হযরত সুলায়মান (আ.) এর শাসনকাল
হযরত সুলায়মান (আ.) । পবিত্র কোরআনের
বর্ণনা অনুসারে, তিনি ছিলেন একজন নবী ও প্রতাপশালী বাদশা। আজ এই বিশেষ ব্যক্তির জীবন
ও তার ঘটনাবহুল শাসন আমল নিয়ে কথা বলব।
হযরত সুলায়মান (আ.) ছিলেন ইসরাইলের
তৃতীয় রাজা। তিনি ছিলেন হযরত দাউদ (আ.) এর পুত্র। তার বাবা যখন বিচারকার্য চালাতেন
তিনি তা পাশে বসে দেখতেন এবং মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। যার ফলে বাবার মতো তিনিও হয়ে উঠলেন জ্ঞান এবং বিচার
বুদ্ধির আধার। এমনকি একবার ছাগল পালের মালিক ও শস্য ক্ষেত্রের মালিকের মধ্যে বিরোধ
দেখা দিলে রাজা দাউদ সে বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের সুলায়মান
(আ.) তার থেকে উত্তম পরামর্শ দেয়ার পর পূর্বের
রায় বাতিল করে ছেলের দেয়া প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং সেই মোতাবেক রায় দেন রাজা।
একদিন হযরত দাউদ (আ.) তার রাজ্যের
প্রধান ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষাবিদদের সামনে তার ১৯ ছেলেকে ডেকে পাঠালেন। তারপর তাদেরকে
কতগুলো প্রশ্ন করলেন।
প্রশ্নগুলো ছিল - কোন জিনিস মানুষের সবচেয়ে কাছের বা নিকটবর্তী? সবচেয়ে দূরে জিনিস কোনটি? কোন দুটি জিনিস একে অপরের সাথে সংযুক্ত? সবচেয়ে বিস্ময় সৃষ্টিকারী জিনিস কোনটি? কোন দুটি জিনিস অপরিবর্তিত থাকে? কোন দুটি জিনিস সব সময় আলাদা? কোন দুটি জিনিস একে অপরের বিরোধী? কোন প্রতিক্রিয়াটি মানুষের জন্য ভালো? কোন প্রতিক্রিয়াটি মানুষের জন্য খারাপ?
তবে ছেলেরা সবাই এ প্রশ্ন শুনে
হতবাক হয়ে গেল। কি উত্তর দিবে তা ভেবে পাচ্ছিল না। সুলায়মান উঠে দাঁড়ালেন এবং উত্তর
গুলো দিলেন।
এই উত্তরের পর হযরত দাউদ (আ.) বুঝলেন তার এই সন্তানের সব থেকে বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ। এবং মৃত্যুর পর তাকে শাসন কার্যের দায়িত্বে নিযুক্ত
করা হয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ৯৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শাসনকার্য হাতে নিয়েছিলেন সুলায়মান।
বর্তমানে সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, পূর্ব ফিলিস্তিন অঞ্চল ও ইরান ছিল তার শাসনের অধীনে।
আনুমানিক ৪০ বছর শাসন করেছিলেন তিনি। তার জীবন দশায় তাকে সবচেয়ে জ্ঞানী ও ধনী মানুষ
বলা হত। পবিত্র আল আকসা মসজিদ বা বায়তুল মোকাদ্দাস বা হারাম আল শরীফ সারাবিশ্বে মুসলমানদের
কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের কাছেও এটি একটি পবিত্রতম
জায়গা। ইহুদীদের কাছে এটি টেম্পল মাউন্ট, টেম্পল অফ সোলেমান বা ফাস্ট টেম্পল নামেও
পরিচিত। সিংহাসনে বসার মাত্র চার বছর পরে রাজা সুলায়মান এর নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।
তার সাম্রাজ্যকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো বলছে, সৃষ্টিকর্তা সুলায়মানকে শুধু জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দেননি। কিন্তু ধন-সম্পদ ও সম্মান দিয়েছেন। এত বিশাল ক্ষমতা ও প্রাচুর্যপূর্ণ সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও তিনি রাজ কোষ থেকে কোন ভাতা বা বেতন গ্রহণ করতেন না। তুকরি বানিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তার ন্যায় বিচার আজও বিচারকদের জন্য অন্যন্য উদাহরণ হিসেবে রয়েছে। তিনি তার রাজত্বকালে আরব, ভারত, আফ্রিকা ও ইসরাইলের বাণিজ্য রুট নিয়ন্ত্রণ করতেন। সুলায়মানের ছিল একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী।
হিব্রু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে রাজা
জেরুজালেমে রৌপ্য ও স্বর্ণকে পাথরের মতো সাধারণ করে দিয়েছিলেন। এবং তিনি এটি নিচু
ভূমি তে থাকা সিকুমোরের মত প্রচুর পরিমাণে তৈরি করেছিলেন। সুলায়মানের পর থেকে তা তামা
গলিয়ে পাত্রাদি তৈরি করা শুরু হয় বলে কুরআন উল্লেখ করা আছে।
রাজা সুলায়মান তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি মিশর, মুয়াব ও আরবসহ প্রতিবেশী শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করেছিলেন। রাজা সুলায়মান শুধুমাত্র ভালো একজন শাসকই ছিলেন না, একজন ভালো লেখক ও ছিলেন। সাহিত্য, ইতিহাস, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যার বিষয়ে লিখেছিলেন তিনি। আনুমানিক ৯৩১ খ্রিস্টাপূর্বাব্দে ইতিহাসের অন্যতম ক্ষমতা ধর এই শাসক মৃত্যুবরণ করেন।
No comments