নারী ও শিশু পাচার
পাচার একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত অপরাধ। প্রতিবছর অনেক নারী ও শিশু পাচারের শিকার হয়। কতজন মানুষ পাচার হয়, তা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। কারণ পাচার গোপনে সংঘটিত হয়। পাচারকৃত ব্যক্তির সংখ্যা নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক পরিসংখ্যান রয়েছে। জাতিসংঘের মতে, প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ পাচার হয়ে থাকে।
পাচার বলতে বোঝায়, কোনো ব্যক্তিকে খারাপ ও নিপীড়নের উদ্দেশ্যে, হুমকির মাধ্যমে অথবা বল প্রয়োগ দ্বারা অথবা কোনো প্রকার দমন-শোষণের মাধ্যমে অপহরণ বা প্রতারণা করে ঠকিয়ে অথবা অব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অথবা লাভ বা অর্থ প্রদান বা গ্রহণ করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অবৈধ স্থানান্তর করা।
মানব পাচার ও প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৩ ধারা অনুসারে মানব পাচার অর্থ কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বল প্রয়োগ করে বা প্রতারণা করে বা উক্ত ব্যক্তির আর্থসামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোনো অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা লেনদেনপূর্বক ওই ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকাইয়া রাখা বা আশ্রয় দেওয়া।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারেনারী ও শিশু পাচার একটি জঘন্য অপরাধ, যা সংঘটিত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকাশ পায় না। এটা তখনই প্রকাশ পায় যখন পাচারের শিকার বিপন্ন ব্যক্তিরা দেশে বা বিদেশে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় বা অজানা স্থানে গিয়ে কঠিন দুর্দশার মুখোমুখি হয়। সীমান্ত এলাকার অধিবাসীদের পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে, তাই সীমান্ত পারাপার তাদের জন্য কোনো নতুন বিযয় নয় এবং এই পারাপারের সময়েও তারা পাচারের শিকার হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের লোকজন বিশেষ করে মহিলারা বিদেশের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে, বিক্রয়কেন্দ্র ইত্যাদি জায়গায় চাকরি পেয়ে থাকে। সহজেই লাভজনক চাকরি প্রাপ্তির এই জাতীয় উদাহরণ গরিব বাবা-মাকে তাদের কন্যা ও শিশুদের বিদেশে পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করে। এই চাকরিপ্রত্যাশীদের অনেকেই অসাধু চক্রের খপ্পরে পড়ে পাচারের শিকার হয়
দারিদ্র্যকে মানব পাচারের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যেসব দেশ থেকে পাচার হয় তার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। এ অবস্থায় তাদের কাছে একটি ভালো জীবনের প্রতিশ্রুতি সেটা যতই অবাস্তব হোক না কেন, তা পাচারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিছু ব্যক্তি তাদের চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য পাচারের মতো ক্ষতিকর পরিস্থিতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। পাচারকারীরা এই সুযোগটি গ্রহণ করে
১১ ধারা অনুসারে পতিতাবৃত্তি বা অন্য কোনো প্রকারের যৌন শোষণ বা নিপীড়নের জন্য আমদানি বা স্থানান্তরের শাস্তি ৭ বছর এবং অন্যূন ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। ১২ ধারা অনুসারে পরিচালনা বা স্থানকে পতিতালয় হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের শাস্তি অনধিক ৫ বছর এবং অন্যূন ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। ১৩ ধারা অনুসারে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানানোর শাস্তি অনধিক ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। ১৫ ধারা অনুসারে মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের শাস্তি অনধিক ৫ বছর এবং অন্যূন ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড।
মানব পাচার ও প্রতিরোধ দমন আইন, ২০১২ অনুসারে সরকার মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, উদ্ধার প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসনকল্পে সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিশেষত নারী ও শিশুদের কল্যাণ ও বিশেষ চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখবেন। কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অন্য কোনো দেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হলে সরকার সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের এবং প্রয়োজনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করবেন। বিদেশি রাষ্ট্রে মানব পাচারের শিকার কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রে থাকতে বাধ্য হলে বাংলাদেশ দূতাবাস ওই ব্যক্তিকে আইনি পরামর্শ বা সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করবেন। অনুরূপভাবে কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হলে সরকার সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের দূতাবাসের সহযোগিতায় উক্ত ব্যক্তিকে তার স্বদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
উদ্ধার হওয়ার পর মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে স্বীয় পরিবারে ফেরত পাঠানো না হলে কোনো সরকারি বা বেসরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে বা পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ছাড়া মানব পাচারের শিকার কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্যদের নাম, ছবি বা তথ্য বা পরিচয় প্রচার বা সম্প্রচার করতে পারবে না। এই বিধান লঙ্ঘনকারী ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রত্যেক পাচারের শিকার ব্যক্তি বা সাক্ষী তার প্রতি হুমকি প্রদর্শিত হলে বা যেকোনো প্রকার ঝুঁকির আশঙ্কা সৃষ্টি হলে পুলিশি নিরাপত্তা পাওয়ার এবং সরকার কর্তৃক প্রদেয় অন্যান্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অধিকারী হবেন।
সরকার মানব পাচার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। এই উদ্দেশ্যে প্রচলিত আইনের আলোকে নানা বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধার, ফিরিয়ে আনার পর পুনর্বাসন ও সুরক্ষা দেবে সরকার। তাছাড়া মানব পাচারের মামলাগুলোর তথ্য সংরক্ষণে একটি ডেটাবেজ তৈরি হবে যার মধ্যে মানব পাচারের শিকার প্রত্যেক ভিকটিমের জন্য স্বতন্ত্র কোড নম্বর সংবলিত একটি ফাউল তৈরি ও সংরক্ষণ করা হবে। বর্তমান সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
নারী ও শিশু পাচারের মতো সমস্যা ও তার প্রতিকার কোনো ব্যক্তি বা বাহিনীর পক্ষে এককভাবে সমাধা করা সম্ভব নয়, এ ক্ষেত্রে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন বেসরকারি সামাজিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণকে একত্রিত ও উদ্বুদ্ধ করে নারী ও শিশু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নারী ও শিশুদের নিরাপদ করতে হলে পাচারকারীদের শক্ত হাতে দমন ও নির্মূল করা প্রয়োজন। নারী ও শিশু পাচার রোধ করার জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তবে পাচার প্রতিরোধে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments