Adsterra

ইনুকে বাদ দিয়ে নতুন মুখ বেছে নিলেন ভোটাররা

ইনুকে বাদ দিয়ে নতুন মুখ বেছে নিলেন ভোটাররা, আওয়ামিলীগ, রাজনীতি, নির্বাচন, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, ঢাকা ভয়েস, dhaka voice

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি আসনটির টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের কামারুল আরেফিনের কাছে আটকে গেছেন। তিনি মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। 

হাসানুল হক ইনুকে বাদ দিয়ে নতুন মুখ বেছে নেওয়ার পেছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের দ্বন্দ্বের বিষয়টিই উঠে এসেছে। 

মিরপুর উপজেলা শহরের বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, দুই উপজেলায় বিভক্ত ভোটার বিবেচনা করে বিএনপিকে বাদ দিলে থাকে আওয়ামী লীগ ও জাসদ। সে ক্ষেত্রে মহাজোটের অংশ হিসেবে ইনুর নৌকাকে সমর্থন দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিয়ে সমালোচনায় পড়েন ইনু, যার ফল ভোটের মাঠ পর্যন্ত গড়িয়েছে। 

একই কথা উপজেলার বেশির ভাগ ভোটার বলেছেন। তবে মিরপুরের বহালবাড়িয়া ইউনিয়নের সাইদুর রহমান নামে এক ভোটার বলেন, ‘দুই উপজেলার মধ্যে মিরপুর উপজেলায় ভোটার বেশি। নিজেদের উপজেলার মানুষ প্রার্থী হওয়ায় আমরা সেই ব্যাপারকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। এখানে মার্কা আমাদের কাছে মুখ্য ছিল না।’ 


কুষ্টিয়া-২ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু নির্বাচনের আগে ইনু সাহেব আওয়ামী লীগের শরণাপন্ন হন। তারপর ক্ষমতায় গেলে তিনি আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ ভাবেন। তখন উল্টো আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে বয়কট করেছেন, যার ফলাফল তিনি হাতেনাতে পেয়ে গেছেন।’ 


গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৬১টি ভোটকেন্দ্রে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট। নৌকা প্রতীক নিয়ে হাসানুল হক ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট। প্রায় ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন কামারুল আরেফিন। এই আসনে মোট সংখ্যা ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৬ জন। 


জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত জাসদ থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হলেও ২০০৮ সালে এসে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করে জয়ী হন বড় ব্যবধানে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইনু ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৬ ভোট পান। তবে এবার তাঁর ভোটের সংখ্যা মাত্র ৯২ হাজার। 


ইনুর নৌকা ডোবার পেছনে স্থানীয় আওয়ামৗ লীগের সঙ্গে জাসদের দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন সাধারণ ভোটাররা, যার ফলে এবার নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পেয়ে ইনুর জন্য আর ভাড়া খাটতে রাজি হননি তাঁরা। ভোটাররা বলছেন, শরিক দল হওয়া সত্ত্বেও সম্পর্কের এই টানাপোড়েনে হারতে হয়েছে ইনুকে। 


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানা কারণে দ্বন্দ্ব প্রকট হয় ইনুসহ জাসদের, যার ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধিতার মুখে পড়েন। ইনুকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন। 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরখানেক আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার পর দুই দলের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়। এরপর সেই আগুনে নতুন করে ঘি ঢালে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায়। ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রাজনীতির মাঠে। 


জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে মাঠে কাজ করা অবস্থায় ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম ওরফে স্বপন, তাঁর ভাই চাঁদগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান যুবজোটের নেতা আবদুল হাফিজ ওরফে তপনসহ জাসদের নেতা-কর্মীদের নামে হত্যা মামলা করেন সিদ্দিকুরের পরিবারের লোকজন। এক দল অন্য দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে মিছিল-সমাবেশ করে। 


এরপর চলতি বছরের আগস্ট মাসে জাসদের সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুবজোটের নেতা-কর্মীদের হামলায় নিহত হন ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকাণ্ডের পর জাসদ ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐক্যে ফাটল ধরে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 


দুই উপজেলার তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসন থেকে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হলেও তাঁদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। উল্টো দলটির নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম করেন। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর ভোট করবেন না বলে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।


No comments

Powered by Blogger.