Adsterra

আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ০৫

আত্রলিতা, সাদিয়া শাহরিণ শিফা, পর্ব ০৫ , ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice,  প্রেমের উপন্যাস, romantic bangla story, bangla story for love, short bangla story


উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০৫


বেলা সোয়া এগারোটা। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে ফোন হাতে নিয়ে বসতেই আহিলের মনে পড়লো আজ রবিবার। আজ তার বাজার করবার দিন। মেসের একেকজনের একেকদিন বাজার করবার ডেট দেয়া থাকে। মোটমাট সাতজন থাকায় একজন সপ্তাহে একদিন বাজার করলেই হয়ে যায়। আহিলের রুমেই থাকে তিনজন। রুমটা বেশ বড়ও না আবার খুব ছোটও না। মাঝারি আকারের রুমে তিনটা খাট ফেলা হয়েছে। সাথে পৃথক পৃথক পড়ার টেবিল ও অন্যান্য ব্যক্তিগত আসবাব। মাস্টার্স শেষ হবার পর যখন হল ছাড়তে হলো, তারপর থেকে আহিল এই মেসে উঠেছে। খারাপ না, মোটামুটি বেশ ভালোই আলো বাতাস আছে। রুমমেট একজন চিটাগং এর। জুনিয়র। মেসের কাছেই একটা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস থার্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী। আরেকজন বড় ভাই, রাজশাহীর। এখানকার একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরিরত। রুমমেট দুজনই সকাল হলে যে যার কাজে বেরিয়ে যায়। থাকে শুধু আহিল। মাঝেমধ্যে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে বেরোতে হয়। তাও সপ্তাহে তিন চার দিনের বেশি না। চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বেশ একটা অবসরই পাওয়া যায় বটে। অবশ্য যতক্ষণ না পকেটে টান পরে। 

শাহরিয়ার সোহাগ এর  নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প

ফোনের স্ক্রিন খুলেই আহিলের মনে হলো রবিবার তার বাজার করবার দিন। আজ রবিবার। সুতরাং এক্ষুনি বাজারে যেতে হবে, প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে, এরপর আর কিছুই পাওয়া যাবে না। ফোনটা টেবিলের উপর রেখে টিশার্ট চেঞ্জ করে খানিক রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়বে আহিল, এরমধ্যে ফোনে রিং বেজে উঠলো। মা ফোন করেছে। মানিব্যাগ পকেটে ঢুকিয়ে ঘড়ি পরতে পরতে আহিল ফোন রিসিভ করলো

"হ্যালো মা"

"হ্যাঁ বাবু। উঠেছিস"

"হ্যাঁ মা অনেকক্ষণ হলো"

"নাস্তা করেছিস তো"

"জ্বি মা করেছি। এখন রাখি মা, বাজারে যাচ্ছি"

"এখন এই রোদের মধ্যে বাজারে যাবি! তোর হলই ভালো ছিল। বাজারের ঝামেলা ছিল না"

"কি করবো মা, এখন তো আর হলে নেই। রাখছি আমি এসে ফোন দিব"

"আচ্ছা বাবা আর শোন তোর বাবার কাশিটা বেড়েছে। গতকাল রাতে ঘুমাতে পারেনি একফোঁটা। কি ওষুধ দিব বুঝতে পারছি না.."

"আন্দাজে কি ওষুধ বলবো মা? আমি কি ডাক্তার? কতদিন বলেছি বাবাকে ঢাকা এসে ডাক্তার দেখাও। আমি নিয়ে যাবো, তুমি শুধু আসো। সে তো আসবেই না। ডাক্তারের কথা শুনলেই সে সুস্থ হয়ে যায়"

"ঠিক আছে বাবা, দেখি কি করা যায়"

"ওকে, আমি রাখলাম। তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বলো এখানে যেন আসে। তার প্রোপার ট্রিটমেন্ট দরকার।"

ফোন রেখে আহিলের মনে হলো বাবার অসুস্থতার ব্যাপারটা এবার বেশ খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। নাহলে তার মা কখনও এভাবে বলে না। একবার মনে হলো বড় ভাইকে ফোন দেয়া দরকার। আহিল রা দুই ভাই। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই বেশ স্বচ্ছল অবস্থা সম্পন্ন। সরকারি ব্যাংকে চাকরি করে, ধানমন্ডিতে বিরাট বাসা ভাড়া করে বউ দুই বাচ্চা নিয়ে থাকে। তবে বাবা মায়ের খোঁজ নেয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ নেই তার। আহিলই মাসে এক দুবার গেলেও আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় সেই অনাগ্রহের কথা। আহিলকেও কেউ গ্রহণ করে না সাদরে। শুধু ছোট ছোট ছেলেমেয়েদুটো "চাচ্চু এসেছে চাচ্চু" বলে দু এক ঘন্টা লাফিলাফি করে, খুশি হয়, এইই যা। বাবা মায়ের গ্রামে অসুবিধার কথা বড় ভাইয়ের কাছে তুলে ধরতে চাইলেও আহিলের বড় ভাই আনাম সাহেব এড়িয়ে যান অথবা খানিক বিরক্তি ব্যক্ত করে ওই বিষয় ওখানেই সমাপ্ত করেন। 

ফোন হাতে নিয়ে বড় ভাইয়ের নাম্বার খুঁজে স্ক্রিণে এনেও ব্যাকস্পেস চেপে ফোন পকেটে রেখে দেয় আহিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেস থেকে বেরোতে বেরোতে ভাবে,"কোনো লাভ নেই। যা করার আমাকেই করতে হবে.."

মাছের বাজারে গিয়ে মাছওয়ালার সাথে একদফা তর্কাতর্কি লেগে যায়। পুরো বাজার ঘুরে একটা মাঝারি রুই মাছ পছন্দ হয়েছে আহিলের, কিন্তু দোকানি অতিরিক্ত দাম চাচ্ছে। রুই মাছের দাম এত বেশি হবার কথা না, সাইজও আহামরি কিছু নয়। অগত্যা একদফা তর্কাতর্কির পর ফিরে আসছিল তখন মাছওয়ালা আবার ডাক দিয়ে তার বলা দামেই মাছটা তার কাছে বিক্রি করে। খামোখা এত কথা বলার জন্য বিরক্তি লাগে আহিলের। তবে নিজের পছন্দের দামে পছন্দের মাছটা কিনতে পেরেছে বলে মনে মনে বেশ শান্তিও লাগে।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

মেসে ফিরে বাজারের ব্যাগ রেখেই দেখে কাজের খালা এসেছে। নিজের মনেই বকবক করছে, হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে রাগ।

"কি হয়েছে খালা"

"কি অইছে জানেন না? কয়টা বাজে? আমার কি আর কাম নাই? একটা বাজে, কহন রানমু, কহন অন্য বাসায় কামে যামু? বাজার আনলেন এহন..."

মুচকি হেসে আহিল নিজের রুমে ফিরে আসে। খালার অভিযোগ প্রতিদিন সবার উপরে চলতেই থাকবে, ওসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মানে হয় না। তারচেয়ে অনেক জরুরী কাজ এখন আছে। গোসল করে এসে ফোন দিয়ে ভালোভাবে বাবার খোঁজ নিতে হবে। খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। দরকার হলে ওই রুমমেট এমবিবিএস পড়ুয়া ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ওষুধ খাওয়াতে হবে। আর ঢাকা এসে ডাক্তার দেখানোর ব্যাপারটা জোর দিয়ে বলতে হবে। পরশু একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে ওর জন্য প্রিপারেশন নিতেও বসতে হবে। প্রতিটা মানুষের ঠিকঠাক ক্যারিয়ার শুরু করার আগের সময়টাই হয়তো সবচেয়ে কঠিন সময়, যখন অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সব চিন্তা একত্রে এসে ভর করে।


চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.