Adsterra

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ- ১



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ- ১, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, ত্রিগুণা সেন তখন ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন, Today Trending News, Today Viral News

পঁচিশে মার্চের পর আওয়ামী লীগের নেতারা গ্রেফতার এড়াতে এবং ভারতের সাহায্য লাভের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসেন। বহু শীর্ষ নেতা ত্রিপুরায় এসে আশ্রয় নেন। এম,আর, সিদ্দিকী, সিরাজুল হক ও আবদুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী আগরতলায় পৌঁছে সাক্ষাৎ করেন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহের সঙ্গে। শচীন বাবু তাঁদের নিয়ে দিল্লীতে গিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী সেই সময়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ড: ত্রিগুণা সেনকে আগরতলায় পাঠান। ত্রিগুণা সেন তখন ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন।

 ইতোমধ্যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রধান রুস্তমজী,আই,জি, গোলক মজুমদার ও অন্যান্য আধিকারিকদের প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা তাজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকে ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাজ উদ্দিন আহমেদ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রথম আলোচনাতেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতির দাবি করেন। ইন্দিরা গান্ধী যথাসময়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান। এরপর আওয়ামী লীগের সাংসদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা আগরতলায় চলে আসেন। আগরতলা সার্কিট হাউসে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত এবং এখানেই স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র গ্রহণ করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। ১৭ ই এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করা হয়।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

এদিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের ফলে শরনার্থী আগমন শুরু হয়। ত্রিপুরার লোকসংখ্যা ছিল চৌদ্দ পনের লক্ষ, শরনার্থী আসে ষোল লক্ষ। ত্রিপুরার মানুষ সেদিন বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন জাত,পাত,ধর্ম,বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে। ত্রিপুরার উপজাতি জনগোষ্ঠীর মানুষ বাঙ্গালী শরনার্থীদের আপন করে নিয়েছিলেন। ঐ সময়কালের ইতিহাস রচয়িতাদের প্রায় সকলেই প্রয়াত দশরথ দেব মহোদয়ের অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই সময়ের উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী রাজপ্রসাদ চৌধুরী'র(তসলাম ফা) কথা উল্লেখ করেন নি। তসলামফাকে নিয়ে প্রচুর ব্যাঙ্গাত্মক গল্প শোনা যায়, তাঁর অবদানের কথা বলা হয় না। ঐ সময়ে স্থানীয় মুসলমানদের বুঝানো হচ্ছিল জিন্নাহ'র পাকিস্তান ভেঙ্গে দিচ্ছে ইন্দিরা গান্ধী। এখানকার মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা ভবিষ্যতে বিপন্ন হবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, শরনার্থীদের সঙ্গে বেশ কিছু পাকিস্তান পন্থী রাজাকারও ছদ্মবেশে ভারতে তথা ত্রিপুরায় ঢুকেছিল। উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় দশরথ দেবের পাশাপাশি উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী রাজপ্রসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য জনজাতিদের আহ্বান জানিয়েছেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেদের মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের কাজ করেছেন সেই সময়ের কৃষি মন্ত্রী মুনসর আলী, বিধায়ক মৌলানা আব্দুল লতিফ, বিধায়ক এরশাদ আলী চৌধুরী প্রমুখ। শান্তিরবাজার মহকুমার দেবীপুর নামে একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজাতি ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সভায় তদানীন্তন উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী রাজপ্রসাদ চৌধুরী ও কৃষি মন্ত্রী মুনসর আলী ভাষণ দিয়েছিলেন। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ব্রজরমন সরকারের সঙ্গে ঐ সভায় আমি ও হিমাংশু উপস্থিত ছিলাম। রাজপ্রসাদ চৌধুরী ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর একটি ছবি পর্যন্ত খুঁজে পাইনি,তাই প্রথম মন্ত্রিসভার গ্রুপ ছবিটি দিয়েছি। সেই সময়ের সাংসদ, ত্রিপুরায় কমিউনিস্ট পার্টির পিতৃপুরুষ বীরেন দত্তের নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা চলছে। ঐ সময়ে সংসদের ভেতরে এবং রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বীরেন দত্ত। নবচন্দনা প্রকাশনীর কর্ণধার, বন্ধু পূর্ণেন্দু গুপ্তের সৌজন্যে বীরেন দত্তের ছবিটি পেয়েছি। মহারাজ কিরীট বিক্রম, মহারাণী বিভূকুমারী দেবী, তড়িৎ মোহন দাশগুপ্ত, জাতীয় ছাত্র পরিষদের নেতা তাপস দে, সারা ভারত ছাত্র ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক জওহর সাহা, বিরোধী নেতা নৃপেন চক্রবর্তী সহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা শরনার্থীদের ত্রাণ কার্যে ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেস এবং সি,পি,আই, গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছিল। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের কারণে সিপিআই তখন কংগ্রেসের কাছাকাছি ছিল। দৈনিক সংবাদ পত্রিকা অফিস ছিল প্রচার যুদ্ধের হেডকোয়ার্টার। পত্রিকার সম্পাদক ভূপেন দত্ত ভৌমিক মহোদয়ের নেতৃত্বে একদল সাংবাদিক সেদিন অনন্য সাধারণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বিপুল মজুমদার, ভীষ্মদেব ভট্টাচার্য,বিকচ চৌধুরী, অধ্যাপক মিহির দেবের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তরুণ সাংবাদিক বিকচ চৌধুরী ত্রিপুরার একমাত্র সাংবাদিক, যিনি ষোল ডিসেম্বর ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনিল ভট্টাচার্য,রবীন সেনগুপ্ত, সত্যব্রত চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন। প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী, ত্রিপুরার প্রথম দৈনিক সংবাদ পত্র জাগরণ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জিতেন পাল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর জন্য আইনজীবী ঠিক করা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় পর্যন্ত সমসাময়িক সব ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা,চোত্তাখোলা বেসক্যাম্পের প্রধান খাজা আহমেদের সঙ্গে জিতেন পালের যোগাযোগ ছিল। খাজা আহমেদ সাপ্তাহিক সংগ্রাম নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। আগরতলা কংগ্রেস ভবন ও মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসের কথা আগেই বলেছি। কংগ্রেস নেতা অশোক কুমার ভট্টাচার্যের কাছথেকে শুনেছি সেই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের দিল্লি কলকাতা গমনাগমনের ক্ষেত্রে বিমানের টিকিট কাটা হতো আগরতলার কংগ্রেস নেতাদের নামে। তখন বোর্ডিং পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এতো কড়াকড়ি ছিল না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার মানুষের অবদান বিস্ময়কর। সেই সময়ের ত্রিপুরার এমন একজন মানুষও নেই যিনি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন নি। বহু নাম উল্লেখ করতে পারিনি নিজের অজ্ঞতা ও স্মৃতির বিশ্বাসঘাতকতায়।


আজকের পর্বে মূলত যাদের কথা বলা হয়না, তাঁদের কথা বলতে চেষ্টা করেছি। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অপেক্ষায় ছিলেন।

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.