Adsterra

গরুর মাংসের দামে ফের স্বেচ্ছাচারিতা

ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, গরুর মাংসের দামে ফের স্বেচ্ছাচারিতা

গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা আবারও স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করে দিয়েছেন। মাসখানেক হাত গুটিয়ে রেখে ৬৫০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করলেও এখন আবার যে যার ইচ্ছামতো দামে গরুর মাংস বিক্রি করছেন। অথচ এই কয় দিনের ব্যবধানে পশুর হাটগুলোতে গরুর দাম বাড়েনি। তবুও মাংস ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আবারও ভোক্তার কষ্ট বেড়েছে মাংস ক্রয়ে।


এদিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতানের মালিক খলিলের মতো কসাই-যারা কম দামে মাংস বিক্রি করছেন তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে মেরে ফেলার হুমকি। গত ৬ দিন ধরে বেশ কয়েকবার খলিলুর রহমানের মোবাইলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে তাকে ও তার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ ছাড়া গত শনিবার রাজশাহীর বাঘায় উপজেলার আড়ানী হাটের মাংস বিক্রেতা মামুন হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আরেক মাংস বিক্রেতা। মামুনের অপরাধ-তিনি কম দামে কেন গরুর মাংস বিক্রি করছেন।


বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব ঘটনা মাংস ব্যবসায়ীদের চরম অরাজকতার শামিল। এ বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) গোলাম রহমান বলেন, মাংস ব্যবসায়ী খলিল সমাজে একটা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছা করলেই ব্যবসায়ীরা যে কোনো পণ্য কম দামে ভোক্তাকে দিতে পারে। অন্য কসাইদের চেয়ে তিনি অনেক কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করে সারা দেশে বেশ আলোড়ন তুলেছিলেন। তিনি ও তার মতো আরও কয়েকজনের উদ্যোগের ফলে অনেক দিন পর দেশের বাজারে গরুর মাংসের দাম কমেছিল। অনেক গরিব মানুষ এক-দেড় বছর পর পাতে গরুর মাংস নিতে পেরেছিল। যার একটি ভালো উদ্যোগের কারণে মাংসের দাম কমল-তাকেই যদি হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তাহলে সেটি খুবই দুঃখজনক। আমি সরকারের কাছে খলিল কসাইয়ের নিরাপত্তা দাবি করছি এবং যারা তাকে হুমকি দিচ্ছে-তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

মাসখানেক আগে বেশ ঘটা করেই প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। কিছুদিন সারা দেশে বিক্রিও হয় ওই দামে। তবে ধীরে সে দাম থেকে সরে এসে ব্যবসায়ীরা আবারও ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন। এরপর দাম আরও বেড়ে হয় ৭৫০ টাকা। এখন মাংস ব্যবসায়ীরা ঘোষণা দিয়েছেন নির্ধারিত কোনো দাম থাকবে না গরুর মাংসের। সুতরাং গরুর মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে একেক বাজারে একেক দামে। অর্থাৎ মাংস ব্যবসায়ীরা যে যার ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করবেন গরুর মাংস।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে মাংস বিক্রেতা ও খামারি মিলে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ দামে কিনলে ক্রেতা প্রতি কেজি গরুর মাংসে ৭৫০ গ্রাম মাংস, ২০০ গ্রাম হাড় ও ৫০ গ্রাম চর্বি পেতেন। নির্বাচনের দিন, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাজারে এ দাম কার্যকর ছিল। এখন সেটা থাকছে না।


গরুর মাংসের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা সভা করেন সম্প্রতি, এর নির্ধারিত দাম তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। মাংস ব্যবসায়ীদের এ সিদ্ধান্তের আগেই বাজারে গরুর মাংসের দাম এক দফা বেড়ে যায়। এখন অধিকাংশ জায়গায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে-শবে বরাতের আগেই গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা হয়ে যাবে।


এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ-সামনে পবিত্র শবে বরাত ও রমজান মাস। সাধারণত এ সময় বাজারে মাংসের দাম একটু বাড়তি থাকে। ঠিক এ সময়ে ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের নির্ধারিত দর থেকে সরে এলেন ভোক্তাদের পকেট কাটার জন্য। সরকারের উচিত একটি দাম নির্ধারণ করে দেওয়া।


এ বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, এখন থেকে গরুর মাংসের কোনো নির্ধারিত দাম থাকবে না। কারণ নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের শিকার হচ্ছেন। তবে ক্রেতাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে মাংসের দাম যতটুকু সম্ভব কমিয়ে রাখা হবে।

তবে বাজারের মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাংস বিক্রেতা দিদারুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, ‘এক মাস আগে গাবতলি থেকে গরু কিনে এনে কেজিপ্রতি ক্রয়মূল্য পড়ত ৫৮৫ থেকে ৫৯০ টাকা। তখন ৬৫০ টাকায় বিক্রি করলে কেজিতে ৭০-৮০ টাকা লাভ থাকত। এখন গরুর দাম বাড়ায় কেজিপ্রতি ক্রয়মূল্যই পড়ে যাচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। এ জন্য ৭৫০ টাকায় বিক্রি না করলে লোকসান হবে।’


তবে এই কসাইয়ের বক্তব্য মানতে নারাজ শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতানের খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, যখন আমি ৫৯০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করতাম তখন যে দামে গরু কিনতাম তাতে কেজি প্রতি মাংসের ক্রয়মূল্য পড়ত ৫৮০ থেকে ৫৮৫ টাকা। এখন গরুর দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে তা খুব বেশি না। এখন কেজি প্রতি মাংসের ক্রয়মূল্য পড়ছে ৬৪০ টাকার মতো। আমি কেজিতে ১০ টাকা লাভ রেখে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছি।


খলিলকে হত্যার হুমকি

কম দামে গরুর মাংস কেন বিক্রি করছেন-এই অপরাধে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে শাহজাহানপুরের এই কসাই খলিলুর রহমানকে। শুধু তাকে নয়, তার ছেলেকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘গত ৬ দিন ধরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আমার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। এ ছাড়া আমাকে ও আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে-‘তোর জন্য ৬টি বুলেট ও তোর ছেলের জন্য ৬টি বুলেট রেডি আছে। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাক। আমি কী অপরাধ করেছি। কম দামে মাংস বিক্রি করেছি-এটাই কি আমার অপরাধ। আমি শাহজাহানপুর থানায় জিডি করেছি।’

তাকে হত্যার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার ওসি সুজিত কুমার বলেন, ‘খলিলকে যে হুমকি দিয়েছে-আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই এর বেশি কিছু বলতে পারছি না। তবে খলিলের যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য তার ওপর ও তার দোকানের আশপাশে পুলিশ সদস্যরা নজরদারি করছেন।’


No comments

Powered by Blogger.