মূল চ্যালেঞ্জ ডলার সংকট
২০২৩ সালে ডলার সংকটই মূলত চাপে ফেলে অর্থনীতিকে। বিনিময় হার ও রিজার্ভের পতন, বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ, মূল্যস্ফীতি, এলসি খুলতে সমস্যাসহ নানা উদ্বেগের পেছনে মূল অনুঘটক ছিল ডলার সংকট। নতুন বছরেও ডলার সংকট থেকে উত্তরণকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
তারা জানিয়েছেন, অর্থনীতি গতিশীল করতে হলে দীর্ঘদিন আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক হবে না। শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানিতে ডলারের জোগান দিতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে জোর দিতে হবে হুন্ডি প্রতিরোধের ওপর। বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর হতে হবে। আবার বেনামি ঋণ ঠেকানোর মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করতে হবে। ডলার কেনা ও বেচার দর নিয়ে লুকোচুরি করা যাবে না। মানুষের আস্থা বাড়ানোর জন্য আর্থিক খাত সংস্কারে জোর দিতে হবে। বাড়াতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, অর্থনীতিকে গতিশীল করার প্রধান উপায় ডলার সংকট কাটানো। তবে উত্তরণের তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রেমিট্যান্সের প্রধান অংশই এখন হুন্ডিতে আসছে। হুন্ডি চাহিদার কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাচ্ছে না। আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারলে রিজার্ভের পতন থামানো যাবে না। রিজার্ভ কমতে থাকলে ডলারের দর বেড়ে টাকার মান অবচয় হবে। মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ আরও বাড়বে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে পোশাক রপ্তানির অর্ডার কমছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে রপ্তানি আয় অনেক কমে যাবে, যা অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনবে। তিনি মনে করেন, ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যা দেশে-বিদেশে তেমন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে অর্থনীতির সংকট বাড়বে
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, ২০২৩ সালে যেসব সমস্যা ছিল, নতুন বছরে ঘুরেফিরে সেগুলোই সামনে আসবে। অর্থনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা ডলার সংকট। এটি অনেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। যতদিন আছে, তেমন বোঝা যায় না। যখন থাকে না, তখন মারাত্মক সংকটে পড়ে হাবুডুবু খেতে হয়। নতুন বছরে ডলার সংকট মোকাবিলার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, নতুন বছরে নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী একটি চ্যালেঞ্জ আছে। এর প্রভাব রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতিতেও আছে। আর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, রিজার্ভের পতন ঠেকানো এবং ডলারের দর স্থিতিশীল করা। মধ্য মেয়াদে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।
এদিকে ১৫ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে আর্থিক খাত সংস্কার ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে। এ ছাড়া ডলার সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ বিষয়ে একটি ধারণা দেওয়া হবে। আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে নতুন মুদ্রানীতি আরও সংকোচনমূলক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সমকালকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রিজার্ভ স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। ব্যাংক খাতের সুশাসন বিষয়ে এরই মধ্যে কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নতুন বছরেও যা অব্যাহত থাকবে। আমানতকারীদের স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেবে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারকে সরাসরি ঋণ দেওয়া বন্ধ আছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়া হয়েছে। রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন থেকে বেরিয়ে গত মাসে বেড়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবে এখন উদ্বৃত্ত রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে আর্থিক হিসাবেও উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments