ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়
ভাষা কেবল কথা নয়, কিংবা কেবল কথা বলাই ভাষার বহির্প্রকাশ নয়। ভাষায় মানব মনের চিন্তা ও চেতনা প্রকাশ পায়। জাতিত্ব ও জাতীয়তার বীজও বলা যায় ভাষায় নিহিত। ভাষা সমাজের দর্পণ। তাই ভাষার মাঝে কথা ছাড়াও সমাজের ইত্যাকার বিষয়াবলি (যথা– জাতিত্ব, জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িকতা) প্রোথিত। এর প্রমাণ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। জাতি গঠনের মূল সুর ও চেতনা ভাষার অনুশীলনে প্রতিভাত হয়। ধর্মের ওপর ভিত্তি করে রচিত একটি ভূখ- কিভাবে ক্রমেই অসাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত হয়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এর ঐতিহাসিক সাক্ষী। বলা যায়, ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য কেবল মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারের মধ্যে সীমিত নয়। পৃথিবীর সকল ভাষায় কথা বলা, তথা মনের ভাব প্রকাশ করার অধিকারের মাঝে সম্প্রসারিত। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এর তাৎপর্য আরও ব্যাপক। ভাষা কিভাবে একটি জাতিকে সংগঠিত করে এবং প্রকারান্তরে একটি দেশের স্বাধীনতার ভিত্তি হতে পারে, তা অনুধাবনের জন্য বাঙালির ভাষা আন্দোলনের (১৯৪৮-৫২) ঐতিহাসিক পুনর্পাঠ (১৯৪৮-১৯৭১) আবশ্যক।
ভাষা আন্দোলন মানে কেবল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নয়। ১৯৫২ সালের আগের ও পরের ঘটনাবলি অনুধাবন করতে হবে আন্তঃসম্পর্কিত ঐতিহাসিক বাস্তবতায়। ধর্মভিত্তিক দেশ বিভাজন যে কত অসাড়, তার প্রথম নজির বাংলা ভাষার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর প্রবঞ্চনা। বাঙালি জাতি যে অন্তর্নিহিতভাবে অসাম্প্রদায়িক, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। দেশভাগের পরপরই ভাষা আন্দোলনের বিরূপ বাস্তবতায় পাকিস্তানিদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুভূত হয়েছিল। সেখান থেকে পৃথক রাষ্ট্রের ভাবনা জাগ্রত হয়েছে তৎকালীন বাঙালি সমাজে। সেখান থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার উন্মেষ। অর্থাৎ, ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূত্রপাত। দেশভাগ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে পূর্ব বাংলার প্রতি পাকিস্তানের বিমাতাসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবতায় তৎকালীন বাঙালি ছাত্রসমাজ উপলব্ধি করেছে যে, মাতৃভাষা তথা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে না পারলে দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙা সম্ভব হবে না। মুক্তির সকল সম্ভাবনা ভাষার অধিকারের মাঝে নিহিত। তাই তাঁরা জাতির চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে ভাষার লড়াইয়ে ছিলেন প্রাণপণ।
ভাষা আন্দোলন শুরু হয় দেশভাগের অব্যবহিত পর। নির্দিষ্টভাবে ১৯৪৮ সালের শুরুর দিক থেকে, যা ১৯৫২’তে গিয়ে চূড়ান্ত রূপ নেয়। তারপর সংশ্লিষ্ট অপরাপর দাবির আন্দোলন করতে ১৯৫৬ এবং এর রেশ ধরে ১৯৬৬ সালের স্বাধিকার আন্দোলন এবং ১৯৭১ এ এসে স্বাধীনতা অর্জন। অর্থাৎ, ভাষা আন্দোলনের প্রভাব, বাঙালি জনসমাজের অনুভূতি, উপলব্ধি, রাজনীতি এবং স্বাধীনতা পর্যন্ত সুবিস্তৃত। এক কথায় পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের কালক্রমে দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ভিত্তি স্থাপন বা সূত্রপাত ঘটিয়েছে ভাষা আন্দোলন। তাই এর তৎপর্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে অগ্রপশ্চাৎ আন্তঃসম্পর্কিত ঘটনাবলি ও পরিণতির মধ্য দিয়ে।
১৯৪৭-এর ধর্মভিত্তিক দেশভাগের পরপরই বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেতে শুরু হয়। ধর্মের কথা বলে বিভাজিত হলেও দ্রুত তাদের আর্থ-রাজনৈতিক ও জাতিগত বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচিত হয়। পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিমদের প্রশ্নে তাদের উদাসীনতা ও বঞ্চনায় তা প্রতিভাত হয়। পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিমাতাসুলভ ও ‘অধার্মিক’ আচরণ দেখা দিলেও, তা এত দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষী বাঙালির কথা বলার ওপর নির্দয় আঘাত হানবে, তা ছিল অপ্রত্যাশিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মুসলিম লীগ নেতারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষপাতী ছিলেন। অথচ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের (৫৬ শতাংশ) ভাষা বাংলা। যৌক্তিক দাবি সত্ত্বেও শুরু হয় বাংলাকে বাদ দিয়ে কেবল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র। আন্দোলনের এক পর্যায়ে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করলেন– ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’। শেখ মুজিবুর রহমানসহ উপস্থিত ছাত্রসমাজের অনেকে হাত তুলে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদস্বরূপ জানিয়ে দিয়েছিল– ‘মানি না’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন সভায় জিন্নাহ আবারও বললেন, ‘উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত ছাত্ররা চিৎকার করে জানিয়ে দিল ‘না, না, না’। জিন্নাহ প্রায় পাঁচ মিনিট চুপ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন- ‘আমার মনে হয় এই প্রথম তাঁর মুখের উপরে তাঁর কথার প্রতিবাদ করল বাংলার ছাত্ররা। এরপর জিন্নাহ যতদিন বেঁচেছিলেন আর কোনোদিন বলেন নাই, উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’ (২০১২, ৯৯)। ইতোমধ্যে পূর্ব বাংলার জনগণ ভাষাসহ নানা বৈষম্য নীতির কারণে মুসলিম লীগের প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করে। পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের বঞ্চনা ও শোষণের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় ১৯৪৯ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামক একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ‘আওয়ামী লীগ’-এ পরিণত হয়। শুরু হয় অসাম্প্রদায়িক ভাবনার সঞ্চরণ।
বাংলা ভাষা সংস্কৃত বা হিন্দুয়ানি ভাষা; কিংবা ৫৬ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও তার স্বীকৃতি না দেওয়া– ইত্যাদি ঘটনায় সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক চরিত্র পরিস্ফুট হয় পরিষ্কারভাবে। ধর্মভিত্তিক দেশ-বিভাগের দৈন্য দ্বিজাতিতত্ত্বের অসারতা থেকে বাঙালির মননে উৎসারিত হয় আসাম্প্রদায়িক ধারা– যা এই বদ্বীপের চিরায়ত ঐতিহ্য। ১৯৪০-এ কৃত্রিমভাবে যে ধর্মভিত্তিক ধারার জাগরণ ঘটেছিল, তার দৈন্য অনুধাবনকরত মওলানা ভাসানী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিব প্রমুখ অসাম্প্রদায়িক নেতাদের ভাবাদর্শে ১৯৬০-এর দ্বিতীয় ভাগে আসাম্প্রদায়িক চেতনার জাগরণ ঘটে। যার সফল পরিণতি ১৯৭১-এর স্বাধীনতায়। তাই বলা যায়, ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে কেবল মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারই দেয়নি, একটি লাল-সবুজের পতাকাও উপহার দিয়েছে। একে যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন এখন আমাদের দায়িত্ব। ভাষা আন্দলন মানে কেবল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নয়; এর শুরু তারও আগে। এরপরও তা অব্যাহত রয়েছে, ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে তা আনুধাবন করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন নতুন গতি পায়। ছাত্রসমাজ যখন রাষ্ট্রভাষা দিবস উদ্্যাপনের লক্ষ্যে বিক্ষোভ-সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সর্বত্র মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল এগারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (তৎকালীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে অবস্থিত) সভা করে। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সভায় সমবেত হয়। এক পর্যায়ে ছাত্ররা দলে দলে স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাস ও পরবর্তীতে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবদুল জব্বার, আবুল বরকত, আবদুস সালাম গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন । আরও অনেকে নিহত ও গুরুতর আহত হন। রক্তের বিনিময়ে ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে চরম পরিণতি পেলেও, ভাষার দাবি পূরণ হয়নি। অনেক আলোচনা-আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ও উর্দু– উভয় ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৫২ সাল থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বে এই প্রথম মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য কোনো জাতি রক্ত দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিত ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এটি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যা কেবল বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগকেই স্বীকার করছে না, একই সঙ্গে পৃথিবীর সকল দেশের সকল জাতির মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তথাপি, মাঠপর্যায়ে তা এখনো কার্যত অকার্যকর। কারণ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক, বই ইত্যাদির অপ্রতুলতা। মাতৃভাষার প্রতি সম্মানার্থে সবার জন্য মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে দেশে বিদ্যমান ইংরেজি মাধ্যম বা ভার্সনের যে বিচিত্র শিক্ষা ব্যবস্থা, তা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা দরকার। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাস কতটা সমুন্নত, তা নিয়ে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ জরুরি। বিশেষ করে ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়ন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে যে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে, সেখানে মাতৃভাষায় শিক্ষালাভকে সমধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি বাংলাদেশের অর্জন। তবে এর ফলে নিজ দেশের ‘শহীদ দিবসের’ যে ঐতিহাসিক তাৎপর্য, তা যেন ম্লান হয়ে না যায় সেদিকে সকল মহলের মনোযোগ অপরিহার্য। ছোটবেলাকার খুব ভোরে খালি পায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পালিত প্রভাত ফেরি আজ চোখে পড়ে না। সাদাকালো রঙে শহীদ দিবসের যে ভালোবাসা তা আজ বৈশ্বিক অঙ্গনে বর্ণিল রূপে শোভা পাচ্ছে। কিন্তু মূল চেতনা ও তাৎপর্য কি অপরিবর্তিত আছে? এ প্রশ্নটি ফেব্রুয়ারি মাসের এক স্থায়ী অথচ করুণ আর্তনাদ। ছোটবেলায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেবল ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে অভিহিত ছিল। নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের আবেদনও কি হ্রাস পেয়েছে? শহীদ দিবসের প্রতি অসম্মানের অন্যতম প্রমাণ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন না হওয়া, মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা দূর না করা ইত্যাদি। জাপান, স্পেন, জার্মানি, চীন, ফ্রান্স প্রভৃতি উন্নত দেশে যদি মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণা করে বিশ্ব আসরে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সাহিত্যে সাফল্য লাভ করা সম্ভব হয়, বাংলাদেশের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জনের উজ্জ্বল স্বাক্ষর থাকা সত্ত্বেও, কেন সাত দশক পরেও আজও পিছিয়ে আছে, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শুরুতে যেমনটা উল্লেখ করেছি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশের মানুষের আজন্ম লালিত অসাম্প্রদায়িক মানস কাঠামোর স্মারক। মধ্যিখানে যত যাই ম্লান কিংবা বিচ্যুতি হোক- মৌল অসাম্প্রদায়িক ধারায় ফিরিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ অবশ্যম্ভাবী। এই অনাকাক্সিক্ষত দিকটি আমরা কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলে বলেই যাব, তা হতে পারে না, এর দৃশ্যমান অগ্রগতি সময়ের দাবি। ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য আন্দোলনে সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যাপকতা অনেক গভীর। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, সকল মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ, অন্যায়ের প্রতিবাদ সবই এর অন্তর্গত। এগুলো সমাজে ম্লান হয়ে গেছে বিধায় ভাষা আন্দোলনের তথা শহীদ দিবসের তাৎপর্য আজ অনেকটা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। এই আদর্শগত বিপরীত পরিস্থিতির অবসান অপরিহার্য। অন্যথায় ভাষা আন্দোলন প্রবৃত্ত স্বাধীনতা আন্দোলন তথা বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের মূল নীতিসমূহের (জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতা) বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, মাতৃভাষার আবেদন সকল অর্থে সর্বাগ্রে। পৃথিবীর সকল জাতির মানুষ নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ ও নিঃসঙ্কোচে কথা বলার সুযোগ পাক– এটাই বাঙালির ভাষার লড়াইয়ের প্রত্যাশা।
No comments