Adsterra

মিয়ানমারের জান্তা সরকার কতটা হুমকিতে ?

ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news, মিয়ানমারের জান্তা সরকার কতটা হুমকিতে

যতই দিন গড়াচ্ছে ততই জটিল হয়ে উঠছে মিয়ানমার পরিস্থিতি। দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সীমান্তবর্তী প্রদেশে সামরিক সরকারের লড়াই এখন তুঙ্গে। গেল তিন মাসে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্য। রাখাইনে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র হামলার মুখে অনেক জায়গা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে সেনাবাহিনী।


রাখাইন রাজ্যে গুলি ও মর্টারের শব্দে প্রকম্পিত বাংলাদেশের তমব্রু সীমান্ত। আরাকান আর্মির সাথে প্রচণ্ড লড়াইয়ে মার খাচ্ছে মিয়ানমার সেনা। অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, দিশেহারা হয়ে মিয়ানমার জান্তার প্রায় একশ’ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। সতর্ক অবস্থানে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও। তবে সীমান্তে যারা বসবাস করছেন তাদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে।


শুধু রাখাইর রাজ্যই নয়, দেশটির শান প্রদেশেও বিপদ আছে জান্তা বাহিনী। বিদ্রোহী গোষ্ঠির দখলেই চলে গেছে শান প্রদেশের বেশিরভাগ এলাকা। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধে নেতৃ্ত্ব দিচ্ছে। গত তিন বছরে এসব গোষ্ঠী মিয়ানমারে তিনশ’ বেশি সামরিক চৌঁকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে।


সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতোটাই বেগতিক যে, এই সংঘাত কিভাবে শেষ হবে তার কোন সুস্পষ্ট নিশানা দেখা যাচ্ছে না। তবে যে চিত্র পরিস্কার হয়ে উঠছে, সেটি হলো সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলো যেভাবে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিয়েছে তাদের বিচলিত হয়ে পড়েছে মিয়ানমার সরকার। রাজধানীর নেপিদোর উর্দি পড়া কর্তারা যে খুব একটা শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন না, সেটা নিশ্চিত।


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিচালতি সংবাদমাধ্যম মায়াবতীর টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলা হয়েছে, জান্তা প্রধান মিন অং হ্লায়িং জরুরি অবস্থা আরও ৬ মাসের জন্য বাড়িয়ে নিয়েছেন। এরপরেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠিদের অগ্রযাত্রা বন্ধ করার জন্য যা যা কারণীয় তার সবটাই করবেন তিনি। অর্থাৎ, আসছে সময়ে সংঘাত আরও তীব্র হবার আশঙ্কা আছে।


মিয়ানমারে ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জরুরি অবস্থা চলছে। জান্তা বাহিনী ২০০৮ সালের সংবিধান অনুযায়ী নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাদের দাবি, এই সংবিধান এখনো কার্যকর আছে। ২০০৮ সালের সংবিধানে বলা আছে, জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে এনিয়ে কোন রা নেই জান্তা সরকারের।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ" অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে


২০২১ সালের পর অভ্যুত্থানবিরোধী প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে জান্তা। এত দমন-নিপীড়ন চালিয়েও সশস্ত্র প্রতিরোধ ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই প্রশ্ন উঠছে, প্রশ্ন উঠছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার কি ভেঙ্গে পড়ার হুমকিতে আছে? মিয়ানমারের এমন পরিস্থিতিতে দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের ভূমিকা কি, তা নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। পরিস্থিতি বলছে, মিয়ানমারের উপর চীনের প্রভাব কমে গেছে।


তারপরও জান্তা ও সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলো মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থতাকারী হিসেব চীন রয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে সঙ্গেই বেইজিংয়ের সম্পর্ক ভালো। একবার দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির উদ্যেগ নিলেও সেটি খুব বেশি আলোর মুখ দেখতে পারেনি। অস্ত্র-বিরতি চুক্তি শুধু চীন সীমান্ত লাগোয়া শান প্রদেশেই কার্যকরি আছে। অন্যান্য অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলো জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ আর জোরদার করেছে।


আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেপিদোর স্বস্তির চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে এগিয়ে রাখবে বেইজিং। মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেয়ে নিজের স্বার্থ সুরক্ষাতেই আগ্রহী চীন। চলমান সংঘাত যেন সীমানা বেড়া অতিক্রম না করতে না পারে সে ব্যবস্থাই নিচ্ছে চীন। আবার মিয়ানমারে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেও যাতে কোন ক্ষতির মুখে না পড়ে, সেটাও নিশ্চিত করতে চায় বেইজিং।



শান প্রদেশ নিয়ে চীনের মাথা ব্যাথা পূরণো। চীনের বিভিন্ন অপরাধী-চক্র শান প্রদেশে কিংবা মিয়ানমারের ভেতরে বসে নানা ধরণের সাইবার অপরাধ, মাদক, মানব-পাচারের সাথে জড়িত। আর বিষয়টি চীনের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও, মিয়ানমার জান্তা সেটি দমনের কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে, মিয়ানমার জান্তা সরকারের উপর চীন 'খুশি নয়' বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।


অন্যদিকে রাখাইন নিয়ে বেইজিং খুব একটা মাথা ঘামাতে নারাজ। কারণ রাখাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠির কর্মকাণ্ডে কোন ক্ষতি হচ্ছে না চীনের। ফলে আরাকান আর্মি যতোদিন পর্যন্ত রাখাইনে চীনের স্বার্থের উপর আঘাত করবে না, ততোদিন পর্যন্ত চীন কিছু বলবে বলে মনে হয় না। চীন তার নিজের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি বেশি জড়িত।


মিয়ানমারে সেনা শাসন হোক, কিংবা গণত্রান্ত্রিক সরকার- সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখে চীন। তবে তার মানে এই নয় যে, দেশটির শাসকদের ‘ব্লাঙ্ক চেক’ দিয়ে রাখে চীন। আবার চীন এটাও চায় না, মিয়ানমারে পশ্চিমা বলয়ের কোন বিস্তার ঘটুক। সে কারণ বিদ্রোহী ও সশস্ত্র গোষ্ঠির সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখে চীন। তবে মিয়ানমার-জুড়ে সব পক্ষকে একসাথে করে একটি যুদ্ধবিরতি করানোর সামর্থ্যও চীনের নেই।


মিয়ানমার কেন বিশ্বের সবচেয়ে বাজে সরকার?মিয়ানমার কেন বিশ্বের সবচেয়ে বাজে সরকার?

সশস্ত্র প্রতিরোধের কারণে যদি মিয়ানমারের জান্তারা হুমকিতে পরে, তাহলে চীনের ভূমিকা কি হবে, সেটা আসছে দিনগুলোতে পরিস্কার হবে। মিয়ানমারের সামরিকশক্তি  বিবেচনায় নিলে, প্রতিরোধ যুদ্ধ আরও অনেক চলতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে দেশটির সেনাবাহিনীর পরাজয় হতেও পারে বলে করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা। কিন্তু সেটি কবে হবে, কিংবা কিভাবে হবে, সেটি অনিশ্চিত।


No comments

Powered by Blogger.