আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ১৩
উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ১৩
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ১৩
দুদিন ধরে ভীষণ অসুস্থ আত্রলিতা। দুদিন আগে ভোররাতে সে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। দেখে মায়ের কবর আবার খোঁড়া হচ্ছে। চারজন সাদা সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত লোক কবর খুড়ছেন। একজন মৃত মানুষকে কবর দেয়ার পর সেই কবর কেন খোঁড়া হচ্ছে এর যুক্তি পায়নি আত্রলিতা। তবে স্বপ্নের মধ্যে মনে হচ্ছিল এটাই স্বাভাবিক। সে পাশে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে কবর খোঁড়া দেখছে। পেছনে নার্গিস দাঁড়ানো। স্বপ্নে নার্গিস জীবিত। কিছুক্ষণের মধ্যে কবরের মাটি মোটামুটি সরানো হলো। ধীরে ধীরে দেখা গেল মা কবরের মধ্যে পা ছড়িয়ে বসে আছে। কবরের মধ্যে একটা মানুষ কেন বসে থাকবে এই বিষয়টা ভালো লাগলো না আত্রলিতার। তবুও সে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো। আত্রলিতার মনে হলো মা ফিরে এসেছে। আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে। সে সুস্থ হয়ে যাবে! অদ্ভুত খুশি হলো আত্রলিতার। মাকে বললো,”তুমি ফিরে এসেছো মা? চলো, আমার সাথে বাসায় চলো। এতদিন খুব কষ্টে ছিলাম মা! তাড়াতাড়ি চলো আমার সাথে..উঠে এসো” বলতে বলতে হাত বাড়িয়ে দিল আত্রলিতা।
শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুচকি হেসে মা বললো,” ফিরে যেতে আসিনি রে, তোকে আমার কাছে নিয়ে যেতে এসেছি..” বলেই আত্রলিতার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিল সে। আত্রলিতার মনে হলো তার হাতটা গুড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও সে সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো আর প্রাণপণে চিৎকার করলো,” ছেড়ে দাও। আমি যাবো না। আমি যাবো না!”
দুচোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো আত্রলিতার। তবুও সে ছাড়াতে পারলো না নিজেকে। ক্রমাগত আরো বেশি শক্তি দিয়ে তাকে কবরের মধ্যে টানা হচ্ছে, সে চিৎকার করছে, ছাড়াতে চাইছে তাও ছাড়াতে পারছে না। হঠাৎ এই ধস্তাধস্তির মধ্যে পেছন থেকে কেউ ধাক্কা দিল আত্রলিতাকে। সে সোজা গিয়ে কবরের মধ্যে পড়লো। উপরে তাকাতেই দেখে নার্গিস! তাকে ধাক্কা দিয়েছে আর সে কবরের একদম মাঝখানে!...
এই সময় ঘুম ভেঙে গিয়েছিল আত্রলিতার। বিছানায় লাফিয়ে উঠেছিল সে। তারপর সকাল পর্যন্ত নির্ঘুম। অবশ্য ঘুম ভেঙে যাবার পরপর হাফ ছেড়ে বাঁচার মতন ভালো লেগেছিল। মনে হয়েছিল- যাক, এটা নিছক স্বপ্ন। সেইদিন সকাল থেকে আত্রলিতার প্রচন্ড জ্বর। ১০৩-১০৪ এর নিচে নামেনি বলতে গেলে। জ্বরের ঘোরেই এই দুদিন কোথা থেকে কেটে গেল। মাঝেমাঝে ঘোরের মাঝেই ডুকরে কেঁদে উঠেছে আত্রলিতা। মনে মনে শুধু ভেবে গেছে,”তাহলে কি সব শেষ? এমন একটা জীবন নিয়েই কি পৃথিবীতে এসেছিল সে? পৃথিবীর কোনো সুখ কি তার কপালে নেই..”
No comments