যারা আমাদের পর্দায় দেখে তাদের মধ্যে এমন ন্যাস্টি ব্যাপারটা কাজ করে। আমরা সেলিব্রিটি আমাদের দেখে অনেকের অন্ডকোষ বড় হয় কিন্তু
তুমি কি জানো আমি
একজন মেয়ে? একজন মেয়ের পাশে একজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। একসাথে সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করছে। একজন সেলিব্রিটি হিসেবে না একজন মেয়ে
হিসেবে ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে ছেলেটাকে সে ভালোবাসতে চাইছে
কারন সে তাকে ভরসা
করতে পারে। "
এমন
চমৎকার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন রিচার্ড কার্টিজ আর পর্দায় আরামদায়কভাবে
তা আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক রজার মিচেল। স্ক্রিপ্ট রাইটারের দূরদর্শিতা কতটা তা বুঝা যায়
তিনি যখন জুলিয়া রবার্টসের ১৯৯০ সালের "প্রিটি উইমেন" সিনেমার প্লটকে বন্ধুদের মধ্যে আড্ডায় ছোট্ট একটা সংলাপে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন।
সিনেমায়
অভিনয় নিয়ে আসলেই বলার কিছু নাই। "প্রিটি উইমেন" জুলিয়া রবার্ট দেখিয়ে দিয়েছেন এই ধরনের সিনেমায়
এমন চরিত্রে তথাকথিত মনিকা বেলুচ্চির মতো বোল্ড না হয়েও, সালমা
হায়েকের মতো ডেসপারেট না হয়েও কিংবা
এঞ্জেলিনা জোলির মতো ওভার হাইপড না হয়েও কীভাবে
অভিনয়ের সব আলোটা নিজের
দিকে কেড়ে নিতে হয়! হাগ গ্র্যান্ড তাকে যথাযথ সঙ্গ দিয়েছেন এবং সেন্ট্রাল সাপোর্টিং ক্যারেক্টার হিসেবে থাকা ক্রিস ইভান্স দারুণ ছিলেন। তার হাস্যরসাত্মক ক্যারেকটারটা ছিলো উপভোগ্য। এই সিনেমায় ৩
টা গান রাখা হয়েছে। কোনো বৃষ্টিস্নাত দিনে 'when you say nothing
at all' গানটা শুনতেই যেনো কান জুড়িয়ে যাবে।
এই
সিনেমার একটি তথ্য দিয়ে রাখি। সিনেমাটির শুট শুরু হতে একদিন দেরি হয় বৃষ্টির কারনে
এবং শুধুমাত্র ওইদিন সিনেমার একটা গানের শুট করা হয় সকালবেলা হাল্কা
তুষারপাতের সময়। এটা কোনো ট্রেন্ডিং মুভি না। তাই মাস্টওয়াচ বলার কিংবা রিকমেন্ড করার মতো এই যুগে দাবি
রাখেনা তবে এমন বর্ষনমুখর দিনগুলোতে এই সিনেমা যে
শান্তির পরশ দিবে তা বলার অপেক্ষা
রাখেনা। তাই বলবো হ্যাপি ওয়াচিং।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments