আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ০৬
উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০৬
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০৬
সময়টা দুপুর বিকেলের মাঝামাঝি। যখন দুপুরের খাওয়া সেরে একটা ভাতঘুম দেয়ার জন্য মানুষ একটু শোয়, সেই সময়টা। এমন সময়টা কেমন যেন, অদ্ভুত শান্ত একটা অলসতা এসে ভর করে। আত্রলিতা একবার ভাবলো বারান্দায় বসে বই পড়া যাক, পরমুহূর্তেই ভাবলো শরীরটা আজ বেশ ভালো লাগছে। একটু ঘুমিয়ে নেয়া যাক, তাহলে হয়তো শরীরটা ভালোই থাকবে। আত্রলিতা মনেপ্রাণে চায় সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে, আবার আগের মতন ভার্সিটিতে যাবে। শুয়ে শুয়ে আত্রলিতা ভাবলো, ভার্সিটি যাওয়া হয়নি কতদিন? একমাস, দুইমাস নাকি একবছর? ঠিকমত হিসেব কষলে মনে পড়বে তবে এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে না। পড়াশোনার ক্ষেত্রে সবসময় সবচেয়ে সিরিয়াস মেয়েটাকে আজ দিন হিসেব করতে হচ্ছে, ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল আত্রলিতার। এখনও মনে আছে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তির সময়টাতেও সে বেশ সুস্থই ছিল, নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা সব ঠিকঠাক চলছিল। তবে বিপত্তি বাধে সেকেন্ড ইয়ারের শুরুতে, আত্রলিতার মায়ের মৃত্যুর পর পর। অবশ্য তার বছরখানেক আগে থেকেই সে কিছু অনুভব করতো, অশরীরী কিছু। চোখ বুজে ভাবতে থাকে আত্রলিতা। শুরুটা সেই কলেজ হোস্টেলে। বাবা মা তখন ভবানীপুর। সে প্রথম ঢাকায় আসে। দুচোখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে, পড়াশোনা করে অনেক বড় হবার। পরীক্ষা দিয়ে নামকরা একটা কলেজে চান্সও পেয়ে যায়। কলেজ হোস্টেলটাও বেশ ছিমছাম। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই চলছিল। আত্রলিতার কলেজের পরীক্ষাগুলোর ফলাফলও বেশ ভালো হচ্ছিল। সেই উৎসাহ থেকেই দিনরাত পড়ার জেদটা আরো বেড়ে যায় আত্রলিতার। হোস্টেলে তার দুই রুমমেট প্রায়ই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো অতিরিক্ত পড়ুয়া বলে। দুই রুমমেট ছিল তৃণা আর নার্গিস। আত্রলিতার সাথে ওদের বন্ধুত্বটাও ছিল বেশ গাঢ়। বিশেষ করে নার্গিসের। নার্গিস অবশ্য সারাদিন ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া এসব নিয়ে মেতে থাকতো তবুও সারাদিন আত্রলিতার পড়ার টেবিলের পাশে এসে বসে তার সব সিক্রেট শেয়ার করতো। আজ বিকেলে কার সাথে দেখা করতে যাবে, কে ওকে কি বললো, সব। তৃণা ছিল একটু চুপচাপ। নার্গিসের মতন অতটা প্রাণখোলা, ছটফটে আর বেশি কথা বলবার মেয়ে নয়। তবুও তিনজন একত্রে খাওয়া থেকে শুরু করে, পড়াশোনার সময় আত্রলিতার সাহায্য নেয়া সবকিছু মিলিয়ে বন্ধুত্বটা বেশ ভালোই জমে উঠেছিল। একসাথে মাঝেমধ্যে বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার সময়টা ছিল বেশ মজার। আত্রলিতা বেশ উপভোগ করতো। কারণ বন্ধুত্বের এমন সান্নিধ্য সে কখনও পায়নি। এমন করে একটা বছর কেটে গেল। ইয়ার ফাইনালে আত্রলিতা প্রথম হলো। তৃণাও মোটামুটি ভালো ফল করেই উত্তির্ণ হলো কিন্তু বিপত্তি দেখা গেল নার্গিসের রেজাল্টে। পদার্থবিজ্ঞান এবং উচ্চতর গণিত এই দুই সাবজেক্টে ফেল করায় তাকে থেকে যেত হলো ফার্স্ট ইয়ারেই। এরমধ্যে নার্গিসের অভিভাবক এসে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করলো। হোস্টেলে এসে ওর বাবা ওকে উচ্চস্বরে অনেক বকাবকি করে গেল। এরপর থেকেই ছটফটে নার্গিস বেশ কেমন শান্ত হয়ে গেল। আত্রলিতা আর তৃণা মিলে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো ওকে, কোনো লাভ হলো না। মেয়েটা নিজের মধ্যে থাকতে শুরু করলো। এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। এরমধ্যে তৃণার বাবা মা ঢাকা শিফট করেছে, ও হোস্টেল ছেড়ে দিল। রুমে নতুন কেউ তখনও ওঠেনি। একদিন আত্রলিতা ওর টেবিলে বসে পড়ছে হঠাৎ করে নার্গিস এসে ওর পাশে বসলো। আত্রলিতা ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করেও পারলো না, তাকিয়ে দেখলো নার্গিস ফোপাচ্ছে। আত্রলিতা একটু কড়া স্বরে বললো,"আবার! আবার কাঁদতেছিস! কি হয়েছে বল?" নার্গিসের চোখ দিয়ে জল গড়ালো। আত্রলিতা খানিকটা বিরক্ত হয়েই বললো," শোন ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা নিবে না সামনের সপ্তাহে? তুই পারবি। পড় ভালো করে। যাহ এখানে বই নিয়ে আয়, আমার সাথে পড়বি।"
নার্গিস কোনো কথা না বলে কাঁদতে কাঁদতেই আত্রলিতার হাত চেপে ধরে বললো,"দোস্ত, তুই তো আমার সবটা জানিস, তোকে আমি সব বলি। জানিস বাবা ফোন দিয়ে কি বলেছে? বলেছে এইবারও পাশ করতে না পারলে আর হোস্টেল বা পড়াশোনার খরচ দিবেন না, আর আমি যেন তাদের সাথে আর যোগাযোগ না করি যেখানে পারি যেভাবে পারি সেভাবে থাকি.." ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো নার্গিস।
আত্রলিতা খানিক হেসে বললো,"ধুর বোকা। কে বললো তুই পাশ করবি না? আর আঙ্কেল ওসব মজা করে বলেছেন"
- "না রে। তুই জানিস না বাবা কেমন। ছোটবেলা থেকেই আমাকে বোঝা মনে করেন, আর এখন তো..."
- " তুই এত কিছু না ভেবে মন দিয়ে পড়াশোনা কর। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে"
- "পারছি না রে। মন বসাতে পারছি না। সবদিক দিয়ে চিন্তা হচ্ছে"
- "এতটুকু বিষয় নিয়ে মন না বসানোর কি আছে? আমার বাবা মা বকে না? সবার বাবা মা বকে। আমাকে তো আজও মা ফোন দিয়ে খাবার নিয়ে কিছুক্ষণ বকলো। আর জানিস আমার বাবা নাকি সামনের সপ্তাহে আসবে, কিছুদিন বন্ধ থাকবে না তোদের ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষার সময়? তখন আমি বাসায় চলে যাবো, তাই বাবা আসবে"
আত্রলিতার কথা শুনে নার্গিস আরো মুখ ভার করে বললো,
"তুইও চলে যাবি? যাস না প্লিজ, আমি অনেক একা হয়ে যাবো"
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।
আত্রলিতা ওর বলার ধরনে একটু চমকালো, কেন যেন ওর মুখের দিকে তাকাতে পারলো না, মনে হলো তাকালে তার নিজেরও কান্না চলে আসবে। সামনে পড়ে থাকা রাফখাতায় কলম দিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করতে করতে বললো,
"সে দেখা যাবে। তুই এখন কেন এত চিন্তা করছিস বল তো? সবাইকে কি পড়াশোনায় একরকম ভালো হতে হবে? তুই যতটা পারিস ততটাই যথেষ্ট। তুই এসব নিয়ে মন খারাপ করিস না। শুধু একটু মন দিয়ে পড়। ইম্প্রুভমেন্টে পাশ করে গেলেই তো হলো, তারপর আমরা একত্রে পড়ে দুজনেই খুব ভালো করবো, দেখিস!"
নার্গিস আত্রলিতাকে দুহাতে বাচ্চাদের মত জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আত্রলিতারও কেন যেন খুব খারাপ লাগছিল সেদিন ওই মেয়েটার জন্য। পৃথিবীতে মানুষের কত রকমের কষ্ট আছে। একটা হাসিখুশি মেয়েকে শুধুমাত্র একটা রেজাল্টের কষ্ট কেমন ভেঙে দিয়েছিল। অথচ ফ্যামিলির একটু সাপোর্ট পেলে মেয়েটা হয়তো অনেক অনেক ভালো করতে পারতো।
এসব ভাবতে ভাবতে দুফোঁটা চোখের জল যখন গড়িয়েছে তখন আত্রলিতার খুব ঘুম পেল। বর্তমানের ভাতঘুম দুপুরে চার বছর আগের হোস্টেল জীবনের কথা ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে জল নিয়ে আত্রলিতা ঘুমিয়ে পড়লো।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments