Adsterra

আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ০৮

আত্রলিতা, সাদিয়া শাহরিণ শিফা, পর্ব ০৮ , ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice,  প্রেমের উপন্যাস, romantic bangla story, bangla story for love, short bangla story


উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০৮




রাত চারটা। ঘুম ভেঙে গেছে আত্রলিতার। চোখ খুলতেই পুরো ঘর অন্ধকার ঠেকলো। তারপর চোখে অন্ধকার সয়ে আসার পর ধীরে ধীরে রুমের ভেতরটা দেখা গেল।

রাত চারটা। ঘুম ভেঙ্গে গেছে আত্রলিতার। গুমোট অন্ধকারে আবছা দুটো প্রতিবিম্ব দেখতে পেল সে। প্রতিবিম্ব দুটো নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলছে আর হাসছে। ভালো ভাবে চোখ মুছে তাকানোর চেষ্টা করতেই ছায়াদুটো তার দিকে ফিরে খিলখিল শব্দ করে হেসে উঠলো।

আত্রলিতার চোখে ধীরে ধীরে অন্ধকার সয়ে পুরো দৃশ্যটা স্পষ্ট হলো।

চোখের সামনে দু বছর আগের তার মৃত মা বসে আছে এবং পাশে চার বছর আগে হোস্টেলে মৃত তার সহপাঠী নার্গিস।

আত্রলিতা অবাক হলো না। তার অসুখ তো এটাই। এই দুজন সময় সময় আসে এবং আত্রলিতাকে দিয়ে যা নয় তাই করায়। প্রথমদিকে নিজেকে সামাল দিতে চেষ্টা করলেও একটা সময় আত্রলিতা বুঝতে পারে সে আর নিজের মধ্যে থাকে না। সে ওই ছায়ামুর্তি দুটোকে সবসময়ের জন্য সরিয়ে দিতে চেয়ে আঘাত করতে থাকে। আত্রলিতার পুরো শরীরে কাঁপন ধরে সেসময়, মুখ দিয়ে থুথু আসে। 

ওদিকে পরিচিত চেহারার ছায়ামুর্তি দুটো বারবার এটা ওটা খারাপ কাজ করতে আত্রলিতাকে বাধ্য করে, না করলে মাঝেমধ্যে চুল ধরে টানে, শরীরে অমানুষিক যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা দেয় নতুবা শুধু বসে বসে হাসে।


আত্রলিতার মায়ের মতন ছায়াটা হঠাৎ করে বলে উঠলো,” কিরে মুখপুরী? তোরে দেখতে এলাম। তুই নাকি একটা ছেলের সাথে কথা বলেছিস আজকে?”

নার্গিসের ছায়ামূর্তিটি খিক করে হেসে বলে উঠলো,”হুহ ঢং দেখে বাঁচি না”

খুব রাগ হলো আত্রলিতার। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো,”তোমরা আবার এসেছো কেন?”

মা বললো,”ভুল সময়ে এসেছি রে?”

নার্গিস যোগ করলো,” ওই ছেলেটা যখন এসেছিল তখন আসা উচিত ছিল”, বলেই মুখে হাত চেপে হাসতে লাগলো যেন খুব বড় মজা সে করে ফেলেছে।

হুট করেই আত্রলিতার চোখে পানি চলে এলো, কান্না জড়ানো গলায় বললো,” প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে..আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছি? তোমাদের জন্য আমার লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, জীবন সব শেষ। মানুষ আমাকে উন্মাদ বলে। কেউ তোমাদের দেখতে পায়না। তাই তোমাদের সাথে কথা বলার সময় আমাকে বলে পাগল। তোমাদের আঘাত করতে গেলে আমার প্রিয়জনদের উপরে সেটা যায়। তোমরা আমাকে আঘাত করো, আমি ব্যথায় চিৎকার করি। সবাই বলে আমি বদ্ধ উন্মাদ। প্লিজ দোহাই লাগে আজ হাত জোর করছি.. আমার সাথে আর এমন কোরো না” চিৎকার করে কেঁদে উঠলো আত্রলিতা।

মৃত মা বলে উঠলো,”তোকে ভালবাসি যে রে, তাই তোকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না। মনে আছে আমাকে ছাড়া একমুহুর্ত থাকতে পারতি না। হোস্টেলে যাবার সময় প্রতিবার কি কান্না! সব কথা আমাকে বলতি.. এখন নাহয় আমি মাঝেমধ্যে আসি। এলেই এমন করিস কেন রে?”

আত্রলিতা ফুঁপিয়ে উঠলো,” মা..মাগো.. তোমাদের নাহয় জীবনটা শেষ মা। আমার অনেকটুকু বাকি আছে এখনও.. তোমার পায়ে পড়ি মা, নিজের মেয়ের জীবনটা এভাবে নরক বানিয়ে দিও না তুমি”

নার্গিস ফিসফিসিয়ে উঠলো,” আর আমাদের জীবন? আমার জীবন রে? তুই আমাকে একা ফেলে চলে এসেছিলি সেদিন। আমি মরে গেছিলাম। তোর কোনো দোষ নাই? এখন নিজে শান্তিতে থাকতে চাস?”

আত্রলিতা ডুকরে কেঁদে উঠলো। দুহাতে নিজের মুখ চেপে ধরলো। আঙুলের ফাঁক বেয়ে জলের ফোঁটা গড়াতে লাগলো।

তারপর হঠাৎ উঠে দৌড়ে গিয়ে তার রুমে রাখা পানির বোতলটা এনে ছুড়ে মারলো ছায়ামূর্তি দুটোর দিকে।

ওদের কিছু ই হলো না। উল্টো নার্গিস ছুটে এসে পেছন থেকে আত্রলিতার চুলের মুঠি ধরে টানতে লাগলো। রাতে শোয়ার সময় খুব যত্ন করে আত্রলিতার বেঁধে রাখা লম্বা চুলগুলো খুলে এলোমেলো হয়ে গেল। মায়ের অবয়বটা এসে বললো,”এই ছেড়ে দে মেয়েটাকে”

নার্গিস আরো শক্ত করে চেপে বললো,” আত্রলিতা তুই একটা পাগল। একটা বদ্ধ উন্মাদ। তুই কখনো উড়তে চাইবি না। তোর ডানা কিন্তু একেবারে কেটে দেব”। ব্যথায় জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো আত্রলিতা, মনে হচ্ছে পুরো মাথার চুল চামড়াসহ খুলে আসছে।

মায়ের অবয়বটা চুপ করে খাটের একপাশে গিয়ে বসলো। তারপর আস্তে আস্তে বলা শুরু করলো,” ওকে ছেড়ে দে। মা তুই আমার কাছে আয়।“

নার্গিস ছেড়ে দিতেই দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তার সামলাতে না পেরে মায়ের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ল আত্রলিতা। মায়ের পা কাছে হাতদুটো জোড় করে কাঁদতে লাগলো অঝোরে..”মাগো আমারে একটু বাঁচতে দাও মা। কতদিন তো হলো, অনেক কষ্ট করছি তোমাদের দেয়া, মা পায়ে পড়ি এবার তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও, আর কক্ষনো এসোনা..”

মায়ের অবয়বটা হেসে বলল,”মা রে, তুই আমাদের সাথে চল। তোকে নিয়ে যেতেই তো আসি। আমাদের দুনিয়ায় চল মা। ওইখানে কোনো কষ্ট নাই”

আত্রলিতা বিদ্যুতের মতন এক ঝটকায় উঠে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। তারপর চোখ মুছে বললো,” কখনও না। কখনই না। শুনেছো তোমরা? শুনেছো?? আমি বাবা, অহমকে রেখে কোথাও যাবো না যাবো না আমি “

কথাগুলো শুনেই নার্গিস এসে বললো,”যাবি না তাইনা?” বলেই তলপেটে একটা লাথি দিল। আত্রলিতার মনে হলো তার দম বের হয়ে যাচ্ছে। চোখে অন্ধকার দেখে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল। তারপর অসহ্য ব্যথায় চিৎকার করতে লাগলো”

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ফজরের নামাজ পড়তে উঠেছিলেন আত্রলিতার বাবা আব্দুর রহমান সাহেব। অযু করার জন্য রুম থেকে বেরোতেই আত্রলিতার চিৎকার শুনতে পেলেন। ছুটে গিয়ে আত্রলিতার ঘরের দরজা খুললেন তিনি। দরজা খুলে দেখলেন আত্রলিতা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর চিৎকার করছে। তাকে দেখেই তার দিকে হাত বাড়িয়ে চিৎকার করলো,”বাবাগো বাঁচাও বাবা। এদিকে এসো, দেখো ওরা আমাকে মেরে ফেললো..”

আব্দুর রহমান সাহেব রুমে আর কাউকে দেখতে পেলেন না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মেয়ে উন্মাদ এই কথা তার মনে পড়লো‌। ঘুম থেকে উঠলে হঠাৎ করেই মানুষের মাথায় লজিক কাজ করে না।

সে গিয়ে মেঝেতে বসে আত্রলিতার হাত ধরে বললো,” এইতো মা। এইযে আমি। এখানে আর কেউ নেই। কি বলিস তুই? কে মারবে তোকে? বল আমাকে”

“ওরা বাবা ওরা। আমি ওদের মতন হতে চাইনা বাবা” বলেই রহমান সাহেবের বুকে মাথা মিশিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো আত্রলিতা।

রহমান সাহেব বললেন,”মা তুই ওঠ আগে.. ওষুধ খেয়েছিলি আজকে ডাক্তার যেগুলো দিয়েছে?”

“আমি কিচ্ছু জানি না বাবা, তুমি শুধু যেও না” 

রহমান সাহেব দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে একটা ঘুমের ওষুধ আনলেন। আত্রলিতাকে যে ডাক্তার দেখেছিলেন, সে বলেছিল, খুব বেশি বাড়াবাড়ি শরীর খারাপ হলে একটা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিতে। ওষুধ খাইয়ে দিতে দিতে মেয়েকে তিনি বললেন,” এমন করিস না মা, কিচ্ছু হবে না। আয় মা খাটে গিয়ে শুয়ে পড়..”

“না বাবা তুমি যেও না, আমাকে মেরে ফেলবে অনেক মারে বাবা বিশ্বাস করো আমাকে আমি পাগল না বাবা তুমি ওদের দেখতে পাচ্ছো না বলো? প্লিজ বাবা ওরা এখনও আছে তুমি বিশ্বাস করো”

আব্দুর রহমান সাহেব মাথা চুলকে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন,” ঠিক আছে মা আমি ওই চেয়ারে বসি। তুই শুয়ে পড়। আমি আছি।“

আত্রলিতা ইতস্তত পায়ে খাটে বসে পাশে বসে থাকা মায়ের অবয়বের দিকে তাকিয়ে সেটার পাশেই শুয়ে পরলো। তার হাত পা কাঁপছে। হঠাৎ বলে উঠলো,”বাবা তোমার হাতটা দিবে হাতটা ধরে থাকি। তুমি কিন্তু যেওনা বাবা..”

রহমান সাহেব হাত দিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

আত্রলিতাও চোখ বুজে ফেলেছে, এমন সময় কানের কাছে নার্গিসের ফিসফিসানি শুনতে পেল,” তোর বাবার হাতে কামড় দে। দে দে দে দে”

চোখ বড় বড় করে তাকালো আত্রলিতা, নার্গিস বলেই যাচ্ছে,”দে কি বললাম তোরে? কামড় দে! এখনই”

আত্রলিতা বিছানার চাদর চেপে ধরে চোখদুটো শক্ত করে বন্ধ করে রইলো। এখন ওদের সাথে কথা বললেই বাবা পাগল ভাববে..

আত্রলিতার কানের কাছে বাজতেই লাগলো “কিরে কি বললাম? হাতে কামড় দে? তুই কথা শুনবি না? তোরে কিন্তু মেরে ফেলবো, শেষ করে দিব একদম দে দে দে দে দে দে..” এই অসমাপ্ত শব্দ কানে নিয়েই ঘুমের সাগরে তলিয়ে গেল আত্রলিতা।


চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.