মানুষ কেন ঘুমায়
মানুষ যখন সারাদিন পরিশ্রম করে, কাজ করে তখন মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে মানুষের ঘুম পায়
পর্যাপ্ত এবং ভালো ঘুম একটি সুস্থ এবং শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে
পৃথিবীর সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই ঘুম একটি জরুরি প্রক্রিয়া। ঘুম মানুষের শারীরিক প্রক্রিয়া যেমন সঠিক শ্বাসক্রিয়া, রক্ত সঞ্চালন, শারীরিক বৃদ্ধি ও সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
মানুষ যখন জেগে থাকে, কাজকর্ম করে, এর জন্য হাত, পা, চোখ, কানের ওপর মস্তিষ্ককে বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করতে হয়। কিন্তু যখন আমরা ঘুমাই তখন তখন আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কেন্দ্র একটানা কাজ করে।
ভালো ঘুম মূলত মস্তিষ্কসহ শরীরকে মেরামত করতে সাহায্য করে।
ঘুমের সময় অনেক জৈবিক প্রক্রিয়া ঘটে
মস্তিষ্ক নতুন তথ্য সঞ্চয় করে এবং বিষাক্ত বর্জ্য থেকে মুক্তি পায়।
স্নায়ু কোষ পুনর্গঠন করে যা সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে।
শরীর কোষ মেরামত করে, শক্তি পুনরুদ্ধার করে এবং হরমোন এবং প্রোটিনের মতো অণু মুক্ত করে।
মানুষ কেন ঘুমায়
ঘুমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা। তবে এতটুকু নিশ্চিত যে সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম অপরিহার্য। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। ঘুম শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে।
১. শক্তি সংরক্ষণ
শরীরে শক্তি সংরক্ষণের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। আমরা সারাদিন বিভিন্ন কাজে যে পরিমাণ শক্তি ক্ষয় করি ঘুমের মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার হয়ে থাকে। সারাদিন শরীর ও মন যেন পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে সে জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।
২. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
শরীরে কোষ পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের বিভিন্ন কোষগুলিকে মেরামত করে এবং পুনরায় বৃদ্ধি করতে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের মধ্যে পেশী মেরামত, প্রোটিন সংশ্লেষণ, টিস্যু বৃদ্ধি, হরমোন নিঃসরণ ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
এ ছাড়া ঘুমের সময় মস্তিষ্কের গ্লিম্ফ্যাটিক (বর্জ্য ক্লিয়ারেন্স) সিস্টেম কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে বর্জ্য পরিষ্কার করে। এটি মস্তিষ্ক থেকে বিষাক্ত উপজাতগুলিকে সরিয়ে দেয়, যা সারা দিন তৈরি হয়। এটি মস্তিষ্ককে ভালভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
৩. ওজন কমায়
ঘুম ক্ষুধার হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে যা ওজনকে কমাতে সহায়তা করে। এই হরমোনগুলির মধ্যে রয়েছে ঘেরলিন, যা ক্ষুধা বাড়ায় এবং লেপটিন, যা খাওয়ার পরে পরিপূর্ণ হওয়ার অনুভূতি বাড়ায়। ঘুমের সময়, ঘেরলিন কমে যায় কারণ তখন জেগে থাকার চেয়ে কম শক্তি ব্যবহার হয়।
তবে ঘুমের অভাব ঘেরলিন হরমোন বৃদ্ধি করে লেপটিনকে দমন করে। এই ভারসাম্যহীনতা আপনাকে ক্ষুধার্ত করে তোলে, যা বেশি খাওয়া এবং ওজন বাড়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. কোষ পূর্ণগঠন
মানুষ যখন সারাদিন পরিশ্রম করে, কাজ করে তখন মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে মানুষের ঘুম পায়। সারাদিন ধরে পরিশ্রম করার পর মানবদেহে কোষ গুলো ক্ষয় হয় । এই কোষ গুলো পূর্ণগঠনের জন্য মানুষের ঘুম অতি প্রয়োজনীয়।
৫. ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ
ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা মানবদেহের কোষকে শক্তির জন্য গ্লুকোজ ব্যবহার করতে সাহায্য করে। কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সে, শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না। এটি উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং শেষ পর্যন্ত টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
ঘুম ইনসুলিন প্রতিরোধের বিরুদ্ধে কাজ করে কোষগুলিকে সুস্থ রাখে যাতে তারা সহজেই গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া ঘুমের সময় মস্তিষ্কও কম গ্লুকোজ ব্যবহার করে, যা শরীরকে সামগ্রিক রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পর্যাপ্ত এবং ভালো ঘুম একটি সুস্থ এবং শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে। ঘুমের সময় মানব শরীর সাইটোকাইন প্রোটিন তৈরি করে যা সংক্রমণ এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি এবং ইমিউন কোষও তৈরি করে। এ ছাড়া এই প্রোটিন ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করে অসুস্থতা প্রতিরোধ করে। তাই যখন আপনি অসুস্থ বা মানসিক চাপে থাকেন তখন ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর তথ্য মতে প্রাপ্তবয়স্কদের রাতে ৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। এর কম ঘুম হলে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ, বুকে ব্যথা, ওজন বৃদ্ধির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments