Adsterra

আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ০২

আত্রলিতা, সাদিয়া শাহরিণ শিফা, পর্ব ০২ , ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice,  প্রেমের উপন্যাস, romantic bangla story, bangla story for love, short bangla story


উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০২


ছোটোখাটো গোলগাল একটা ছেলে আহিলের সামনের চেয়ারে বসে আছে‌। গোল মুখে গোল ফ্রেমের কালো মোটা একটা চশমা চোখে সেঁটে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে চশমার পাওয়ার অনেক। মোটা কাচ। চশমার ওজনে বাচ্চা ছেলেটার ছোটখাটো নাক সামান্য ঝুলে পড়েছে। তবে তাতে ওর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। চোখদুটো বইখাতা আর ওর মতই ছোট্ট একটা ক্যালকুলেটরের দিকে। বারবার যেন মিলিয়ে নিচ্ছে সবকিছু ঠিকঠাক আনা হয়েছে কিনা। আহিল ভেবেছিল ও আসলেই কড়া করে একটা ঝাড়ি দেয়া যাবে, এতক্ষণ দেরির জন্য। কিন্তু ওর মুখটা দেখে এখন মায়া হচ্ছে। গলা নরম করে বললো,

-নাম কি তোমার

-স্যার আমার?

-হ্যাঁ তোমাকেই তো জিজ্ঞেস করলাম 

-স্যার, অহম

- এত স্যার স্যার করতে হবে না। আমাকে তুমি ভাইয়া বলতে পারো‌। যেসব জায়গায় টিউশন করাই ওরা আমাকে ভাইয়া ডাকে।

- জ্বি আচ্ছা।

- কোন ক্লাসে যেন তুমি?

- ক্লাস সেভেন স্যার

- ও 

এই পর্যায়ে এসে আহিলের আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। এতক্ষণের কথপোকথনে ছেলেটা ওর দিকে একবারও তাকায়নি। নিচের দিকে তাকিয়েই সবগুলো উত্তর দিয়েছে। আর স্যার ডাকতে বারণ করবার পরেও স্যার স্যার করছে। কি আশ্চর্য! ছেলেটা কি ওকে ভয় পাচ্ছে না কোনো কারণে আপসেট? আহিল মনে মনে ঠিক করলো কথা চালিয়ে ওর কাছেই জানতে হবে একটু আগের ব্যাপারটা। ওইসব চিৎকার চেঁচামেচি। এখন অবশ্য সব শান্ত। পুরো বাড়ি জুড়ে একটা টু শব্দ নেই। মনে হচ্ছে এই বাসায় কেউ থাকে না।

- অহম

- জ্বি স্যার

- তুমি আসতে এত দেরি করলে?

- স্যার ক্যালকুলেটর পাচ্ছিলাম না। সরি স্যার।

কাতর কণ্ঠে অনুনয়ের সুরে বললো ছেলেটা। এই পর্যায়ে এসে আহিলের মনে হলো আরেকটু হলে বাচ্চা ছেলেটা কান্না করে দিবে। অথচ সে প্রশ্নটা করেছিল খুবই স্বাভাবিক ভাবে, ঠান্ডা মাথায়, নরম গলায়। আশ্চর্য!

- ঠিক আছে ঠিক আছে, সমস্যা নেই তো। 

এই প্রথম বাচ্চা ছেলেটা আহিলের দিকে একবার তাকালো। মুখে কিছু বললো না। আবার চুপ করে রইলো।

- অহম

- জ্বি

- তুমি আগে কোনো টিচারের কাছে পড়তে না? এখন তো প্রায় বছরের মাঝামাঝি সময়। এখন তোমাকে আমি কোথা থেকে পড়ানো শুরু করবো বুঝতে হবে।

- পড়তাম স্যার

- সে কই? 

এই পর্যায়ে কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল ছেলেটা। আহিলের বেশ মায়া হলো। ছেলেটার চোখে মুখে অনেক কথা। কিন্তু সে মুখ ফুটে বলতে পারছে না কিছুই‌। আহিল ঠিক করলো ওর সাথে অন্য প্রসঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলে ওকে সহজ করে নেয়া যাক। 

- অহম, 

- জ্বি

- কয় ভাইবোন তোমরা?

- দুই

- তুমি আর কে?

- আপু 

- ওহ। বোন কি তোমার বড় না ছোট?

- বড়।

- বাসায় আর কে কে?

- আমি আপু আর আব্বু। আর কেউ না।

- তোমাদের বাসাটা বেশ সুন্দর। তোমাকেও আমার বেশ ভালো লেগেছে। কিন্তু ঢোকার পর বেশ কিছুক্ষণ চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। সেটা কে করছিল?

এবার ছেলেটা আহিলের দিকে কিছুক্ষণ তাকালো‌। তারপর কিছুটা ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বললো,"আপু করছিল, স্যার। আমার বোন। ওর তো মাথার সমস্যা।"

আহিলের বেশ অস্বস্তি হলো। মাথায় সমস্যা থাকা কোনো মানুষের বাড়ির লোক এত সহজে কারো সাথে বলতে চায় না যে আমাদের বাড়ির মেয়ের মাথায় সমস্যা। একেবারে বদ্ধ উন্মাদ হলে ব্যাপারটা আলাদা। আর এই বাচ্চা ছেলেটা কি অবলীলায় বলে গেল কথাটা। তাহলে কি একেবারেই বদ্ধ উন্মাদ!

- তুমি কিভাবে বুঝলে মাথায় সমস্যা?

- বাবা বলেছে, সবাই বলে।

আহিল খেয়াল করলো এই বিষয়ে ছেলেটা খুব আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে।

- তোমার আপু কি ওই ঘরে একা আছে? একটু আগে শুনছিলাম কার সাথে কথা বলছে। 

- ওই ঘরে ও একাই থাকে

- কার সঙ্গে একটা কথা বলছিল। ফোনে হয়তো। তবে কথা বলছিল। 

- আপুর কাছে তো এখন ফোন নাই। আসলে আপু দুইটা।

- মানে!

- মানে যে কি স্যার!

অহম একটু সময় মাথা চুলকে নিয়ে ভাবার চেষ্টা করলো। তারপর মনে করতে না পেরে বললো,

- আপুর একটা রোগ আছে। কি যেন ইংরেজিতে বলে। আপু দুইরকম। ভালো আপু খারাপ আপু।

- খারাপ আপু ভালো আপু কি? আমরা তো সবাই ভালো খারাপ। তুমি কি সবসময় ভালো? মাঝেমাঝে খারাপ হও না? সব মানুষই তো এমন অহম।

- না স্যার। আমাদের মত না। আপুর যখন মাথার সমস্যাটা থাকে না তখন আপু অনেক ভালো। আপনি বিশ্বাস করবেন না স্যার। আপুই রান্না করবে, ঘর গোছাবে, আমাকে পড়াবে। আমাকে কতকিছু বানিয়ে খাওয়ায় আপনি বিশ্বাস করবেন না স্যার। ওইদিন আর ফুলবুয়ার হাতের রান্না খেতে হয় না।

- তাই? ফুলবুয়া কে?

- আমাদের গ্রামের এক খালা। এখানে থেকে কাজ করে।

আহিল খেয়াল করলো এতগুলো কথা বলতে পেরে ছেলেটার মুখ খুশিতে ঝলমল করছে। সে আগের প্রসঙ্গ টেনেই বললো,

- আর মাথার সমস্যাটা এলে?

- তাহলে স্যার আপু যে কী করে নিজেও জানে না। একটু আগেই তো শুনলেন কেমন চিৎকার করছিল। আপুর এমন হলে আমার ভীষণ ভয় করে। তাই বাবা ওকে ওই রুমে আটকে রাখে। একবার এমন মাথা সমস্যার সময় কার সঙ্গে যেন কথা বলতে বলতে একটা কাঁচের গ্লাস আমার গায়ে ছুঁড়ে মেরেছিল। সরে যাই কিন্তু পা কেটে যায়। তখন থেকেই বাবা ওকে তালা দিয়ে রাখে ওর রুমে। আমার অনেক ভয় লাগে, কিন্তু আপুকে তালা দিলেও আমার ভালো লাগে না স্যার।

এক নিঃশ্বাসে এই পর্যন্ত বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অহম। আহিলের বেশ অবাক লাগলো। আরো কিছু জানবার কৌতুহল হলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো এ প্রসঙ্গ পাল্টানো দরকার। সে বললো,

- বই খোলো তো। প্রথমে কি পড়বা? আজকে আমরা কি কি পড়বো দেখি। প্রথমে গণিত বইটা নাও....



চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.