Adsterra

ইমরান যেন জনমুক্তির প্রতিশব্দ

ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news, ইমরান যেন জনমুক্তির প্রতিশব্দ

পাকিস্তানের মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্ট তার অনুগত আদালতের মুজরায় ইমরান খানকে নির্বাচনের আগেই মোট ৩০ বছরের সাজা শুনিয়ে ভোটারদের বার্তা দিয়েছে, ইমরান ইজ ফিনিশড! ফ্যাসিস্ট মানসের নিম্ন রুচি নিয়ে তারা ইমরানের ‘বেডরুমে’ ঢুকে পড়ে, তার বিবাহে ধর্মীয় আইন বরখেলাপ হয়েছে, সুতরাং মিস্টার ও মিসেস খানের সাত বছরের কারাদণ্ড, এই ‘গান্ধা কইরা দেওয়ার’ অশালীন খেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু যে পাকিস্তানের ভোটাররা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রায় উপড়ে ফেলেছে ব্যালটের অভিমতে; তারা এসব বহুব্যবহারে জীর্ণ ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের খেলাকে পাত্তাই দেয়নি। তারা ভোট বিপ্লবে এমন অবস্থা করেছে যে, ইমরান পাকিস্তান রাজনীতির অদম্য নিয়ামক হিসেবে পুনরাবিষ্কৃত হয়েছেন যেন।


অনেকে ইমরানকে নিয়ে মশকরা করতেন, ক্রিকেট আর পলিটিকস এক নয়। ক্রিকেটের নেতা আর রাজনীতির নেতা এক নয়, সুতরাং ইমরান পারবে না, পাকিস্তানের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পুরনো চিন্তাগুলো এভাবেই বারবার নাকচ করে দিতে চেষ্টা করেছে ইমরানের নতুন রাজনৈতিক চিন্তাকে। কিন্তু ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যেমন প্রথম রাউন্ডে খারাপ করে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঠিকই হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তার ক্রিকেটজীবন আর রাজনৈতিক জীবনের খেলাগুলো যেন হুবহু মিলে যাচ্ছে। হারতে হারতে জিতে যাওয়ার জাদু বাস্তবতা কি প্রমাণ হয়নি ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে!


খারিজি প্রথার লোকেরা ইমরানকে সেনাবাহিনীর কোলে চড়ে ২০১৮ সালের ক্ষমতায় আসা লোক বলে নিন্দামন্দ করে। রাজপথে ইমরানের ২২ বছরের রাজনৈতিক সাধনা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য হয়তো তাদের সংগ্রহে নেই। ১৯৯২ সালে ক্রিকেট ট্রফি নিয়ে ফিরে এসেই তিনি সমাজসেবায় মনোযোগ দেন। ক্যানসারে মারা যাওয়া মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের সেরা ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তোলেন। যেখানে অধিকারবঞ্চিত মানুষ বিনা খরচে চিকিৎসা নিতে পারেন। এ হাসপাতাল গড়ার সংগ্রামটিও ছিল কষ্টসাধ্য। কিন্তু দমে যাননি তিনি।


এরপর রাজনীতিতে আসেন। ক্যারিশম্যাটিক সেলিব্রেটি বলে; সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফ তাকে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু ইমরান জানতেন, দেয়ার ইজ রনা শর্টকাট টু সাকসেস। ছোট দল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এক-দুটি আসন জিতেই দল সম্প্রসারণের কাজ চালিয়ে যান। অনেকেই তখন এক আসনের রাজনৈতিক দল বলে হাসাহাসি করত তাকে নিয়ে। মোশাররফের পতনের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টি ক্ষমতায় আসে। বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডের পর দলের মালিকানা পেয়ে তার স্বামী আসিফ আলি জারদারি ক্ষমতা ও দুর্নীতির ময়ূরমহল গড়ে তোলেন যেন। ইমরান শুরু করেন দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন। গোটা পাকিস্তানের ধুলোপথে হেঁটে হেঁটে তিনি জনমত তৈরি করতে থাকেন, পরিবারতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের দেশ লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে। পরবর্তী নির্বাচনে তার আসন সংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। কিছু আসনে ফল কারচুপির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করে আসনগুলো ফিরে পান তিনি।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ" অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে


ক্ষমতায় আসে মুসলিম লিগ নওয়াজ। নওয়াজ শরিফ তার পরিবার নিয়ে আবার দুর্নীতির বুলবুলি আখড়াই বসান। সেনাশাসক পারভেজ মোশাররফ মোটামুটি একটি ভালো অর্থনীতি রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর পালা করে দেশ ডাকাতি করে জারদারি ও নওয়াজের দল প্রবৃদ্ধি ও রিজার্ভে ধস নামায়। ইমরান খান এই দুর্নীতি ও টাকা পাচারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া এসে গেছে। ইমরান-সমর্থক তরুণরা পরিবারতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের দুর্নীতির প্রাসাদকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেন। রাজনৈতিক সভায় সম্পূর্ণ এক নতুন মাত্রা আনেন ইমরান খান। তিনি যেন রাজনীতির শিক্ষকের মতো ক্লাস নিতেন সেসব জনসভায়। আর তার বক্তৃতার মাঝেমধ্যে ডিজে এসে মিউজিক বাজিয়ে তরুণ-তরুণীকে মাতিয়ে রাখত। এ জনসভা জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। নতুন পাকিস্তানের স্বপ্ন জারিত করেন মি. খান। রাজনীতিবিমুখ মধ্যবিত্ত সাড়া দিতে শুরু করে।


ইসলামোফোবিয়ার বিপরীতে ইমরান একটি সমন্বয়ী ভূমিকা নিয়ে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ করায় পশ্চিমা মিডিয়া ‘লিবারেল ফিল্টারে’ ফেলে তাকে তালেবান খান তকমা দিয়েছিল। কিন্তু গোটা পাকিস্তানে ইমরানের রাজনৈতিক জলসায় ‘আই হেট প্রজন্মের’ তরুণ-তরুণীদের ইমরান ম্যাজিকে রাজনীতিকে ভালোবেসে সদলবলে উপস্থিত হওয়ায় আর সেখানে ঘটা করে নাচ-গান চলতে থাকায়, কট্টর প্রগতিশীল ও কট্টর ধার্মিক উভয় গোষ্ঠীই উত্তর পেয়ে যায় যে, ইমরান আসলে উত্তরাধুনিক নেতা যিনি ধর্মীয় বিশ্বাস, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আধুনিকতার সোনালি গড় করতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে সারা দেশের কোথাও না কোথাও বিশাল জনসভা করে ইমরান তার দল পিটিআইকে নতুন পাকিস্তানের আগামীর শক্তি হিসেবে প্রমাণ করে ছাড়েন।


ইমরানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে দেখে সেনাপ্রশাসন তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ইমরান প্রথম ধাপে পরিবারতান্ত্রিক দুটি দলের প্রভাব কমিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট করে সরকার গড়েন। প্রধানমন্ত্রী হয়েই দ্বিতীয় ধাপে সেনাপ্রশাসনের ক্ষমতা খর্ব করার কাজে নামেন। তিনি সবসময় জনগণের ক্ষমতায়ন চেয়েছেন আর দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন উপহার দিতে চেষ্টা করেছেন।


ইমরানকে সরাতে তার চার শত্রু, নওয়াজ-জারদারি-সেনাপ্রধান আর বাইরে থাকে যুক্তরাষ্ট্র– সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইমরান সরকারের কোয়ালিশন পার্টনার ছোট দলের সংসদ সদস্যদের প্রলুব্ধ করে ‘হর্স ট্রেডিং’ করে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা। নওয়াজ-জারদারি কিনে নেন সেসব সদস্যকে। পেয়ে যান সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ইমরানের পতন ঘটে।


পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে ইমরান ফ্যাক্টর সরিয়ে অতীতের মতো আনন্দের দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে সেনাপ্রশাসন ইমরানকে জেল-জুলুম, তার দলের শীর্ষনেতাদের নির্যাতন, হুমকি দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার পর নির্বাচনী প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ কেড়ে নেয়। পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়ে ও দলের তরুণ-তরুণীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোটবিপ্লব সম্ভব করেছেন।


No comments

Powered by Blogger.