Adsterra

নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা

 




নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, Today Trending News, Today Viral News

টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এমনটি ঘটেনি। এমনকি বিশ্বের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।


দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যেমন ছিল তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি চ্যালেঞ্জের। কেননা বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ভোটারদের অংশগ্রহণ নিয়ে চিন্তার বিষয় ছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ছিল এ কারণে যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পারলে দেশ ও বিদেশের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক ছিল। আর সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতার প্রয়োজন ছিল।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া জনপ্রিয়তার একটি মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। নির্বাচনে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁরা আমাদের ধারণা, নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়। সংসদ সদস্যদের মধ্যে বয়সে অনেক তরুণ রয়েছেন, যাঁদের মেধা ও নেতৃত্বের গুণাবলি নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করেছে। অনেক প্রবীণ নেতা এবার নির্বাচিত হতে পারেননি।


দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার জন্য অনেকটা দম্ভ এবং এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা—সর্বোপরি অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়ানো তাঁদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তাঁদের মধ্যে কাজ করে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করা। দলের বদলে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া মুখ্য হয়ে দেখা দেয়। ত্যাগী নেতাকর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে অন্যদের মূল্যায়ন করা হয়। ফলে তৈরি হয় বিভিন্ন উপদল এবং এদের মধ্যে কোন্দল, যা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে।

আর দীর্ঘ সময় সংসদ সদস্য থাকলে উপরোক্ত মনোভাব আরো বেশি মাত্রায় কাজ করে।  

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ১১টি বিশেষ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহার প্রণয়ন করে, যার মূল লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করা। স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থ স্মার্ট মানুষ, যারা মন ও মননে, কাজ ও কর্মে, চিন্তা ও চেতনায়, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্মার্ট হবে। সুশাসন এবং জবাবদিহির অপরিহার্য উপাদান হলো এমন স্মার্ট মানুষ ও তার আচরণ। যদি সংসদীয় এলাকায় দলাদলি, বলয় তৈরি এবং সংসদ সদস্যদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব তৈরি হয়, তাহলে সরকারের ওপর এর দারুণ প্রভাব পড়ে। কেননা একজন ভোটার তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে পুরো সরকারকে বিবেচনা করেন। সরকার অনেক ভালো কাজ করলেও সংসদ সদস্যদের প্রতি জনগণের নেতিবাচক মনোভারের কারণে অনেক ভালো অর্জন মুহূর্তেই ম্লান হয়ে যায়। নতুন সরকার এবং সংসদ সদস্যদের কাছে আমাদের প্রথম প্রত্যাশা, কেউ যেন বলয় তৈরি করতে না পারেন। যে ভালোবাসা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে ভোটাররা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করেছেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নির্বাচিত হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে যেন অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করা হয়।


যে ৬২ জন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের কাছ থেকে আমরা একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার এবং সেই অনুযায়ী কাজ প্রত্যাশা করি। তাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারেন এবং নিজেরা একটি ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারেন।


নতুন সরকারের কাছে আমাদের দ্বিতীয় প্রত্যাশা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়। যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়, কিন্তু সেই পণ্যের দামও অনেক বেশি। খোদ বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে দারুণ বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা যদি দ্রুত জিনিসপত্রের দাম কমাতে না পারি, তাহলে নতুন সরকারের প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরবে। সরকারের প্রথম দায়িত্ব শুল্ক কমিয়ে এবং ভর্তুকি দিয়ে হলেও জিনিসপত্রের দাম কমানো। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি পদক্ষেপগুলো আমরা সঠিকভাবে নিতে পারি, তাহলে নতুন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন করা সহজ হবে। তারা চায় কম দামে পণ্য ক্রয় করে জীবন যাপন করতে।


সরকারের আর্থিক খাতের দ্রুত সংস্কার করা দরকার। কর্মসংস্থানের ওপরও জোর দিতে হবে। অর্থনীতি এমন একটি বিষয়, যেখানে কর্মসংস্থান হলে আর্থিক খাত সচল হয়, মুদ্রাস্ফীতি কমে যায় এবং মানুষের জীবনমান উন্নত হয়।


আমরা চাই, একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সুশাসন ও জবাবদিহি। এর পূর্বশর্ত দুর্নীতিমুক্ত শাসন এবং প্রশাসন। নতুন সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া, শুধু ভৌত অবকাঠামো নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি।


 লেখক : ড. নিয়াজ আহম্মেদ. অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.