Adsterra

আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ০৭

আত্রলিতা, সাদিয়া শাহরিণ শিফা, পর্ব ০৭ , ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice,  প্রেমের উপন্যাস, romantic bangla story, bangla story for love, short bangla story

উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০৭

সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ। মেস থেকে বেরিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে সফিক মিয়ার টঙে একদফা চা  খাওয়া হয়ে গেছে আহিলের। এখন সে শাহবাগের রাস্তার নিয়ন আলোয় এলোপাথাড়ি হাঁটছে। এমনটা অনেকদিন হয়েছে, কোনো বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত থাকলে আহিল গন্তব্যহীন হাঁটে। আজ সে বাবার বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত। দুদিন আগে বাবার শরীর খারাপের যে খবরটা পাওয়া গেছে তা আজ সকালে আরো বেড়েছে। এখন তাকে গ্রাম থেকে আনতে হলেও আহিলকে যেতে হবে, এতটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এদিকে মাসের শেষ সপ্তাহ। পকেটেও তেমন টাকা নেই। টিউশন গুলো থেকেও এক তারিখের আগে চাইতেও রুচিতে বাঁধে। 

টিউশনের কথা মনে হতেই আহিলের মনে হলো সেদিনের পর পাঁচদিন হলো আর ওই নতুন টিউশনের বাসায় পড়াতে যাওয়া হয়নি। সাধারণত, একদিন দুদিন না গেলে গার্ডিয়ান ফোন করেন, এক্ষেত্রে তাও হয়নি। পাঁচদিন বন্ধের মধ্যে পড়ানোর ডেট পরে আজসহ তিনদিন। আজ গেলে শরীর খারাপের কথা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। তবুও এখন বাবা মায়ের যে দুরাবস্থা দেখতে পাচ্ছে তাতে চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত যতগুলো সম্ভব টিউশন করিয়ে যেতেই হবে। সুতরাং, আহিল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আজ সে অহমকে পড়াতে যাবে। সেদিন কি হয়েছে, কি হতে পারে অথবা পড়ানোর পরিবেশ আছে কিনা এসব না ভেবে চোখ কান বুজে হলেও সে পড়াবে।

রিকশা থেকে নেমে রিকশাভাড়া মিটিয়ে আহিল দোতলার বারান্দার দিকে তাকালো। নাহ, আজ বেশ শান্ত, ছিমছাম। তবে রাত আটটা সাড়ে আটটা নাগাদই জায়গাটা বেশ নীরব আর অদ্ভুত গা ছমছমে লাগে। ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাসার কলিং বেল চাপলো আহিল।

একবার, দুবার। কোনো সাড়াশব্দ নেই। এর পরে আবার কলিংবেলে চাপ দিতে যাবে এমন সময় আস্তে করে দরজা খুলে গেল। দরজা খুললো একটা মেয়ে। অদ্ভুত সুন্দর, সাদা কামিজ পরা, খোলা চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে বেশ নিচে পরেছে। ঘুম ঘুম ফুলে থাকা ডাগর চোখ, গায়ের রং ঠিক যতটা ফর্সা হলে মানুষের রঙে একটা রক্তিম আভা আসে, মানুষ দুধে আলতা যেটাকে বলে, তেমন। মুখের গড়নটা পটে আঁকা কোনো পুতুল অথবা মূর্তির মত নিখুঁত। আহিলের মনে হলো কোনো অপার্থিব সৌন্দর্য সে দেখছে এবং জীবনের প্রথম দেখছে। মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল যেন জিজ্ঞেস করছে কাকে চাই তবে আহিল কিছুই বোঝাবার ক্ষমতা নেই এই মুহূর্তে। সে ভুলে গেছে সে কোথায়, কার কাছে এসেছে আর কাকে চাই। তবে এই মুহূর্তে আহিলের মুগ্ধ চোখ বলছে তার আর কাউকে চাইনা, কোনো তাড়া নেই, সময় থেমে যাক, পৃথিবী উচ্ছন্নে যাক। 

"কে আপনি? এখানে কোনো দরকারে?" মেয়েটা অধৈর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললো। আহিল কিছু বলতে চাইলো কিন্তু সে খুঁজে পাচ্ছে না কি বলবে। বেশ গুছিয়ে কিছু বলা উচিত তবে সব উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে, কথা গুলিয়ে যাচ্ছে। 

পেছন থেকে একটা বাচ্চা ছেলের কণ্ঠ শোনা গেল,"কে এসেছে আপু?"

দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো অহম। 

"আরে স্যার আপনি!"

মেয়েটা এবার দরজা না ছেড়েই ভ্রু কুঁচকে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তার মিহি কণ্ঠে বলল,"কিরে তুই চিনিস? কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলছেও না!"

অহম একটু হেসে বললো,"হ্যাঁ আপু চিনি। ইনিই আমার নতুন টিচার।"

"নতুন টিচার? কবে ঠিক করা হলো! কই আমি তো কিছু জানলাম ও না!"

"আপু সেদিন ঠিক করা হয়েছিল"

"অদ্ভুত তো! সেদিন কোনদিন? আর আমি তো বাসায় ই থাকি না কি? আমি দেখতাম তো ঠিক করা হলে! কি বলিস তুই! কাকে না কাকে বাসায় ঢুকাচ্ছিস.." মেয়েটার ভাব দেখে মনে হলো সে ঠিক তার বাচ্চা ভাইকে বিশ্বাস করতে পারছে না। 

আহিলের এই মুহূর্তে মনে হলো চলে যাবে। এজন্যই সে এই বাসায় পড়াতে আসা নিয়ে খুঁতখুঁত করছিল। তবে সে একেবারেই এখন চলেও যেতে পারছে না। কিছু একটা যেন তাকে টানছে, পা দুটো পাথর হয়ে গেছে।

গোলগাল বাচ্চা ছেলেটা বেশ বিরক্ত হয়ে বললো,"উফ আপু, আমি বললাম তো স্যার আমার। ঢুকতে দিচ্ছো না কেন! আর তুমি কি সবসময় সুস্থ থাকো নাকী! তাই দেখতে পাওনি। সেদিন তোমায় ডাকেনি কেউ"

মেয়েটা এবার একটু চুপসে গেল। "ও আচ্ছা" বলেই দরজা ছেড়ে দিয়ে বারান্দার লেন পেড়িয়ে আস্তে আস্তে ওপাশের রুমে চলে গেল।

অহম আহিলের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,"আসুন স্যার আপু বুঝতে পারেনি"

আহিলের কিছুক্ষণের জন্য ফাঁকা হয়ে যাওয়া মাথায় আস্তে আস্তে সব বোধ কাজ করতে শুরু করলো। ভিতরে ঢুকে পড়াতে বসিয়েই অহমকে জিজ্ঞেস করলো,"পড়া করেছো? হোমওয়ার্কগুলো?"

"জ্বি স্যার। আপনি আসেননি, ভেবেছি আর আসবেননা, পরে বাবাকে পড়া দিয়েছি"

"গুড। এখন আমাকে দেখাও। আর কেন মনে হলো যে আসবনা?"

"সেদিনই মনে হচ্ছিল স্যার। এজন্য খুব খারাপ লাগছিল। আমাদের বাসাটাই আসলে এমন, কেউ বেশি আসতে চায় না, আমার খুব মন খারাপ করে"

"আমি আসবো"

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

আহিল কথাটা বলেই বারান্দার দিকে একবার তাকালো। রুমে আলো জ্বলছে। বারান্দায় মোটামুটি বেশ অন্ধকার, কেউ সেখানে নেই। অহম খাতা বের করতে করতে খুশি হয়ে বললো,"কিছু মনে করেননি তো স্যার?"

"কেন?"

"আপু যে আপনাকে ঢুকতে দিচ্ছিল না?"

"কে উনি? তোমার বোন?"

"হ্যাঁ স্যার সেদিন বলেছিলাম না.."

"মাথা খারাপ?"

অহম মুহুর্তে দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে একবার বারান্দার ওপারের রুমের দিকে তাকিয়ে, ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,"হুঁশশশ.. স্যার আস্তে কথা বলুন। এসব বলবেন না প্লিজ। আপু শুনলে..."

"সেদিন তো তুমিই বলছিলে, আজ আমাকে থামাচ্ছো?"

"আজকে আপু সুস্থ, শুনলে মন খারাপ করবে স্যার"

আহিল এবার গাঢ় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

"শোনো অহম। তুমি তোমার আপুকে ভালোবাসো? সম্মান করো?"

"জ্বি স্যার"

"তাহলে যে মানুষটাকে ভালোবাসো, সম্মান করো তার সম্পর্কে আর কখনও ওসব কথা বলবা না। সে উপস্থিত থাকুক, না থাকুক বড় কথা নয়, তুমি বলবা না। কারো সাথেই না। তুমি অনেক ছোট তাই হয়তো বুঝতে পারোনি, কিন্তু এখন থেকেই তোমাকে এসব শিখতে হবে। মনে থাকবে যা বললাম?"

"জ্বি"

"এবার বইটা বের করো। আজ ইংরেজি দিয়ে শুরু করি.."

বারান্দার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল আত্রলিতা। অন্ধকারে তাকে ড্রয়িংরুম থেকে দেখা যাচ্ছে না নিশ্চিত তবে সবকিছু সে খুব স্পষ্টভাবে শুনতে পেল। বাইরে মৃদু মৃদু ঝড়ো বাতাস এসে নাকমুখে পড়ছে। আত্রলিতার বেশ ভালো লাগলো। অন্যরকম একটা ভালো লাগা। নিজের অসুস্থতার কারণে সবার কাছে হাসি আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের জীবনে সম্মান নামের জিনিসটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল। সেখানে একটা অপরিচিত লোক তাকে এতটা সম্মান দিল, এ যেন তার কল্পনার বাইরে। তাছাড়াও দরজা খোলার পর আত্রলিতা ছেলেটার চোখে মুগ্ধ দৃষ্টি দেখেছে, যাতে কোনো পাপ ছিল না, অদ্ভুত একটা অবিশ্বাস ছিল। নিঃশব্দে মুচকি হেসে ফেললো আত্রলিতা। তাকে দেখেও কেউ মুগ্ধ হয়!   আত্রলিতার আজ নিজেকে খুব ভালো লাগছে, কেন সে জানে না, তবে বহুদিন পর খুব খুব ভালো লাগছে।



চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.