আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ১৬
উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ১৬
উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ১৬
দরজা আটকে এসে ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন আব্দুর রহমান সাহেব। মাথায় হাত দিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে কাঁদতে লাগলেন। আহিল ওনার পাশে এসে বসে ওনার কাঁধে হাত বুলিয়ে দিলেন। বৃদ্ধ লোকটা যেন পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে, কিছুতেই নিজেকে সামলে নিতে পারছে না। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে কোনোমতে বললেন,“ এসব কি বলে গেলেন ডাক্তার সাহেব?! আমার মাথায় এখনও কিছু ঢুকছে না... উপায় একটা বলে চলে গেলেন..!” ঢোক গিলে কোনোমতে আবার বলতে লাগলেন,“ আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে? একে আমার মেয়ে নিজেই এতটা অসুস্থ..কোন ছেলে রাজি হবে এমন মেয়ে বিয়ে করতে! ওর কোনো বন্ধু বান্ধব ও নেই..কার কাছে যাবো আমি”
আহিল নিজেও ভেঙে পড়ছে, নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,” আঙ্কেল, আপনি শান্ত হন একটু। একটু শান্ত হন। এভাবে ভেঙে পড়লে আপনার শরীর খারাপ করবে”
আব্দুর রহমান সাহেব বললেন,“ কিভাবে শান্ত হই বাবা! বলো তুমি.. কিভাবে? চোখের সামনে মেয়েটাকে মরতে দেখছি আর কিছুই করতে পারছি না! দুনিয়ার সবচেয়ে হতভাগা বাবা আমি..”
আব্দুর রহমান সাহেবের কান্না থামছে না। আহিল তাকে সময় দিল বেশ খানিকটা। মানুষটা নিজেকে সামলাক। পাশে বসে আহিলও মনে মনে নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নিল।
প্রায় আধঘন্টা কেটে গেল নিঃশব্দে। আব্দুর রহমান সাহেব কিছুটা শান্ত হয়েছেন। নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,“ ওর জন্য পাত্র কোথায় পাবো! আমার মেয়েটাকে সমাজের কেউ মানতেই পারেনা, আর বিয়ে!”
আহিল খুব বড় একটা শ্বাস নিয়ে বললো,“আপনার মতামত থাকলে আমি ওকে বিয়ে করতে পারি আঙ্কেল”
আব্দুর রহমান সাহেব চোখ বড় বড় করে বিষ্ময়ে ওর দিকে তাকালেন। বললেন,“ কি বলছো বাবা! তুমি একটা সুস্থ সুন্দর পড়াশোনা জানা ভালো ছেলে। আমার মেয়েটার অনিশ্চিত জীবনের ভার তুমি নিতে চাইছো! তুমি তো সবটা শুনলে এখানে বসে। তুমি নিজের জীবনে আমার মেয়েটাকে তারপরেও চাইছো! নাকি সবটা শুনেছো বলে ওর উপর দয়া করছো বাবা? ”
আহিল আব্দুর রহমান সাহেবের হাত ধরে বললেন, “ দয়া করছি না আঙ্কেল। দয়া করার কথা ভাবতেও পারিনা। আত্রলিতা অসাধারণ একজন মানুষ। ওকে আমি আগেই পছন্দ করতাম। এখন ওর এত বড় বিপদে ওকে সাহায্য করতে পারলে, ওকে সুস্থ করে তুলতে পারলে, ওকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেলে আমি ভাগ্যবান। তবে..”
আব্দুর রহমান সাহেব বললেন,“ তবে কি বাবা? বলো?”
আহিল ইতস্তত করে বললো,“ আমি আপনার সাহায্য করবো। বদলে আপনারও আমাকে ছোট্ট একটা সাহায্য করতে হবে আঙ্কেল..”
-“কি সাহায্য বলো বাবা? আমি সব করতে রাজি। আমার মেয়েটাকে শুধু স্বাভাবিক একটা জীবন দিতে চাই।“
আহিল বললো,“ আঙ্কেল, আপনার আমাকে দশলাখ টাকা দিতে হবে।”
আব্দুর রহমান সাহেব কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেন। পরমুহূর্তেই শান্ত হলেন, যেন আহিল স্বাভাবিক কথাই বলছে। বললেন,“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
বুঝতে পেরে আহিল বললো,“ আঙ্কেল, আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার মেয়ে অসুস্থ বলে টাকা দিয়ে আমার সাথে বিয়ে দিতে হবে। ব্যাপারটা কিন্তু তেমন না। আমি আবারও বলছি, আত্রলিতাকে আমি পছন্দ করি। ওকে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই। টাকার কথা এই সময় বলতে আমারও কি যে অস্বস্তি হচ্ছে, খারাপ লাগছে! কিন্তু আঙ্কেল, আমার নিজের বাবা, খুব অসুস্থ। বাবার ফুসফুসের অনেকটাই ইনফেক্টেড। তাকে ইমিডিয়েট অপারেশন করাতে হবে। টাকা জোগাড়ের জন্য মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরছি।”
নিঃশ্বাস ফেলে আবার আহিল বললো,“ আজ হয়তো এখানে এত কিছু না হলেও আমি আপনার কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততাম। কি করবো বলেন আঙ্কেল? নিজের বাবা তো! আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। আত্রলিতাকে বাঁচাতে যেমন আপনি ছটফট করছেন, তাকে বাঁচাতে আমি ভেতরে ভেতরে ছটফট করছি! আপনি চাইলে আমি প্রেসক্রিপশন দেখাতে পারি। ফোনে ছবি তুলে রেখেছি।“ পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে আহিল বললো,” আমি আপনার কাছে টাকাটা একেবারেই চাইছি না আঙ্কেল, আপনি শুধু আমাকে টাকাটা ধার হিসেবে দিন। লোন দিন আমাকে। আগামী দুই বছরের মধ্যে আমি পরিশোধ করবো কথা দিলাম।”
আব্দুর রহমান সাহেব চোখ মুছে মৃদু হাসলেন। বললেন,“ বাবা, তুমি খুব ভালো একটা ছেলে। তোমার চাইতে যোগ্য পাত্র বোধহয় আমার মেয়ের জন্য পেতাম না। আমার অভাগী মেয়েটা এই একটা জায়গায় বেশ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।”
বলেই উঠে গেলেন আব্দুর রহমান সাহেব।
কিছুক্ষণ পর রুম থেকে তার স্বাক্ষর করা একটা চেক হাতে বেরিয়ে এলেন।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments