Adsterra

দেশে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও পারমাণবিক প্রকৌশলবিদ্যার গুরুত্ব


দেশে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও পারমাণবিক প্রকৌশলবিদ্যার গুরুত্ব, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Hot News, Top News

পারমাণবিক বিজ্ঞান বললেই আমাদের যে জিনিসটা মাথায় আসে সেটা হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও ক্যানসারের মতন জটিল রোগের চিকিৎসায়, নিউক্লিয়ার মেডিসিন, টিস্যু কালচার, কৃষিক্ষেত্র, খাদ্যদ্রব্য ও মেডিকেল ডিভাইস জীবাণুমুক্তকরণ, স্বাস্থ্য পদার্থবিজ্ঞান, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন এবং মহাকাশ গবেষণাতেও এই প্রযুক্তির প্রভাব ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের লক্ষ্যে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সাধন দ্বারা আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন সম্ভব।


বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি ২.৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে নির্মিত হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রাশিয়ার রোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন কর্তৃক নির্মিত হচ্ছে। বর্তমানে একটি প্রশ্ন প্রায়ই করা হয়, কেন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর এর অর্জনই বা কি? পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্যই হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এর প্রধান জ্বালানি হলো ইউরেনিয়াম ডাইঅক্সাইড। যেমন- ১ লাখ কেজি কয়লা থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব তার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব মাত্র ১ কেজি ইউরেনিয়াম থেকে। কয়লা, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, গ্যাস বা সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রিক ক্ষেত্রগুলোর চেয়ে কম খরচে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। বাংলাদেশ যদি পরমাণু জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তাহলে প্রতি ইউনিট খরচ পড়বে সর্বনিম্ন ৪.৩৮ টাকা, যা অন্যান্য প্রচলিত জ্বালানির চেয়ে কয়েকগুণে কম। এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি শক্তিশালী অংশ।


আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) অনুসারে পারমাণবিক উপাদান বলতে ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম এবং থোরিয়ামকে বোঝায়। পারমাণবিক উপাদানকে উৎস উপকরণ এবং বিশেষ বিভাজনযোগ্য উপকরণে ভাগ করা যায়।। ‘উৎস উপকরণ’ যা প্রাকৃতিক এবং ডিপলেটেড ইউরেনিয়ামের সমন্বয়ে গঠিত এবং ‘বিশেষ বিভাজনযোগ্য উপকরণ’ যা এনরিচড ইউরেনিয়াম (ইউরেনিয়াম-২৩৫), ইউরেনিয়াম-২৩৩ এবং প্লুটোনিয়াম-২৩৯-এর সমন্বয়ে গঠিত হয়। এ ছাড়া ইউরেনিয়াম আকরিককেও ‘উৎস উপাদান’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


পরমাণুর মতো ক্ষুদ্র কণা দ্বারা কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় পদার্থ তৈরি হয়। পরমাণুগুলো গঠিত হয় প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন নামে পরিচিত তিনটি কণা দ্বারা। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন এবং নিউক্লিয়াসটি ইলেকট্রন দ্বারা বেষ্টিত। প্রোটন ধনাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ এবং ইলেকট্রন ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে। নিউট্রনের কোনো বৈদ্যুতিক চার্জ নেই। পারমাণবিক বন্ধন শক্তি তেজস্ক্রিয় পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতরের কণাগুলোকে একসঙ্গে ধরে রাখে যা পারমাণবিক ফিশনের মাধ্যমে ভেঙে যায় এবং নির্গত শক্তি ব্যবহার করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।


পারমাণবিক ফিশনের সময়, একটি নিউট্রন একটি ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সংঘর্ষ করে এবং এটিকে বিভক্ত করে তাপ এবং বিকিরণ আকারে প্রচুর পরিমাণে শক্তি ছেড়ে দেয়। যখন একটি ইউরেনিয়াম পরমাণু বিভক্ত হয় তখন কিছু নিউট্রনও নির্গত হয়। এই নিউট্রনগুলো অন্যান্য ইউরেনিয়াম পরমাণুর সঙ্গে সংঘর্ষ অব্যাহত রাখে এবং প্রক্রিয়াটি বারবার পুনরাবৃত্তি করে। এই প্রক্রিয়াটিকে পারমাণবিক চেইন বিক্রিয়া বলা হয়। এই বিক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিগুলোতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে তাপ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।


আয়নাইজিং sবিকিরণ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত এবং তা হলো- আলফা, বিটা, গামা ও এক্স রশ্মি। এই রশ্মিগুলো অস্থিতিশীল পরমাণু দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এদের অতিরিক্ত শক্তি বা ভর থাকে। এরা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছানোর জন্য বিকিরণ আকারে সেই অতিরিক্ত শক্তি বা ভর ছেড়ে দেয়।


আলফা বিকিরণ ঘটে যখন একটি পরমাণু তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যায় এবং একটি কণা ছেড়ে দেয় (যাকে বলা হয় আলফা কণা) যা দুটি প্রোটন এবং দুটি নিউট্রন (মূলত হিলিয়াম-4-এর নিউক্লিয়াস) নিয়ে গঠিত পরমাণু। তাদের চার্জ এবং ভরের কারণে, আলফা কণাগুলো পদার্থের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংযোগ স্থাপন করে এবং কেবলমাত্র কয়েক সেন্টিমিটার বাতাসের ভিতর দিয়ে ব্যাপৃত হতে পারে। আলফা কণা মৃত ত্বকের কোষগুলোর বাইরের স্তরে প্রবেশ করতে অক্ষম, তবে যদি কোনো আলফা বিকিরণ খাদ্য বা বাতাসে প্রবেশ করে, তখন তা কোষ এবং ডিএনএ-এর মারাত্মক ক্ষতি করে।


বিটা বিকিরণ একটি ইলেকট্রন বা একটি পজিট্রন (ঋণাত্মক চার্জযুক্ত একটি ইলেকট্রনের কণা) যা একটি পরমাণু থেকে নির্গত হয়। ছোট ভরের কারণে এটি কয়েক মিটার পর্যন্ত বাতাসে বিস্তৃত হতে সক্ষম এবং প্লাস্টিকের একটি পুরু টুকরো দ্বারা থামানো যায় বা এমনকি কাগজের স্তূপ দ্বারাও। এটি ত্বকে কয়েক সেন্টিমিটার প্রবেশ করতে পারে এবং কিছুটা বাহ্যিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। বিটা কণাগুলো আলফা কণার চেয়ে বেশি অনুপ্রবেশকারী, তবে জীবন্ত টিস্যু এবং ডিএনএর জন্য কম ক্ষতিকারক।


গামা বিকিরণ, আলফা বা বিটার মতো কোনো কণা দিয়ে গঠিত হয় না বরং এটি একটি অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত শক্তির ফোটন যার কোনো ভর বা চার্জ নেই। গামা বিকিরণ আলফা বা বিটার তুলনায় বাতাসের মাধ্যমে অনেক দূরে বিস্তৃতি অর্জন করে, এর জন্য গড়ে প্রতি ৫০০ ফুটে অর্ধেক শক্তি হারায়। গামা তরঙ্গগুলো একটি পুরু বা ঘন স্তর উপাদান দ্বারা থামানো যায়, সে জন্য প্রতিরক্ষাস্বরূপ সিসা বা ক্ষয়প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়।


এক্স-রে গামা বিকিরণের অনুরূপ, প্রাথমিক পার্থক্য হলো তারা ইলেকট্রন মেঘ থেকে উদ্ভূত হয়। সাধারণত একটি ইলেকট্রনের শক্তি পরিবর্তনের কারণে ঘটে, যেমন উচ্চতর শক্তি স্তর থেকে নিচের স্তরে চলে যাওয়া, যার ফলে অতিরিক্ত শক্তি নির্গত হয়। তারা বাতাসে শত শত বা এমনকি হাজার হাজার মিটার বিস্তৃতি অর্জন করতে সক্ষম, তবে তারা কংক্রিট বা জলের মতো হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ উপাদান দ্বারা অবরুদ্ধ হলে তাদের কার্যকরভাবে থামানো যায়।


পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল একটি বিস্তৃত শাখা যা আমাদের জীবনে সামগ্রিকভাবে অবদান রেখে চলেছে। পারমাণবিক শিল্পে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রসার ঘটেছে ২০১০ সাল থেকে। বিশ্বজুড়ে আজ ৪০০টিরও বেশি পারমাণবিক চুল্লি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ পাওয়া যাবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং বাকি অধিকাংশই তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক দেশ-বিশেষ করে ফ্রান্স, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং চীন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পারমাণবিক ফিশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে। এই শক্তি পানি গরম করে বাষ্প তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে টারবাইন চলে এবং জেনারেটর বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।


বর্তমানে, পারমাণবিক শক্তি বিশ্বের বিদ্যুতের প্রায় ১০% চাহিদা মিটিয়ে থাকে যা পরিষ্কার এবং নির্ভরযোগ্য শক্তি প্রদানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইতোমধ্যে গবেষকরা পারমাণবিক ফিউশনের মতো বিকল্প শক্তি অন্বেষণে অব্যাহত রয়েছে। ফিউশন দুটি পারমাণবিক নিউক্লিয়াসকে (হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম) একটি ভারী নিউক্লিয়াসে পরিণত করে যা ফিশন প্রক্রিয়ার চেয়েও বেশি শক্তি উৎপন্ন করে। যদিও এখনো বাণিজ্যিকভাবে ফিউশনের ব্যবহার শুরু হয়নি তবুও ফিউশন একটি পরিষ্কার এবং সীমাহীন শক্তির উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ভবিষ্যতে।


চিকিৎসা ক্ষেত্রে, পারমাণবিক বিজ্ঞান রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে। নিউক্লিয়ার মেডিসিনে তেজস্ক্রিয় ট্রেসার ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলো ধরতে পারে এবং ক্যানসার, হৃদরোগ ও মস্তিষ্কের রোগ-ব্যাধিগুলো নির্ণয় করতে পারে। উপরন্তু, রেডিয়েশন থেরাপি ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে আয়নাইজিং বিকিরণ ব্যবহার করে, যা ক্যানসার চিকিৎসার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। নিউক্লিয়ার মেডিসিন নতুন ওষুধ তৈরিতে এবং মেডিকেল ইমেজিং কৌশল উন্নত করতেও অবদান রাখে।


পারমাণবিক বিজ্ঞান অনন্য বৈশিষ্ট্যময় নতুন উপাদান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পারমাণবিক চুল্লি পরিচালনার জন্য জ্বালানি এবং মডারেটরের মতো পারমাণবিক উপাদানগুলো অপরিহার্য। উপরন্তু, নতুন উপাদানের বৈশিষ্ট্যগুলোর মান ঠিক রাখতে, তাদের স্থায়িত্ব, জীবাণুমুক্তকরণ এবং অন্য কার্যকারিতাগুলোকে ঠিক করতে আয়নাইজিং বিকিরণ ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিকিরণ প্রক্রিয়াকরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, জীবাণুমুক্ত করতে পারে, খাদ্যের শেলফ (self) লাইফ উন্নত করতে পারে এবং নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসহ নতুন পলিমার তৈরি করতে পারে। পারমাণবিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে উদ্ভাবনী উপকরণের সম্ভাবনা অন্তহীন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন বই "মানুষ"। পাওয়া যাচ্ছে অনার্য, ৪৯৮-৫০১ নং স্টলে। অনলাইনে অর্ডার করতে কল করুন 01745676929 নাম্বারে


এ ছাড়া পারমাণবিক বিজ্ঞান পরিবেশ বিজ্ঞানের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদি স্টোরেজ নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন যেন সম্ভাব্য পরিবেশগত ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। পারমাণবিক শক্তি জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে: এটি ন্যূনতম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবদান রাখে। অধিকন্তু, পারমাণবিক বিজ্ঞান পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা পরিবেশগত প্রক্রিয়া এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।


পারমাণবিক বিজ্ঞানের প্রয়োগগুলো এই মূল ক্ষেত্রগুলোর বাইরেও প্রসারিত। পারমাণবিক ফরেনসিক বিশ্লেষণ অপরাধ তদন্ত করতে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করে। পারমাণবিক নিরাপত্তা যেকোনো প্রকার চুরি, নাশকতা, সন্ত্রাস থেকে পারমাণবিক উপকরণ এবং স্থাপনা রক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণের মাধ্যমে দেশের সমুদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থাকে আরও মজবুত করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে বাহিরে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তদুপরি, মহাকাশ অনুসন্ধানে পারমাণবিক বিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পারমাণবিক শক্তির উৎসগুলো মহাকাশযান এবং উপগ্রহগুলোকে শক্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা সৌরজগৎ এবং তার বাইরেও অনুসন্ধানে সক্ষম করে।


পারমাণবিক বিজ্ঞান টিস্যু কালচারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হতে পারে। টিস্যু কালচার প্রতিটি টিস্যুর বৈশিষ্ট্য, অবস্থা এবং পরিবর্তনের পরিধির ব্যাপারে সঠিক ধারণা দেয়। এটি কোষের গঠন, কার্যকারিতা এবং নির্বাহী প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। টিস্যু কালচার বিভিন্ন রোগের পরিচিতি, চিকিৎসাব্যবস্থা এবং সেগুলো নিরাময়ের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ফসলাদির রোগযুক্ত অংশ সংগ্রহ করে (যা অণুজীবের ডিএনএ পরিবর্তন করতে কাজ করে যাতে এটি ধ্বংস হয় এবং বংশবৃদ্ধি করতে অক্ষম হয়) বিকিরণ ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় অণুচারা তৈরি করে এবং পরে সেখান থেকে নতুন জাত উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছে।


ফসলের উন্নতিতে, মৃত্তিকা ও জল ব্যবস্থাপনায়, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে পারমাণবিক বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পারমাণবিক কৌশল যেমন- গামা বিকিরণ, প্রজনন উদ্দেশে ফসলে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিউট্রন আর্দ্রতা গেজ এবং আইসোটোপ ট্রেসারগুলোর মতো পারমাণবিক পদ্ধতিগুলো মাটির আর্দ্রতা এবং জলের গতিবিধি অধ্যয়নের জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। কৃষিতে সেচ পদ্ধতির অপটিমাইজেশনের জন্য এই তথ্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিকিরণ ব্যবহার করা যেতে পারে।


স্বাস্থ্য পদার্থবিজ্ঞান পেশাদাররা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে বিকিরণের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা বিকিরণ সুরক্ষা প্রোগ্রামগুলো বিকাশ এবং বাস্তবায়ন করতে পারে, ঝুঁকি মূল্যায়ন পরিচালনা করতে পারে ও ব্যক্তি এবং পরিবেশের বিকিরণের এক্সপোজার পর্যবেক্ষণ করতে পারে।


পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিষ্পত্তির বিষয়গুলো বাংলাদেশের কাছে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারমাণবিক বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল ক্ষেত্র ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। জেনারেশন ৩ ও ৩+ পারমাণবিক চুল্লিগুলোতে অ্যাক্টিভ এবং প্যাসিভ নিরাপত্তাব্যবস্থা যেকোনো পারমাণবিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিয়েছে। জেনারেশন ৪ পারমাণবিক চুল্লি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা বিদ্যমান, যার অংশীদার আমাদের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও হওয়া সম্ভব। যদি গবেষণায় ছাত্রছাত্রীদের পর্যাপ্ত অনুদান এবং উন্নত গবেষণাগার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তাহলে দেশে গবেষণার মান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেশে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের চাকরির ক্ষেত্র প্রসারিত হবে।


নতুন আবিষ্কার, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং চলমান গবেষণা সবই এই প্রযুক্তির নাগাল এবং প্রভাবকে প্রসারিত করতে অবদান রাখবে যা বাংলাদেশের জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা ভিশন-২০৪১ (Vision-2041) অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যেহেতু আমরা শক্তি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান খুঁজছি, নিঃসন্দেহে পারমাণবিক বিজ্ঞান আমাদের ভবিষ্যৎ গঠনে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com


No comments

Powered by Blogger.