Adsterra

চ্যালেঞ্জের মুখে জান্তা সরকার, রোহিঙ্গারা কি ফিরতে পারবে?



চ্যালেঞ্জের মুখে জান্তা সরকার, রোহিঙ্গারা কি ফিরতে পারবে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Hot News, Top News

মিয়ানমারে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দেশটির জান্তা বাহিনী। একের পর এক ঘাঁটি হারাচ্ছে তারা। প্রাণভয়ে অনেকে পালাচ্ছেন সীমান্তবর্তী দেশে। বাংলাদেশেও আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শতাধিক সদস্য। বিশ্লেষকরা বলছেন, তিন বছরের সামরিক শাসনে এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি জান্তা সরকার। এবারের অভিযানে তাদের পতনও হয়ে যেতে পারে। দেশটির ক্ষমতার পালাবদলে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা ফিরতে পারবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভবিষ্যতও নির্ভর করছে এই পরিস্থিতির ওপর।


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, সশস্ত্র বিদ্রোহীদের তুমুল প্রতিরোধের মুখে পিছু হটছে মিয়ানমাররে জান্তা বাহিনী। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী আরও দুটি দেশ চীন ও ভারতেও মিয়ানমারের সেনারা এর আগে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তিন বছরের ক্ষমতায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পার করছে তারা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই উত্তেজনা চলতে থাকলেও এতোটা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে এর আগে আর পড়তে হয়নি।


গত কয়েক দশক ধরে সামারিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। সর্বশেষ অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনীর সাথে গ্রামাঞ্চলে মারাত্মক সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী। বিদ্রোহী বাহিনীর একটি দল সম্প্রতি চীন সীমান্তে জান্তা লক্ষ্যবস্তুতে একের পর এক আকস্মিক হামলা চালিয়েছে।


২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অং সান সুচির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সামরিক বাহিনী। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করে জান্তা। স্থানীয় এক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর মতে, সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানে চার হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েক হাজার। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর অভিযানের মুখে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে জান্তা বাহিনী।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ" অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

গত অক্টোবরে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক টহল চৌকি, অস্ত্রাগার ও বেশ কিছু শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বিদ্রোহীদের হাতে। সবশেষ ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে মিয়ানমারের প্রায় তিন শতাধিক সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের অনেকেই আহত।


মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সে দেশের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা যা বলছেন, এর সারকথা হলো- জান্তার অনুগত সেনাবাহিনী সংঘর্ষে পরাজিত হওয়ার পর আরাকান আর্মির (এএ) হাতে জান্তা বাহিনীর যারাই ধরা পড়ছেন, তারা খুন হচ্ছেন। তাই নিরাপদ ভেবে তারা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। অবশ্য সীমান্ত পার হয়ে আসার পথে তাদের অনেককেই অস্ত্র খোয়াতে হচ্ছে। সে অস্ত্র কেড়ে নিচ্ছেন আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যরা। তারা ওই অস্ত্র দিয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আরএসওর এই ভূমিকার মুখে মিয়ানমার সরকারের পক্ষে থাকা রোহিঙ্গা অপর সশস্ত্র সংগঠন আরসা কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছে। জানা গেছে, চারটি সীমান্ত চৌকির মধ্যে তিনটিই আরাকান আর্মির কব্জায় গেছে আরএসওর সহযোগিতার কারণে।


অন্যদিকে আরাকান আর্মি হলো মিয়ানমারের জান্তা সরকার উৎখাতে লড়াইরত কয়েকটি সংগঠনের জোট। এখানে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং টা আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এর মতো সংগঠনের যোদ্ধারা রয়েছেন। গত বছর ২৭ অক্টোবরে অপারেশন ১০২৭ নামে জান্তাবিরোধী অভিযান শুরু করেছে আরাকান আর্মি। এরপর থেকে তারা উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নিয়েছে। তার মধ্যে ২০টি শহর এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথ রয়েছে। এ ছাড়া কাচিন প্রদেশ ও সাগায়িং অঞ্চলে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শক্তিশালী কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফএস) সঙ্গে যুক্ততা রয়েছে আরাকান আর্মির।


এ ছাড়া কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও সামরিক বাহিনীর পতন নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না এখনই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকেই বেশির ভাগ সময়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বজায় রেখে আসছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত দেশটিতে বেশ কয়েকটি সেনা অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান শাসক ও সেনাপ্রধান মিন অং লাইং। দেশটির রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে আছে। এমনকি ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকে কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও সামরিক জেনারেলদের উপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির চেয়ে বেশি পুরনো’।


জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক ডেভিড আই স্টেইনবার্গ ‘দ্য মিলিটারি ইন বার্মা/মিয়ানমার’ নামে তার বইয়ে লিখেছেন, সামরিক বাহিনী তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা কখনও ধরে রেখেছে বিভিন্ন ডিক্রি জারি করে, রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংবিধানে বিধি অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে। তাই সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ পতন মিয়ানমারে অত্যন্ত কঠিন। 


এদিকে রাখাইনে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা জান্তা সরকারের পরাজয় হলে বাংলাদেশে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে চলছে নানা হিসেব-নিকেষ। তারা কি রাখাইনে ফিরতে পারবে? বা ফেরার সম্ভাবনার বা কতটা? এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করেন, আরাকান আর্মি ক্ষমতা পেলে রোহিঙ্গাদের খুব লাভ হবে না। 


এ বিষয়ে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক কনস্যুলেট প্রধান মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্ব শুরু থেকেই বিভ্রান্ত। এখনো তারা বিভ্রান্তিতে আছে। আরাকান আর্মি রাখাইনের কর্তৃত্ব হাতে পেলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরও জটিল হয়ে যাবে। কারণ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নীতিগতভাবে চায় না আরাকান আর্মি। তিনি আরও বলেন, আরাকান আর্মি তো রাখাইন রাজ্যের স্বাধীনতাও চায় না। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আছে। সেই ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ রাজ থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে এসেছে, যা আরাকান আর্মির দর্শনের সঙ্গে যায় না।


আরএসও বরাবরই রাখাইন রাজ্যে (সাবেক আরাকান) রোহিঙ্গাদের বসবাসের পক্ষে। রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকারসহ সব রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে। এজন্য গত ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও নেতৃত্বের অভাবে তা সফল হয়নি। সীমান্তে বসবাসকারী জনগণও আরএসওর প্রতি সহানুভূতিশীল। তারপরও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কী হবে তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। 


এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, রাখাইন রাজ্যের কর্তৃত্ব শেষ পর্যন্ত আরাকান আর্মির হাতে থাকবে সে নিশ্চয়তা কোথায়? আর থাকলেও তাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লাভ নেই। আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের মূল জনগোষ্ঠী বার্মারা মিলে একসঙ্গে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়েছে।


চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.