Adsterra

ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, হাসপাতালের মেঝে সিঁড়িতেও রোগী

ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, হাসপাতালের মেঝে সিঁড়িতেও রোগী, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News


ঠান্ডায় কাঁপছে দেশ। ঘন কুয়াশার চাদরে ছেয়ে আছে উত্তরাঞ্চল। শীতের প্রকোপ ভালোই টের পাচ্ছে রাজধানীবাসীও। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। শীতজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভিড় বাড়ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে, যাদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক। এদের কারও ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। ভেতরে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের সিঁড়িতেই বিছানা পেতেছে রোগীরা। অতিরিক্ত রোগীর চাপে বারান্দায় হাঁটারও উপায় নেই। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট।


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঠান্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপই এখন বেশি। আর এতে নবজাতক ও শিশুদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্করাও।


স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত তিন সপ্তাহে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫৪ জন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই ২ লাখ ৩৮ হাজার ২১৯ জন। সরকারি হিসাবে এই বিভাগে কোনো মৃত্যু হয়নি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫ হাজার ১৮৩ জন; সর্বোচ্চ মারা গেছেন ৪৫ জন। সবচেয়ে কম ৬ হাজার ৫৭২ রোগী সিলেট বিভাগে। এ বিভাগে কারও মৃত্যু হয়নি। ময়মনসিংহে ১৫ হাজার রোগীর মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সবশেষ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সারা দেশে ৩ হাজার ১০১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হয় ৮৯০ জন। ভাইরাল ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি হয় ২ হাজার ২১১ জন।


অধিদফতরের তথ্য মতে, গত শনিবার শ্বা সতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। আর ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি রোগী বেশি ছিল কক্সবাজার, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী এবং কুষ্টিয়া জেলায়। ভর্তি রোগীদের ৮০ শতাংশই শিশু এবং বৃদ্ধ। নবজাতক মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে এসেছেন সবুজবাগের জুয়েল আহমেদ। সাত দিন বয়সি ছেলে জ্বরে ভুগছে। ভিড়ে ঠাঁসা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তার স্ত্রী আকতার বেগম। কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড শীতে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বলে জানান জুয়েল আহমেদ।


মিটফোর্ড হাসপাতালে শয্যা খালি না পেয়ে কেউ পাটি আর কাঁথা-কম্বল নিয়ে বসে পড়েছেন বারান্দা আর সিঁড়িতে। হাসপাতালের এক নম্বর ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দেখা যায় শীতের মধ্যে কাঁথা-বালিশ আর কম্বল নিয়ে সিঁড়িতেই বিছানা পেতেছেন কয়েকজন রোগী। সিঁড়িতে থাকা জ্বরের রোগী ওমর ফারুক বলেন, ভেতরে জায়গা না থাকার কারণে আমাদের বাইরে থাকতে বলা হয়েছে। এভাবে শীতের মধ্যে ঠান্ডা বাতাসে শরীর আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।


ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর চাপ লক্ষ্য করা গেছে শিশু হাসপাতালেও। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক দিন শীত বাড়ায় শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসেন। শিশু মেডিসিন বিভাগের ডিউটি চিকিৎসক জানান, আমাদের এখানে অন্যান্য সময় যত শিশু রোগী আসত, শীতের প্রকোপে জানুয়ারির শুরু থেকে তার দ্বিগুণেরও বেশি আসছে। প্রতিদিন যেখানে ২০০-২৫০ শিশু রোগী আসত, সেখানে গত কয়েক দিনে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ রোগী আসছে।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক নতুন বই  "মানসিক স্বাস্থ্য"। অর্ডার করতে 01745676929 নাম্বারে আপনার নাম, ঠিকানা, কনটাক্ট নাম্বার লিখে ক্ষুদেবার্তা পাঠান।

শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগের সিঁড়ির সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন রিমি আক্তার। আজিমপুর থেকে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। রিমি আক্তার জানান, কয়েক দিন ধরে তীব্র জ্বর আর ঠান্ডা হওয়ায় মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি, পরীক্ষা করাতে দিয়েছে। রিপোর্ট দেখার পর প্রয়োজনে ভর্তি করাতে হবে।


শীতজনিত রোগীর প্রভাব পড়তে শুরু করেেছ রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) কলেরা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, কয়েক দিন ধরে ঢাকায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এর প্রভাবে এই সপ্তাহে রোগীর চাপ বেড়েছে।


অন্যদিকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ জন। এদিন করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ বাংলাদেশেও ছড়াচ্ছে। তবে এ ধরনটি দ্রুত ছড়ালেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।


এ সংস্থার পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর এবং চলতি জানুয়ারি মাসে কোভিড আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের শরীরে জেএন.১ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ পাওয়া যায়। তাদের কেউ বিদেশ থেকে আসেননি, দেশের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরের রোগীও আছেন। তিনি আরও বলেন, নতুন এই ধরন নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটির উপসর্গ সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো। তবে বয়স্ক এবং যাদের কোমর্বিডিটি (নিয়াময় অযোগ্য বা দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ) আছে তাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে।


এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এই শীতে শিশু এবং বয়স্কদের প্রতি বাড়তি সতর্কতা রাখতে হবে সবচেয়ে বেশি। সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, বাত, আর্থ্রাইটিস এবং চামড়ার শুষ্কতা-এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, এ সময়ে শিশুদের সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। শিশুকে সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরাতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে, শিশুর মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না এবং বাড়ির বাইরে শিশুদের নিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি করা যাবে না। ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের ঘন ঘন স্তন্যপান করানোর পাশাপাশি এর বেশি বয়সিদের বুকের দুধ ছাড়াও মৌসুমি সবজি এবং ফল খাওয়াতে হবে।






No comments

Powered by Blogger.