রামমন্দির, রাজনীতি আর বিতর্কে মোড়া
ভারতে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় আগামী সোমবার নবনির্মিত সুবিশাল রামমন্দিরে মহাসমারোহে যে বিগ্রহের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হতে যাচ্ছে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সেরকম জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন খুব কমই হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলার, ওই প্রাচীন নগরীতে ওই মাত্র কয়েক একর জমি এবং তার ওপর এক সময় বহুকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ধর্মীয় কাঠামো যেভাবে 'বিতর্কিত কাঠামো' হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গোটা দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে সুদীর্ঘ উথালপাথাল ফেলেছে ভারতে তার কোনও দ্বিতীয় তুলনা নেই।
এ দেশে পর্যবেক্ষকরা সবাই প্রায় একবাক্যে বলে থাকেন বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনা যেমন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের ভিতেই সমূলে আঘাত করেছে, তেমনি রামমন্দির আন্দোলনের সূত্রেই দেশের শাসন ক্ষমতায় হিন্দুত্ববাদী শক্তির আসার পথ প্রশস্ত হয়েছে। অথচ সাতচল্লিশে দেশের স্বাধীনতার কিছুদিন পর থেকেই পরবর্তী প্রায় চার দশক ধরে ‘বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি’ নামে পরিচিত এই উপাসনালয়ে কোনও ধর্মের মানুষেরই প্রবেশাধিকার ছিল না– কারণ অযোধ্যায় মূল ভবনটি সরকার তালাবন্ধ করে রেখেছিল।
যেখানে মুসলিমরা এক সময় নিয়মিত নামাজ পড়তেন সেই মসজিদে হঠাৎ কেন তালা ঝোলাতে হলো এবং তার প্রায় ৩৭ বছর পর কেন হঠাৎ সেই তালা খুলে দিয়ে মন্দিরের ‘শিলান্যাস’ করতে দেওয়া হলো–সেই কাহিনি কোনও সাসপেন্স থ্রিলারের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয়!
কতালীয়ভাবে, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর নির্দেশেই অযোধ্যার ওই বিতর্কিত কাঠামো সিলগালা করা হয়েছিল। আর সেই তালা যখন খোলা হয়, তখন দেশের ক্ষমতায় তারই দৌহিত্র বা নাতি রাজীব গান্ধীর সরকার। আর অযোধ্যায় এই পটপরিবর্তনকে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে সবচেয়ে সফলভাবে কাজে লাগিয়েছে দেশের যে দলটি, তারা নিঃসন্দেহে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। সেই কাজে তাদের সাহায্য করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরং দলের মতো সহযোগী সংগঠন।
১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে বিজেপি-র মাত্র দু’জন এমপি ছিলেন, সেখান থেকে মাত্র পাঁচ বছর পরেই গোটা দেশে তাদের আসনসংখ্যা বেড়ে হয় ৮৬। আর ২০১৪ সালের মধ্যেই তারা ২৮২টি আসনে জিতে একার শক্তিতে সরকার গড়ার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। এই চমকপ্রদ রাজনৈতিক উত্থানের পেছনে রামমন্দির আন্দোলনের এবং সেই সঙ্গে দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডভানির নেতৃত্বে ‘রথযাত্রা’র যে একটা বিরাট ভূমিকা আছে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সবাই তা মানেন। পাশাপাশি এই হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনে কংগ্রেসের দ্বিধান্বিত ভূমিকার জন্যই যে তারা ভারতে তাদের মুসলিম জনসমর্থন অনেকটা হারিয়েছে তা নিয়েও বিশেষ সংশয় নেই। ভারতের মুসলিম সমাজ ক্রমশ ভরসা হারিয়েছেন তাদের এক সময়ের প্রিয় দলের ওপর।
ভারতের হিন্দি বলয়ে, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে কংগ্রেসের প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পেছনেও এটা একটা বড় কারণ বলে মনে করা হয়। আর পরিসংখ্যান বলে, দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে জিততে না পারলে ভারতে কোনও দলের পক্ষেই দেশের ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। অথচ ভারতের বর্তমান লোকসভায় উত্তরপ্রদেশের মোট ৮০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুলিতে আছে মাত্র একটি, যেটি সোনিয়া গান্ধীর আসন রায়বেরিলি।
শাহরিয়ার সোহাগ উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প
এই যে ভারতের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ গত তিরিশ-চল্লিশ বছরের মধ্যে আমূল বদলে গেছে তার পেছনে অবশ্যই আরও নানা ফ্যাক্টর আছে–কিন্তু বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি ইস্যুটাই সম্ভবত এই পরিবর্তনের পেছনে এককভাবে সবচেয়ে বড় কারণ। হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে ভগবান রামচন্দ্রের জন্মস্থান হিসেবে যে অযোধ্যা নগরীর উল্লেখ আছে, সরযূ নদীর তীরে সেই শহরেই শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে ছিল এই বিতর্কিত ধর্মীয় স্থান। ছিল বলতে হচ্ছে, কারণ ১৯৯২ সালে সেই কাঠামোটি ভেঙে ফেলে উন্মত্ত করসেবকরা। ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের একজন সেনাপতি মীর বাকি ১৫২৯ সালে রাম জন্মভূমি ভেঙে ফেলে সেই জায়গায় ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরি করেন, এমনটাই প্রচলিত ধারণা। যদিও এটা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। এমন কী বাবর নিজে কখনো আদৌ অযোধ্যাতে এসেছিলেন কি না, সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তার অত্যন্ত সুলিখিত আত্মজীবনী ‘বাবরনামা’তে জীবনের বহু ছোটখাটো ঘটনার বিবরণ থাকলেও অযোধ্যার কোনও উল্লেখ নেই। তবে তিনটে গম্বুজওলা ওই মসজিদ যে শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থান ভেঙেই তৈরি হয়েছে, সে কথা হিন্দুদের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করতেন বহুকাল ধরেই। তারা বলতেন, মসজিদের ভেতরে থাকা একটা উঁচু বেদীর মতো অংশেই রাম ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।
১৮৮৫ সালে হিন্দু সন্তদের নেতা মহন্ত রঘুবীর দাস ওই মসজিদ লাগোয়া উঠোনে (‘চবুতরা’) রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ফৈজাবাদ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে মামলা করেন। তিনি একই দাবি জানান ব্রিটিশ শাসিত ভারতের তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ফর ইন্ডিয়ার কাছেও। আদালত তার আবেদন নাকচ করে দিলেও ওই জমির ওপর হিন্দুদের অধিকারের দাবি কিন্তু থিতিয়ে যায়নি। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছিল পুরো মাত্রায়। ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক বছর দুয়েকের মাথায় ওই মসজিদের ভেতরে হঠাৎ একদিন সকালে রহস্যময়ভাবে ‘রামলালা’র (শিশু রামচন্দ্র) মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। তারিখটা ছিল ২২ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ মধ্যরাতের পর। স্থানীয় মুসলিমরা অবশ্য অভিযোগ করেন রাতের অন্ধকারে গোপনে মসজিদের ভেতরে ওই মূর্তিটি রেখে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু রামলালার ‘আবির্ভাবে’র খবর ততক্ষণে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ওই মসজিদে এসে শ্রীরামের ভজন-পূজন শুরু করে দিয়েছেন– শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষকে সেখানে নামাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
গবেষক ও লেখক অরিন্দম সেন অবশ্য জানাচ্ছেন, রহস্য-ফহস্য কিছু নয়–খুব কৌশলে পরিকল্পনা এঁটেই মসজিদের ভেতরে ওই মূর্তি নিয়ে আসা হয়েছিল। ‘মন্দির বিতর্কের পাঁচ দশক’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, কথিত আবির্ভাবের ঠিক আটদিন আগে থেকে অযোধ্যায় শুরু হয়েছিল রামনাম সংকীর্তন। বলা হয়েছিল, আটদিন সংকীর্তনের শেষে নাকি শ্রীরামচন্দ্র অবির্ভূত হবেন। বাস্তবেও ঠিক সেটাই হলো– আর কোথায় তিনি আবির্ভূত হলেন? একেবারে সোজা মসজিদের ভেতরে! ‘উদ্ধারক বাবা’ ‘অযোধ্যা – দ্য ডার্ক নাইট’ নামের গ্রন্থেও ১৯৪৯ সালের ২২/২৩ ডিসেম্বর রাতের সেই নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের পূর্বাপর বর্ণনা করেছেন অনুসন্ধানী দুই লেখক, কৃষ্ণা ঝা ও ধীরেন্দ্র কুমার ঝা। তাদের গবেষণা বলছে, রামলালার আবির্ভাবের পরদিন স্থানীয় থানায় যে এফআইআর দায়ের হয়, তাতে মসজিদের ভেতরে ঢুকে মূর্তি রেখে আসার জন্য মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল অভিরাম দাস নামে এক তরুণ হিন্দু সন্ন্যাসীকে। প্রমাণের অভাবে তার কোনও সাজা হয়নি, কিন্তু লোকের মুখে মুখে তার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘রাম জন্মভূমি উদ্ধারক’ বা ‘উদ্ধারক বাবা’। অযোধ্যার ‘হৃত গৌরব’ যে তিনিই উদ্ধার করেছেন, তা নিয়ে সন্ত সমাজ ও স্থানীয় হিন্দুদের কোনও সংশয় ছিল না।
রামমন্দির যখন রাজনীতির হাতিয়ার: ১৯৮৬তেই বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক হিসেবে পরিচিত আরএসএস সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল, অযোধ্যায় রামজন্মভূমিস্থল ও তার সন্নিহিত এলাকার পুরোটাই হিন্দুদের রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হোক। তাদের প্রতিনিধিদের যুক্তি ছিল, গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরকে ভগ্নপ্রায় দশা থেকে পুনরুদ্ধার করে যেভাবে স্বাধীন ভারতে নতুন গরিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, ঠিক একই ধরনের মর্যাদা প্রাপ্য অযোধ্যায় রামমন্দিরেরও।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।
সোমনাথ মন্দির যেমন গজনীর সুলতান মাহমুদ বা পরে আলাউদ্দিন খিলজির বাহিনীর হাতে ধ্বংস হয়েছিল, তেমনি রামমন্দিরও বাবর বা তার সেনাবাহিনীর হাতে ধূলিসাৎ হয়েছিল–ফলে আরএসএসের যুক্তি ছিল আদালতের রাস্তায় গিয়ে এই বিতর্কের মীমাংসা করা সম্ভব নয়। আরএসএস-বিজেপির যুক্তি ছিল, অযোধ্যায় ভগবান শ্রীরামচন্দ্র জন্মেছেন এটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের ‘আস্থা’ ও বিশ্বাসের প্রশ্ন, তাই তাদের সেই অনুভূতিকে মর্যাদা দিয়ে রাষ্ট্রের উচিত ওই জন্মস্থান হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া।
১৯৮৪র নির্বাচনে সারা দেশে মাত্র দু’টি আসন পাওয়া বিজেপি ততদিনে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ৮৬ জন এমপি-র শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে, যার পেছনে অযোধ্যা আন্দোলনের বড় ভূমিকা ছিল।
কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তারা সেই নির্বাচনের পর বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর সরকারকেও বাইরে থেকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এরপরই জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে পরপর কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটে, ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ যার খুব পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছেন।
আকরগ্রন্থ ‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী’-তে রামচন্দ্র গুহ লিখেছেন, কিন্তু ১৯৯০ সালের আগস্টে ঘোষণা করা মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট (যাতে পিছিয়ে থাকা বা তুলনায় নিচু জাতের হিন্দুদের জন্য বেশি সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছিল) বাস্তবায়ন করতে ভিপি সিং সরকারের সিদ্ধান্ত বিজেপিকে এক বিরাট সঙ্কটে ফেলে দেয়। দলের কোনও কোনও নেতার মত ছিল, হিন্দু সমাজের ঐক্য ভাঙার জন্য এটা আসলে একটা দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা। বিজেপির অন্দরে ও আরএসএসের শাখায় শাখায় তখন তুমুল বিতর্ক – মন্ডল কমিশনের সুপারিশে দলের সমর্থন জানানো উচিত কি উচিত নয়! কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও অবস্থান নেওয়ার বদলে বিজেপি কিন্তু রাজনৈতিক বিতর্কের অভিমুখটাই পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করল। তারা চাইল যাতে মন্ডল ও জাতপাতের বদলে ধর্ম ও মন্দির/মসজিদ ন্যারেটিভে বিতর্কটা ফিরে আসে। সেই লক্ষ্যেই ঘোষণা করা হলো, গুজরাটের সোমনাথ মন্দির থেকে শুরু করে দেশের আটটি রাজ্যে ৬০০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে রামের জন্মস্থান অযোধ্যা পর্যন্ত একটি ‘রথযাত্রা’র আয়োজন করা হবে– যা শুরু হবে ১৯৯০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর। আরো জানানো হলো, রথযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন লালকৃষ্ণ আডভানি, যিনি বিজেপির শীর্ষ নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ীর তুলনায় বেশি ‘হার্ডলাইনার’ বলে পরিচিত ছিলেন।
একটি আধুনিক টয়োটা ভ্যানকে রথের চেহারায় সাজিয়ে এই যাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হলো। বিশ্ব হিন্দু পরিষেদের ক্যাডাররা রথকে চারপাশে ঘিরে থাকতেন, রাস্তায় যেখানে যেখানে সভা-সমাবেশ করা হতো সেখানে সংবর্ধনা জানানো হতো হিন্দু সাধুসন্তদের। রথযাত্রাকে ঘিরে দেশের হিন্দু জনমানসে, বিশেষ করে হিন্দি বলয়ে যে ধরনের আবেগ উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, ভারতের রাজনীতিতে তা ছিল নজিরবিহীন। বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে একদিন যে দেশে তার জায়গায় রামমন্দির তৈরি হবেই, সেটা ১৯৯০র ওই রথযাত্রাই কার্যত নিশ্চিত করে দিয়েছিল বলে বহু পর্যবেক্ষক মনে করেন।
এই সপ্তাহেই ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যার জন্য হিন্দিতে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি, যেটির শিরোনাম ‘রামমন্দির নির্মাণ – এক দিব্য স্বপ্ন কা পূর্তি!’ ওই প্রবন্ধে ৩৩ বছর আগেকার ‘রথযাত্রা’র কথা স্মরণ করে লালকৃষ্ণ আডভানি লিখেছেন অযোধ্যা আন্দোলন ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের ‘সব চেয়ে নির্ণায়ক ও যুগান্তকারী ঘটনা’–যা তাকে ভারতবর্ষকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শিখিয়েছে।
সেই রথযাত্রার সময় নরেন্দ্র মোদী নামে এক তরুণ দলীয় কর্মী যে তার ‘ছায়াসঙ্গী’ ছিলেন, প্রবীণ নেতা সে কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি। নরেন্দ্র মোদী তখন বিজেপির গুজরাট শাখার একজন মাঝারি স্তরের কর্মকর্তা, আর দলের অন্দরে তাকে সবাই লালকৃষ্ণ আডভানির বিশ্বস্ত অনুগামী হিসেবেই চিনতেন। পরে রাজনীতির গতিপথ অবশ্য আরএসএসের এই সাবেক প্রচারককে সম্পূর্ণ ভিন্ন শিবিরে নিয়ে ফেলেছে। রথযাত্রার পুরনো ভিডিও ফুটেজে এখনও দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদী কখনও আডভানি, কখনও বা মুরলী মনোহর জোশীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করছেন, তাদের পাশে থেকে থেকে নানাভাবে সাহায্য করছেন। সে দিনের সেই যুবকই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, যিনি আগামী সোমবার) অযোধ্যার নতুন মন্দিরে রামলালার মূর্তিতে 'প্রাণপ্রতিষ্ঠা' করবেন। অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমেই হয়তো যবনিকাপাত হবে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্কিত, তিক্ত ও রক্তাক্ত এক কাহিনির। তথ্য সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা
No comments