Adsterra

গার্মেন্টসে তিন ফ্যাক্টর

 




গার্মেন্টসে তিন ফ্যাক্টর, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, নতুন বছরে শ্রমিক-সংক্রান্ত ও মজুরি ইস্যুতে পোশাক খাতকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, Hot News

বিদায়ী বছরের শুরুতে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্যোক্তাদের দুশ্চিন্তার মাঝেই শেষদিকে এসে পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার ধারণ করে। পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় শ্রম অসন্তোষ, যা এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এতে ৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনাই বেশি ভুগিয়েছে ৮৫ শতাংশ রপ্তানি আয়ের এই খাতকে। পাশাপাশি ছিল নানা ধরনের শঙ্কাও। এর মধ্যে শ্রম আইন, কর্মপরিবেশ ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর হুঁশিয়ারি আসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন উদ্যোক্তারা। তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু পুরোপুরি স্বস্তি আসছে না। বর্তমানে এসব ইস্যুই নতুন বছরের জন্য পোশাক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে তারা। 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নতুন বছরে শ্রমিক-সংক্রান্ত ও মজুরি ইস্যুতে পোশাক খাতকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।




গ্রেড নিয়ে জটিলতা রয়েছে। অনেক শ্রমিকনেতা এখনো জেলে। এ জন্য বিদেশ থেকে উদ্বেগ জানানো হচ্ছে। সরকার যদি শ্রম ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। 

এদিকে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে নতুন নীতি যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে তা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তবে বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে তিনি মনে করেন। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ, আরএমজি ও ডিসেন্ট ওয়ার্ক বিষয়ে আলোচনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 



জানা গেছে, বিদায়ী বছরের শুরু থেকে রপ্তানি আয় তুলনামূলক কম থাকায় তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এর পাশাপাশি সংকটের মধ্যে নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার খরচ বাড়ে। এর মধ্যে বছরের শেষদিকে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেয়। পোশাকশিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার ও রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা প্রথমে কাজ থেকে বিরত থাকা এবং একপর্যায়ে হামলা-ভাঙচুরে জড়িয়ে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মারমুখী হন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ৩ শ্রমিক। কারখানায় দেয়া আগুনের ধোঁয়ায় আটকা পড়া আরও এক শ্রমিক শ্বাসরোধে মারা যান। দুই সপ্তাহকালের আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ৪৩টি মামলা হয়। আসামি করা হয় ২০ হাজার শ্রমিককে। তাদের ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 


আন্দোলনের সূত্রপাত হয় নিম্নতম মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধির প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে। সরকার গঠিত মজুরি বোর্ডের গত ২২শে অক্টোবরের বৈঠকে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেন। এর অর্ধেক ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব করেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি। এরপর ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবিতে পরদিন ২৩শে অক্টোবর থেকেই আন্দোলন শুরু হয় বিভিন্ন কারখানায়। 

মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের তিন সপ্তাহের আন্দোলনে রাসেল হাওলাদার, ইমরান, জালাল উদ্দিন ও আঞ্জুয়ারা খাতুন নামের ৪ জন পোশাক শ্রমিক মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মালিকপক্ষ নতুন করে প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ৭ই নভেম্বর মালিকপক্ষ আগের প্রস্তাবের চেয়ে ২ হাজার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। সেটিই পরে চূড়ান্ত হয়। ১লা ডিসেম্বর থেকে নতুন এই মজুরি কাঠামো কার্যকর হয়েছে।



বিভিন্ন চাপের মুখে শ্রমিক নেতারা অল্প সময়ের মধ্যে মজুরি নিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিতে বাধ্য হন। যদিও সবকিছু থেমে যায়নি। পোশাক শ্রমিকদের যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন মার্কিন কংগ্রেসের ৮ সদস্য। তারা শ্রমিকদের মাসিক ২৩ হাজার টাকার নিম্নতম মজুরির দাবি না মানাকে শুধু দুঃখজনক নয়, লজ্জাজনক বলেও মনে করেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে ২৩ হাজার টাকা বা ২০৮ ডলারের ন্যূনতম মজুরির দাবি মেনে নিতে সরকার ও তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদকদের চাপ দিতে আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এসোসিয়েশনকে (এএএফএ) চিঠি দেন মার্কিন কংগ্রেসের ওই ৮ সদস্য। গত ১৫ই ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসের এই সদস্যরা এএএফএ’র সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী স্টিভেন ল্যামারকে চিঠি দেন।

এদিকে মজুরি আন্দোলন থেমে যাওয়ার পর পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত শ্রমনীতির কারণে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার।


এ পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১৬ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় প্রেসিডেন্সিয়াল স্মারক ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিধিনেষেধ প্রয়োগ করা হবে। মজুরির জেরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ অবশ্য এখনো কাটেনি।

এদিকে নতুন করে শঙ্কা বাড়িয়েছে, ইউরোপীয় কাউন্সিলের দেয়া চিঠিতে। যাতে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে, দেশের শ্রমমান, মানবাধিকার ও কর্মপরিবেশ নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া নিয়ে যখন দেন-দরবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ, তখন এমন সতর্কতা আমলে নিতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। 


বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি কার্যকর করেছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি সহজভাবে নেয়ার সুযোগ নেই, শ্রমিক নেতারা এভাবে উদ্বেগ জানালেও মালিকপক্ষ ছিল চুপচাপ। যদিও সরকার শ্রম আইন সংশোধনের একটি উদ্যোগ শেষ মুহূর্তে স্থগিত করেছে।

সম্ভাবনা থাকলেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছে দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ পোশাক খাত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানিতে পৌনে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকলেও গত দুই মাস আবার কমেছে।


এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাজার জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি গত কয়েক মাস ধরেই ক্রমাগত কমেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জার্মানিতে রপ্তানি ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২.৫৮ শতাংশ কমেছে। 

গত বছর দেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে রপ্তানি আয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অধীনস্থ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৪.৭৫ শতাংশ কমে ৬.৩৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অথচ আগের বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৮.৪৪ বিলিয়ন ডলার। তবে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে রপ্তানি বাড়ছে। ফলে রপ্তানি আয় ব্যাপক পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে। 

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কোনো রকম শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করেন বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা। তারপরে দেশের পোশাক রপ্তানি আয় নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। 


পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সদ্য ঘোষিত মার্কিন শ্রম নীতি এবং তৈরি পোশাক খাতে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তাদের এই নীতির ফলে কাঁচামাল আমদানি ও পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হতে পারে। শিল্পের বিরুদ্ধে যেকোনো বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা কারখানা বন্ধ এবং নারী কর্মীদের চাকরি হারানোর দিকে ধাবিত করবে। 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহসান-ই-এলাহী বলেন, শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হলো-আইনি কাঠামোর উন্নতি। বাংলাদেশ শ্রম সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে। দেশটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রয়োজনীয়তা অনুসরণ করে সময়ে সময়ে তার শ্রম আইন সংশোধন করেছে। শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে সতর্ক না হলে বিপদের শঙ্কা রয়েছে। 

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

 

No comments

Powered by Blogger.