Adsterra

ভাষা আন্দোলনে নারীরা ছিলেন পুরুষের অগ্রভাগে

ভাষা আন্দোলনে নারীরা ছিলেন পুরুষের অগ্রভাগে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news,

বাঙালি আর বাংলা ভাষা যেন একে অপরের পরিপূরক। আর তাইতো ভাষার কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালি জাতির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সুপ্তবীজ মন্ত্রটি প্রকৃতপক্ষে বপন হয়েছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানি জান্তার শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতার প্রথম বীজমন্ত্রটি রোপণ করেছিল দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে। তাই,১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ হয়ে ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি- এ এক দীর্ঘ ইতিহাসের কাব্যগাঁথা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই দেশের আপামর জনতা নেমে এসেছিল রাজপথে। রাজপথে পুরুষদের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে এসেছেন নারীরাও।বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালি জাতির মধ্যে যে জাতীয় চেতনা তৈরি হয়েছিল, সেই চেতনা থেকেই উদ্ভূত হয়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন সেই সময়। নজরুলের ভাষাতেই,”প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী”।


বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সালাম, জব্বার, রফিক, শফিকসহ অনেকেই। ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার এই আন্দোলনে ও এই উত্থানে এমন কোনো মিটিং, মিছিল, সংগ্রাম নেই যাতে নারীরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেননি। ভাষা আন্দোলনের এই সকল নারীদের নাম বিস্মৃতির অতল গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে। এমন অনেকেই আছেন, যাদের অবদানের কোনো স্বীকৃতি নেই, এত বছর পর্যন্তও। অনেকের নাম হয়তো আমরা সবাই ভুলে যেতে বসেছি। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নারীর কথা তুলে ধরা হলো আজকের লেখায়-


রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যখন ছাত্রজনতা আন্দোলন শুরু করেন, তখন তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায়। নড়াইলে সেদিন যে তিনজন নারী মিছিলে একাত্বতা জানিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন- সুফিয়া খাতুন, রিজিয়া খাতুন ও রুবি। রিজিয়া খাতুন, তাদেরই একজন যিনি এত বছরেও রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি পাননি। রিজিয়া খাতুন ১৯৬৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ডুমুরতলা প্রাইমারি স্কুল, শহর সরকারি প্রাইমারি স্কুল, মহিষখোলা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। নড়াইল শহরের আলাদাতপুর এলাকায় বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ" অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে


কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষিকা লায়লা নূর ভাষা আন্দোলনে যোগদানকারী এক বিপ্লবী নারীর নাম। তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল ১৯৫২ সালে। তিনি ভাষার ব্যবহারে এদেশের মানুষের উদাসীনতায় আজও বেদনাহত হন মর্মে মর্মে।


১৯৫১-৫২ সালে ডঃ শাফিয়া খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন এবং তিনি উইমেন্স স্টুডেন্টেস ইউনিয়নের ভিপি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাস, চামেলি হাউজের ছাত্রীদের নিয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে এক দূর্জয় প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার আহ্বান করে সামনে এগিয়ে যান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা অনুষদের একজন অধ্যাপক।


জাতীয় অধ্যাপিকা সুফিয়া আহম্মদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রথম সারির নেতৃত্বে ছিলেন। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠির আঘাতে সুফিয়া আহম্মদ আঘাত পান। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।


হামিদা রহমান বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ হামিদা রহমানের নেতৃত্বে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” ধ্বনিতে মুখরিত মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরকে প্রকম্পিত করেছিল। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারি হয়। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতে যশোর কলেজের বৈঠকে তিনি ছেলেদের পোশাক পরে সভায় যোগ দেন।


চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা অধ্যাপক চেমন ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও অধ্যাপক শাহেদ আলীর সহধর্মিণী। ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগঠক তমুদ্দন মজলিসের সঙ্গে ১৯৪৮ সাল থেকেই চেমন আরা সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন সভা,মিছিল ও বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে তিনি প্রথম থেকেই যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শহীদ বরকতের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে যে মিছিল বের হয়, সে মিছিলে চেমন আরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ড. হালিমা খাতুন ছিলেন ভাষা আন্দোলনের এক সক্রিয় কর্মী। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের লক্ষ্যে তিনি প্রস্তুতিমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং একুশের সকালে তার দায়িত্ব ছিল পিকেটিং করা। আহত ভাষা সৈনিকদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতেন তিনি। ড. হালিমা খাতুন শিশু-কিশোরদের জন্য বহু বই লিখেছেন।


বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সেই সংগ্রামমুখর দিনগুলোতে আরও যে সকল নারী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-বেগম সুফিয়া কামাল, সানজিদা খাতুন, রাণী ভট্টাচার্য, নুর জাহান বেগম,রাবেয়া খাতুন, মিসেস কাজী মোতাহার হোসেন, সৈয়দা শাহরে বানু চৌধুরীসহ আরো অনেক নাম না জানা নারী।


পুরুষের পাশাপাশি এসকল বীর নারীর সক্রিয় আন্দোলনে আজ আমরা আমাদের মায়ের মধুর ভাষায় কথা বলতে পারছি। ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, ভাষা ও কৃষ্টির প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি বাংলা ভাষা ও বাঙালীর জন্য একটি বিরাট সম্মানের বিষয়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের এতগুলো বছর পরেও এই সকল বীর নারীদের প্রতি আমরা যথাযথ সন্মান দেখাতে পারিনি। তাদের অনেকের নামই হারিয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অতলে।তরুণ প্রজন্মের ভাষা তথা স্বাধিকার অর্জনের প্রকৃত সত্য জানা উচিত। একুশ মানে মাথা নত না করা।তাই, আমাদের প্রত্যয় থাকবে,আমরা ভাষার ব্যবহারে যত্নশীল হবো। তাই ভাষার বিকৃতি নয়, মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহারই পারবে তাদের আত্মত্যাগকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে। এই ভাষার মাসে সকল ভাষা সংগ্রামীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.