Adsterra

হুতিরা কারা, কেন লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা করছে

 
হুতিরা কারা, কেন লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা করছে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News,ইয়েমেন, ফিলিস্তিনি

প্রায় আড়াই মাস ধরে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস যোদ্ধাদের আন্তঃসীমান্ত হামলার পর এ যুদ্ধ শুরু হয়। হামাস-ইসরায়েল চলমান সংকটের মধ্যেই লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী জাহাজে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ইয়েমেনভিত্তিক ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা। যদিও গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এসব হামলা চালানো হচ্ছে বলে প্রচার চালাচ্ছে হুতি বিদ্রোহীরা।


ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গাজা উপত্যকা ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশেও এ সহিংসতা ছড়িয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার হুতিদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় লোহিত সাগরে বাণিজ্য সুরক্ষার জন্য একটি বহুজাতিক বাহিনী তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। গাজায় সংঘাতের আঞ্চলিক ঝুঁকিতে হুতিদের ভূমিকাও যুক্ত হয়েছে। তারা সমুদ্রপথকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যে পথে বিশ্বের অধিকাংশ তেল পরিবহন করা হয়। লোহিত সাগরের দেশগুলোও উদ্বিগ্ন। কারণ হুতিরা ইসরায়েলের দিকে রকেট ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে।

শাহরিয়ার সোহাগ এর  নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প

হুতিদের ইতিহাস

নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ইয়েমেনের সুদূর উত্তরাঞ্চলে হুতি গোত্র শিয়াপন্থী জায়েদি সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় পুনরুজ্জীবন আন্দোলন গড়ে তোলে।

তারা এক সময় ইয়েমেন শাসন করেছিল। তবে অঞ্চলটি দরিদ্র ও প্রান্তিক হয়ে যায়।

সরকারের সঙ্গে বিরোধ বাড়তে থাকলে তারা জাতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধের একটি সিরিজ এবং সুন্নিপন্থী শক্তিশালী সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়।


ক্রমবর্ধমান শক্তি

২০১৪ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া ইয়েমেন যুদ্ধের সময় হুতিদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ওই সময় তারা সানা শহরের দখল নেয়। কিন্তু তারা সীমান্তে শিয়াপন্থী ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সৌদি আরব ইয়েমেনি সরকারের সমর্থনে ২০১৫ সালে পশ্চিমা সমর্থিত জোটের নেতৃত্বে ওই অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করেছিল।

ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার এডেন শহরে অবস্থিত হওয়ায় হুতিরা উত্তরাঞ্চল এবং অন্যান্য জনবহুল একালার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।


জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রচেষ্টার মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ইয়েমেনে আপেক্ষিক শান্তি বিরাজ করেছে। সৌদি আরব যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হুতিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।


মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ভূমিকা

হুতিরা মধ্যপ্রাচ্যের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সংঘাতেও জড়িয়েছে। তারা ৩১ অক্টোবর ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ঘোষণা করে এবং ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত’ আক্রমণ চালিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

হুতিদের ক্রিয়াকলাপ ইরান সমর্থিত লেবানিজ সামরিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং রাকি মিলিশিয়াদের ভূমিকার প্রতিধ্বনি করেছে। হিজবুল্লাহর লেবাননের সীমান্তে ইসরায়েলি অবস্থানগুলোতে আক্রমণ করছে এবং ইরাকি মিলিশিয়ারা ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন স্বার্থের অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে।

হুমকি আরো বাড়িয়ে হুতিরা ৯ ডিসেম্বর বলেছিল, তারা জাতীয়তা নির্বিশেষে ইসরায়েলগামী সব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করবে। পাশাপাশি ইসরায়েলি বন্দরগুলোর সঙ্গে কাজ করার বিরুদ্ধে সব আন্তর্জাতিক শিপিং কম্পানিকে সতর্ক করেছে৷ হুতি মুখপাত্র ৯ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যদি গাজা তার প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ না পায়, তাহলে লোহিত সাগরে জাতীয়তা নির্বিশেষে ইসরায়েলি বন্দরের জন্য আবদ্ধ সব জাহাজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।’

হুতি বিদ্রোহীদের স্লোগান হলো, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু, ইসরায়েলের মৃত্যু, ইহুদিদের প্রতি অভিশাপ এবং ইসলামের জয়।’


ইরানের সমর্থন

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতে সহায়তা করছে। ১৮ ডিসেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘বাণিজ্যিক জাহাজে হুতিদের হামলার জন্য ইরানের সমর্থন বন্ধ করতে হবে।’ তবে ইরান হুতিদের হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে।


সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে হুতিদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের অভিযোগ করে আসছে। হুতিরাও ইরানের প্রক্সি বলে অস্বীকার করে নিজেদের অস্ত্র নিজেরাই তৈরি করার দাবি করে।


অস্ত্রভাণ্ডার

ইয়েমেন যুদ্ধের সময় হুতিরা সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর হামলা চালিয়ে তেল স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল। তাদের অস্ত্রাগারে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সশস্ত্র ড্রোন রয়েছে, যা সানায় তাদের ক্ষমতার আসন থেকে এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরের ইসরায়েলকে আঘাত করতে সক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুতিদের তোফান, বোরকান এবং কুদস ক্ষেপণাস্ত্র ইরানি অস্ত্রের আদলে তৈরি এবং দুই হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে।


ইয়েমেন যুদ্ধের সময় হুতিরা কয়েক ডজনবার সৌদি আরবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। সেপ্টেম্বরে হুতিরা প্রথমবারের মতো বিমানবিধ্বংসী বারক-২ ক্ষেপণাস্ত্র, নৌ ক্ষেপণাস্ত্র, একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার প্রদর্শন করে। হুতিরা শিপিংয়ের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানে মেশিনগানে সজ্জিত দ্রুতগামী নৌকাও ব্যবহার করেছে।






No comments

Powered by Blogger.