আত্রলিতা || সাদিয়া শাহরিণ শিফা || পর্ব : ০৩
উপন্যাস : আত্রলিতা
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০৩
লেখিকা : সাদিয়া শাহরিণ শিফা
পর্ব : ০৩
বারান্দার গ্রিলে পা তুলে দিয়ে একটা চেয়ারে বসে আছে আত্রলিতা। এক হাতে একটা মগে সদ্য বানানো ধোঁয়া ওঠা কফি। অন্য হাতে হুমায়ুন আহমেদের 'হিমু'। খোলা চুল কাঁধ কোমর ছাড়িয়ে চেয়ারের পেছন থেকে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চুমুক দিতে দিতে খানিক হাসলো আত্রলিতা। তার বেশ ভালো লাগছে সবকিছু। মাঝেমাঝেই বেশ ভালো লাগে। তখন এভাবে একটু নিজেকে সময় দেয় সে। কখনও কখনও হাত ভর্তি চুড়ি পরে, শাড়ি পরে এককাপ কড়া লিকার চা বানিয়ে ছাদে চলে যায়। সেখানে কিছু সময় কাটায়। এমন দিনগুলো বেশ ভালো। তবে খারাপ দিনের শুরু হয় যখন ওরা আসে। একটু শান্তিতে থাকতে দেয় না। তখন কিসব যে করে নিজেও বুঝতে পারে না সে। সেই বিভৎষ সময়গুলো, যখন সে উপস্থিত, চোখের সামনে সব দেখছে স্পষ্ট বা ঝাপসা কিন্তু একটা ভিন্ন সত্ত্বা যেন ভয় করে তার উপর। খুব পরিচিত মুখদুটো তার সামনে ঘোরাফেরা করে, তার সাথে কথা বলে, কখনও কখনও তাকে খুব বাজেভাবে উত্যক্ত করে, এটা সেটা করতে বলে. তারপর আর তার কিছুই মনে থাকে না। তবে তারপরের সময়টুকুর কথা অন্য সবার মুখে খুব বেশিই শুনতে পাওয়া যায়। সবাই তার ঘটানো এমন সব ঘটনার কথা বলে যা সে কল্পনাও করতে পারে না, করা তো দূরের কথা। তার বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়, বুক ফেটে কান্না পায়। তবে সজ্ঞানে কাঁদার মতো মেয়ে সে না। সে বেশ শক্ত মেয়ে। কিন্তু একথা ঠিক যে তার এই অবস্থা থেকে প্রাণপণে মুক্তি চায় সে। বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আত্রলিতা। তার হাতের কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। বইটায় দুএক ফোঁটা বৃষ্টির পানি পড়ে খুলে রাখা পাতাটা খানিক ভিজে গেছে। উঠে দাঁড়ালো সে, পেছন ফিরতেই দেখতে পেল অহম দাঁড়িয়ে। একটু দূরে দাঁড়ানো। আত্রলিতার চোখে চোখ পড়তেই সে খানিক জড়সড় হয়ে গেল। তার ভাই যে দূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ তার মানসিক অবস্থা এখন কেমন সেটা বোঝার চেষ্টা করছিল তা ধরে ফেলতে আত্রলিতার বেশি সময় লাগলো না। পরিস্থিতি কিনা পারে, ওইটুকুন ছেলেও এখন নিজেকে রক্ষা করবার মত দূরত্ব চিনতে শিখে গেছে! এসব ভাবনা বুকে চেপে মুখে একরাশ মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুললো আত্রলিতা। অহমের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির গলায় বললো,"কী রে ভাই! ওখানে দাঁড়িয়ে যে? আয় আমার কাছে। একটা ডাক দিবি না!"
অহম যেন এই কণ্ঠস্বর টা শুনে বেশ আস্বস্ত হলো। হাসি হাসি মুখ করে বললো,"আপু ওখানে বৃষ্টির পানিতে ভরা। আমি ওখানে যাবো না। তুই আমার কাছে এসো।"
- ঠিক আছে বাবাহ। বইটা রুমে রেখে আসছি। পাতাগুলো ভিজে গেছে রে, ফ্যান ছেড়ে শুকোতে হবে।
খানিক বাদে রুমে ছেড়ে বারান্দার পথ ধরে ড্রয়িংরুমে আসতে আসতে আত্রলিতা বললো," ভালো করেছিস ভাই। বৃষ্টির পানি কখনও গায়ে লাগাবি না বুঝলি। গরমকালেও না। এই পানি অতিরিক্ত ঠান্ডা না হলেও অল্প দুচার ফোঁটা গায়ে পরতেই জ্বর ধরে যায়, সর্দিকাশি হয়, ঠান্ডা লাগে..."
- আপু আমি তো ভিজি না। তুমিই তো সুযোগ পেলেই বারান্দায় গিয়ে ছাদে গিয়ে ভিজো। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে পারলো না, বারান্দায় গিয়ে বসলে। এরপর তোমার ঠান্ডা লাগলে?
ভাইয়ের পাশে সোফায় বসতে বসতে আত্রলিতা বললো," ধুর বোকা। কখনও দেখিস আমার অসুখ করতে? আমি স্ট্রং। তুই তো ছোট মানুষ, তোর ঠান্ডা লাগবে।
- ইসস কদিন আগেই তো একশো চার জ্বর ছিল তোমার। বাবা সারারাত জেগে ছিল খুব চিন্তা করছিল, আমিও পাশে বসে ছিলাম কিন্তু আমার খুব ঘুম পায় তো তাই...
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে আত্রলিতা বললো," আমার জ্বর এসেছিল যে ওটা ঠান্ডা লেগে নয় রে। অন্য কারণে.."
- "কি কারণ আপু? বলো "
- বলবো ভাইয়া। সব একদিন বলবো।
অহম একটু অদ্ভুত চোখে তাকালো। তারপর হেসে ফেলে বললো,"ইস আমাকে বোকা বানাচ্ছে যাতে বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগাতে পারে।"
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments