Adsterra

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ- ২



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ- ২, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, দীর্ঘ তেইশ চব্বিশ বছরের অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার ফলেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়, Top News, Hot News

বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রাম একদিনে শুরু হয় নি। দীর্ঘ তেইশ চব্বিশ বছরের অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার ফলেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়। ১৯৪৭ সালে মহম্মদ আলি জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্বের সুরসুরি দিয়ে, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলেন। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙ্গালী এবং পাঞ্জাবীরা সবচাইতে বেশি অবদান রাখলেও স্বাধীনতা লাভ ও দেশ ভাগের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলো এই দুই জাতি। চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসতে হলো কোটি কোটি মানুষকে। বাঙ্গালী মুসলমানদের মনে আশা জেগেছিল, মুসলিম প্রধান পাকিস্তানে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করবেন।

 কিন্তু শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা বাঙ্গালী মুসলমানদের উপর অত্যাচার শুরু করলেন। পাকিস্তানের জনসংখ্যা অনুপাতে বাঙ্গালীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়েও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের কোন ভূমিকা রইল না। আঘাত এলো মাতৃভাষার উপর। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত দাবি জানালেন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই থেকে সংগ্রাম শুরু। বাহান্ন সালের ভাষা আন্দোলন, এর আগে ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট নেতা মনি সিংহের নেতৃত্বে কৃষকদের আন্দোলন, যুক্ত ফ্রন্টের একুশ দফা কর্মসূচী, সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গন অভ্যুত্থান ইত্যাদি বহু লড়াই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলার মানুষ শহীদ হয়েছেন, পাকিস্তানের পুলিশ মিলিটারির অত্যাচার সহ্য করেছেন, কারাবন্দী হয়েছেন। যৌবনের একটি বড় অংশ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন। পূর্ব বাংলার ছাত্র আন্দোলন ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। ছাত্র যুব সমাজ, বুদ্ধিজীবী শিক্ষিত সম্প্রদায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুভব করতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। তারা কোন দিন বাঙ্গালীকে স্বায়ত্তশাসন দেবে না। শোষন অত্যাচার বন্ধ করবে না। গণ আন্দোলনের মুখে স্বৈর শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা হস্তান্তর করেন আর এক স্বৈরাচারী শাসক ইয়া হিয়া খানের হাতে। তিনি সংবিধান প্রণয়ন ও নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। নির্বাচন হলো। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল। নিয়ম অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। কিন্তু ইয়াহিয়া খান এবং তার দোসর পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো মিলে চক্রান্ত শুরু করে দিল। ১লা মার্চ, ১৯৭১ পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করে দিলেন। জনগণের সুস্পষ্ট ম্যান্ডেট'কে পদদলিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। গর্জে উঠলেন পূর্ব বাংলার মানুষ। ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, কৃষক সমেত সকল অংশের মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে গেল। সামরিক কর্তৃপক্ষ কার্ফিউ বা সান্ধ্য আইন জারি করেও সংগ্রামী জনতাকে বাগে আনতে পারলোনা। কার্ফু উপেক্ষা করে মানুষ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানালো। সামরিক শাসকরা গুলি,লাঠি, টিয়ার গ্যাস দিয়ে জনতাকে কাবু করতে পারলোনা। স্বাধীনতার দাবি উঠল। ছাত্র নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। সেই সময়ের চার জন বিখ্যাত ছাত্র নেতাকে চার "খলিফা" নামে আখ্যায়িত করলেন বাংলার মানুষ। এরা হলেন আ,স,ম,আবদুল রব, শাহজাহান সিরাজ,আবদুল কুদ্দুস মাখন ও নূরে আলম সিদ্দিকী। আ,স,ম, আবদুল রব মুক্তিযুদ্ধের সময় দেরাদুনে ট্রেনিং করে ত্রিপুরায় অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের কাজ করেছেন। আগেই বলেছি তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহের সরকারি বাসভবনে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সেই সময়ের ছাত্র লীগ নেতা মমিন উল্লাহ। চোত্তাখোলা বেস ক্যাম্প,বিলোনীয়া, উদয়পুর, আগরতলা সমেত বিস্তির্ণ অঞ্চল তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল। আগরতলার বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত অনিল ভট্টাচার্যের পরিবারের সঙ্গে রব ভাইয়ের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। রব ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি প্রথমেই অনিলদার স্ত্রী সুনন্দা বৌদি ও অন্যান্যদের খবর নেন।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে লাগলেন। এর পরেই এলো ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভা। প্রথমে কথা ছিল ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর জনসভা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। আমি ও হিমাংশু ঠাঁয় বসে রইলাম রেডিওর সামনে। আমাদের ঘরে তখনও রেডিও ছিল না। হিমুর (হিমাংশু) ছোট কাকার রেডিও ছিল। সেখানে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। রেডিও তে সম্ভবত আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গানটি বাজছিল। গান শেষ হওয়ার পর সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেল। যতদূর মনে পড়ে অনেকটা সময় সম্প্রচার বন্ধ ছিল। ভাষণ না শুনতে পেয়ে হতাশ হলাম। খুব সম্ভবত পরদিন সকালে হিমু এসে ডাকতে থাকে তার কাকার ঘরে যাওয়ার জন্য, মুজিবুর রহমানের ভাষণ বাজানো হবে। সেই দিনের ভাষণ শুনে আমরা উত্তেজনা ও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। ভুলে গিয়েছিলাম, এই সংগ্রাম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মানুষের স্বাধীনতা সগ্রাম, মনে হয়েছিল, এটা আমাদেরই যুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটি এখন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে রাষ্ট্রসঙ্ঘ কতৃক স্বীকৃত। আজ পরিনত বয়সে মনে হয় ঊনিশ মিনিটের সেই ভাষণটি শুধু স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা নয়, এ যেন একটি অনিন্দ্য সুন্দর গদ্য কবিতা। বঙ্গবন্ধু কার্যত সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অবশেষে এলো পঁচিশে মার্চের বিভীষিকাময় কালো রাত। বয়স কম হলেও ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম। পরদিন ছাব্বিশে মার্চ সকালে আকাশবাণীর বাংলা খবরে বলা হলো শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সাহায্য চেয়েছেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করে নিরস্ত্র মানুষের উপর অত্যাচারের কথাও সংবাদে বলা হলো। তখনও পর্যন্ত আমরা জানতাম না, শেখ মুজিবুর রহমান কোথায় আছেন। পরে জানা গেল তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। বাঙ্গালী সৈন্য ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য এবং বাংলাদেশের ছাত্র জনতা পাক সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে লড়াই চালিয়ে যেতে লাগল। আমাদের তখন বুঝতে অসুবিধা হলোনা, এই যুদ্ধ আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালী মুসলমান, সামান্য সংখ্যক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরাচারী মুসলমান শাসকদের অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। এবার তাঁরাই মুক্তি পেতে চাইছেন। চাইছেন স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ অধ্যায় একাত্তরের ডিসেম্বর মাসের যুদ্ধ । নয় মাসের লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ষোল ডিসেম্বর। ১১ই ডিসেম্বর তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা আমার স্মৃতিতে নেই। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ আক্রমনে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর তখন "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি" অবস্থা।

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.